১ মে (২০১৬) সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শ্রমিক সমাবেশে কথিত ৩০ কোটি ডলার নিয়ে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দাবি জানিয়েছেন খালেদা জিয়া। জয়ের বিষয়ে তথ্য পেতে এফবিআইয়ের এক এজেন্টকে ঘুষ দেয়ায় প্রবাসী এক বিএনপির নেতার ছেলের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের মামলার প্রসঙ্গ ধরে এর আগে আরেক সমাবেশে তিনি বলেছিলেন, ‘সেই মামলার নথিতেই আছে প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের একটি একাউন্টেই আড়াই হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৩০০ মিলিয়ন ডলার জমা আছে। এই টাকা কোথা থেকে গেছে? এই টাকার উত্স কী?’ সজীব ওয়াজেদ জয়ের অ্যাকাউন্টে তিনশ মিলিয়ন ডলার তথা আড়াই হাজার কোটি টাকা নিয়ে এফবিআই-এর তদন্ত করার বিষয়টি সম্পর্কে একইদিন ফেসবুক স্ট্যাটাসে সজীব ওয়াজেদ জয় লিখেছেন, ‘একজন মহিলা, যিনি এতিমের টাকা চুরি করেছেন, যার ছেলে দুর্নীতির কারণে এফবিআই কর্তৃক পলাতক আসামি, তার মতো লোকের অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর নাতির দিকে কাদা ছোঁড়া উচিত নয়।’ উপরন্তু খালেদা জিয়া ১ মে বলেছেন, আওয়ামী লীগ গত সাত বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছে। তার উত্তরে জয় লিখেছেন, ‘আপনার (খালেদা) পোষা ভৃত্য মাহমুদুর রহমান এবং শফিক রেহমান এফবিআই-এর গোপন নথি চুরি করে আমার সব ব্যাংক হিসাবের তালিকা পেয়েছে, কিন্তু সেই টাকা খুঁজে পায়নি। ১/১১ এর সামরিক শাসকেরা যারা আমার মাকে আটক করেছিল, তারাও সেটি খুঁজে পায়নি। এমনকি এফবিআই সেটি পায়নি। এটা এজন্য যে, আমি ৩০০ মিলিয়ন ডলারের কাছাকাছিও কোনো সম্পদ কোনোদিন অর্জন করিনি। আমি তত ধনী নই। ...ম্যাডাম, আপনি যদি জানেন যে ৩০০ মিলিয়ন ডলার কোথায়, অনুগ্রহ করে আমাকে জানান। আমি সেই সমস্ত অর্থ এতিমদের দান করে দিতে চাই।’
সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার অভিযোগগুলো দুর্বল যুক্তি ও প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে উপস্থাপিত হয়েছে। তাঁর বলার ধরন এবং কণ্ঠস্বরের প্রকাশ থেকে আমরা বুঝতে পারি ওইসব অভিযোগ তিনি নিজে করতে চাননি। বরং তাঁকে চাপ দিয়ে জয়ের বিরুদ্ধে করানো হয়েছে। হয়ত বিএনপি’র অন্য নেতারা মনে করছেন খালেদা জিয়ার এই বক্তব্য দেশব্যাপী তাদের সমর্থকরা রিলে করে বলে বেড়াবে। তাতে বেশ একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে। অন্যদিকে সজীব ওয়াজেদ জয়কে ‘চোর’ হিসেবে প্রচার করে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে সত্য অভিযোগের একটা জবাবও দেয়া যাবে। কিন্তু পরিস্থিতি ঠিক খালেদা জিয়ার অনুকূলে নয়। তাছাড়া বাস্তব তথ্য ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঔদার্য শিখরস্পর্শী।
খালেদা জিয়া যেভাবে তারেক জিয়াকে রাজনীতিতে এনে দলের পদে সমাসীন করেছেন জয়ের জীবনে তেমনটি ঘটেনি। বরং জয় রাজনীতিতে নামতে পারেন ধরে নিয়ে ২০০৪ সালে ‘হাওয়া ভবনে’র মালিক তারেক জিয়াকে বিএনপি লুফে নিয়েছিল। জয় বাংলাদেশের মৃত্তিকার সন্তান। তাঁর রাজনীতিতে আসাটা আকস্মিক হলেও দলকে সংগঠিত করা, দলের কোন্দল মেটানো, দলকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ রাখা প্রধান কাজ হিসেবে গণ্য হয়েছে। মহাজোট সরকারের সময় পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে পরাজয়ের পর আওয়ামী লীগের সামনে নতুন নেতৃত্বের দরকার ছিল। তাই তাঁর মতো কোনো যোগ্য ব্যক্তিকে সামনে আনা আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করা জয় ভারত থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারে বিএসসি ডিগ্রি এবং যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোক-প্রশাসনে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৭ সালে তিনি ২৫০ জন তরুণ বিশ্ব নেতার মধ্যে একজন হিসেবে সম্মানিত হন। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার উপদেষ্টা হিসেবে তিনি অনেক আগে থেকেই রাজনীতি সচেতন।
জয়ের ভেতর রয়েছে বঙ্গবন্ধুর মতো প্রচণ্ডতা। রয়েছে পরিশ্রমী ও তারুণ্যের প্রাণময়তা। এজন্য আমেরিকা থেকে তাঁর ফিরে আসা, রাজনীতিতে যোগ দেয়া আমাদের জন্য শুভ সূচনা। দেশের মধ্যে যারা একসময় দুর্নীতি ও নাশকতার পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তাদের মসনদ কেঁপে উঠেছে তাঁর সত্ সাহস এবং জনকল্যাণকর কর্মকাণ্ডে। তিনি মূলত বঙ্গবন্ধুর মতোই মানুষকে আশাবাদী করে জাগিয়ে তোলার জন্য ভাষণ দেন। তাঁর ভেতর থেকে বঙ্গবন্ধুর মতোই সম্মোহনী চেতনা স্ফুরিত হয়। বিএনপি-জামায়াতের গাত্রদাহের কারণ এজন্য যে জয় উচ্চশিক্ষিত এবং যে ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তার পুরোভাগে তিনি আছেন। শেখ হাসিনা যেমন নির্লোভী, মানুষকে ভালোবাসেন নিজের অন্তর থেকে জয়কেও তেমনিভাবে এগিয়ে যেতে হচ্ছে। বিরুদ্ধ মানুষের মন জয় করতে হচ্ছে। অনেকে ভাবতে পারেন তিনি আমেরিকান সিটিজেন। এটা মনে করার কোনো কারণ নেই যে শেখ হাসিনাও যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাবেন। যেহেতু জয়ের মা নিজে এই মাটি, মানুষের নিকটজন সেহেতু তিনিও তারই ধারাবাহিকতায় মানুষের জন্য নিজেকে উত্সর্গ করবেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং পিতা-মাতা ড. ওয়াজেদ ও শেখ হাসিনার মতো আন্তরিক হূদ্যতায় সাধারণ মানুষকে কাছে টানার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের। রাজনৈতিক নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এগিয়ে এসেছেন সাধারণ মানুষের আকর্ষণে। মাতার সান্নিধ্য তাঁকে রাজনীতির শিক্ষায় শিক্ষিত করেছে। তাঁর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় আওয়ামী সমর্থক সকলেই খুশী। কারণ তিনি মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পারেন। আওয়ামী লীগকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে নেতৃত্ব ও উন্নয়নকে একই সঙ্গে আলিঙ্গন করতে হবে। জয় হঠাত্ আবির্ভূত নেতা নন। তিনি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। তাঁর আছে দৃঢ়চেতা অভিভাবক। যিনি সকল বিষয়ে সুপরামর্শ দিতে পারঙ্গম। কখনও পথ চলতে ছিটকে পড়লে শেখ হাসিনা পরামর্শ দিয়ে ঠিক পথে আনতে পারবেন তাঁকে। কারণ জয় একান্তই মাতৃ অনুগত। জয় আওয়ামী লীগের একজন সাধারণ সদস্য। এর বাইরে তিনি প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা। এই অর্থে তিনি দলের নীতি-নির্ধারক না হলেও বিভিন্নভাবে দল ও দলের নেতৃত্বকে অনেক রকম সহযোগিতা দিচ্ছেন। এখন এগিয়ে যাচ্ছেন বিচক্ষণতার সঙ্গে। জয়ের সেই বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণেই কি খালেদা জিয়া শঙ্কাতুর হয়েছেন? মিথ্যা অভিযোগ প্রচার করতে চাচ্ছেন? আশা করছি খালেদা জিয়ার মিথ্যাচারিতায় মানুষ সাড়া দেবে না বরং সজীব ওয়াজেদ জয়ের জনসম্পৃক্ত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উত্সাহী হবে।
ড. মিল্টন বিশ্বাস লেখক : অধ্যাপক এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৬ সকাল ১০:৩৫