somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রানা প্লাজা, ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সংঘটিত রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে নিহত ও আহত গার্মেন্ট শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের আমরা সমেবদনা জানাই। যারা আহত হয়েছিলেন, তাদেরও সহমর্মী আমরা। এ মানুষগুলোর সঙ্গে আরো কিছু মানুষের মিলিত প্রয়াসই তো আমাদের গার্মেন্ট শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখেছে। এই কর্মীদের শ্রমে ও ঘামে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অন্তত পোশাক খাতে পরিচিতি পেয়েছে 'ব্র্যান্ড বাংলাদেশ'।
আমরা আজ একটু পেছন ফিরে তাকাতে চাই। ২০১৩ সালের এপ্রিল, শেষ সপ্তাহ। অধরচন্দ্র কুলের মাঠে সারি সারি মরদেহ। স্বজনহারাদের কান্নায় বাতাস ভারি। মাতম থামছে না। সাভারের রানা প্লাজা নামের বহুতল বাণিজ্যিক ভবনটিকে ঘিরে অনেক মানুষের ভিড়। ভেতরে আটকে পড়া প্রিয়জন যদি প্রাণ নিয়ে উঠে আসে, সেই অপেক্ষা। ভেতরে তখনো জীবনের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তাই অপেক্ষার পালা ফুরোয় না। শোকস্তব্ধ জাতি পালন করেছে একদিনের জাতীয় শোক সাভারে এই অসহায় প্রাণহানির ঘটনায় মর্মাহত সারা দেশের মানুষ। আমরা দেখতে পাই আমাদের পোশাক শিল্পে নিয়োজিত এই কর্মী ভাই-বোনদের উদ্ধারে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে গেছেন বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ। এই স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের নিরলস চেষ্টায় চলে উদ্ধার কাজ। রানা প্লাজা ধসে পড়ার পর সেখানে উদ্ধার কাজ করতে যাওয়া সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীরা যথাসাধ্য করেছিলেন। নিজেদের সক্ষমতার সবটুকু উজাড় করে দিয়েছিলেন তারা।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধস আমাদের গার্মেন্ট শিল্পকে বড় এক প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছিল। পোশাক খাতের কর্মপরিবেশ ও কর্মরত কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়। রানা প্লাজা ধসের পর স্বাভাবিকভাবেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমাদের গার্মেন্ট শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হয়।
যে কোনো দেশের অর্থনীতি নির্ভর করে সেই দেশের শিল্পের ওপর। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গার্মেন্ট শিল্পের ভূমিকা অনস্বীকার্য। 'ব্র্যান্ড বাংলাদেশ' ইমেজ সৃষ্টি করেছে যে গার্মেন্ট শিল্প, কর্মসংস্থান, বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নে রেখেছে বিশেষ ভূমিকা, সেই শিল্প রক্ষায় মালিকদের পাশাপাশি সরকার তথা রাষ্ট্রের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি উপস্থিত আছেন। তারা তাদের বক্তব্য রাখবেন।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ট্র্যাজেডিতে প্রায় ১১৩৮ জন নিহত এবং ২০০০ জনের বেশি শ্রমিক আহত হন। এই ট্র্যাজেডির পর সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় রানা প্লাজার মালিককে গ্রেফতারসহ এ ঘটনায় নিহত ও আহত শ্রমিকদের পরিবারকে অনুদান এবং আহতদের উন্নত চিকিৎসা প্রদান ও পুনর্বাসন করা হয়েছে এবং এখনও সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এছাড়া গার্মেন্ট কারখানাগুলোতে সংস্কার কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ এ সেক্টরে উত্তরোত্তর উন্নতি, মজুরি বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশের শ্রম আইনের যুগোপযোগী সংশোধন উল্লেখযোগ্য। সরকার 'নিম্নতম মজুরি বোর্ড' গঠনের মাধ্যমে গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারীদের নিম্নতম মজুরি দুই ধাপে প্রায় ২০০ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। এছাড়া সংশোধিত শ্রম আইন কর্মপরিবেশে শ্রমিকদের নিরাপত্তা বৃদ্ধিসহ মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে সম্পর্কোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এছাড়া যুগোপাযোগী ট্রেড ইউনিয়ন গঠন নীতিমালা প্রণয়নসহ গার্মেন্ট কারখানাগুলোতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া রানা প্লাজা ও পরবর্তী পরিক্রমায় বর্তমান সরকার, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল এবং বিজিএমইএ কর্তৃক প্রশংসনীয় এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দেয়া সহায়তা
১। রানা প্লাজা ধসে নিহত ৯৭৬ জনের স্বজনদের প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে এখন পর্যন্ত ২২ কোটি ৯৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭২০ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের সংশ্লিষ্ট সদস্যরা যাতে সুবিধা পায়, সে জন্য ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিতকরণ পূর্বক স্বজনদের প্রত্যেককে (বাবা, মা ভাইবোন, স্ত্রী বা স্বামী) আলাদাভাবে চেক দেয়া হয়েছে।
২। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২২টি হাসপাতালের চিকিৎসাধীন গার্মেন্ট শ্রমিকদের জন্য ১ কোটি ৪২ লাখ ১৪ হাজার টাকা, আহত উদ্ধারকর্মী কায়কোবাদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠাতে ৩৫ লাখ এবং অশনাক্ত শ্রমিকদের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ৫০ লাখ টাকা দিয়েছেন।
৩। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে গুরুতর আহত ৪১ জনের প্রত্যেককে ১০-১৫ লাখ টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে।
৪। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ৯৬২ জনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
৫। হায়তার প্রথম পর্যায়ে নিহত একশত শ্রমিকের পরিবার প্রতি দুই লাখ টাকা করে দেয়া হয়েছে।
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া পদক্ষেপ
১। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে তৈরি পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
২। বাংলাদেশ শ্রম আইন (সংশোধন) ২০১৩ প্রণয়ন।
৩। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ৩০ শতাংশ শ্রমিকের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতপূর্বক ট্রেড ইউনিয়নের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ট্রেড ইউনিয়ন গঠন নীতিমালা যুগোপযোগী করা হয়েছে।
৪। বাংলাদেশের সব পোশাক কারখানার মানোন্নয়ন ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ন্যাশনাল অ্যাকশন প্লান এর আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আইএলওর সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটি ত্রিপক্ষীয় যৌথ চুক্তি স্বাক্ষর হয়, যার প্রেক্ষিতে ত্রুটিপূর্ণ কারখানাসসূহে সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
৫। শ্রম ও কমংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরে কারখানা মহাপরিদর্শক নিয়োগ।
৬। কারখানাগুলো কার্যকর পরিদর্শনের জন্য সাম্প্রতিক শ্রমবিধির আলোকে শিল্পখাতের সব কারখানাকে সমন্বয় করে শ্রম মন্ত্রণালয় কর্তৃক নতুন চেকলিস্ট তৈরি করা হচ্ছে।
৭। সরকারের উদ্যোগে নিহতদের ১৪ অনাথ শিশুকে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজ হোমে আশ্রয় ও শিক্ষার সুযোগ এবং আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের মাধ্যমে ১৭টি শিশু শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে।
৮. দুর্ঘটনার ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের সদস্যদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি ৭৭৭ জনকে সরকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি প্রদান করেছে।
৯. সরকারী প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)'র তহবিলে প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলার বিভিন্ন বিদেশী প্রতিষ্ঠান জমা দিয়েছে।
১০. পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ জাতীয় নীতি ২০১৪ প্রণয়ন।
১১. খাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন ও বিধিমালা পর্যালোচনার জন্য টাস্বফোর্স গঠন।
১২. অগি্ন, বৈদ্যুতিক ও কাঠামোগত নিরাপত্তা সংক্রান্ত টাস্কফোর্স গঠন।
১৩. কারখানা নিবন্ধন, কেমিক্যাল ও পরিবেশ সনদ প্রদান প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় সংশোধনে টাস্কফোর্স গঠন।
১৪. সাব-কন্ট্রাক্ট কারখানার জন্য গাইড লাইন প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন।
১৫. মন্ত্রিপরিষদ কমিটি কর্তৃক কারখানা সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক প্রতিবেদন প্রদান।
এখন আমরা দৃষ্টি দিতে চাই বিজিএমইএর দিকে। কি করেছে বিজিএমইএ। বিজিএমইএ হয়ত এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত বলতে পারবে। প্রাপ্ত তথ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি_
১. বিজিএমইএ-এর পক্ষ থেকে চিকিৎসা, বেতন ও অন্যান্য সুবিধা, প্রধানমন্ত্রীর তহবিলে অনুদান, গর্ভবতী শ্রমিকদের সহায়তা, উদ্ধার ও পুনর্বাসন কার্যক্রম এবং অন্যান্য খাতে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়।
২. রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় অঙ্গহানির শিকার হওয়া ২৬ জন শ্রমিককে বিজিএমইএ, হোপ বাংলাদেশ, সিআরপি, সিডিডি ও ব্র্যাক-এর যৌথ উদ্যোগে কৃত্রিম অঙ্গ সরবরাহ করা হয়েছে।
৩. রানা প্লাজাসহ অন্যান্য পোশাক কারখানায় সংঘটিত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় যেসব শ্রমিক অঙ্গহানির শিকার হয়েছে, তাদের জন্য কৃত্রিম অঙ্গ প্রতিস্থাপন এবং এ বিষয়ে তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান বিষয়ে বিজিএমইএ, এওত, ওঈজঈ ঔঈজচ যৌথভাবে ঙৎঃযড়ঃরপং ্ চৎড়ংঃযবঃরপং শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বিজিএমইএ এ প্রকল্পে ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয় করেছে।
৪. সর্বমোট উদ্ধারকৃত (আহত অবস্থায়) প্রায় ২৪০০ জনের মধ্যে ৮৫০ জনকে বিজিএমইএর সহযোগিতায় বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে।
৫. রানা প্লাজার মোট ০৫টি পোশাক কারখানার ২৮৩৪ জন শ্রমিক-কর্মচারীকে বিজিএমইএ বেতন-ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে। এছাড়া মোট ১২ জন গর্ভবতী শ্রমিকের প্রত্যেককে ৩৫,০০০ টাকা অনুদান দিয়েছে।
৬. প্রায় ২৩৯ আহত শ্রমিককে সিআরপিতে কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।
৭. রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিক 'আন্না' ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছিল। বিজিএমইএর উদ্যোগে মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তি করায় ও তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বিজিএমইএ বহন করে।
৮. বিজিএমইএ প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে প্রায় ২ কোটি টাকা অনুদান হিসেবে প্রদান করে।
৯. বিজিএমইএ ৫৮ এতিম শিশুর দায়িত্ব নিয়েছে ও প্রতি মাসে তাদের জন্য বিজিএমইএ ২ লাখ টাকা খরচ করছে।
১০. ২ জন নিহতের ৪ জন এতিম ছেলেমেয়ের পড়াশুনার খরচ বহন করছে।
১২. বিজিএমইর তৎপরতায় রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় কর্মহীন হয়ে পড়া ১৪২ জন বিভিন্ন পোশাক কারখানায় যোগাযোগ করে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে।
পোশাক খাত বিষয়ে টিআইবির প্রতিবেদন
মাত্র দুই দিন আগে এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বাস্তবায়ন-সংক্রান্ত টিআইবির 'তৈরি পোশাক খাতে সুশাসন : অগ্রগতি, চ্যালেঞ্জ ও করণীয়' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
ঐ প্রতিবেদনে সরকার ও বিভিন্ন পক্ষের বহুমুখী উদ্যোগে পোশাক খাতের বিভিন্ন পর্যায়ে, বিশেষ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, আইনি ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতির প্রশংস করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি)। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধনের পর গত তিন বছরে এই ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। টিআইবি বলছে, পোশাক খাতে সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য সরকার ও স্টেকহোল্ডারদের নেয়া ১০২টি উদ্যোগের মধ্যে ৭৭ শতাংশ উদ্যোগের ক্ষেত্রে এরই মধ্যে অগ্রগতি এসেছে। তব ন্যুনতম মজুরি বাস্তবায়ন ও শ্রমিক অধিকারের মতো ২৩ শাংশ ক্ষেত্রে কছু কিছু দুর্বলতা ও ধীরগতি এখনও সুস্পষ্ট। শ্রমিক ছাঁটাই ও ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের হয়রানি এবং শ্রম আইনের বিভিন্ন ধারার অপব্যবহারও বন্ধ হয়নি।
টিআইবির মতে, 'সার্বিক বিবেচনায় পোশাক খাতের সুশাসন নিয়ে গর্ব করার জায়গায় এসেছে বাংলাদেশ। স্বল্প সময়ের ব্যবধানে প্রধান শিল্প খাতে এক অগ্রগতি বিশ্বের আর কানো দেশে সম্ভব হয়নি। তবে তাজরীন ফ্যাশনস কারখনার অগি্ন দুর্ঘটনা এবং রানা প্লাজা ধসের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত না করা পর্যন্ত এ কথা বলা যাবে না, এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হয়েছে।'
টিআইবি আরো উল্লেখ করেছে, 'রানা প্লাজা ধসের পর ব্যাপক সংস্কারে ব্যয়যোগ্য অর্থের কথা মাথায় রেখে পোশাকের দর বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্রেতারা। কন্তু তারা সে কথা রাখেন নি। পোশাকের দর বরং কমেছে। গত ১৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দর কমেছে ৪১ শতাংশ। টিআইবির আরো একটি পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, 'অনেক অগ্রগতি সত্ত্বেও কিছু কিছু অগ্রগতি এখনও কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। এগুলো কার্যকর করতে হবে। কারখানা মালিকদের মানসিকতায় অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তবে ট্রেড ইউনিয়নের বিষয়টি এখনও অনেকে মেনে নিতে পারেন না। জীবনযাত্রার ব্যয় অনুযায়ী নূ্যনতম মজুরি গ্রহণযোগ্য কি-না, তাও ভেবে দেখার সময় এসেছে।'
সুশাসনের ঘাটতি পূরণে এ সংস্কারের ধারা অব্যাহত রাখা, পোশাক খাতের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনসহ ১০টি সুপারিশ করা হয় টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে।
টিআইবির এ ১০টি সুপারিশের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কেন্দ্রীয় তদারকি ও সমন্বয়ে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করা, যেসব কারখানা বিজিএমইএ বা বিকেএমইএ-এর সদস্য নয়, সেসব কারখানার টেকনিক্যাল কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া ও শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা। এ ছাড়া এতে রানা প্লাজা ও তাজরীন দুর্গটনায় করা বিভিন্ন মামলা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা, শ্রমিক ডাটাবেজ গঠন, দ্রুত সার-কন্ট্রাক্টিং নীতিমালা গঠন ও শ্রমিক সংগঠন এবং যৌথ দরকষাকষির অধিকার নিশ্চিতে নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থা করার সুপারিশন করা হয়। টিআইবি বলছে, তাদের ২০১৩ সালের প্রতিবেদনে ৬৩টি দুর্বলতা চিহ্নিত করা হয়। তখন বিভিন্ন পক্ষ থেকে ১০২টি উদ্যোগ নেয়া হয়। এসব উদ্যোগের ৩৪টি বাস্তবায়ন করা হয়েছে প্রথম দুই বছরে। বাকি ৬৮টি উদ্যোগের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়েছে ্ প্রতিবেদনে। এতে দেখা যায়, ৬৮টি উদ্যোগের মধ্যে সম্পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে ছয়টি ৩৯টি উদ্যোগ বাস্তবায়নে সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে। তবে ১০টির অগ্রগতি ধীর ও বাকি ১৩টি উদ্যোগ স্থবির হয়ে আছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারের পক্ষ থেকে শ্রম আইনের বিধিমালা অনুমোদন ও ইপিজেড শ্রম আইন, ২০১৬ মন্ত্রিসভায় নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। মজুরি বড়ানো হয়েছে। মালিকদের পক্ষ থেকে ৯৫ শতাংশ কারখানায় নূ্যনতম মজুরি পরিশোধ করা হয়েছে। নিরাপদ কর্মপরিবেশ উন্নয়নে সংস্কার এবং অগি্নমহড়া দেয়া হচ্ছে নিয়মিত। ক্রেতাদের পক্ষ থেকে ইউরোপ এবং মার্কিন জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের সব কারখানা ভবনের কাঠামো, অগি্ন ও বৈদ্যুতিক মানসংক্রান্ত প্রাথমিক পরিদর্শন শেষ হয়েছে। পরিদর্শনে চিহ্নিত ত্রুটির ৪৪ শতাংশ সংশোধন হয়েছে। এ ছাড়া সফলভাবে তিন কোটি ডলারের ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করা সম্ভব হয়েছে।
শেষ কথা
আমরা দেখতে পাচ্ছি, অনেক বিপর্যয় এড়িয়ে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প ঘুরে দাঁড়িয়েছে শ্রমনিষ্ঠ কর্মী, সরকার ও মালিকপক্ষের সম্মিলিত প্রয়াসে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এ দেশের মানুষের আবেগ ও ভালোবাসার ঐকান্তিক শুভকামনায়। এই ঘুরে দাঁড়ানো শিল্পকে আরও বেগবান করার দায়িত্ব আমাদের।
পীযূষ বন্দোপাধ্যায় এর কলাম থেকে...
[প্রগতিশীল সাংবাদিক ফোরাম আয়োজিত সেমিনারে উত্থাপিত]
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ১০:৪২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প বলেছে, বাংলাদেশ পুরোপুরি এনার্খীতে, তারা মাইনোরিটির উপর অত্যাচার করছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৬



৩ দিন পরে আমেকিকার ভোট, সাড়ে ৬ কোটী মানুষ ভোট দিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে; ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৫১ ভাগ। এই অবস্হায় সনাতনীদের দেওয়ালী উপক্ষে ট্রাম্প টুউট করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×