আসুন কিছুক্ষন শিশুতোষ সরলতা নিয়ে মায়াদের দেখি.....
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
"মায়া সভ্যতা'' শব্দদুটিতে কেমন রহস্যের গন্ধ আছে,তাইনা?বিশেষত সভ্যতা শব্দটির সাথে হয়তো আমরা সবাই পরিচিত নই।সভ্যতা মানে হল কোন বিশেষ জাতিগোষ্ঠী ।যেমন ধর আমরা,বাঙালীরা একটি সভ্যতা।তোমরা যারা একটু বড় তারা নিশ্চয়ই সিন্ধু সভ্যতার নাম শুনেছো?সিন্ধু নদের পারের অধিবাসীরাই ছিল এ সভ্যতার অংশ।এই সিন্ধু নদটি বর্তমান পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে বহমান। সে আজ থেকে হাজার বছর আগেকার কথা।সে সভ্যতা আজ কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে।শুধু রয়ে গেছে কিছু ধংসপ্রাপ্ত স্মৃতি যা আমাদের বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ।
তার আগে বলে নেই কিছু গোড়ার কথা।এই পৃথিবী নামক গ্রহটাতে মানুষের জন্ম হয়েছে কিন্তু বেশিদিন হয়নি।৪৫০ কোটি বছর আগে নক্ষত্রপূঞ্জের মহাবিস্ফোরণের মাধ্যমে সৃস্টি হয়েছে এই পৃথিবীর।তখন এ পৃথিবী ছিল প্রানহীন কেবল একটি লাভাপিন্ড।ধীরে ধীরে ঠান্ডা হয়ে প্রথম প্রাণের উদ্ভব হয় অনেক পরে,প্রায় ৬০ কোটি বছর আগে।সে কিন্তু মানুষ নয়।মানুষ সব প্রানীদের মাঝে সেরা বুদ্ধিমান প্রানী।কিন্তু তার উদ্ভব হয়েছে সবচেয়ে পরে।মানুষের জন্মের আগে হাজার হাজার প্রজাতির প্রানীরা এই পৃথিবী দাপিয়ে বেড়িয়েছে,আবার হারিয়েও গেছে।তোমরা নিশ্চয়ই ডাইনোসরের কথা শুনেছ এবং দেখেছ।তারা কিন্তু এ পৃথিবীতে এসেছিল কোটি কোটি বছর আগে।প্রায় ১৬ কোটি বছর আগে তারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে পৃথিবী থেকে।থাক সে গল্প আরেকদিন বলব,কেমন!এমনকি,মাছ,বানর,শিম্পাঞ্জীদের জন্ম ও মানুষের আগে হয়েছে এ পৃথিবীতে।
মানুষের জন্ম হল এই পৃথিবীতে মাত্র ৭০ লক্ষ বছর আগে।সেইসব প্রাচীন মানুষ কিন্তু দেখতে আমাদের মত ছিল না।তারা বর্তমান পূর্নাংগ মানুষদের মত সোজা হয়ে হাটতে চলতে বা কথা বলতে ও পারত না।এমনকি,শুধু খাবার আর আশ্রয়ের চিন্তা ছাড়া অন্য কোন চিন্তা ও তারা করতে পারত না।খুব কষ্ট করে বুদ্ধি খাটিয়ে তারা ফলমূল সংগ্রহ করে জীবন কাটাত।গাছে বড় কোটরে জীবন যাপন করত।কিন্তু আস্তে আস্তে তারা আগুন জ্বালাতে শিখল,আকার ইংগীতের মাধ্যমে কথা বলতে শিখল,গুহা খুঁজে নিল নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে,হিংস্র পশুদের হাত থেকে বাঁচার জন্য দলবদ্ধভাবে থাকতে শুরু করল।এভাবে একটার পর একটা সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে তাদের মাথা খুলতে লাগল।তারা বুদ্ধির ব্যাবহার করতে লাগল।এরকম এক একটি দলবদ্ধ মানুষেরা যখন আরো উন্নত হল,তখন থেকেই উদ্ভব হল সমাজ ও সভ্যতার।
প্রথম মানবসমাজের উদ্ভব হয়েছিল আফ্রিকা মহাদেশে প্রায় ২ লক্ষ বছর আগে।তার মানে আফ্রিকাকে আমরা আমাদের আদি নিবাস বলতে পারি,তাইনা?যাহোক, এর ৭০ হাজার বছর পরে তার মানে আজ থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার বছর আগে তারা ছড়িয়ে পড়তে লাগল আফ্রিকার বাইরে,পৃথিবীর অন্য জায়গাগুলোতে।প্রায় ৯০ হাজার বছর আগে তারা ইয়োরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে পৌছায় ।সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল তারা আমেরিকা মহাদেশে পৌছায় সবচেয়ে শেষে,মাত্র ১৫ হাজার বছর আগে।আর আজ তারাই শিক্ষা-দীক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অত্যন্ত উন্নত।আরও মজার ব্যাপার হল তারা সবাই গোড়া থেকেই ছিল শিকারে দক্ষ।
যাহোক অনেক হল গোড়ার কথা।আবার চল ফিরি সভ্যতার গল্পে।তবে আজ তোমাদের সিন্ধু সভ্যতা নয়,বলব ঠিক এমনি আরেক সভ্যতার গল্প।মায়া সভ্যতা।তাদের কথা জানলে তোমরা এমনই অবাক হবে যে ভেবেই কূল পাবে না সেই চার হাজার বছর আগে কীভাবে তারা এত উন্নত হয়েছিল.যখন পৃথিবীর মানুষরা বাড়িঘর বানাতে শেখেনি, কেবল আগুন জ্বালিয়ে খাবার সেদ্ধ করা শিখেছিল, তখন তারা পাথর দিয়ে তৈরী করেছিল বিশাল বিশাল ঘরবাড়ি,তা আজকের দিনের প্রায় বিশ পঁচিশ তলা বিল্ডিংয়ের সমানতো হবেই।যখন কেউ লিখতে,পড়তে এমনকি শুদ্ধভাষায় কথা বলতেও জানত না তখন তারা তাদের ভাষার দিনপঞ্জীকা তৈরি করে ফেলেছিল।চাঁদ ,তারা,গ্রহ নক্ষত্র নিয়েও তারা জ্ঞান চর্চা করত।গাইত গান,লিখত কবিতা।কী অবাক কান্ড,তাইনা?আরও একটা মজার কথা হল,সেই চারহাজার বছর আগে থেকে খৃস্টপূর্ব ১৪৯২ সাল পর্যন্ত,অর্থাৎ কলম্বাস আমেরিকা আবিস্কারের ও বহু আগে,পুরো আমেরিকা(উত্তর ওদক্ষিন) মাহাদেশজুড়ে মায়া সভ্যতাই ছিল একমাত্র সভ্যতা যাদের নিজস্ব লিখ্য ভাষা ছিল।যারা তোমাদের মতই সুন্দর করে পড়তে এবং লিখতে জানতো।
এই মায়া সভ্যতা আমাদের থেকে হাজার হাজার মাইল দূরের আরেক মহাদেশের একটি সভ্যতা।তবে বহু দূরের হলে কী হবে,এই সভ্যতার গল্প এতই বিখ্যাত এবং মজার যে সারা পৃথিবীর লোকের মুখে মুখে ফেরে!এবং যারা ভ্রমন করে দেশে বিদেশে , তাদের কাছে মায়া জনগোষ্ঠীর শহর,বাড়িঘর,পূরাকীর্তি সবকিছুই খুব পছন্দের।এমন ভ্রমণপিপাসু মানুষ খুব কমই আছেন যারা মায়া সভ্যতার নিদর্শন দেখতে যাননি।তোমরাও নিশ্চয়ই যাবে একদিন বড় হয়ে,জানবে এবং বিষ্ময়ে বিমূড় হবে,আবার খুব মজাও পাবে।তবে তার আগে এস আজ জেনে নেই,দেখে নেই।
মায়াদের দেখতে হলে তোমাদের যেতে হবে সেই সুদূর মধ্য আমেরিকা মহাদেশে।মধ্য আমেরিকা কোথায় জানতো?মধ্য আমেরিকা হল উত্তর আমেরিকার ঠিক দক্ষিনে অবস্থিত অনেকগুলো দেশ নিয়ে গঠিত এক বিশাল মহাদেশ।ব্রাজিল,আর্জেন্টিনা,মেক্সিকো,কিউবা,ভেনিজুয়েলা,হন্ডুরাস প্রভৃতি দেশ নিয়ে এই মহাদেশ।কী,মনে পড়ে গেল ফুটবলের কথা,তাইনা? হ্যা,এসব দেশের মানুষজনের প্রিয় খেলা ফুটবল।মেক্সিকোতেও ফুটবল সবার প্রিয়। সে হিসেবে মেক্সিকোতে অবস্থিত মায়া জনগোষ্ঠীর মানুষদেরও ভালবাসার খেলা ফুটবল।তবে ফুটবল খেলার প্রচলন হবার আগে তারা অন্য খেলা খেলত,তাদের জীবন যাপন ও ছিল অনেক অন্যরকম।যাহোক,হন্ডুরাস,গুয়াতেমালা,উত্তর এলসলভেদর,কেন্দ্রীয় মেক্সিকোসহ আরো প্রায় ১০০০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ছিল মায়া জনগোষ্ঠির মানুষজন।
মায়া সভ্যতার জন্ম বা উৎপত্তি এবং বিকাশ কীকরে হয়েছিল এখন এস সেটা জেনে নেই।মায়া সভ্যতার মানুষজন প্রথম কবে এই এলাকায় এসেছিল তা জানা যায়নি।তবে খৃস্টের জন্মের মানে ইংরেজি সাল তারিখ শুরু হবার প্রায় ২০০০ হাজার বছর আগের(খৃস্টপূর্ব ২০০০) মায়াদের ভাষার লিখ্য রূপ পাওয়া গেছে।তার মানে,তারা খৃস্টপূর্ব ২০০০ সালেরও বহু আগে,ধারণা করা হয় খৃস্টপূর্ব ১৮০০ সাল থেকে সেখানে বাস করে আসছিল এবং অনেক উন্নত হয়েছিল।এই সময়ের আগে মায়া জনগোষ্ঠীর মানুষজন ছিল যাযাবর।তারা খাদ্য,পানি এবং আশ্রয়ের জন্য এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেত।কী অবাক লাগছে না?তোমাদের মনে হয়তো প্রশ্ন জাগছে কেন তারা তোমাদের আব্বু আম্মুর মত বাসায়,অফিসে বা বাজারে নাগিয়ে খাবার আর আশ্রয়ের জন্য এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেত,তাইনা?এর কারণ হল,তখন ও পৃথিবীতে কোথায়ও অফিস,বাজার তৈরি হয়নি,এমনকী ঘরবাড়িও না।মায়া সভ্যতার মানুষরাই প্রথম মধ্য আমেরিকায় বাড়িঘর তৈরি করে।খৃস্টপূর্ব ১৮০০ সাল থেকে তারা এসব এলাকায় পশুপালন এবং মাটি দিয়ে নানারকম জিনিসপত্র যেমন থালা বাসন,বাটি,হাড়িপাতিল প্রভৃতি তৈরি শুরু করে।ফলে তারা পশু থেকে মাংস আর মাটি থেকে তৈরি আসবাব পেতে লাগল।তাই তাদের খাবার আর খাবার রাখার পাত্রের অভাব রইল না।যখন খাবারের চিন্তা আর রইল না তখন তারা যাযাবর জীবন ত্যাগ করে ঘরবাড়ি বানিয়ে এক জায়াগায় ই বাস করতে থাকল।
যাক,মাথা থেকে যখন খাদ্য আর বাসস্থানের দুশ্চিন্তা গেল তখন তারা আরো উন্নত চিন্তা ভাবনা করতে লাগল।তারা মৃতদেহের সৎকার করা শিখল,মৃতদেহের উপর সমাধি নির্মান ও করতে লাগল।এ থেকেই মায়া সভ্যতার মানুষজন ধারণা পেয়ে গেল পিরামিড ও মমি নির্মাণের।মিসরের সুউচ্চ পিরামিড এবং মমির কথা তোমরা হয়তো অনেকেই শুনেছ এবং জেনেছ।প্রায় কিছুটা সেই আকৃতির না হলেও সেই ছাচের মমি ও পিরামিড তৈরি করতে জানত তারা। ২৫০ থেকে ৯০৯ খৃষ্টাব্দের মাঝে তৈরি মায়াদের অনেক শহর,সৌধ পাওয়া গেছে।তাদের শহরগুলোর নাম কিন্তু ভীষন মজার।যেমন ধর মায়াদের কিছু বিখ্যাত শহরের নাম হল টিকাল,পালেন্ক,কোপান,কালাকমূল,ডসপিলাস,আক্সাকটান,আলটানহা এবং বোনামপাক ।আর তাদের সবচেয়ে বিখ্যাত সৌধটির নাম হল ক্যানচুয়েন।এটিই ছিল তাদের রাজপ্রাসাদ এবং একই সাথে প্রার্থনালয়।তারা একটি পাথরের মূর্তিও তৈরি করেছিল যার নাম দেয়া হয়েছিল তাদের ভাষায় "টেটান" বা পাথরের গাছ।এই মূর্তিটি ছিল তাদের সকল বীরত্বপূর্ন কাজ ও সর্বশক্তিমান শাসকের প্রতিক।মূলত এটিকে তাদের শিল্পকলায় উন্নতির ও প্রতীক ধরা যায়।তারা যে শিল্পকলায় কতটা উন্নত ছিল তা বোঝা যায় তাদের পূরাকীর্তিগুলো দেখলে।প্রথম সিরামিকস এবং নীল রংয়ের প্রচলন হয়েছিল মায়া সভ্যতার মাধ্যমেই।
মায়া সভ্যতার বিশেষ এবং সবচেয়ে বিখ্যাত নিদর্শনগুলো হল এর এর স্থাপত্যশিল্প। এখনও মায়া জনগোষ্ঠির বসবাসরত এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে আছে তাদের শহরের পিরামিড,ভবন এবং প্রাসাদ ।এবং এই স্থাপত্যগুলো নিয়েই গড়ে উঠেছিল এক একটি মায়া শহরের নকশা।কয়েকটা বিখ্যাত মায়া স্থাপত্যের নাম বলি তোমাদের,চেচেন ইটজা,উত্তর আ্যাক্রপলিস,টিকাল,গুয়াতেমালা এবং বলকোর্ট আ্যাট টিকাল,এল মিরাডর।
এবার এমন একটা বিষয় তোমাদের জানাবো যে তোমরা আরো অবাক হয়ে যাবে।সেই হাজার বছর আগে ঘরবাড়ি তৈরি করা যে কি কষ্ট আর ঝামেলা ছিল তা আর বলার নয়।কারণ তখনকার দিনেতো আজকের মত এত উন্নত প্রযুক্তি ছিল না।রড,সিমেন্ট,ইট,ট্রলি কিছুই ছিল না।তাই কোনো স্থাপত্য তৈরি করতে লাগত হাজার হাজার শ্রমিক,বছরের পর বছর সময় আর অনেক পরিশ্রম।যাহোক,মায়ারা তাদের স্থাপত্য তৈরির জন্য ব্যবহার করত লাইমস্টোন নামের একধরনের পাথর এবং এগুলোকে সুন্দর,মসৃণ ও মনমত রূপ দিতে তারা ব্যবহার করত আরেক ধরণের সিমেন্টের মত পদার্থ।যাদিয়ে ওরা তৈরি করত বিশালাকার বাড়িগর,মন্দির,আর প্রাসাদ।কী অদ্ভূত,তাইনা?
ওদের ভাষাও ছিল ওদের মতই অদ্ভুত।ওরা কিন্তু আমাদের মত বর্ন দিয়ে লিখত না।ওরা ছবি বা লোগোর মাধ্যমে লিখত।আর মায়ারা লিখত ও অনেক মজার জিনিস দিয়ে যা আমাদের কলমগুলোর মত না কিন্তু কাজ করত এমনই।যেহেতু তারা ছবি এঁকেই মনের ভাব প্রকাশ করত,তাই কলমের মত কিছু না ব্যাবহার করে তারা তুলি ব্যবহার করত।আর তাদের তুলিই ছিল সত্যিকারের তুলি।আমরা যে তুলি ব্যবহার করি সেগুলোর প্লাস্টিকের,কিন্তু তাদের তুলিগুলো ছিল পশুর লোম বা পশমের তৈরি।কী,মজা না?
মায়াদের একটি বিশেষ দিক হল তারা সেই হাজার হাজার বছর আগেই গনিতে বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছিল।৩৬ খৃস্টপূর্বাব্দেই তারা শূন্য ধারণা আবিস্কার করে ফেলেছিল।তারাই সবচেয়ে সঠিকভাবে খালিচোখে গ্রহ নক্ষত্রদের চলাফেরা বুঝত এবং হিসেবকরে বের করেছিল।
এইবার মজা পাওয়ার বদলে তোমরা একটু বিষ্ময় আর ভয়ের জন্য তৈরি হও।মায়া সভ্যতার বিশেষ বৈশিষ্ট্য প্রকাশিত হয়েছে তাদের ধর্মীয় আচার যার প্রমান পাওয়া গেছে তাদের স্থাপত্যগুলোতে।মায়ারা প্রকৃতিতে বিশ্বাসী ছিল। তারা তাদের আরাধ্য দেবতাকে খুশি করার জন্য নরবলি দিত।মানে সোজা কথায় যাকে বলা হয় মানুষ কোরবানি দিত।আর সেসব মানুষ কিন্তু তাদের নিজেদের গোষ্ঠির নয়,অন্য গোত্রের।চিচেন ইতজা শহর,যা মায়া আঞ্চলিক শক্তির প্রধান কেন্দ্র ছিল, সেটি নরবলিরও অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র ছিল | শহরে দুটি প্রধান প্রাকৃতিক জলাধার ছিল, যা যথেষ্ট সুপেয় পানি সরবরাহ করত | এদের মধ্যে সবচেয়ে বড়, শিনত সাগ্রাড এ (যা উত্সর্গের জলাধার নামেও পরিচিত ছিল ) বৃষ্টির দেবতার উদ্দেশ্যে নর-উত্সর্গ করা হত | ২০০৭ সালে এ সংক্রান্ত এক গবেষণায় দেখা যায় যে, অনেক আহত বন্দিও নর-বলির শিকার হয়েছিল |ইশ কী ভয়ংকর আর বর্বর,তাইনা?
যাহোক,তবে মায়াদের আরেকটি ভাল দিকের কথা তোমাদের বলি।তারা কিন্তু ব্যাবসা বাণিজ্য করত।তাদের বানিজ্য ছিল কৃষি নির্ভর।তাদের যেসব ফসল হত যেমন আলু,ভুট্টা,সিম,স্কোয়াশ ইত্যাদি বেচাকেনা করত বিনিময় প্রথার মাধ্যমে।মানে টাকা পয়শার প্রচলন ছিলনা।আর তারা লবন পাথরের ও বেচকেনা করত।তারা শুধু নিজেদের মাঝেই নয়,অন্যান্য গোষ্ঠীদের সাথেও বাবসায়িক লেনদেন করত।
এভাবে শিল্প -সাহিত্য-ব্যাবসা -বাণিজ্য-জ্ঞানচর্চায় তারা উন্নতি সাধন করেছিল অনেক।কিন্তু কোনকিছুই চিরদিন থাকেনা।প্রায় তিন হাজার বছর ধরে বীরদর্পে দাপিয়ে বেড়ান সভ্যতা একদিন বিপর্যয়ে সম্মুখীন হল।৯০০ থেকে ১০০০ খৃষ্টাব্দের মধ্যে তারা বিলিন হয়ে যেতে লাগল।সভ্যতাবিশারদগন নিশ্চিত নন ঠিক কী কারনে মায়া সভ্যতা ধংস হয়েছিল।কেউ বলেন,মহামারির কারণে,কেউ বলেন,জনসংখ্যার তুলনা্য় খাবারের অপর্যাপ্ততার কারনে,আবার কেউ বলেন,পরিবেশ বিপর্যয়ের কারনে অনেক অনেক মানুষ মারা গিয়েছিল।
এরপর থেকে তারা অন্যান্য জাতিগোষ্ঠিদের সাথেও মিশে যেতে থাকে ধীরে ধীরে।১৪৫০ সালে পুরো মধ্য আমেরিকায় বিপ্লব সংঘঠিত হয়।তখন মায়া সভ্যতার এলাকাগুলো আরো ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়।কিছু অংশ আবার স্প্যানিশরা দখল করে নেয়।তবে স্প্যানিশরা মায়াদের চেয়েও প্রযুক্তগতভাবে ছিল আরো অনকে বেশি উন্নত।তাই তারা মায়াদের হারাতে পেরেছিল।তবে যত সহজে ভাবছ,তত সহজে নয় কিন্তু।কারণ মায়াদের প্রতিটি শহর ছিল সংস্কৃতি ও বাণিজ্যে সংয়ংসম্পূর্ন ।তাদের কোন রাজধানী ছিল না।তাই পুরো সভ্যতাকে বাগে আনতে প্রতিটি শহরেকেই জয় করতে হয়েছে।সময় ও লাগল,তাই অনেক।১৬৯৭ সালে মায়া সভ্যতার পুরো এলাকা স্প্যানিশদের দখলে আসে।
এরপরের ইতিহাস বলব আরেকদিন।তবে এটুকু বলি,মায়ারা এখনো পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যায়নি।ওদের পূর্বপুরুষদের স্থাপনাগুলো সগৌরবে দাড়িয়ে আছে আছে এখনো বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে।এখনও মধ্য আমেরিকায় প্রায় ৬০ লক্ষ মায়া অধিবাসী বাস করছে নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বজায় রেখে।আমরা যেমন বাঙালীরা এখনো বাংলা নববর্ষ পালন করি,ওরাও ওদের দিনপঞ্জীকা অনুযায়ী নববর্ষ পালন করে মহা ধুমধামে।তবে নরবলীর মত বর্বরপ্রথা বিলুপ্ত হয়েছে অনেক আগেই।এখন তারা আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে জীবন যাপন করছে আবার নিজেদের ইতিবাচক কিছু ঐতিহ্য ও বজায় রেখেছে,রক্ষা করে চলেছে।নিজেদের জাতিসত্তার শিকড়কে মায়া সভ্যতার অধিবাসীরা মরে যেতে দেয়নি,দেবেও না।
আমরা বাঙালী,আমাদের শিকড়,স্বকীয়তা এবং ঐতিহ্যকেও সংরক্ষন ও চর্চা করে যেতে হবে।
মায়াদের কথা জানতে অস্কারপ্রাপ্ত ''আ্যপোকেলিপ্ট" নামের এই মুভিটাও দেখতে পারেণ:
http://www.imdb.com/title/tt0472043/
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর


আলোচিত ব্লগ
"মিস্টার মাওলা"
বিটিভিতে খুব সম্ভবত আগে একটি বাংলা ছবি প্রচার করা হতো , নাম 'মিস্টার মাওলা'। নায়ক রাজ রাজ্জাক, অভিনিত ছবির সার-সংক্ষেপ কিছুটা এমন: গ্রামের বোকাসোকা, নির্বোধ ছেলে মাওলা। মাকে হারিয়ে শহরে... ...বাকিটুকু পড়ুন
এখন বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশ কেন উন্নত দেশ হতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও (সম্ভবত) হতে পারবে না…
১. সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে গুটিকয়েক যে কয়েকটি দেশ বিশ্বে স্বাধীনতা লাভ করেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ১৯৭১ সালে এত রক্তের বিনিময়ে যে দেশ তৈরি হয়েছিল, তার সরকারে যারা ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সুনিতা উইলিয়ামস: মহাকাশ অনুসন্ধানে অনুপ্রেরণার যাত্রা
সুনিতা উইলিয়ামস কে? যদিও তুমি তোমার পাঠ্যপুস্তকে সুনিতা উইলিয়ামসের কথা শুনেছো, তবুও তুমি হয়তো ভাবছো যে সে কে ?
বিখ্যাত নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামসের ক্যারিয়ার ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেরা, এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ইলন মাস্ক , এসময়ের নায়ক
সুনিতা উইলিয়ামদের ফিরিয়ে আনার আসল নায়ক!
৯ মাস! হ্যাঁ, পুরো ৯ মাস ধরে মহাকাশে আটকে ছিলেন নাসার মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়াম। একটি কারিগরি ত্রুটির কারণে তিনি পৃথিবীতে ফিরে আসতে... ...বাকিটুকু পড়ুন
রাজনীতির পরিপক্কতা বনাম আবেগ: হাসনাত ও সারজিস বিতর্কের বিশ্লেষণ
প্রতিকী ছবি
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্ট আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। এই দুই নেতার প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, তারা একই ঘটনার... ...বাকিটুকু পড়ুন