দেশে এখন আর কোনো জামায়াতে ইসলামী নেই। জামায়াতি ইসলামী নিষিদ্ধ করার দাবি তোলারও যৌক্তিকতা ফুরিয়ে গেছে বোধ করি। কারণ জামায়াতে ইসলাম আইনীভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার আগেই তারা নিজেদেও নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। কারণ তাদেও এ সাইনবোর্ড আর দরকার নাই আপাতত। নতুন সাইনবোর্ড এসে গেছে। হেফাজতে ইসলাম। জামায়াতে ইলাম বাংলাদেশ থেকে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। বেশ দারুন রূপান্তর, তাই না। এবার আমরা চুপ কওে বসে থাকি। কারণ এই হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে এখন আমরা সবাই ইসলামের হেফাজতকারি হয়ে গেছি। আপনি আপনার চারপাশে দেখবেন সবাই ইসলামের হেফাজত করার জন্য কেমন উঠে-পড়ে লেগেছে। বিষয়টা এমন, এ দেশ থেকে এই বুঝি ইসলাম উধাও হয়ে গেল। ইসলামকি উধাও হয়ে যাওয়ার বস্তু বা জলে পড়ে মরা জিনিস? নাকি উহা আঘাত প্রাপ্ত হয়ে তপড়ানোর জিনিষ? অদ্ভুত ব্যাপার বটে! শাহবাগের জাগরণকে যারা নাস্তিকদের উল্লম্ফন বলে যুদ্ধাপরাধ বিরোধী স্বতঃস্ফর্ত এক গণজাগরণকে ঠেকাতে নানা বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার চালাচ্ছেন তারা আসলে কী করছেন তা-ই তারা বুঝছেন না। এরা (তথাকথিত ধর্ম রক্ষাকারিরা) নিজেদের জন্য লড়ছে না। লড়ছে না ধর্মের জন্যও। ধর্ম কোনো ঠুনকো বিষয় নয় যে, কে কি বললো আর লিখলো তাতে ধর্ম বা বিশ্বাস চলে যাবে। এরা নিজেদের অন্তঃসারশূন্য মগজের আগুন দিয়ে নিজেকে পোড়াচ্ছে, দেশকে পোড়াচ্ছে। এরা ‘কান নিয়েছে চিলে’ বলে এক ধরনের ভাওতা কেওয়াজ তুলেছে আর তার সব ফসল বিদেশী শক্তিগুলোর কাছে তুলে দেয়ার জন্য সচেষ্ট হচ্ছে। কমনসেন্স আমাদের শেখায়- এখানে ধর্মীয় উস্কানী হলে লাভ হয় ভারতের ধর্মান্ধ রাজনৈতিক গোষ্ঠী বিজেপির। সেখানে হলেও এর ফায়দা আসে এখানকার কথিত ইসলামপন্থী বা ইসলাম রক্ষাকারিদের হাতে। এরা মুলত দেশটাকে মৌলবাদী রাষ্ট্র পরিগনিত করে অন্যায্য হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দেয় মোড়ল রাষ্ট্রগুলোকে। খেয়াল করে দেখবেন, এদেশের ধর্মান্ধ শক্তি এবং পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের ধর্মান্ধ শক্তির একটা যোগ আছে। আমি ধারণা করি এদের মধ্যে একটা অলিখিত বা লিখিত চুক্তিও থাকতে পারে। পশ্চিমা নির্ণিত তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসাবে অনেক অন্যয্য বোঝা আমাদের টানতে হয়। ভুগতে হয় নানা ধকল। যদিও শেষতক জয় হয় প্রকৃত প্রগতিশীল মানুষের। মাঝখানের সময়টাকে আমরা দুঃসময় বলেই ধরি। এই দুঃসময়টা পার হতে হয় নানা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। অনেক গুজব, অনেক অপকৌশল, ক্ষমতাসীনদের স্বার্থানুকুলের রাজনীতি, প্রতিক্রিয়াশীলদের নৈরাজ্য সব কিছুই মাড়াতে হয় রক্ত দিয়ে, রাজপথে থেকে।
এসব দুঃসময় আসলে এদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা ছিলো তারাই দিনে দিনে তৈরী করেছে, তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। যে সাপ তারা দুধ-কলা দিয়ে পোষে অন্যকে ছোঁবল দেয়ার জন্য সে সাপ মাঝে মাঝে তাদের দিকে ছোঁবল তুলে। তখন দিগি¦দিকশূন্য হয়ে পড়ে তারা। সাধারণ জনগনতো তাদের হাতের পুতুলের ন্যায়। সব দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে মরে। কিন্তু আরো একদিন আসবে যেদিন জনগন বুঝবে- একবার মরে কীভাবে ভুলে যেতে হয় মৃত্যুর ভয়। সে দিন খুব বেশি দুরে নয়।