পুলিশের লোকেরা ছবি তোলে ইউনিফর্ম পরে । ইউনিফর্ম পরা ছবি তারা যেখানে সেখানে দেয়। হ্বজে যাবে? ইউনিফর্ম পরা ছবি, বিয়ের জন্য ইউনিফর্ম পরা ছবি, ফেসবুকেও ইউনিফর্ম। মাথায় ক্যাপ থাকবে। পুলিশ হওয়া লজ্জার এটা তারা বুঝতে চায় না। পুলিশ সম্পর্কে বাজারে নানান শ্লোক প্রচলিত এটাও তারা জানেনা। এক হাজার কুকুর মারা গেলে একজন পুলিশের জন্ম হয়। এইটা কোন পুলিশ কি জানে?
মিলির ধারনা, জানেনা। পুলিশরা বেকুব হয়। বাংলাদেশের পুলিশরা বেশি বেকুব। বাংলাদেশি পুলিশদের আহাম্মকি নিয়ে অনেক গল্প মিলি জানে। একটা গল্প সুযোগ পেলেই সবাইকে শোনায়।
তিন দেশের পুলিশের মধ্যে প্রতিযোগীতা হচ্ছে। রাশিয়া, আমেরিকা, বাংলাদেশ। একটি কুকুরকে জঙ্গলে ছেড়ে দেয়া হবে। কে কতো দ্রুত তা খুঁজে বের করতে পারে সেটাই প্রতিযোগীতা।
প্রথমে রাশিয়ান পুলিশ খুজতে বের হলো। দুই দিন পর তারা কুকুরকে খুঁজে বের করলো।
এরপর আমেরিকান পুলিশ। আমেরিকান পুলিশ গরু খোজার মতো কুকুর খুজল। তিন দিন পর তারা কুকুর খুঁজে বের করে আনলো।
এবার বাংলাদেশের পুলিশ। দুই দিন গেলো,তিন দিন গেলো, পাঁচ দিন গেলো,এক সপ্তাহ পার হয়েছে। কুকুর খুঁজে নিয়ে আসা দূরের কথা, পুলিশের' খবর নেই।
আয়োজকরা বাংলাদেশের পুলিশকে খুঁজতে বের হলো।
দেখা গেলো বাংলাদেশের পুলিশ সপ্তাহ যাবত একটা ভেড়াকে বেঁধে পিটাচ্ছে। আর বলছে, স্বীকার কর তুই-ই সেই কুকুর। তুই-ই সেই কুকুর!
পুলিশ নিয়ে এত গল্পের কারন মিলির ছোট খালা বিকাল থেকে পুলিশের ছবি নিয়ে ঘুরছে। মিলি ছবি দেখেনি। খালার কাণ্ডকারখানা দেখছে। পুলিশের ছবি দেখার মতো কিছু নাই। পুরোটাই ইউনিফর্ম। পুলিশের মতো জঘন্য একটি পেশার লোক তার জন্য বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে এটা মেনে নিতে পারছেনা। পুলিশদের ব্যবহার অসভ্য। যারা রাস্তায় বাইরে অসভ্য তারা ঘরে সভ্য হয় কি?
মিলি প্রতিদিন রাজারবাগ মোড় দিয়ে অফিস থেকে বাসায় ফিরে। এখানে মিনিট দশেক সিগন্যাল থাকে। ট্রাফিক রাস্তা নিয়ন্ত্রন দেখে। কন্ট্রোলের চেয়ে গালি দেয় বেশি। রিকশাওয়ালাদের জন্য কমন গালি "মাদারচোদ"। "শুয়োরের বাচ্চা" পুলিশি লাইনে কোন গালি নয়। আমরা যেমন হাই হ্যালো বলি তেমন। মাজহার নামে এক ট্রাফিক পুলিশ গতকাল এক ছেলেকে ছোট একটি ভুলের জন্য গালি দিয়েছে। " খানকীর পোলা তোর মায়েরে চু....!
এতটুকু লিখে পূর্নতা ইসলাম থামলো। "চু.." শব্দ পড়ে তার পাঠক ভ্যাবাচ্যাকা খাবে। কেউ বলবে চটি লেখিকা। মহিলা লেখিকা বলে তাকে নিয়ে নোংরা ব্লগ হবে। নারী হলে যত সমস্যা। সিনেমায় যদি নায়িকা হাটুর উপরে কাপড় তুলে দর্শক খুশি হয়। বিদ্যা বালানের ডার্টি পিকচার হিট হয়।
সিনেমায় থাকবে, কিন্তু গল্পে উপন্যাসে খুল্লাম খুল্লা থাকবেনা কেন? পূর্নতার ইচ্ছা সে সাহিত্যের বিদ্যা বালান হবে। তার গল্পে চু.. শব্দ থাকবে।
কবিতায় এ টাইপ শব্দ হয়। গল্পে হয় না ক্যান? কবিতা এশব্দ থাকলে শিল্প। এ শব্দ মারজুক রাসেল খুল্লাম খুল্লা লিখছেন। বইমেলায় তার বই হাজার হাজার কপি বিক্রি হয়। টিশার্ট বিক্রি হয়। এ শব্দ গল্পে থাকলে অশ্লীলতা। এক তরুন কবিতায় এ শব্দ লিখে খ্যাতি পেয়ে গেছেন। তিনি লিখেছেন, "আমি প্রেমিকা ছাড়া আর কাউকেই ... না"। পূর্ণতা তিনটি ডট দিয়ে রাখলো। মূল গল্পে ডট থাকবেনা। এই কবিতার বইয়ের নাম কায়কাউসের চুলকানি। কায়কাউসের চুলকানির জন্য কবি প্রথম আলো জীবনানন্দ সাহিত্য ২০১৩ পুরষ্কার পেয়েছেন! ধন্য জীবনানন্দ। ধন্যবাদ প্রথম আলো।
মিলি পুলিশের বায়োডাটা হাতে নিয়ে বসে আছে। ছোট খালার ধারনা এটা সোনার টুকরা ছেলে। সোনার টুকরা ছেলে হাতছাড়া করা যাবেনা। বয়স থাকলে মিলির খালা নিজেই গিয়ে ছেলের কোলে গিয়ে বসত । মিলিকে কনুইয়ের গুতো দিয়ে কিছু একটা বলে হিহিহি করে হাসলেন। কী কথা বলে মিলি পুরোটা শুনেনি। বুঝতে পেরেছে। কথা শুনে মিলির জ্বর এসে গেছে। এমন নোংরা কথা বলে কেউ এমন বিচ্ছিরি হাসতে পারে!!!
গল্পকার পূর্নতার মন চাচ্ছে এখানে আরেকটু খোলামেলা লিখুক।
মিলি প্রচন্ড অনিচ্ছা সত্বেও পুলিশের বায়োডাটা হাতে নিল। বায়োডাটা না বলে চিঠি বলা ভালো। একটি সাদা কাগজে টাইপ করা চিঠি। মিলি পড়লো।
"আমি মাজহার হোসেন। পুলিশে চাকরী করি। পুলিশের চাকরী অখাদ্য। নিজের খাদ্য যোগাতে আমাকে এই অখাদ্যটা খেতে হচ্ছে।
চাকরীর সংকীর্ণ জগতের বাইরে আমার একটা বিশাল জগত আছে। তবু কেন জানি সবাই বিশাল জগতটাকে বাইরে রেখে সংকীর্ণ জগত নিয়েই বিয়ের বাজারে উৎসাহী বেশি। আমার ধারনা এই বিশাল জগৎ টা জানা বেশি জরুরী। চাকুরীতে ইউনিফর্ম পরে থাকি। নিজেকে ঢেকে রাখি। মনটাও। ইউনিফর্ম ছাড়া সেই লোকটি কেমন। সেটা জানা বেশি জরুরী। বায়োডাটায় কিছু জিনিস থাকলে ভাল হয়।
১. ছেলের রাগ কেমন? ---স্বাভাবিক
২. ছেলে পরহেজগার? ---না। তবে শুক্রবারে নামাজ পড়ে
৩. কালচারাল মাইন্ডেড? --- হ্যা
৪. মেয়েদের জিন্স পরা পছন্দ করে? --- হ্যা
৫ গান গাইতে পারে? - না পারে না
৬ রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনে- হ্যা
বায়োডাটার এর এমন একটি ফরমেট আনলে ভালো হতো। ছেলে সম্পর্কে কিছুটা ধারনা পাওয়া যেত। বৃত্তান্তে বাপ চাচাদের কে কী করেন তা-ই লেখা থাকে। লেখা থাকে ছেলের ডিগ্রী আর নাম। আমি একটি নতুন ফরমেটে আমার বৃত্তান্ত দেই।
আমি অনেকটা আড্ডা প্রিয়। বন্ধুবৎসল। অভিমানী। ভালোলাগে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি এবং উদার হতে। সবার উপরে আমার দেশ মুক্তিযুদ্ধ স্বাধীনতা ও নিজের কৃষ্টি। অবসরে আপাতত বই পড়ি লিখি হাবিজাবি চিন্তা করি। বিয়েরপর অবসর কিভাবে কাটাবো তা নিয়ে আমার একটি পরিকল্পনা আছে.....
এটাকে বিয়ের বৃত্তান্ত বলা চলেনা। মিলি এতটুকু পড়ে থেমে গেলো। তার ধারনা ছোট খালা ছেলের কাছ থেকে স্পেশালী এই চিঠিটা লিখিয়ে এনেছে তার জন্য। মিলির খালার চিকন বুদ্ধি। মিলির খালুজানের বুদ্ধি মোটা। মানুষটাও মোটা। মোটা মানুষ নিয়ে ছোট খালা ডার্টি জোকস বলে।
চিঠি পড়া শেষ। মিলির খালা দৌড়ে এল। মিলি জানে ছোট খালা উঁকি দিয়ে চিঠি পড়া দেখছিল। খালা পারলে বাসর ঘরেও উঁকি দিবেন। ছোট খালা বলল, চিঠিটা সুন্দর না?
মিলি কিছু বলল না।
ছোট খালা বলল, ছেলেটা গতানুগতিক না। সব কিছু ডিফারেন্ট! বায়েডাটার স্টাইল দেখেছিস। কেমন রাবিন্দ্রিক! আহা! জানিস, কবিতাও লিখে। পত্রিকায় ছাপে তো। বইও বেরিয়েছে। চিঠিটা সুন্দর না? কিছু বল।
- হু সুন্দর।
- আমি জানতাম তুই এটা বলবি। ছেলের ছবি দেখবি?
- দাও।
মিলি ছবি দেখে চিনল। এই লোকের নাম মাজহার। ট্রাফিক পুলিশে কাজ করে। রিকশা নিয়ে যেতে রাজরবাগ মোড়ে প্রায়ই জ্যামে বসে তার কান্ড কারখানা দেখতে হয়। সুযোগ পেলে গালি দেয়। রিকশাওয়ালার মায়েদের চুদে। ইউনিফর্ম গায়ে থাকলে সে এই কাজ করে। ইউনিফর্ম খুলে ফেললে চিঠি লিখে, কবিতাও লিখে।
কি অদ্ভুত!