সবাই তো মাকে নিয়ে আজকে কবিতা, শ্রদ্ধা নিবেদন আর স্মৃতি চারণ লিখছে। আমি না হয় একটু ভিন্ন কিছু লিখি। ২-১টা ঘটনা বলি আমার মায়ের সম্পর্কে।
আমার মায়ের বয়স এখন ৬৫ বছর। পড়ালেখা খুব বেশি করতে পারেন নাই। ক্লাশ ৪ পর্যন্ত পড়ার পর ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। স্কুলে থাকাকালীন যতগুলো কবিতা পড়েছিলেন,সবগুলো এখনো তার মনে আছে। কিছুদিন আগে এক আত্মীয়ের সাথে দেখা হয়েছিল ।(যিনি সচিবালয়ে উচ্চপদে কর্মরত থেকে অবসর নিয়েছিলেন।) উনি ছিলেন আমার মায়ের সহপাঠী। আমাকে বলছিলেন, তোমার মায়ের সাথে আমি পড়ালেখাতে পারতাম না, তোমার মা ফাস্ট হতো, আর আমি সেকেন্ড হতাম। কিন্তু তিনি বেশি পড়ালেখা করতে পারেন নাই। পড়ালেখা করতে পারলে অনেক বড় কিছু হতে পারতেন।
১। যখন আমরা গ্রামে থাকতাম, ঘরে ডানো'র টিনের মধ্যে শুটকী রাখা ছিলো। আর একটা কুকুর শুটকী খেতে গিয়ে দুধের টিনে মুখ ঢুকিয়ে দিলো, আর বের করতে পারে না। কুকুর এদিকে দৌড় দেয়, ঢু খায়, আবার দৌড়। পাগলা কুকুরের মত করছিল। বাড়ীর সবাই ভয়ে পালাচ্ছিলো। আর আমার মা একা গেল কুকুরের মাথা থেকে ডানোর টিন উদ্ধার করতে। এবং সফল।
২। আর একবার ঘরে একটা সাপ ঢুকেছিল, তখন যৌথ পরিবারে ছিলাম আমরা, ভয়ে সবাই বের হয়ে গেছে, আর আম্মা লাঠি নিয়ে ঘরে ঢুকলো সাপ মারার জন্য। তাও সফল।
৩। কিন্তু আমার মা খুবই সহজ সরল। আমরা ভাইবোন ৭জন। কেউ কখনো না খেয়ে ঘর থেকে বের হতে পারি নাই। সকাল ৭টা বাজে কলেজ, আম্মা ৫টার সময় উঠে রান্না শেষ করতো। আমার এমনও মনে আছে, একবার এক স্যারের কাছে ১ মাসের জন্য সকাল ৬টা থেকে পড়তে হয়েছিল, তাও কখনো না খেয়ে যেতে হয় নাই।
৪। আমাদের বাসার ওয়াশিং মেশিনটা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। আম্ম দোয়া দরুদ পরে পানি পড়া ছিটিয়ে দিয়েছিল। (আমরা কেউ জানতাম না, আম্মা পরে স্বীকার করেছিল)। পড়ে ওয়াশিং মেশিনটা আমি খুলে দেখলাম, তেলাপোকা অনেক গুলো তার কেটে ফেলেছিল।
৫। আম্মার খুব পেটে ব্যাথা উঠেছিল একবার, চেপে চেপে বেশ কয়েকদিন ছিলো, কাউকে বলে নাই, ডাক্তারের কাছে যেতে হলে তো অনেক টাকা খরচ হবে, তাই। শেষে আমরা বুঝে গেলাম, পেটে ব্যাথা। ডাক্তার পরীক্ষা করে বললো, এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যাথা। আগামীকাল সকাল ৮টা বাজে অপারেশন করতে হবে। সাতটার মধ্যে হাসপাতালে হাজির থাকতে হবে।
আম্মার অপারেশন, তাই ভাইবোন, যে যেখানে আছি, সবাই বাসায় আসলাম। আম্মা ঘুমাতে যাওয়ার পর আমরা ঠিক করলাম, পরেরদিন সকালে দোকান থেকে পরটা কিনে এনে খাবো কিংবা হাসপাতালে গিয়ে খেয়ে নিবো।
কিন্তু সকালে উঠে দেখি আম্মা খিচুরী রান্না করে টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে। এতোগুলো ছেলেমেয়ে না খেয়ে সকালে বাসা থেকে বের হবে, সেই চিন্তা করে মায়ের মনে হয় সারারাত ঘুম হয় নাই।
৬। সাতজন ভাইবোন হলেও আম্মার সাথে আমার একটা সুখস্মৃতি আছে। আমি যখন ছোট ছিলাম, আম্মা আমাকে কোলে করে নিয়ে হজ্জ করেছিলেন আব্বার সাথে। দোয়া করবেন আমি যেন আম্মাকে আবার হজ্জ করাতে পারি।
৭। কিছুদিন আগে আমার আম্মাকে ক্রিকেট খেলা শিখিয়েছিলাম। কেমনে? সেটা দেখেন এই পোস্টে।
Click This Link
৮। আর সুযোগ পেলেই খালি কাপড় ধুয়ে দেয় এখনো, এই বয়সে এসে। আমি মাঝে মাঝে রাগারাগি করি এর জন্য। যখন বাসায় থাকি না, তখন কাপড় ধুয়ে দেয়। দেখা গেল, আমি একটা কাপড়/ লুংগী যেখানে রেখেছিলাম, সেটা ধুয়ে আবার সেখানেই রেখে দেয়, যাতে আমি বুঝতে না পারি।
ধন্যবাদ।
দোয়া করবেন আমার মায়ের জন্য।
কিছুদিন আগে আমি একটা কাপড় কিনে দিতে চেয়েছিলাম, মা বললো, তার লাগবে না, তার পরিবর্তে একটা বড় হরফে লিখা কোরআন শরীফ কিনে দিতে. চোখের সমস্যার কারণে চশমা ছাড়া কোরআন পড়তে পারে না।
তাই আজকে সকালেই বাইতুল মোকারমে গিয়ে একটা কোরআন শরীফ কিনে এনেছি। মাকে দিবো বলে। আমার মা আজ পর্যন্ত কখনো নিজের জন্য কিছু চান নাই।
আপনি কি জিজ্ঞাসা করেছেন? আপনার মায়ের কি দরকার?
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১১ দুপুর ১:০০