মোমিন মেহেদী
জাতির উদ্দেশে ভাষণ প্রদানের মধ্য দিয়ে সর্বদলীয় সরকারের যে প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন, তা প্রত্যাখান করেছে অনেকেই। কিন্তু তাঁর এই প্রস্তাবের রাস্তায় আমি একটু হেঁটে আসতে চাই। যেখানে নতুন প্রজন্ম নতুন করে রাজনীতির নামে অপরাজনীতির পাঠ সম্পর্কেকে জানতে পারবে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকেই ভেবেছিলো যে, জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনা নতুন বাংলাদেশ উপহার দেবেন। যে বাংলাদেশে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তির বাইরে যারা রাজনীতি করবে তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত হবে; মানুষ স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার পাশাপাশি পাবে দ্রব্যমূল্যের স্থিতিশীল বাজার; সন্ত্রাস-খুন-চাঁদাবাজমুক্ত সুন্দর সোনার বাংলাদেশ; পাবে বেঁচে থাকার নিরাপত্তা এবং উন্নত দেশগুলোর মত না হোক উন্নয়নশীল দেশগুলোর মত গণতান্ত্রিক অধিকার।
কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর হয়েছে তার উল্টো। দেশের মানুষ সন্ত্রাস-চাঁদাবাজ আর খুনী আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগের একের পর হামলা-মামলার কারনে নির্মম পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। সাথে সাথে তারা বঞ্চিত হয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে; বঞ্চিত হয়েছে বিদ্যুৎ-গ্যাসসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা থেকে; দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কারনে নাভিশ্বাস হয়েছে জনগনের; পাশাপাশি ডিজিটাল বাংলাদেশের নামে দেশকে করা হয়েছে আবারো তলাবিহীন ঝুড়ি।
এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের ক্ষমতার পুরোটা সময় পার করেছে। যে লোক গরুর দালাল ছিলো, সেই লোক এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর বেশভূষা পাল্টে পরিণত হয়েছে সিআইপিতে; যেই ব্যাক্তি তৃতীয় শ্রেণীর শিল্পী ছিলো; সে হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় এওয়ার্ড প্রাপ্ত গুণি। আর যোগ্যরা ছিটকে পড়েছে যোজন যোজন মাইল দূরে।
পুরো দেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক হয়েছে সেরা ব্যাংক; ইসলামী ব্যাংকের সহায়তায় আওয়ামী লীগ শুধু নিজেদের পেট-ই ভরেনি বিশ্বকাপের মত খেলাও চালিয়েছে; আবার জনগনকে দেখান্ওো জন্য নতুন নতুন কৌশল অবলম্বন করে কখনো ফাঁসির দাবীতে মঞ্চ তৈরি করেছে; আবার কখনো কখনো রাজপথে আন্দোলন করিয়েছে। মাঝখানে বঞ্চিত এবং বঞ্চিত হয়েছে নির্যাতিত হয়েছে সাধারন জনগন।
ক্ষমতার রাজনীতিতে তৈরি আওয়ামী লীগ যেমন ক্ষমতায় আসার জন্য নিজেদের লোক মেরে অন্যের কাঁধে দোষ চাপাতে দ্বিধা করে না; তেমনি দ্বিধা করে না বিএনপিও। যে কারনে এরা ক্ষমতার রাজনীতিতে বড়ই সেয়ানা ভাবে নিজেদেরকে। আর এ কারনেই এখন শেখ হাসিনা বলছেন, আমি বিরোধী দলীয় নেতাকে অনুরোধ করছি তিনি আমার এই ডাকে সাড়া দেবেন আমার এ অনুরোধ রক্ষা করবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে অনির্বাচিত ও অসাংবিধানিক সরকার আর কখনো আসবে না ছুরি-দা, খুন্তি-কুড়াল নিয়ে মানুষ মারার নির্দেশ প্রত্যাহার করার জন্য বিরোধী নেত্রীকে অনুরোধ করছি কোরআন শরিফ পুড়িয়ে, মসজিদে আগুন দিয়ে ইসলাম ধর্মের অবমাননা করবেন না জনতার ওপর আস্থা রাখুন, সন্ত্রাসের পথ পরিহার করুন। আপনারা কী চান তা সংসদে এসে বলুন।
ক্ষমতার মেয়াদ পুরোটা প্রায় শেষ করে তারপর জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা সত্যি-ই এখন নতুন প্রজন্মের কাছে হাস্যকর মনে হচ্ছে। তারা অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই কথাটি নিয়েও হেসেছে এবং হাসছে; তিনি বলেছেন, ‘সব দলকে সঙ্গে নিয়ে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচন করতে চান। নির্বাচনকালীন সরকার সব দলকে নিয়ে নির্বাচন করতে পারে। বিরোধী দল তাদের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে নাম দিতে পারে, যাদের নিয়ে সর্বদলীয় সরকার গঠন করা যেতে পারে। এই প্রস্তাবে সাড়া দেয়ার জন্য তিনি বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার প্রতি অনুরোধ জানান। বিরোধী দলের কাছে আমার প্রস্তাব, নির্বাচনকালীন সময়ে আমরা সকল দলের সমন্বয়ে সরকার গঠন করতে পারি। আমাদের লক্ষ্য অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তাই আমি বিরোধী দলের কাছে প্রস্তাব করছি, বিরোধী দলের সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেও আপনারা নাম দিতে পারেন, যাদের আমরা অন্তর্র্বতীকালীন সময়ে মন্ত্রিসভার সদস্য করে সর্বদলীয় সরকার গঠন করতে পারি। নির্বাচনে যাতে কারো কোনো সন্দেহ না থাকে, সকল সন্দেহ দূর করে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে পারি, যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের মনমতো সরকার গঠন করতে পারবে। আমি বিরোধীদলীয় নেতাকে অনুরোধ করছি যে, তিনি আমার এই ডাকে সাড়া দেবেন। আমার এই অনুরোধ তিনি রক্ষা করবেন এবং আমাদের যে সদিচ্ছা, সেই সদিচ্ছার মূল্য তিনি দেবেন।’
আসলে আমরা রাজনীতি সচেতন নতুন প্রজন্ম বরাবরই বুঝতে পারতাম যে, জাতির জনক কন্যা শেখ হাসিনা যেমন বাবার নাম ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসা ব্যাতিত আর কোন যোগ্যতা রাখেন না; ঠিক তেমনি বেগম জিয়া আমাদের রাজনৈতিক না হোক সামাজিক ও আর্থিক পরিবর্তনের জন্য নিবেদিত শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম বিক্রি করেই ক্ষমতায় আসেন এবং আসার চেষ্টা করছেন। অতএব, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৈরি এই দুই অপাঙতেওকে কোন না কোনভাবে বি পজিটিভলি ‘না’ বলে অবসরে পাঠানোর জন্য নিবেদিত তরুণ প্রজন্ম। তারা রাজনীতির নামে আর কোন সহিংসতা-ধর্মান্ধতা-কূটকৌশলতার রাস্তায় এগিয়ে আসা সন্ত্রাসের গডমাদারদেরকে ক্ষমতায় আনতে চায় না। আর তাই জেগে ওঠার এই সময়েই জেগে উঠতে হবে। ভোট ও ভাতের অধিকার রক্ষার জন্য নতুন প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। যাতে করে রাজনীতির নামে আর কোন রাজনৈতিক দল অপরাজনীতির রাস্তা তৈরি করতে না পারে। আর যেন নতুন করে কোন গোষ্ঠি ইসলামী ব্যাংকের মত জঘণ্য একটি গোষ্ঠির আর্থিক সুবিধা ভোগের জন্য নিজেদেরকে বিক্রি করতে না পারে।
আর তাই তৈরি হতে হবে বাংলাদেশের ৫ কোটি ভোটারকে। সচেতন হতে হবে ভোট টাকার বিনিময়ে নয়; যোগ্যতা-মেধা এবং দক্ষতার বিনিময়ে দেয়ার জন্য।
তাতে করে আর কোন প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উদ্বেগ-আশঙ্কার মধ্যেই জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে হবে না। কেননা, নতুন প্রজন্মের প্রকৃত নেতৃত্ব তৈরি হলে তখন আর উদ্বেগ-আশঙ্কার সুযোগ-ই থাকবে না। থাকবে বাংলাদেশের জন্য, বাংলাদেশের মানুষের জন্য অবারিত সম্ভাবনার রঙধনু...
আর সেই লক্ষ্য থেকেই এগিয়ে আসতে হবে বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিককে। যারা রাজনীতি সচেতন, যারা অর্থনীতি সচেতন, যারা সমাজ সচেতন, যারা মাটি ও মানুষের অধিকার সচেতন; তারা রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়ালে আর কোন অপশক্তি ষোলকোটি মানুষের ঘাড় মটকে খাওয়ার সুযোগ-ই পাবে না।
অতএব, না আওয়ামী লীগ; না বিএনপি; না জামায়াত-যুদ্ধাপরাধী; আসুন নতুর প্রজন্মের প্রতিটি প্রতিনিধি তৈরি হই ভিন্নতার রাস্তায় এগিয়ে যেতে যেতে। যেখানে জাতীয় পার্টি থাকবে; থাকবে কমিউনিস্ট পার্টি, জেএসডি, নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি), জাকের পার্টি, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগ অথবা শাসনতন্ত্র আন্দোলন। কিন্তু ধর্মান্ধ কোন গোষ্টি থাকবে না। থাকবে না বাংলাদেশের মানচিত্র বিরোধী কোন চক্রও। এক্ষেত্রে আরেকটি কথা বলে রাখি; সে কথাটি হলো- আওয়ামী লীগ বিএনপিও থাকতে পারে দেশের মঙ্গলের জন্য নতুন পরিক্রমায়; তবে তার আগে শুধরে আসবে এই বলে যে, জাতির জন্য নিবেদিত থাকবো; ক্ষমতার জন্য নয়। তাতে ক্ষমতায় আসুক আর না ই বা আসুক সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের জন্য নিবেদিত থেকে...
মোমিন মেহেদী : আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)