somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নতুন প্রজন্মের রাজনীতি এবং অন্যান্য প্রসঙ্গ

২৯ শে মে, ২০১৩ ভোর ৫:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


মোমিন মেহেদী
লেখাটির শুরুতেই স্রস্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর পর মহান বাহান্নর ভাষা সৈনিক, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনাসহ সকল জাতীয় নেতাদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।

শ্রদ্ধা জানাচ্ছি সেই সকল মানুষদের প্রতি যাদের রক্ত-ঘামে আজকের বাংলাদেশ। এবং স্মরণ করছি সকল বীর বাঙালিদেরকে।
পৃথিবীতে আমরা এসেছি প্রথমত ‘মানুষ’ হিসেবে। দ্বিতীয়ত যে যার ধর্মের অনুসারী হিসেবে আর তৃতীয়ত বাঙালি হিসেবে-বাংলাদেশী হিসেবে। যেহেতু প্রথম পরিচয় মানুষ, সেহেতু রাজনীতি করে মানুষের প্রাপ্যটুকু নিশ্চিত করা একজন মানুষের নৈতিক দায়িত্ব। যেহেতু দ্বিতীয় পরিচয় ‘মুসলমান’ ‘হিন্দু’ ‘খিস্ট্রান’ বা অন্যকোন ধর্মের অনুসারী সেহেতু ধর্মের নিদের্শ অনুযায়ী মানুষের রাজনীতি করা প্রতিটি ধর্মে নির্দেশ রয়েছে। আর তৃতীয়ত যেহেতু বাঙালি-বাংলাদেশী; তাহলেতো আমাদের রাজনীতি করা চেতনার নিদের্শ, আদর্শের নির্দেশ, স্বাধীনতার প্রেরণা...

রাজনৈতিক গবেষক ও চিন্তাবিদ আহমদ শরীফ লিখেছিলেন, ‘আমরা মুখে মুখে শুনে মুখস্থ বলি বটে, চাষী মজুরের নেতৃত্বে পরিচালিত সংগ্রামের মাধ্যমেই ঘটবে বিপ্লব, আসবে গণমুক্তি, কিন্তু গণনেতৃত্বে যে গন্ডগোল বাধে ও বাড়ে এসত্য আর অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু সংগ্রামে নেতার আসনে গণমান্য ধীরবুদ্ধির ও স্থিরবিশ্বাসের সাহসী সংগ্রামী মানুষ থাকলেই কেবল সাফল্য হয় সম্ভব। কেননা যৌথ কর্মে প্রধান পরিচালক ও যুদ্ধে সেনাপতি প্রয়োজন। ব্যক্তিত্ব পূজা বলা যাবে না। আমাদের রাজনৈতিক দল কর্মসূচীর জনপ্রিয়তা দিয়ে নয়- টিকে থাকে প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানের স্ত্রীর বা কন্যার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া নেতৃত্বে। আমাদের সরকারে মন্ত্রিত্ব মেলে প্রাক্তন নেতার পুত্র-কন্যা হিসেবে। সারা সমাজে ধরেছে পচন, দেশকাল মানুষের হিতকামী বিবেকবান অক্ষম মানুষ উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় অস্থির বটে, কিন্তু অন্যেরা হয়তো নৈরাশ্যবশেই নিস্ক্রিয় ও উদাসীন।’

বাস্তবতা এমনই। যে কাননে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এদেশের গণ-মানুষ যে মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিল অল্প দিনেই মানুষের স্বপ্নভঙ্গ ঘটে। মুক্তিযুদ্ধের ফসল সাধারণ মানুষের ঘরে উঠে নি। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম সময়গুলোতে অনেক প্রতিকূলতা ছিল, তবে প্রতিকূলতার মাঝে যে সব প্রচেষ্টা ছিল তাও মানুষকে খুব একটা আশাবাদী করতে সক্ষম ছিল না। কাগজে লিপিবদ্ধ অর্থনৈতিক মুক্তির সমাজতন্ত্র প্রায়োগিক অর্থে কার্যকর ছিল না। কিছু কিছু কলকারখানা জাতীয়করণ করা হয়েছিল, সমাজতন্ত্রের পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসেব। কিন্তু এই প্রক্রিয়ার প্রকৃত বেনিফিশিয়ারি শ্রমিক শ্রেণী না হয়ে, রাজনৈতিক নিয়োগপ্রাপ্ত গুটিকয়েক প্রশাসক শ্রেণী হয়ে উঠে মূল বেনিফিশিয়ারি। ফলে শ্রমিকের মুক্তির পরিবর্তে বাড়তে থাকে প্রশাসকের স্বাস্থ্য। কারখানাগুলো হারাতে থাকে তাদের যৌবন।

বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বের সবচেয়ে করুণ দিক এই সুবিধাবাদী খোন্দকার মোশতাক গংদের ষড়যন্ত্রের কবলে আমৃত্যু বন্দী থাকা। বঙ্গবন্ধু যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সংস্কারে হাত দিয়েছিলেন তা ফলপ্রসূ না হওয়ায় মানুষ দেখল মহান মুক্তিযুদ্ধ তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন করতে পারেনি। সংস্কার সফল হলে যেমন সকল কৃতিত্ব নেতার, ব্যর্থ হলেও সকল দায়ভার নেতার উপরই বর্তায়। এছাড়াও লুটপাট, রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল সাড়ে তিনবছরের পুরোটা সময় জুড়ে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে বিগত ৩৭ বছরে সরাসরি অনির্বাচিত সরকার শাসন করেছিল প্রায় ১০ বছর। এই দশ বছরের বাইরে আরও প্রায় ৬ বছর সামরিক সরকারের প্রধানই বেসামরিক সরকারের প্রধান হিসেবে মসনদে ছিল। একজন সামরিক প্রশাসকের জনগণের প্রতি কতোটা দায়বদ্ধতা থাকে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। কারণ কনভেনশনাল ওয়ার ফোরস গণমানুষের শাসক হয় বিভিন্ন সময়ে, কিন্তু গণ আকাংখার বাস্তবায়ন হয় তাঁদের মাধ্যমে এমন দৃষ্টান্ত বিরল। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ৭৫ পরবর্তী ৩৭ বছেরর প্রায় ১৬ বছর চলে গেছে গণবিচ্ছিন্ন সামরিক শাসকদের সামরিক-বেসামরিক শাসনে।

গণবিচ্ছিন্ন শাসকদের প্রধান লক্ষ্যই থাকে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করা, সেই লক্ষ্যে তারা কিছু সাময়িক জনপ্রিয় কাজে হাত দেয় প্রথমে, মানুষের বিভিন্ন সেন্টিমেন্ট এ নরম হাতের পরশ বুলিয়ে কিছুটা জন সমর্থন আদায় করে নেয় সফল ভাবেই। ধর্মীয় ইস্যুতে জিয়া- এরশাদ দুই সরকারই মানুষের অনুভূতিতে সুরসুরি দিয়ে একটু সুবিধা আদায় করে নিয়েছে, আবার ধর্মীয় রাজনীতি ও যুদ্ধপরাধিদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করে জিয়া সরকার এবং তার গড়া রাজনৈতিক দল অদ্যপি সুযোগ সুবিধা নিচ্ছে। সাধারণ হিসেবে এটা জনপ্রিয় সিদ্ধান্ত না হলেও রাজনৈতিক ময়দানে সৈন্য সামন্ত বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। এটা বিগত কয়েকটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ও বিএনপি প্রমাণ করেছে। তাদের দলের গঠন সামরিক ল্যাবরেটরিতে হলেও তারা বিশাল জনসমর্থনের অধিকারী হয়ে গেছে ইতোমধ্যেই।

১৯৯১ সালকে যদি গনতন্ত্রে উত্তরণের সময় বিবেচনা করা হয় তার পরবর্তী ২১ বছরে তিন মেয়াদে প্রায় তিন বছর ছিল অনির্বাচিত সরকার ( এখানে তিনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বুঝানো হয়েছে)। বাকি ১৮ বছর আমরা দেখেছি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত সরকারের শাসন। এই আঠারো বছরে দুই শাসক দল বা জোটের কার্যক্রম পর্যালোচনা করেই মানুষ আজকাল রাজনৈতিক ভাবে কিছুটা হতাশ হয়ে পড়েছে। কারণ এই সময়গুলোতে মানুষ দেখেছে সরকারগুলো বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়েছে, অকার্যকর সংসদ, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বলতা, সাংঘরষিক রাজনৈতিক পরিস্থিত, আমলাতন্ত্রের দলীয়করণ, সিভিল সোসাইটির শ্রেণী চরিত্রে দলীয় আবরণ, মিডিয়ার অনাকাংখিত ভূমিকা, অস্থিতিশীল বিশ্ববিদ্যালয় আরও অনেক নেতিবাচক জিনিস। যেগুলো প্রত্যক্ষভাবেই সুশাসনের অন্তরায়। এসব অনিয়মগুলো খুবই দৃশ্যমান হওয়াতে ইত্যবসরে বাংলাদেশের যতটুকু অর্জন হয়েছে, তা মানুষের চোখের সামনে খুব একটা প্রতিফলিত হয় নি।

তাছাড়া স্বাধীনতা-উত্তর রাজনীতিকরা জনমান্য চরিত্র অর্জন করতে পারেননি বলেই তরুণদের আস্থা নষ্ট হয়েছে৤ অনেকের মনেই বাংলাদেশের তরুণদের ভাবনার এই প্রতিফলন যুগপৎ আশা-নিরাশার সঞ্চার করেছে। আশাটা হলো এখানে, বাংলাদেশের তারুণ্য নিয়ে হতাশায় ভোগার কিছু নেই; কারণ শত অপচেষ্টা সত্ত্বেও তাদের একটা বড় অংশ অনেক বেশি সচেতন। নিরাশ হতে হয়েছে এ জন্য, রাজনীতি সম্পর্কে এ দেশের তরুণদের মনে যে বিষবাষ্পের সৃষ্টি হয়েছে, তা শুভলক্ষণ নয়। কারণ রাজনীতি ভিন্ন কোনো সমাজ, দেশ ও জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। এ দেশের প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে রাজনীতিই ছিল বড় নিয়ামক শক্তি। এই রাজনীতিই আমাদের ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠা করেছে, সর্বোপরি স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করে দেশমাতৃকার শৃঙ্খলমুক্তি ঘটিয়েছে। দৃষ্টান্ত আরো আছে এবং এগুলো এখানে নতুন করে তুলে ধরা নিষ্প্রয়োজন। আজ রাজনীতির কিংবা যাদের দ্বারা রাজনীতি পরিচালিত, তাদের প্রতি এ দেশের তরুণদের এমন বিদ্বেষমূলক মনোভাবের যথেষ্ট হেতু আছে। এ দেশে রাজনীতি কিভাবে তার শ্রী হারিয়েছে, কিভাবে রাজনীতিকদের হাত থেকে রাজনীতি ফসকে গিয়ে অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের মুঠোবন্দি হয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে অসংখ্য ক্ষত সৃষ্টি করেছে, তাও আমাদের অজানা নয়। আজকের তরুণরা এ বিষয়গুলো খুব ভালোভাবেই আত্মস্থ করতে সক্ষম হয়েছে।
গত সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ ভোটার ছিল তরুণরা। দিনবদলের সনদ তাদেরই উৎসর্গ করা হয়েছিল। তাদের ৭০ শতাংশই বলেছে, দেশ সঠিক পথেই চলেছে। ডা. দীপু মনি এই বৃহৎ অংশের স্বীকৃতিকে ব্যাপক ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে বিবেচনা করেছেন। সন্দেহ নেই, ক্ষমতাসীনদের কাছে এমন স্বীকৃতি অবশ্যই ইতিবাচক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু তাঁরা কি একই সঙ্গে এ বিষয়টিও স্বীকার করে নেবেন, এই স্বীকৃতি তাঁদের কাছে যতটা না আত্দতৃপ্তির, তার চেয়ে ঢের বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়ার বড় ধরনের দায়? আমাদের দুর্ভাগ্য, এই সতর্ক বাণী অথবা সতর্ক চিহ্নগুলো এ দেশের রাজনীতিক তথা আমাদের ভাগ্যনিয়ন্ত্রকরা খুব একটা আমলে নিতে চান না। তবে তাঁদের এখন গভীরভাবে মনে রাখার সময় এসেছে, এ দেশের জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশকে নানাভাবে অচেতন করে রাখার ব্যাপক অপচেষ্টা সত্ত্বেও তারা সচেতন। এটি অবশ্যই দেশ-জাতির জন্য শুভ লক্ষণ। কারণ আজকের তরুণরাই দেশের আগামী দিনের কর্ণধার। আজ রাজনীতির প্রতি তরুণদের এই অনীহার দায় রাজনীতিবিদরা এড়িয়ে যেতে পারেন না।
ব্রিটিশ কাউন্সিল পরিচালিত 'বাংলাদেশের আগামী প্রজন্ম' শীর্ষক ওই জরিপ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশের তরুণদের ৭৪ শতাংশ রাজনীতিতে আগ্রহী নয়। ৩৬ শতাংশ মনে করে, ছাত্ররাজনীতি শিক্ষাঙ্গনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং ২৫ শতাংশ তরুণের মতে, ছাত্ররাজনীতি দলীয় রাজনীতির প্রভাবমুক্ত হওয়া উচিত। এ রকম কাজ ব্রিটিশ কাউন্সিল আরো ৯টি দেশে করছে। এক বছর ধরে ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী দুই হাজার ১৬৭ জন তরুণের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে। জরিপ পরিচালনা করেছে ড্যাটা ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা। প্রতিবেদনে তরুণদের ইচ্ছা, আগ্রহ, মতামত, চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গির বেশ কিছু অজানা দিক বেরিয়ে এসেছে। লক্ষ করা গেছে, ৭৪ শতাংশ তরুণ রাজনীতিবিমুখ হলেও ৯৬ শতাংশ তরুণ সমাজসেবায় যুক্ত হতে আগ্রহী এবং ৯৫ শতাংশ নিজ নিজ এলাকার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক। ৮৮ শতাংশ তরুণ নিজেদের সুখী কিংবা খুব সুখী বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছে। ৭০ শতাংশ তরুণ মনে করে, সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশ সঠিকভাবেই এগোচ্ছে। ৪১ শতাংশ তরুণ জানিয়েছে, তারা বেশি আয়, পড়াশোনা এবং দেশে পছন্দসই চাকরি না থাকায় বিদেশে যেতে আগ্রহী। তরুণদের ৭৩ শতাংশ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। তবে ৮৫ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে না। তরুণরা তাদের জীবনের আদর্শ হিসেবে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও কবি কাজী নজরুল ইসলামকেই পছন্দ করেছে। এই জরিপে আন্তর্জাতিক প্রিয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নাম উঠে এসেছে, যিনি বিশ্বে পরিবর্তনের ডাক দিয়েছিলেন।
দেশের তরুণদের ওপর এ ধরনের জরিপ কাজ এর আগে হতে দেখা যায়নি। ব্রিটিশ কাউন্সিল এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করায় তারা অভিনন্দন পেতেই পারে। দেশের তরুণের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ বা প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি। এই বিপুলসংখ্যক তরুণ নাগরিকের চিন্তাভাবনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা-আগ্রহ ইত্যাদি সম্পর্কে গবেষণা-সমীক্ষার কোনো উদ্যোগ এযাবৎ সরকারি-বেসরকারি কোনো তরফেই লক্ষ করা যায়নি। প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি তরুণের মধ্যে মাত্র দুই হাজার ১৬৭ জনের মতামতের মধ্যে গোটা তরুণসমাজের অভিমত প্রতিফলিত হয়েছে এবং এ মতামত প্রশ্নাতীত, এমনটি মনে করার অবকাশ অবশ্যই নেই। তবে তরুণদের মনমানসিকতার একটা চিত্র এতে উঠে এসেছে, এর মূল্য কোনো অংশেই কম নয়। অবজ্ঞা কিংবা উড়িয়ে দেওয়ারও কোনো অবকাশ নেই। জরিপে অংশ নেওয়া তরৃুণদের মতামতের মধ্যে ইতিবাচক, নেতিবাচক দুটি দিকই আছে। তুলনামূলক বিচারে ইতিবাচক দিকই বেশি। দেশের যে আর্থসামাজিক অবস্থা, তাতে অধিকাংশ মানুষেরই নিজেদের সুখী ভাবা কঠিন। অথচ তরুণদের অধিকাংশই নিজেদের সুখী বলে দাবি করেছে। এর মধ্যে তাদের যে আত্দতুষ্টির ভাব প্রকাশিত হয়েছে, তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। তরুণরা যে দেশ ও সমাজ নিয়ে গভীরভাবে ভাবে, সে তথ্যও বেরিয়ে এসেছে। তাদের দায়িত্ববোধের অকুণ্ঠ প্রশংসা করতেই হয়। আজ যারা তরুণ, তারাই আগামী দিনে হবে জাতির রাজনীতির কাণ্ডারি, রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারক ও পরিচালক। তারা যদি রাজনীতিবিমুখ হয়, রাজনীতি থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখে, তবে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় নেতৃত্বের ক্ষেত্রে শূন্যতা সৃষ্টি হতে বাধ্য, যা কোনো বিবেচনায়ই কাম্য হতে পারে না। উৎকণ্ঠার সঙ্গে বলতে হয়, রাজনীতিতে তরুণসমাজের এই অনীহা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অতীতে রাজনীতির ব্যাপারে তরুণরা বরাবরই ছিল উৎসাহী। জরিপে অংশ নেওয়া তরুণরা যে দুজন জাতীয় মহানায়ককে তাদের জীবনের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছে, তাঁরা দুজনই ছিলেন রাজনীতি, স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বঙ্গবন্ধুর কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। আর ব্রিটিশের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের লড়াইয়ে কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন এক অকুতোভয় সৈনিক। তরুণরা তাদের জীবন থেকে রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে রাখার পক্ষে মত দিলেও আদর্শ হিসেবে বেছে নিয়েছে তাঁদেরই। রাজনীতিকরা যদি রাজনীতিতে মহৎ আদর্শ স্থাপন করতে পারতেন, তাহলে কি তরুণরা এ রকম রাজনীতিবিমুখতা প্রদর্শন করতে পারত? বিষয়টি রাজনীতিবিদদের গভীরভাবে অনুধাবন করা জরুরি। রাজনীতিকে তরুণ প্রজন্মের আগ্রহের বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হবে তাঁদেরই। জনমান্য চরিত্র হিসেবে নিজেদের পরিচয় যদি তাঁরা নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে তরুণরা রাজনীতির প্রতি ফের আকৃষ্ট হবে, তাতে সন্দেহ নেই।
আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি, এ দেশের রাজনীতির অঙ্গনে এখনো অনুকরণীয়, দৃষ্টান্তযোগ্য, সৎ, নিষ্ঠাবান, ত্যাগী অনেক রাজনীতিবিদ আছেন। পাশাপাশি একই সঙ্গে এও বলতে হয়, রাজনীতির মাঠে তাঁরা অনেক বেশি কোণঠাসা কিংবা দূরে অবস্থান করছেন জনকল্যাণের ধারক মুখোশধারী কিছুসংখ্যক নীতিহীন অসাধু রাজনীতিকের দাপটে। এই অসাধুরা মহা ক্ষমতাবান ও বিত্তের দিক থেকে পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান করছেন। সন্দেহ নেই তাঁদের অনেকেরই এসব প্রাপ্তি সোজাপথে নয়, বক্রপথে এবং এ পথটা সাধু রাজনীতিকরা বরাবরই বর্জন করে থাকেন। ক্রমেই এই বক্রপথে যাতায়াতকারীদের সংখ্যা বাড়ছে, উদ্বেগটা সেখানেই। এ দেশের তরুণসমাজের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ তাঁদের প্ররোচনায় এই বক্রপথে গিয়েই অস্বচ্ছ জলে গা ভাসিয়েছে এবং এর নানামুখী বিরূপ প্রভাব পড়ছে সমাজে। ক্ষমতাবান, নীতিহীন রাজনীতিক যাঁরা রাজনীতির মাঠে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন, তাঁরা নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থকরণের লক্ষ্যে তরুণদের ব্যবহার করে দেশ-জাতির যে সর্বনাশ ঘটাচ্ছেন, তা এখনই বন্ধ না হলে অবশ্যই আরো বড় ক্ষতের সৃষ্টি করবে এবং তা হয়ে দাঁড়াবে ভয়ংকর। রাজনীতি প্রকৃত রাজনীতিবিদদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়ার কাজটি বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দুরূহ বটে, তবুও এ কাজটা সৎ রাজনীতিকদেরই করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, সচেতন তরুণসমাজ তাদের প্রহরী হবে, সঙ্গী হবে এবং রাজনীতির হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারের পথটা কণ্টকমুক্ত করতে সাহায্য করবে। এখন প্রয়োজন রাজনীতির গণবিরোধী ধারার জায়গায় সুস্থ ধারার রাজনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার অতিজরুরি প্রয়োজনে সচেতন তরুণদের সম্পৃক্ত করা। যে তরুণরা সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে চায়, তারা বিরাট সামাজিক শক্তি হিসেবে দেশকে বদলে দেওয়ার কর্মযজ্ঞে যুক্ত হতে সক্ষম। এদের জাতীয় উন্নতিতে জড়িত করার দায়িত্ব দেশের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন নীতিনির্ধারক ও রাজনীতিবিদদের।
আশার কথা, তরুণরা দৃঢ় প্রত্যয়ে বলেছে, তারা 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ে তুলতে চায়। কিন্তু এখনো দেশের ৮৫ শতাংশ তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পায় না। বেশির ভাগ গ্রামীণ তরুণ-তরুণী এখনো ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। সুতরাং ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ-সুবিধা অবশ্যই গ্রামে ছড়িয়ে দিতে হবে। গ্রাম ও শহরের মধ্যকার বৈষম্য দূর না করতে পারলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা কিছুতেই সম্ভব নয়। এখন বিশ্বজুড়ে একটি মানবসমাজ গড়ে উঠছে। বাংলাদেশ একটি জনবহুল দেশ। সুতরাং যারা জীবিকার বিশেষ সুবিধার প্রত্যাশায় বাইরে যেতে চায়, তাদের দোষ দেওয়া যায় না। এটা বিশ্বায়নের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তরুণরা দেশ গঠনে নারীর ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তারা মনে করে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা বাড়ানো উচিত। এও শুভ লক্ষণ। চারদিকের দুর্বিপাক সত্ত্বেও আমাদের যুবসমাজ যে হতাশার গহ্বরে পতিত হয়নি এবং এখনো নিজেদের সুখী মনে করে তা খুব আশাপ্রদ। জাতিকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের চাই আশাবাদী প্রাণবন্ত যুবসমাজ। সেই আশার আলো জ্বেলে কিছু তরুণ এগিয়ে এলেও বাকিরা এখনো আছে পুরোনো ধারনান নিয়ে।

আমরা একটু খেয়াল করলে দেখবো যে, কোন জাতির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, দেশীয় নীতি, উন্নতি এবং সামগ্রিকতা সবই রাজনীতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়। আর রাজনৈতিক কর্মকান্ডে নতুন প্রজন্মের অংশ গ্রহণই সহজ করে দেয় প্রতিটি পর্ব। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর কথা না হয় বাদ-ই দিলাম, আমাদের বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করলেও দেখা যায়, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধসহ যেকোনো আন্দোলনে নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক স্বকীয় অংশগ্রহণ আন্দোলনকে বেগবান করে তুলেছিল; কিন্তু এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা নিজেদের রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চেষ্টা করে। অনীহা প্রকাশ করে রাজনীতিতে, তারা সক্রিয় বা নিষ্ক্রিয় কোনোভাবেই জড়াতে চায় না রাজনীতিতে। ফেসবুকের প্রোফাইল ইনফরমেশনের রাজনৈতিক মতামত প্রকাশের স্থানে বেশিরভাগ তরুণ-তরুণী লিখে থাকেন তারা রাজনীতিতে আগ্রহী নয়, রাজনীতিকে ঘৃণা করে এধরনের বাক্য; কিন্তু রাজনীতিতে তরুণদের কেন এ অনাগ্রহ, কেনইবা তারা রাজনীতিকে ঘৃণা করে এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে তৈরি করেছি নিজেকে বিভিন্ন বই আর গবেষনাপত্র থেকে। যা জানা যায়, তা হলো- বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে কিংবা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সবাই এক হয়ে ভাষার জন্য, দেশের জন্য যুদ্ধ করেছিল। তখন দেশ, দেশের মানুষ সংকটের মধ্যে ছিল; কিন্তু স্বাধীনতার পরও সে সংকট কাটেনি। তবে ঐক্যের যে জায়গা, বন্ধনের যে জায়গা সেটা কেটে যাচ্ছে ক্রমাগত। আমাদের প্রজন্মের দু-একজন ছেলেমেয়ে যারা রাজনীতিতে আসছে তারা শুধু তাদের ক্যারিয়ারের জন্য রাজনীতি করে। আর তাতে শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থ বা সচ্ছলতা প্রাধান্য পায়। তাই অনেকে ধরে নেয়, ছাত্ররাজনীতি একটি অস্থিতিশীল বিষয়। অনেকে এসব ঝামেলার মধ্যেই জড়াতে চায় না। নিজের যেটুকু সামর্থ আছে সেটুকু নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে চায়। রাজনীতিতে তরুণদের অনাগ্রহের বিষয়টি একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করলে দেখা যাবে যে, আমরা তরুণরা যে সুষ্ঠু রাজনীতির কথা চিন্তা করি তা কোনো দলীয় সরকার দিতে পারে না। আর এর প্রধান কারণ হল তাদের ধ্যান-ধারণার পরিবর্তন না হওয়া। আর এ দূষিত রাজনীতির প্রভাবে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে তরুণরাই, তাই রাজনীতির বিষয়ে ধীরে ধীরে তরুণদের আগ্রহ হারাচ্ছে।
যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন জোটের প্রধান শরিক দলটি দেশের তরুণ সমাজকে তাদের দলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। তাদের ৬৩তম বর্ষপূর্তির দিনে দলের সাধারণ সম্পাদক দেশের তরুণদের উদ্দেশে বলেছেন, তারা যেন দলে যোগ দেন অথবা সক্রিয়ভাবে দলকে সমর্থন করেন। তাঁর দলের আত্মত্যাগের ইতিহাস রয়েছে এবং চলার পথে মাঝে মধ্যে অসুবিধায় পড়লেও দলটি তার লক্ষ্যে অবিচল আছে।গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দিন বদলের অঙ্গীকার করে একটি ডিজিটাল বাংলাদেশ উপহার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। ধারণা করা হয় , এই শ্লোগান তরুণদের ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট করে এবং তাদের একটা বড় অংশ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়।
যে নতুন প্রজন্মের রায়ে যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে। সেই নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের একজনকে কুপিয়ে নির্মমভাবে খুন করেছে ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এমন পরিস্থিতি তৈরি হওয়াতে যে রাজনীতির প্রতি অনীহা তা কিন্তু নয়, অনেক তরুণই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চান। তবে যারা নতুন নেতৃত্বে আসতে চান তারা পারিপাশ্বর্কি চাপ, কালো টাকার প্রভাব, দলীয় সমর্থন, স্বজনপ্রীতি, সুযোগের অভাব, উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতিতে আসার ধারা এসব কারণে রাজনীতিতে আগ্রহী হওয়া সত্ত্বেও সুযোগ পান না। শুধু এ কারণেই নয়, এখন ধ্বংসাত্মক রাজনীতির দৌরাত্ম্য এত বৃদ্ধি পাচ্ছে যে রাজনীতি তরুণদের কোনো নিরাপত্তা দিতে পারছে না বরং সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলে রাজনীতিতে তরুণরা আগ্রহ হারাচ্ছে। তরুণরা যদি রাজনৈতিকভাবে সচেতন হয়, তাহলে দেশের এ অস্থীতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ অনেককাংশে লাঘব করা সম্ভব। তরুণা যদি রাজনীতিতে আসতে চায় তাহলে তাদেরকে ধ্বংসাত্মক রাজনীতির পরিবর্তে জনকল্যাণমূলক রাজনীতির কথা ভাবতে হবে। দেশে রাজনীতির নামে যে অপরাজনীতি চলে তা থেকে মুক্তির জন্য তরুণরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে রাজনীতির ধারা, নীতি ও আদর্শের কোনো পরিবর্তন না হলে তরুণসমাজ রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাবে। এ জন্য জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।

এই তাগিদ থেকে অনেকেই প্রত্যয়ের সাথে পথ চললেও নতুন প্রজন্ম নিরাপত্তাহীনতার কারনে স্বতস্ফূর্ত অংশ গ্রহন করতে পারে না। কেননা, নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক ধারনায় কতগুলো ভুল তথ্য এসে ভর করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ হলো ১. রাজনীতি করতে হলে প্রচুর অর্থ থাকতে হবে, দলের অথবা দলের নেতাদের। ২. জনবল কম হলে কোনভাবেই সফলতা সম্ভব নয় এবং ৩. অগ্রজদেরকে ব্যাতিত একটি রাজনৈতিক সংগঠন কোনভাবেই হালে পানি পাবে না। এই বিষয়গুলোর ব্যাপারে আমার বক্তব্য হলো- ১.পৃথিবীতে তরুণদের এমন অনেক আন্দোলন আছে, যা আর্থিক বিষয়ের উর্দ্ধে থেকে সফল হয়েছে। ২. প্রাথমিক অবস্থায় জনবল কম থাকলেও সততা এবং কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমেও লক্ষ-কোটি মানুষকে সম্পৃক্ত করা সম্ভব। এবং ৩. যেহেতু তরুণদের মাধ্যমেই সকল বিজয় এসেছে, সেহেতু অগ্রজগণ সাথে না থাকলেও এগিয়ে গেলে দৃঢ় প্রত্যয়ে আসবে বিজয়।

১৯৭১ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দীর্ঘ পরিক্রমায় নানা ঘাতপ্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে বাংলাদেশ। এই দীর্ঘ সময়ে আমাদের অর্জনের তালিকাও কম নয়। নোবেল শান্তি পুরস্কার, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, পাটের জিন, আবিষ্কার, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, এভারেস্ট বিজয়সহ অসংখ্য অর্জন আমাদের আগামীর পথ চলার প্রেরণা। সামাজিক সূচকেও প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহ থেকে আমরা বেশ এগিয়ে। বেড়েছে নারী শিক্ষা এবং কর্মসংস্থান। স্বাস্থ্যসেবা বৃদ্ধি, শিশু মৃত্যুর হার কমানোসহ অন্যান্য বিষয়েও যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। বিশ্বশান্তি রক্ষায় আমাদের সেনাবাহিনীর অবদানের পাশাপাশি পোশাক শিল্পেও আমরা অন্যান্য রাষ্ট্র থেকে এগিয়ে। প্রবাসীদের আয়ের সুবাদে চলতি বছরেই আমাদের রিজার্ভ ছাড়িয়েছে ১১ বিলিয়ন ডলারে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কতটুকু ধারণা করে তারা ? কিংবা বলা যায় দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে তাদের কি ভাবনা ? এসব প্রশ্ন সামনে রেখেই এগিয়ে যেতে হবে আমাদেরকে, সংগঠিত হতে হবে বাংলাদেশের সুন্দর আগামী গড়ার লক্ষ্যে। পলিটিক্যাল ভিউ কিংবা রাজনৈতিক দর্শনে তারা প্রত্যেকেই স্টেনাস লেখে ঐধঃব চড়ষরঃরপং/ঘড়ঃ রহঃবৎবংঃবফ.
এর বাইরে রাস্তা তৈরি করার সময় এখন। নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক সচেতনতাই আনতে পারে রাজপথে শান্তির সুবাতাস। যা স্বাধীনতার পর ৪২ বছরে একবারের জন্যও পায়নি নতুন প্রজন্ম। এখন এই পরিস্থিতিতে তৈরি হতে হবে বীর বিক্রমে। রাজনীতির সাথে সাথে প্রযুক্তির এই বিশ্বে স্বাধীনতা অক্ষুন্ন এবং সমুন্নত রাখতে আমাদের অবশ্যই প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবন এবং উন্নতি প্রয়োজন। উন্নত বিশ্ব বর্তমানে পঞ্চম প্রজন্মের জ্িঙ্গ বিমান তৈরি করছে। গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে হ্যাকারদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তৈরি করছে রিমোট চালিত বিমান। এছাড়া পরমাণু প্রযুক্তি এখন প্রায় সকল রাষ্ট্রের নাগালে। এমতবস্থায় স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা কিংবা টক শো বাদ দিয়ে আমরা যদি সামরিকভাবে প্রযুক্তির বিকাশ না ঘটাই তবে পুনরায় নব্য সাম্রাজ্যবাদীদের পুতুলে পরিণত হব । তাই স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখতে চাই প্রযুক্তিক বিকাশ। যার দায়িত্ব বর্তায় বর্তমান সময়ের তরুণ-তরুণীর কাঁধে। তাই দেশকে এগিয়ে নিতে চাই নতুন প্রযুক্তি, নতুন উদ্ভাবন। গণমানুষের মুক্তির লক্ষ্য নিয়ে, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের। কিন্তু স্বাধীনতার দীর্ঘ ঘাত পেরিয়েও সেই স্বপ্ন আজও অধরা। তাই শোষণহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার যে আদর্শ নিয়ে দেশ স্বাধীন হয় তা যেন ভবিষ্যত প্রজন্ম লালন করে রাজনীতিতে আবির্ভূত হয়; এটাই এখন নতুন প্রজন্মের কাছে দেশ ও জাতির প্রত্যাশা। এই প্রত্যাশা পূরন করতে গিয়ে যদি নিজের-পরিবারের একটু কষ্টও হয়; তাও যেন নিবেদিত থাকে কালোহীন আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার জন্য।

অতএব, বাংলাদেশকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে পরিণত করতে তৈরি হতে হবে তথাকথিত রাজনীতির বাইরের বলয় নিয়ে। যে বলয়ে আর যাই হোক কথায় কথায় খুন হবে না, টেন্ডারবাজির নামে রক্তের হোলি খেলা হবে না, চাঁদাবাজির নামে আর্মস পাওয়ার দেখানো হবে না, দূর্নীতি হবে না; হবে না যাচ্ছে তাই কর্মকান্ডও। সবাইকে কালো নয় আলোর দিকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহবান জানিয়ে স্বাধীনতার চেতনাকে লালন করে রাজনীতিতে তৈরি হওয়ার বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি...
জয় বাংলা
মোমিন মেহেদী : কলামিস্ট ও আহবায়ক, নতুনধারা বাংলাদেশ(এনডিবি)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প বলেছে, বাংলাদেশ পুরোপুরি এনার্খীতে, তারা মাইনোরিটির উপর অত্যাচার করছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৬



৩ দিন পরে আমেকিকার ভোট, সাড়ে ৬ কোটী মানুষ ভোট দিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে; ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৫১ ভাগ। এই অবস্হায় সনাতনীদের দেওয়ালী উপক্ষে ট্রাম্প টুউট করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×