জীবনে প্রথমবারের মত কোন পাখি মারার পর কেমন অনুভব করেছিলেন?
কিশোর বয়সের এক দুর্ঘটনা আমাকে মানসিকভাবে আহত করেছিল এবং এখন পর্যন্ত আমি এরজন্যে অনুশোচনা করি।
আমাদের বাড়ির বাউন্ডারি দেওয়ালের ওপারে একটা ডোবা ছিল। সেখানে একটা ডাহুক পাখি প্রায় বিকেলে আসত। কালো রঙের ছোট্ট পাখি। আর কোথাও ডাহুক পাখি দেখতাম না বলে এই পাখিটা দেখতে আমার ভাল্লাগত। একদিন একটা করে করে ঢিল ছুড়ে মারলাম ওর দিকে যাতে তা জায়গা বদল করে।
কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে তা গিয়ে পরে ডাহুকটির ঠিক ঘাড়ে।
রক্তাক্ত হয়ে ডাহুকটি নেতিয়ে পরে।
ঘটনার আকস্মিকতায় আমি হতবিহবল হয়ে পড়ি।
খুব অনুশোচনা হয়েছিল এরপর।
তারপর থেকে এ ধরনের ভুল আর করিনি।
একটি ডাহুকের চেয়ে মানুষের জীবনের মুল্য অনেকগুণ বেশি।
কিন্তু পত্রিকা খুললেই দেখি প্রথম পাতা জুড়ে বেশ কয়েকটা তাজা খুনের খবর। যা আমাকে পত্রিকাবিমুখ করেছে। এর মানে এই নয় যে আমি খুনের সংবাদ এভয়েড করি।
পত্রিকা বা অন্যান্য মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই রাজনৈতিক কারণ ছাড়াও ধর্মীয় উগ্রতা, ছিনতাই, ডাকাতি, পারিবারিক কলহ, প্রেম-ভালবাসা এমনকি পুলিশের হাতেও মানুষ অহরহ খুন হচ্ছে।
এই যে যারা খুন করছে তারা প্রথম খুন করবার পর কেমন অনুভব করেছিল তা আমার ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে।
তাদের কি আমার মত অনুশোচনা হয়েছিল? অথবা খুন করার পর কি তারা মৃতদের নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখে না?
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে তাদের প্রথম অনুভুতিটা।
একটি প্রাণীর হৃদয় যদি অন্য একটি প্রাণীর হৃদয় ধারণ করতে না পারে তবে তা জড় পদার্থ বলাই শ্রেয়।
হৃদয়ে হৃদয় ধারন করাটা শৈশবেই শিখিয়ে দিতে হয়। শৈশবে যারা এমন শিক্ষা পায়না তারা বেপরোয়া ভাব নিয়ে বেড়ে উঠে।
একজন প্রাণী বা মানুষকে আহত থেকে নিহত করতে তার বিন্দুমাত্র হাত কাঁপে না। দেহ প্রকম্পিত হয়না। তাদের শুধু এটাই মনে হয়, দা ওয়ার্ক ইজ ডান।
খুন করে পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করে তারা ঠিক যেন আদিম মানুষ বা পশুর মত।
আমরা কি পারিনা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের শৈশবটা সুন্দর করতে? বিশুদ্ধতা দিয়ে তাদের হৃদয় পরিপূর্ণ করতে?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১১