গল্পের নাম: ঠাশ দি চড়....(পর্ব-১)
রোজার ঈদের আগে কোন একদিন কোন এক
মার্কেটে আমি ও আমার বন্ধু হাটছি আর হাটার সময় আকাশ
দিকে তাকিয়ে হাটলে যা হয়, আমি কারো সাথে ধাক্কা
খেলাম। ধাক্কা খেয়ে আমার আর ওই অজানা মেয়েটার
সব জিনিস পড়ে গেল। এমন অদ্ভুদ ঘটনার জন্য আমি
মোটেও তৈরি ছিলাম না। তাইকোন মতেআমার জিনিসগুলা
নিয়ে কেটে পড়তে চাচ্ছি। কিন্তু ধাক্কা খাওয়ার পর হঠাৎ
আমার চোখ পাশের মেয়ের দিকে গেল। আমার কেন
জূনি মনে হচ্ছে মেয়েটিকে আমি দেখেছি। এভাবে
কতক্ষন ছিলাম জানি না কিন্তু ঠাশ করে শব্দ হওয়ার পর আমার
ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটে আর শুনতে পেলাম মেয়েটি বলল,
চোখ কি পকেটে নিয়ে ঘুরেন। এই বলেমেয়ে দুটি
চলে গেল। ঘটনার রেশ কাটার পর আমার বন্ধু বলল:
মিদুল: এটা কি হল একটা মেয়ে এসে তোকে ঠাশ দি চড়
মেরে চলে গেল। তোর তো কচু গাছের সাথে
গলায় দড়ি দেয়া উচিত।
আমি: আমি চড়ের কথা ভাবছি নাা আমি ভাবছি মেয়েটার বান্ধবির
কথা।
মিদুল: ক্যা মামা ক্রাশ খায়া গিছো?
আমি: চুপ যা। আমি মেয়েটিক কোথায় যেন দেখছি। কিন্তু
কোথায় কোথায়? অহ নো।
মিদুল: কিরে আবার কি হল?
আমি: দোস এইটা ওই মেয়ে।
মিদুল: কোন মেয়ে? কি আবাল কথা কস?
আমি: আরে বেটা এটা ওই মেয়ে এটা অবম্তী।
মিদুল: মজা নিস? এখানে ও আসবে কোথা থেকে?
আমি: তমি কিভাবে জানবো? আর তুই এখানে থাক যতক্ষন
পর্যন্ত আমি না আসি বুঝলি।
এই বলে আমি দোকানের বাইরে এসে খোজাখুজি শুরু
করলাম। যতক্ষনে দেখতে পেলাম তারা ততক্ষনে শপিং
মলের দরজায়। আমি অবন্তীকে দেখার জন্য ভো-দৌড়
দিলাম। এই সময় দৌড়ে হয়ত উসাইন বোল্ট ও আমার সাথে
পারবে কিনা সন্দেহ। কিন্তু এত জোড়ে দৌড় দিয়েও লাভ
হল না। কারন তারা ততক্ষনে রিকসা করে চলে গেছে।
আমি এক বালতি আফসুস নিয়ে শপিং মলে ফিরে গেলাম।
রোজার ঈদ গ্রামের বাড়িতে করার পর আবার
যন্ত্রমানবের শহর ঢাকায় চলে আসি। রোজকার কোচিং,
ম্যাচের খাবার আর বিকেল বেলার খেলা। একদিন বিকেল
বেলা ত্রিকেট খেলীর সময় দেখলাম আমাদের ছাদ
থেকে তিন ছাদ পরে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে।
তারপর আমার এক বন্ধু সুন্দর একটা বিগ সট খেলল আর
বলল গিয়ে ওই মেয়েটার গায়ে লাগে। আমরা সবাই তড়িঘড়ি
করে বসে পড়ি। এভাবে কিছুক্ষন চলার পরে কথা উঠল
কে বল নিয়ে আসবে? হঠাৎ করে লক্ষ করলাম সবাই
আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি: ওই, আমার দিকে ওইভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? আমি
বল আনতে পারব না। আরে আমি তো খেলছিও না।
শাকিল: এই জন্য তো বল আনবি। তুই তো খেলিস নাই। তাই
তোকে কিছু বলবে না।
আমি: হুহ কিছু বলবে না। ভাই কেন তোরা আমাকে এ বলির
পাঠা বানাছিস বলতো?
মেরাজ: আরে কিছু হবে নাআমরা তো আছি। তুই কোন
টেনশন নিস না। যা গিয়ে সত্যিটা বলে বলটা নিয়ে আয়।
যদিও ওরা আমাকে আশা দিচ্ছে তবুও আমার কেন জানি
বিশ্বাস হচ্ছে না কারণ বন্ধুর আরেক নাম বাশ। দুরুদুরু মন
নিয়ে আল্লাহ নাম স্মরণ করে তিনটি ছাদ টপকিয়ে ওই
মেয়ে কাছে যেতেই মনে হল মেয়েটাকে এর
আগে কোথায় যেন দেখেছি কিন্তু বিষয়টাকে প্রাধান্য
না দিয়ে একটা কাশি দিয়ে বললাম,
আমি: আ... আ... আসলে আমার বন্ধুরা....
কথাটা শেষ করার আগেই ঠাশ করে একটা চড় বসিয়ে দিল
আমার গালে। আমি আবার মেয়েটিকে বললাম,
আমি: আপনি ভুল বুঝতেছে......
আবার ও একটা ঠাস করে শব্দ। ওফ কি মেয়ে রে বাবা পুরা
কথা শেষই করতে করতে দিচ্ছে না। আমি আবার বলতে
শুরু করলাম আর ওই মেয়ে আবার চড় মারতে আসে কিন্তু
এইবার আমি তার হাত ধরে বললাম,
আমি: আপনি ভুল বুঝতেচ্ছেন আমি তো খেলছিলাম না শুধু
দাড়িয়ে দেখছিলাম। ওই দেখুন ওরা দাড়িয়ে আছে এই
বলে আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি হালারপুতেরা কেউ নাই।
ততক্ষনে আমি মেয়েটার হাতও ছেরে দিছি। আর
মেয়েটার দিকে তাকাতেই আরেকটা ঠাশ। ওফ এতগুলা চড়
খেয়ে গাল আমার ব্যাথা করতে শুরু করছে। কোনমতে
সরি বলে, কান ধরে মেয়েটার থেকে বল টা নিয়ে
আসার সময় মেয়েকে জিঙ্গেস করি,
আমি: আচ্ছা আপনার নাম কি?
আর উত্তর আসে ঠাশ করে শব্দ। আমি আবার জিঙ্গেস
করলাম,
আমি: চড় তো অমেক মারলেন এবার তো আপনার নাম
বলুন?
মেয়েটি আবার আমাকে চড় মারতে আসে। কিন্তু এইবার
বিচক্ষনের সহিত নিরাপদ দুরুত্বে আমার আসি। এসে দেখি
হালারপুত গুলা বসে গল্প করছে। আমি তাদের কিছু ইচ্ছামত
টুট টুট টুট দিয়া চলে আসি রুমে। মেয়ের থেকে এতগুলা
চড় খাবার পর আমি বসে পড়ি বিছানায়।
বিকেলে পার্কে বসে আছি আর ঢাকার সৌন্দয দেখছি।
হঠাৎ করে লক্ষ করলাম একটা মেয়ে আমার দিকেই
আাসছে। একটু দুর থেকে মনে হল অবন্তী কিন্তু আর
কাছে আসার পর দেখলাম ছাদের ওই মেয়েটা। মেয়েটা
কাছে আসতেই আমার কলার ধরে ঠাশ ঠাশ করে চড়
মেরে বলতেছে,
মেয়ে: আমাকে বল মারা তাই না। মেয়ে দেখলেই টাঙ্কি
মারতে ইচ্ছে করে তাই না। আবার আমার নাম ও জানতে
চাস? থাম আজ তোকে দেখাছি মজা। আজ তোর একদিন
কি আমার য কয়দিন লাগে। আজ তোকে বোঝাবো কত
গমে কত আটা।
একটা মেয়ে যে আমাকে মারছে আর পার্কের
লোকগুলা যে আমাদের তাকিয়ে আছে এটা আমি বোঝার
সময়ই পাই নাই। এমন সময় মেয়ে আমাকে ধাক্কা দিয়ে
পুকুরের পানিতে ফেলে দিল।
পানিতে পররার সাথে সাথে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল।
ওফ মেয়েটার জন্য দেখি ঘুমিয়েও শান্তি নাই। স্বপ্নেও
কিনা এসে চড় মারে। মেয়েকে নিয়ে কিছু একটা
কররতে হবে। তাচ্ছাড়া মেয়েয়েটা শান্তি মত ঘুমতেও
দিবে না।
এমন ভয়াবহ স্বপ্ন না দুস্বপ্ন দেখার পর পরর্বতী ২দিন
আমি আর ছাদে যাই নি। আসলে এই যন্ত্রমানব ঢাকা শহরের
বিভিন্ন ব্যস্ততায় ছাদে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। ২দিন পর
বিকেলে ছাদে গিয়ে দেখি মেয়েটি তার বান্ধবীর
সাথে গপ্প করছে। তাদের দেখে আমিও চলে গেলাম
তাদের সাথে গপ্প করতে। ৩টি ছাদ টপকিয়ে মেয়েটির
কাছে গিয়ে বললাম,
আমি: হাই, কেমন আছ?
আর উত্তর আসল ঠাশ। আসলে ২দিন না আসার কারণে
একপ্রকার ভুলেই গেছিলাম যে মেয়েটির সাথে দুরুত্ব
বজায় রেখে কথা বলতে হয়। এবার দুই ধাপ পিছিয়ে গিয়ে
বললাম,
আমি: কেমন আছ?
পাশ থেকে তার বানধবী বলল,
বান্ধবী : তর উত্তর কি আপনাকে দিতে হবে?
আমি: হ্যালো মিস, যাকে প্রশ্ন করছি তাকে উত্তর দিতে
দিন।
বান্ধবী: আর যদি সে না দেয়?
আমি: মিস, একটা কথা বলুন তো?
বান্ধবী : জি।
আমি: আপনি কি ওর চামচা যে ওর হয়ে বারবার কথা বলছেন।
কথাটি শোনার পর বান্ধবী মুখ গোম করে ফেলে।
গান্ধবীর অপমান সহ্য করতে না পেরে মেয়েটি এবার
মুখ খুলে
মেয়ে: ওই হ্যালো মুখ সামলে কথা বলেন। আর আপনার
সাহস তো কম না, মেয়েদের হোষ্টেলের ছাদে
আসচ্ছেন দারোয়ানকে ডাকব?
আমি: চলে যেতে বলছ এই কথা ভালোভাবে বললেই
তো পারো আবার দারোয়ান ডাকার দরকার কি?
.
চলে যেতে গিয়ে আবার মেয়েটির কাছে এসে
জিঙ্গেস করি,
আমি: বাই দা ওয়ে, তোমার নাম কি?
আর উত্তর কি আসল জানেন ঠাশ। আমি আবার ভুলে বিপদ
সীমানা পার করে ফেলেছি। কিছুটা পরয়জিত সৈনিকের
মতো ম্যাচে ফিরে আসলাম। পরবতী ৪ দিন একই ঘটনয়র
একশান রিপ্লে চলল। ৫ম দিন ছাদে গিয়ে দেখি মেয়েটা
একাই দাড়িয়ে আছে। আজ কিছুটা ফ্রী হয়ে মেয়েটির
সাথে কথা বলা যাবে। যথারীতি আমি ৩টা ছাদ পার হয়ে
মেয়েটির কাছে গেলাম।
আমি: কেমন আছ?
মেয়েটি অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ তাকে
ডাকছে সে দিকে তার কোন মাথা ব্যথা নেই। আমিও
তাকে আর বিরক্ত করলাম না। সে যেমন ঢাকার সৌন্দর্য
দেখছে, আমি তেমনি তাকে দেখছি। মেয়েটিকে
দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা নেমে এল বুঝতে
পারিনি। আসলে কাছের মানুষগুলো পাশে থাকলে সময়
প্রয়োজনের তুলনায় দ্রুত চলে যায়। যাইহোক,
মেয়েটি যখন রুমে যাওয়ার জন্য পিছনে ঘুরে তার চুলে
ঝাপটা এসে আমার চোখে লাগে। আমি চোখ ধরে
আছি। আর মেয়েটি, এমনিতে পিছনে কেউ থাকবে
ভাবেনি তার উপর আবার চোখে ব্যাথা পাওয়া দেখে কিছুটা
ঘাবরে যায়। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,
মেয়ে: আপনি আবার? কখন আসছেন? চোখে কি
হয়েছে?
আমি: আসছি ঘন্টা খানেক হলো। আর তোমার চুলের
ঝাপটা এসে আমার চোখে লাগছে।
মেয়ে: লাগছে বেস হয়েছে। আরও জোরে লাগুক
আপনি কানা হয়ে যান। যত্তসব ঝামেলা কোথা কার।
কথাগুলো বলে মেয়েটি চলে যাচ্ছে। কিন্তু আমি যে
কাজে এসেছি তাতো করাই হলো না। আর মেয়েটি
হনহন করে চলে যাচ্ছে। তাই উপায় না পেয়ে মেয়েটির
হাত ধরলাম। মেয়েটি পিছনে ঘুরে প্রথমেই ঠাশ করে
একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বলে,
মেয়ে: আপনার সাহস তো কম না। আপনি আমার হাত
ধরেছেন। হাত ছাড়ুন বলছি। না হলে আমি কিন্তু চিৎকার করব।
আমি: চিৎকার কররার দরকার নেই। আমি দুটো কথা বলতে
চায়। first যেহুতু তমি তোমার নামম বলছ না তাই আমি
তোমার নাম রাজরাণী রাখলাম you know it suits you. আর
২য় কথা হল গত ৪ দিন ধরে আমি লক্ষ করলাম তোমার হাত
কোন চুড়ি নাই তাই তোমার জন্য আমি লাল চুড়ি আনছি,
তোমার লিপবিক্টের সাথে ম্যাচ করে। তো চুড়িগুলা তুমি
পড়বে না আমি পড়িয়ে দিব?
রাজরাণী: তোর ওই চুড়ি আমি কোন দিনই পড়ব না।
(খেপপা গেছে মনে হয়)
আমি: বুঝতে সোজা আগুলে ঘি উঠবে না।
তারপর আমি রাজরাণীকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে
দু হাতে চুড়ি পড়িয়ে দিলাম। চুড়ি পরানোর সময় আমরা খুব
কাছাকাছি চলে আসি। এতটাই কাছে যে তার কপাল আমার
কপালের সাথে, তার নাক আমার নাকের সাথে লেগে
আছে আমি তার প্রতিটা নিশ্বাস অনুভব করতে পারছি। রাগে
ঘৃনায় তার শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত থেকে দ্রুত হচ্ছে। ঘটনা
কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে ভেবে আমি তাকে ছেড়ে
দিয়ে চলে যাচ্ছিলাম এমন সময় রাজরাণী বলল,
রাজরানী: টুট টুট টুট। তোর এত রড় সাহস তোকে আমি
দেখে নিব। মেরে হাড় মাংস এক করে দিব।
আমি পিছনে ঘুরে বললাম,
আমি: কাকে দিয়ে মাররাবে বয়ফেন্ড?
রাজরানী: হ্যা, দরকার হলে গুণ্ডা ভাড়া করব।
আমি: আচ্ছা দেখা যাবে। কাল তাহলে তোমার বিএফ কে
নিয়ে চারটায় পার্কে এস।
এবার উত্তরের অপেক্ষা না করে চলে আসলাম। পার্কে
বসে আছি আর ভাবছি রাজরানী এখনও আসছে না কেন?
হটাৎ কররে কে যেন আমার কলার ধরে বলে, জয়? আমি
বললাম,হ্যা।। তারপর কিছু উত্তম-মাধ্যম চলল। আমাকে বেশ
কিছুক্ষন মারার পরে পাশের পুকুরে ধপাশ কররে ফেলে
দেয়। সাথে সাথে আমার ঘুম ভেঙ্গে যায়। আমি টানা
৩গ্লাস পানি খায় আর মনে মনে ভাবি আল্লাহ তুমি আমাকে
কার কাছে পাঠালা। শান্তিমত ঘুমও পাড়তে দেয় না। তোমার
এই বান্দার উপর একটু রহমত দান কর। স্বপ্ন যদি এমন ভয়াবহ
হয় তাহলে বাস্তব কেমন হবে। কি যে কাল কপালে???
.
.
বি.দ্য.ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। আমি আমার
আগের গল্পে মেয়েটির নাম বলেছিলাম। আর এই গল্প
থেকে ভাবুন আমি মেয়েটির কোন নাম বলিনি। ধন্যবাদ)