বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো ও বৃহৎ রাজনৈতিক দলের অন্যতম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনেও মুখ্য ভূমিকা পালন করে। জাতির পিতাকে হত্যা করা হলে দলটিকে ক্ষমতায় যেতে দীর্ঘ ২১ বছরের জন্য হোচট খেতে হয়েছে। ৯৬-২০০০ সালে ক্ষমতাসীন হয়ে দলটিকে ৮ বছরের হোচট। ২০০৮ সালে ফের ক্ষমতায় এসে দলটির মাথায় ভূত চাপলো। আমরা জানি এটি আমাদের বিচক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর কাজ নয়, এটি নির্ঘাত তার ঘাড়ে চেপে বসা দুচার টা শয়তানের অসওয়াসার সমন্বয়। না হলে কেনো দলটি আজ খাদের কিনারে পড়তে যাবে? অথচ এই দলটিই ছিল তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষার শেষ আশ্রয় স্থল। শেষ! আজকে যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন দেয় তবে ৭০% ভরাডুবি হবে এটা দলটি ভালো করে জানে। মানুষও জানে তবে বলবে না।
অন্যদিকে জঙ্গি সম্পর্কে বিএনপির একসময়ের দাপুটে নেতা লুৎফুজ্জামান বাবরের বিখ্যাত সেই উক্তি “উই আর লুকিং ফর শত্রুজ।” বিএনপির আরো একটি বিখ্যাত বচন ছিল- “বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি।” অবশ্য পরে বাংলা ভাইকে ফাঁসি দিয়ে প্রমাণ করেছে যে তাদের বাণী মিথ্যা এবং মিডিয়াই সঠিক ছিল। জামায়াতের জঙ্গি সংশ্লিষ্ঠতা বহুবারই প্রমাণ হয়েছে। আমরা সহ এটা বিএনপিও জানে। জামায়াতের অঙ্গসঙ্গঠন ইসলামী ব্যাংককে জঙ্গি সংশ্লিষ্ঠতার জন্য জরিমানাও করা হয়। ইবনে সিনা হাসপাতালসহ বেশকিছু প্রতিষ্ঠান জঙ্গিদের অর্থায়ন, সেবা-চিকিৎসা প্রদান করে আসছে। এছাড়া বিএনপির শাসনামলে ১০ ট্রাক অস্ত্রের চালান বিষয়ে তারেকসহ অনেকেরই সংশ্লিষ্ঠতা পাওয়া গেছে যা আমরা সবাই জানি, তবে শুধু সরকার ও সরকারি দল চুপ। হয়ত কোনো অদৃশ্য কারণ থাকতে পারে। সেদিক নিয়ে নতুন করে বলার কিছুই নেই।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জঙ্গিবাদের উত্থান বিএনপির ২০০১-২০০৬ শাসনামলে হলেও এর সার্বজনীন বিস্তার ঘটেছে বর্তমান আওয়ামী শাসনামলে। ২০১৩ সালে হেফাজত উত্থান এবং তৎপরবর্তী আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকার লক্ষ্যে হেফাজত-তোষণ দেশের অন্যান্য সকল জঙ্গিদের উত্থানে ধনাত্মক ভূমিকা পালন করেছে। বর্তমানে দেশে প্রায় একশটিরও বেশি তথাকথিত ইসলামী সংগঠন রয়েছে, যাদের অনেকেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জঙ্গিবাদের সাথে জড়িত। আর এসব জঙ্গিবাদের বিরোদ্ধে কিছু বলতে গেলেই নাস্তিক-মুরতাদ! যে কথা বলবে সে-ই শেষ। সেটা হয় সরকারের হাতে নয় জঙ্গিদের হাতে। একদিকে নাস্তিক হত্যার নামে একের পর এক ব্লগার হত্যার পরও সরকারের প্রায় অবিচলিত থাকা, ব্লগারসহ অন্য সকল হত্যাকে জামাত-শিবিরের ওপর দোষ চাপানোর ব্লেইম-পলিটিকস দেশে সক্রিয় অন্য জঙ্গি সংগঠনগুলোকে পথ করে দিয়েছে। ব্লগার রাজিব হত্যার সাথে জড়িত জঙ্গিদের ও অন্যান্য জঙ্গিদের গ্রেফতার করার পরেও জামিনে ছেড়ে দেয়া জঙ্গিবাদকে ক্রমাগত শক্ত করেছে। অন্যদিকে সরকার বিরোধী জোটকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করতে প্রায়শই জঙ্গির তোকমা লাগানোর রেওয়াজ স্পষ্টত । মজার ব্যাপার হলো বর্তমান সরকার এখন নিজেই নিজের ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে অথবা বাংলাদেশের রাজনৈতিক শূন্যতায় আইএস, তালেবান উত্থান সময়ের অপেক্ষামাত্র।
এইতো কিছুদিন ধরে শাহবাগ আন্দোলনকে নাস্তিকদের আন্দোলন এবং নাস্তিকতাকে ঋণাত্মকভাবে উপস্থাপন করে করে পত্রিকাগুলো দেশে স্বপ্নদোষে ভোগা মুসলমানদের নাস্তিকতার বিরোধিতার নামে জঙ্গিবাদের সমর্থনকারী বানিয়ে ফেলেছে। রোজই ফেসবুক-ব্লগে জঙ্গিবাদের পক্ষে হাজারো প্রচারণা চলে, অথচ এদের বিরুদ্ধে কখনো আইনি কোনো পদক্ষেপ নেয়ার একটি উদাহরণও দেখা যায়নি। যা আমাদেরকে অত্যান্ত ব্যথিত করেছে। সরকার মাসে মাসে মোটা অংকের টাকায় হাতি পুষে আর এসব হাতি দিয়ে হালচাষ করা না গেলেও সার্কাস ঠিকই দেখছি। মধ্যদিয়ে ব্লগার হত্যার নামে মানুষ হত্যার নামে চলছে পৈশাচিকতা। কাজের কাজ জনগনের কাঁধে বন্দুক ধরা, নিরিহ জনগনকে হয়রানি আজ নিত্যদিনের রোজনামচা।
অন্যদিকে দেশপ্রেম আজ বিশেষ দিবস কেন্দ্রিক। সুনাগরিক তথা সুন্দর মানুষ হওয়ার জন্য যেটুকু দেশপ্রেম অপরিহার্য তা আমাদের মাঝে পর্যাপ্ত নেই। দুঃখজনক ব্যাপার হল, দেশে আজ প্রকৃত দেশপ্রেমিকের সংখ্যা হাতে গোনা। এটি আমরা কম-বেশি সবাই জানিও বটে। নতুন প্রজন্মই আমাদের ভরসা। এ প্রজন্মের হাতেই আগামী দিনে বাংলাদেশ পরিচালিত হবে। মজার আজকে অস্র, মাদক। কারা এরা? কারাইবা এদের মদদ দিচ্ছে তা পরিষ্কার করা দরকার। কেননা তারুণ্যের দেশপ্রেম বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। নতুন প্রজন্মকে যদি প্রকৃত দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলা যায়, তবেই তাদের হাতেই দেশ এগিয়ে যাবে। সরকার অবশ্য একই কথা বলে তারুন্যের সাথে দিব্য প্রতারণা করেছে। আজকে সরকার সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, কালোবাজারি, অসৎ সরকারি আমলা ও কিছু অতিউৎসাহি পুলিশের উপর ভর করে টিকে থাকার স্বপ্নে বিভোর। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে- সরকারের ভোট ডাকাতির প্রক্রিয়া সবাই অবগত। সরকার ভাবছে সময়ে ঠিক হয়ে যাবে- ইতিহাস কিন্তু তা বলে না। লক্ষ্য করার বিষয় হল, এ প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেমের উচ্ছ্বাস যতটা আছে, ততটা গভীরতা নেই। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের প্রকৃত দেশপ্রেমের চেতনায় উজ্জীবিত করতে পারছে না। তাদের অনেকের কাছে দেশপ্রেমের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনুপস্থিত। তারুণ্যের দেশপ্রেমের উচ্ছ্বাস কেবল চোখে পড়ে বিশেষ কিছু মুহূর্তে অথবা জাতীয় দিবসগুলোয়। এ ছাড়া সারা বছর দেশপ্রেম দেশপ্রেম করে ফেনা তুলে অথবা তারা দেশপ্রেম থেকে দূরে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের কাছে দেশপ্রেম বিষয়টা এক ধরনের আনুষ্ঠানিকতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য দেশপ্রেম চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবার মতো কোনো বিষয় নয়। এটি চিন্তা-চেতনায় প্রোথিত থাকে, যার বহিঃপ্রকাশ একেকজনের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে একেক রকমভাবে প্রতিফলিত হয়। দেশপ্রেম দিবসকেন্দ্রিক না হয়ে যখন তা একজন সুনাগরিকের জীবনব্যাপী অনুষঙ্গ হয়ে উঠবে, তখনই তা হবে প্রকৃত দেশপ্রেম। তাই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে নতুন প্রজন্মকে প্রকৃত দেশপ্রেমিক হিসেবে গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। শুধু পরীক্ষায় পাস আর জিপিএ-৫ বাড়িয়ে আমরা যে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব না, তা বলাইবাহুল্য। এ বিষয়ে সুধীমহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। দুঃখজনক হল, এমন মতামত আমলে নেয়া হয় না। আমাদের এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ প্রজন্মকে গড়ে তুলতে হবে সত্যিকার দেশপ্রেমিক হিসেবে। তাদের শেখাতে হবে- কী করে মানুষকে ভালোবাসতে হয়? দেশপ্রেমের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মানুষকে ভালোবাসা। ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করে দেশের কল্যাণে আত্মনিবেদিত থাকাই যথার্থ দেশপ্রেমিকের আদর্শ। দেশপ্রেম বিশ্বপ্রেমেরই আংশিক রূপ। আমাদের এ প্রজন্ম প্রকৃত দেশপ্রেমিক হয়ে উঠুক। তাদের কাছে প্রত্যাশা- একদিন তারা বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবে। অন্যদিকে সরকারকে তার রাজনৈতিক ভণ্ডামি ছাড়তে হবে। শুধু মুখে বললেই হবে না- আমাদের ক্ষমতার লোভ নেই। কাজে প্রমাণ করতে হবে। আর জঙ্গিবাদ একা নয় সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় নির্মূল করতে হবে। একইভাবে বিএনপির উচিৎ ক্ষমতায় যেতে জামাত-মৌলবাদীদের পরিত্যাগ করে রাজনৈতিক দূরদর্শীতার প্রমাণ দেওয়া। বিএনপিকে এটা বুঝতে হবে মৌলবাদীরা কখনোই ক্ষমতায় বসাতে পারেনি, পারবেও না। একইভাবে জঙ্গি দমনের নামে সরকার যেভাবে বিরোধী দলগুলোকে নিশ্চিহ্ন করার চক্রান্ত করছে অথবা বন্দুকের নলের দ্বারা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার যে ছক কষছে তা রাজনৈতিক মূর্খতা ছাড়া কি হতে পারে?
সর্বশেষ বলতে চাই- যেহেতু মৌলবাদ-ও জঙ্গিবাদ কাল শাপ, তাই আমাদের উচিৎ এখনই এদের বিষদাঁত উপড়ে ফেলা। এখনই এদের মূল উৎপাটন করতে হবে। নচেৎ এর দায় আমার আপনার আমাদের সকলকেই নিতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৬ সকাল ৮:১৫