ইলিশ মাছ রক্ষার্থে নববর্ষ উদ্যাপনের দিন ইলিশ খাবেন না প্রধানমন্ত্রী। খেয়েছেন কিনা আমরা জানি না। তবে সাধুবাদ। আমরাও খাইনি। কেনো খাইনি সে প্রশ্নটি চিরকালই অজানা থেকে যাবে। কেননা যাদের নূন আনতে পান্তা ফুরায় তাদের পাতে সোনার হরিণ (ইলিশ) তামাশা ছাড়া আর কিছু না। সেটা আমাদের বিজ্ঞ প্রধানমন্ত্রী ভালো করেই জানেন। জানেন বলে তড়িৎ প্রেস বিজ্ঞপ্তি। বাহ! বেশ চমৎকার।
ইলিশ রক্ষার্থে নববর্ষ উদ্যাপনের দিন অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ ১৪২৩-এর খাদ্যতালিকায় ইলিশের কোনো আইটেম রাখেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা! গণভবনে এ দিনের মেন্যুতে খিচুড়ির সঙ্গে ছিলো বেগুন ভাজি, ডিম ও মুরগির মাংস ভুনা। বাহ! চমৎকার। তিনার(প্রধানমন্ত্রী) খাদ্য তালিকায় কি কি থাকছে তাও ঢোল পিটিয়ে বলে বেড়াচ্ছে, আর আমরা মগার মত গিলছি।
আমরা কেনো বলছি না, প্রিয় প্রধানমন্ত্রী, অনেকে গরম ভাত রান্না করে তা পানি দিয়ে পান্তা করে খেয়ে- বৈশাখী রেওয়াজ পালন করে। এবার আপনার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও একই পন্থা পালন করবে বা করেছে কেবল আমরাই বাদ। এটা স্পষ্টত আপনি আমাদের (মুটে-মজুর, দিন আনি দিন খাইদের) ভোটে সরকার হননি তাই আমাদের নিয়ে ভাববেন আপনার কাছে এমনটা আশা করাও তামাশা। যদি তা না-ই হয় তবে কেনো দফায় দফায় বিদ্যুৎ-গ্যাসের বিল বাড়াচ্ছেন? বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কম হওয়া সত্বেও আমাদেরকে চড়া মূল্য দিয়ে কিনতে হচ্ছে। দেশে খাদ্যশস্য পর্যাপ্ত থাকার পরও নিম্নমানের ও অতিরিক্ত খাদ্যশস্য আমদানি করে কৃষক মারছেন। লোহার বিপরীতে বাঁশের কৈঞ্চি দিয়ে সরকারি বিল্ডিং নির্মাণ, রাতের আঁধারে ইটের বদলে পোড়া মাটির চারলেন সড়ক তৈরি, ভোটের আগের দিন ব্যালেট বক্স ভর্তি, দখল, চাঁদাবাজি, অস্রের ঝনঝনানি, খুন-ধর্ষণ, মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, কোনটা বাদ দিয়েছে আপনার সম্মানিত নেতাকর্মীরা? সাধারণ ঘরের অসহায় একটি মেয়ের নাম তনু। তাকে ধর্ষণ করা হলো, পৈচাশিক কায়দায় নির্যাতন অতঃপর খুন। কত টালবাহানা। যে দেশে মুরগী চোরের সর্বোচ্চ শাস্তি হয় অথচ তনুরা বিচার পায় না। পকেটমারকে গণধোলাই দেওয়া হলেও ধর্ষণকারি পায় ফুলের মালা। তা পাক! কেননা আপনিও নারী তনুরাও নারী। নারী হয়ে যদি নারীর প্রতি শীলতাহানি, যৌন-নির্যাতন, ধর্ষণ, খুন সহ্য করতে পারেন, আমরা কেনো পারব না? বলেছি তো আমরা কিছুই বলব না। আমরা বলছি- আমরা ভালো নেই, পেটে ভাত নেই, দ্রব্যমূল্যের উর্দোগতি, নতুন কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা নেই, ব্যবসা নেই, চাকরী নেই, বেকার সমস্যার প্রতিকার নেই, তবু বলতে হবে- ভাল আছি? হ্যাঁ- ভাল আছি। ভালো আছি বলেই ঘরের টিন বেচে, পালের গাভী বেচে, দুধের বাচ্চা বিক্রির টাকা, শেষ আশ্রয় অর্থাৎ বসত ভিটা বন্ধক রেখে, একটু সুখে থাকার জন্য, দুমুঠো ভাতের জন্য, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ( সমুদ্র পথে) চার-পাঁচ লাখ টাকায় দালাল মারফত বিদেশ পাড়ি জমাচ্ছে। ছিঃ! প্রধানমন্ত্রী, আপনার লজ্জা হয় না? আজকে এই লোকগুলোকে অবৈধ অভিবাসী হিসেবে থাকতে হচ্ছে। যারা আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরাচ্ছে তারাই আজ অবৈধ। অন্যদিকে আপনারা বিনা ভোটে পাশ করে লুটপাট করছেন! আর লুটপাটের এত টাকা কোথায় যাচ্ছে সে খবর কখনোই জানতে চাইবো না। শুধু জানি আমরা ভালো না থাকলেও আপনি বা আপনারা ঠিকই ভালো আছেন।
মজার ব্যাপার, আমাদের আর ভয়-ডর নেই, ঘোম-খুন, পুলিশি নির্যাতন সয়ে গেছে। অনেক কথা- অনেকেই আপনাকে বলেছে, আপনারও গাঁ সয়ে গেছে। তবে আমরা শান্তিতে আছি- রাজপথে কার্যত বিরোধীদল নেই, অগ্নিসংযোগ-ভাংচুর করার মত কেউ নেই, হরতাল নেই, আপনার তামাশার রাজত্বে বাধা দেওয়ার কেউ নেই। খুশি তো? তবে আপনিও প্রধানমন্ত্রী শুনে রাখুন, আপনার একদলীয় শাসন কায়েম করতে- রাজনীতি থেকে গণতন্ত্রের গণকবর দিয়েছেন, বিরোধীদল নামক শব্দটিকে নিশ্চিহ্ন করেছেন, জামাতকে নির্বংশ করতে চাচ্ছেন। পেরেছেনও বটে। সাময়িক হয়ত আপনি জয়ী। কিন্তু এটা জেনে রাখবেন-অদূরেই এই জামাতিরাই হবে সর্বহারার দল, তালেবান আসবে, আইএস জন্ম নিবে, জঙ্গিবাদ মাথা চড়া দিবে। আর এতে বিদেশি অর্থায়ন লাগবে না, অর্থের যোগান দিতে বিএনপি-জামাত যথেষ্ট। এরাই আপনাকে মরণ কামর দিবে। দেশ থাকবে, আমরা থাকব, শুধু চিন্তা আপনাকে নিয়ে, শেষে না এই জঙ্গিবাদের টার্গেট আপনি নিজে হন! আমরা ঠাই সার্বভৌমত্ব উপর দাঁড়িয়ে আছি কেবল আপনার পায়ের নিচের মাটি সরে যাচ্ছে। ভয় হয় শেষে না আপনি রাজনীতি থেকে ছিটকে যান! আমাদের চোখের পাতা এক হলেও প্লিজ প্রধানমন্ত্রী আপনার চোখের পাতা কখনোই এক করবেন না।
১.
পরিসংখ্যান বলছে- বাংলাদেশ, গণতন্ত্র, রাষ্ট্র সর্বপরি এই জনপদ আজ গভীর রাজনৈতিক সংকটে আচ্ছন্ন। দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক ভাবে নির্বাচিত একটি সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। নির্বাচিত নয় এমন সরকারের শাসনে মানুষের জীবন আজ দুর্বিষহ । দেশের বিপন্ন গণতন্ত্র রক্ষায় কারোরই শুভ বুদ্ধির উদয়ের সম্ভাবনা নেই। দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। পুলিশের আচরণে মানুষ আতংকিত। তারপরও পুলিশ প্রধান বলছেন তাদের দায় পুলিশ বাহিনী নিবে না। তাহলে নির্যাতিত মানুষ কার কাছে যাবে ? সারাদেশব্যাপী পাওয়া লাশের দায়ভার যদি পুলিশ না নেয়, তবে সরকারকেই নিতে হবে। এ সরকার গণতন্ত্র হত্যা করেছে। বাক, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। মিডিয়াকে ন্যাক্কারজনক ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে লিখতে পারছে না। কেউ লিখতে চাইলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে। সাংবাদিকদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি জেকে বসেছে। একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বলছেন তিনি নাকি প্রধান বিচারপতিকেই মানেন না। চরম দলীয়করণের কারণে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। কোন প্রতিষ্ঠানেই নিয়ম-শৃংখলা নেই। সরকার কর্তৃত্বপরায়ন হয়ে দেশে একদলীয় শাসন কায়েম করেছে। এ থেকে মানুষ পরিত্রান চায়, বাঁচতে চায়। আওয়ামীলীগ আজ নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের সরকার বলে দাবী করছে, অথচ তারা ১৯৭৫ সাল থেকেই সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে গণতন্ত্রকে হত্যা করা শুরু করেছে। তারা সারাদেশে একনায়কতন্ত্র কায়েম করে একই স্বপ্ন দেখছে। অন্যদিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের মনে হতাশা। রাজনীতিতে কোণঠাসা। খালেদার রাজনৈতিক দূরদর্শীতার অভাব। দলটি বিদেশ নির্ভর হওয়ায় জনগনের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে। একটা সময় শুধু মুখেই হুংকার- লড়াই সংগ্রাম ছিলো এখন দলটির জন্য অতীত স্মৃতিমাত্র। মির্জা ফখরুল প্রায়ই ফাঁকা বুলি দেয়, যতদিন বাঁচবো গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে যাব। যা আমাদের কাছে অত্যান্ত হাস্যকর।
রামপালে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র নির্মান করতে চাচ্ছে সরকার। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে বিশ্বের ম্যানগ্রভ খ্যাত সুন্দরবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সরকারের সেদিকে কোন খেয়াল নেই। তাদের খেয়াল কি ভাবে দুর্নীতি করবে, কি ভাবে অবৈধ টাকার পাহাড় গড়বে। সরকার রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে হরহামেশাই যাকে তাকে জঙ্গী বলে আখ্যায়িত করছে। কিন্তু আমরা জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী নই, আমরা ধর্মীয় মুল্যবোধে বিশ্বাস করি। জঙ্গী নির্মুলে সারা দেশে জাতীয় ঔক্য গড়ে তোলা দরকার। সেক্ষেত্রে সরকার নিশ্চুপ! দেখা যাচ্ছে, যারা আওয়ামীলীগের মতবাদকে বিশ্বাস করে না সরকার তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে বছরের পর বছর হয়রানী করে যাচ্ছে। আওয়ামীলীগের মতবাদ বিশ্বাস করেন না বলেই আজ দিগন্ত টিভি, চ্যানেল ওয়ান, ইসলামী টিভি, দৈনিক আমারদেশ বন্ধ। সত্যি বলতে, আমাদের দুর্ভাগ্য যে, বাংলাদেশের জন্ম থেকেই যুদ্ধ করে যাচ্ছি আর যে সরকার এসেছে তারাই লুটপাটের মহড়া করে আসছে।
২.
বাঙালির কাছে ইলিশের গুণকীর্তন নতুন করে করার কিছু নেই। নতুন হলো, বৈশাখ বরণ উপলক্ষে চারপাশে যে সাজ সাজ রব, তার সঙ্গে ইলিশের যোগ। সে কারণেই মাস তিনেক হিমাগারে কাটিয়ে বাজারে আসা বরফচাপা ইলিশের দর চৈত্রের খরতাপের চেয়েও চড়া। সাধারণ লোকের পক্ষে এর গায়ে হাত দেওয়া অসম্ভব।
এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার টাকা থেকে আড়াই হাজার টাকায়। ওজনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দাম। দুই কেজি ওজনের ইলিশ ঘরে আনতে হলে গুনতে হয় ন্যূনতম ছয় হাজার টাকা। তবে তেমন ক্রেতারও অভাব নেই। দরদাম যা-ই হোক, ইলিশ বিকোচ্ছে, বিকোবেও প্রচুর।
অন্যদিকে অনেকে পয়লা বৈশাখে পান্তা-ইলিশ খাওয়াকে হাল আমলের ‘হুজুগ’ বলে মন্তব্য করছেন। ইলিশের উচ্চমূল্য ও এর প্রজনন মৌসুম চলায় বিভিন্ন মহল থেকে আহ্বান আসছে পান্তা-ইলিশের রেওয়াজ পরিহারের জন্য। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে পান্তা-ইলিশের বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরছেন। সরকারের কয়েক মন্ত্রী এরই মধ্যে পয়লা বৈশাখে ইলিশ খাওয়াকে নিরুৎসাহিত করেছিলেন। ইলিশ রক্ষার্থে প্রধানমন্ত্রীও যেমনি পয়লা বৈশাখে ইলিশ খাবেন না, আমরাও ঘোষণা দিলাম ইলিশ খাব না। তেমনি ঘোষণা দিলাম আপনার দূরদর্শীতায় কোনো প্রকার অনৈতিক-অহেতুক হস্তক্ষেপ করতে যাব না। অন্যদিকে প্রার্থনা করি, আওয়ামি এ সরকারের উচ্চবিলাসি ক্ষমতাসীন হওয়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হোক। জয়তু প্রধানমন্ত্রী।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:২৬