সাদ, এইচ ডি, সাফগর সহ আরো দুইজন, ওদের সাথে পরিচয় ফেইজবুকে। কয়েকদিনে বেশ ভাব জমিয়ে ফেললাম। প্রায় সময় এই খুদে বন্ধুগুলোর সাথে ফোনে কথা হয়। পাঠক বিশ্বাস করবেন কি না জানিনা, এরা এত অল্প বয়সে যে রকম পেকে বসেছে তা আর বলতে!
যেন এক একটা পাকা তেতুল। মাঝে মাঝে যেভাবে নাকানি চুবানি দেয়, সেগুলো ভাবতে গেলে নিজে নিজেই হাসতে হাসতে দম ফেটে যাওয়ার উপক্রম।
পাকা তেতুল কেন বললাম জানেন! তাহলে ঐদিনের ঘটনা বলি- এই পুচকের দলেরা ধরে বসলো তারা আমাকে বিয়ে করাবে। অনেকটা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলাম তাই নাকি! কথাটা উঠিয়ে ছিলো সাফগর। ওর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে সাদ বললো, যেন তেন পাত্রী হলে চলবে না। আমাদের জানের ( বলে রাখি এই পুচকের দলেরা আমাকে জান বলে ডাকে) জন্য জব্বর একটা পাত্রী চাই। সম্ভবত এদের মধ্যে সাদ লিডার হবে। এইচ ডি লাফিয়ে উঠে পাত্রী চাই মানে! চল এখনি পাত্রী খোঁজায় লেগে যাই। সাথের দুজন মাথা নেড়ে, হ্যাঁ- তাই করি চল!
কিছু বুঝার আগেই পুচকের দল হনহন করে বেরিয়ে পড়লো। দুই দিন হয়ে গেলো কোন সন্ধ্যান নেই। কল দেই কল ধরে না। মাঝে মাঝে ফেইজবুকে আসে কিন্তু চ্যাট করে না। অনেকটা টেনশনে পড়ে গেলাম। পড়ারই কথা, শতে হলেও এরা আমার আগন্তুক ঘটক। খোঁজ খবর নেয়াটা দায়িত্বে পড়ে, এমনি আরো একটি দিন চলে গেলো কিন্তু ঘটক মহোদয়দের কোন খবর নাই।
কি আর করা যায়! একবার ওদিকে গিয়ে খবর নিয়ে আসলে কেমন হয়! যেই ভাবা অমনি মোবাইলে অপরিচিত নাম্বর থেকে কল। রিসিভ করতেই আঠারো বিশ বছরের মত একটা মেয়ের কণ্ঠ। অনেকটা মুখিয়ে জানতে চাইলো, আপনি মিসবাহ?
আজ্ঞে হ্যাঁ। কেনো বলুন তো?
রাখেন আপনার আজ্ঞে ছুটাচ্ছি! কি শুরু করেছেন এসব? লেখক হয়েছেন কি হয়েছে! মন খুশি যা ইচ্ছা তাই করে বেড়াবেন?
বুঝলাম না। কি হয়েছে? আর আপনি বা কে?
কি হয়েছে? আমি কে? তার আগে বলেন, সাফগরকে দিয়ে পাত্রী খোঁজতে আপনি পাঠাননি?
আমতা আমতা করে না বলতে যাবো এমন সময় ওপাশ থেকে মেয়েটির বজ্রকণ্ঠ কানে আসতে লাগলো। বুঝতে পারলাম মেয়েটি বেশ চটে গিয়ে সাফগরকে কানে ধরে উঠ বস করাচ্ছে। কি আর করার! আহা বেচারা। চাইলো কি আর পাইলো কি। হায়রে পৃথিবী তুই আমার পুচকে বন্ধুটির প্রতি একটু সদয় 'হ'। যেই কল রাখতে যাবো ওমনি এইস ডি'র নাম্বার থেকে কল।
রিসিভ করতে অবস্থা আরো ভয়াবহ। ষাটোর্ধ এক ভদ্রলোক কড়া গলায় বলতে লাগলো, দেহেনছে কাউ, পোলাডা কিতা কয়! হেতে কয় আন্নে নাহি আর মাইয়াডারে বিয়া হরতে ছান?
না মানে! ইয়ে......
ভদ্রলোক আবারো বলে চললো, পোলাডা হেইরম বদ, কইলাম মাইডার বয়স অয় নাই, তার হরেও বাড়ির চাইরদার দিয়া দুইদিন ধইরা ঘুর ঘুর করতাছে।
চাচার কথা থামিয়ে দিয়ে তার মত আঞ্চলিক ভাষায় বললাম, কাউ পোলাডারে দেনছে। এইছ ডি'র কাছে মোবাইলটা দিতেই, অনেক হয়েছে। আর পাকামো লাগবে না। এবার সোজা দৌঁড়ে পালাও!
মোবাইল রেখে ঘাড় ঘুরাতে যাবো এমন সময় সাদ সামনে এসে হাজির। সাথে পুইচকাদের বাকি দুইজনও......।
মাথাতো চড়ক গাছ! এই পোলা তো আরো এক্সপার্ট। এবার সাথে করে পাত্রী নিয়ে হাজির।
সাদকে যেই জিজ্ঞেস করতে যাবো, ও কে? অমনি কথা কেড়ে নিয়ে সাদ বলতে লাগলো, 'ও আমার বান্ধবী তাহরীন তিথি।' অনেক বলে কয়ে রাজী করালাম হাতিরঝিল আনতে।
মেয়েটার বয়স কত আর হবে, এই ১৫/১৬ মত। চেহেরার দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলাম মুখটা কেমন যেন লালচে হয়ে গেছে।
সাদ চেঁচিয়ে উঠে 'জানতে চাইলো! মেয়ে পছন্দ হইছে কিনা! হইলে বলো। বাকিটা আমি দেখবো।
মানে? এসব কি বলছো সাদ?
আগে বলো মেয়ে পছন্দ হইছে কি না? না হইল ওরে বাড়িতে রাইখা আবার বের হয়ে পড়বো। তাড়াতাড়ি বলো। অনেক কাজ।
ঠিক আছে বলছি। তুমি আগে ঠাণ্ডা হও। তাছাড়া এত তাড়াহুড়া কইরা কি পাত্রী দেখা যায়।? মুখ টিপে হাসতে গেলে সাদ আবার চেঁচিয়ে ওঠে, এখন ঠাট্টার সময় না। ঠিক আছে, তুমি আর তিথি বুঝাপড়া কইরা লও। তবে 'জান' (আমাকে) আর যা-ই বলো ওর বয়স কম হইলেও সব কিছু ভালোই বুঝে। আমি ওর সাথে তিন বছর নয় দিন ধইরা প্রেম করতাছি। কথা একটু কম বলে এই আর কি!
ঠিক আছে আমার পছন্দ হইছে। কিন্তু তোমার কি হবে?
আমারে নিয়া চিন্তা কইরো না। ওর একটা ছোট বোন আছে, সে আমি ম্যানেজ করে নিতে পারবো। আগে তোমার একটা সমাধান করি।
ঠিক আছে! বুঝা পড়াটা তাহলে সেরে নিই। গলা খাঁকারি দিয়ে তিথির দিকে তাকাতেই, তিথি বলে উঠলো, দেখেন তো ভাই কি শুরু করছে? কি সব আজব কথা বার্তা বলছে। ও আমাকে একরকম জোর করে তুলে নিয়া আসছে।
লজ্জাবতী এবার অগ্নিমূর্তি ধারন করে, আপনি ওকে বলেন ভালো-য় ভালো-য় বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসতে। না হলে আমি কিন্তু পুলিশ ডাকবো। পুলিশ....
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৫৩