somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রোহিঙ্গাদের লাত্থি মেরে বের করে দাও। কারন -

৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রোহিঙ্গাদের লাত্থি মেরে বের করে দাও। কারন -
১) রোহিঙ্গারা দেশে ঢুকলে জঙ্গিবাদ বাড়বে
২) রোহিঙ্গারা অপরাধ-প্রবণ। তারা দেশে ঢুকলে অপরাধ ও উপদ্রব বেড়ে যাবে
৩) রোহিঙ্গারা দেশে দারিদ্র্য বাড়াবে, সাধারণ মানুষের কাজের সুযোগ কমে যাবে
৪) রোহিঙ্গারা পাকিস্তানপন্থী
৫) বাংলাদেশ একায় কেন রোহিঙ্গা সমস্যা সামলাবে? আরও তো দেশ আছে, তাই না?



আপাতদৃষ্টিতে কথাগুলো খুবই লজিক্যাল লাগতে পারে। এবার আসুন এই কথাগুলোর যৌক্তিকতা বিচার করি।


১) রোহিঙ্গারা দেশে ঢুকলে জঙ্গিবাদ বাড়বেঃ-
মায়ানমারে থাকা ৮ লক্ষ রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমাদের চিন্তা-ভাবনার প্রয়োজন আছে। এদের মধ্যে যদি উগ্রবাদের উত্থান ঘটে তবে সেটা আমাদের জন্যও ভোগান্তি নিয়ে আসবে। সাধারণ মানুষ আসতে না পারুক, রোহিঙ্গা জঙ্গিদের যে এদেশে ঢুকতে কোন সমস্যা হবেনা সেটা বলাই বাহুল্য। জঙ্গিবাদের যে অভিযোগ রোহিঙ্গাদের উপর সেটা খুবই হাস্যকর । এমন তো নয় যে আমাদের দেশে জঙ্গি নেই। যারা হত্যা করছে, যারা চাপাতি নিয়ে ঘুরছে এরা তো বাঙালি, তাই না? এদেশে এতটাই জঙ্গিবাদের প্রসার ঘটেছে যে তারা দেশের ৬৩ টি জেলায় একযোগে হামলা চালাতে সক্ষম। ঘোষণা দিয়ে, তালিকা করে দিনের পর দিন হত্যাযজ্ঞ চালাতে সক্ষম। সবচেয়ে বড় জঙ্গি সংগঠন ছাত্রলীগ দিনের পর দিন হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, চাদাবাজি, টেন্ডারবাজি চালিয়ে যাচ্ছে, সেখানে রোহিঙ্গারা দেশে ঢুকলে জঙ্গিবাদ বাড়বে এ ধরণের অভিযোগ হাস্যকর শোনায়। জঙ্গিবাদ বাড়ার বাকি আর কী কিছু আছে? রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করুক আর না করুক তাদের মধ্যে যাতে জঙ্গিবাদ না ছড়ায় সেটা নিয়ে পরিকল্পনার প্রয়োজন। যারা দেশের মধ্যে আছে তাদেরকে বিশেষ তদারকির মধ্যে রাখাও দরকার। শুধু রোহিঙ্গা নয়, ধর্মীয় উগ্রপন্থা থেকে রক্ষার জন্য সকলের মধ্যেই সহিষ্ণুতার ব্যাপক চর্চা দরকার। সকল মানব সমাজের জন্য এটি অপরিহার্য হয়ে দাড়িয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক সরকারপন্থী সেক্যুলার রোহিঙ্গাদের মুসলিম পরিচয়কে মুখ্য করে তুলছে, এবং জঙ্গিবাদের ধুয়ো তুলে নিরীহ নারী-শিশুকেও এরা আশ্রয় দিতে রাজি হয় না। এরা একচোখা মানবতার দোষে দোষী। সত্য হচ্ছে, বিজিবির চোখ এড়িয়ে হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। অথচ বিজিবি যদি তাদের পুশব্যাক নীতির বদলে এই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গ্রহণ করে, শরণার্থীদের জন্য পরিচয়পত্র প্রদানের ব্যবস্থা করে তবে সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের খুব সহজেই উগ্রবাদের দিকে উদ্বুদ্ধ্ করা সম্ভব, অতীতেও তা হয়েছে। একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে জাতি-ধর্ম-গোত্র নির্বিশেষে নিপীড়িত আশ্রয়প্রার্থীদের পাশে দাঁড়ানো। যে রাষ্ট্র সজ্ঞানে কোনো আশ্রয়প্রার্থীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়, সে রাষ্ট্র আর যাই হোক, মানবিক হতে পারে না।


নিজ দেশ থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসেছেন পাশের দেশে। পাশের দেশের সীমান্তেও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কড়া প্রহরা। তাই এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নো ম্যানস ল্যান্ডে এই রোহিঙ্গা নারী বাংলাদেশের ভিতরে প্রবেশের জন্য এই বৃদ্ধা অনুনয় বিনুনয় করছেন। ছবি: রয়টার্স


২) রোহিঙ্গারা অপরাধ-প্রবণ। তারা দেশে ঢুকলে অপরাধ ও উপদ্রব বেড়ে যাবেঃ-
এটা হয়তো ঠিক যে দেশের প্রচুর মানুষ রোহিঙ্গাদের উপর বিরক্ত। কিন্তু অসহায় মানুষদের মধ্যে অপরাধ-প্রবণতা থাকলেও তাদের আশ্রয় দিতে হয়। কারণ আমরা মানুষ, আর মানুষ হওয়া একটা যন্ত্রণাপূর্ণ ব্যাপার। রোহিঙ্গাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটলে তাদের এই প্রবণতা কমবে। শিক্ষার হার বাড়ানো, নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা ধীরে ধীরে তাদেরকে সে প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করবে। এমনকি মায়ানমারে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যেও কিভাবে শিক্ষার হার বাড়ানো এবং অশিক্ষা থেকে মুক্তি দেয়া যায় তা নিয়ে ভাবা দরকার। আমাদের দেশের মানুষ এতই অপরাধ-প্রবণ যে যখন রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে এটি বলা হয় তখন বিব্রত বোধ করি। বিপদগ্রস্থ অসহায় মানুষ অন্য সক্ষম মানুষের কাছে আশ্রয় না পেলে এই মানব জীবনের অর্থ কি? বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বার্মাতে (আজকের মায়ানমার) অসহায় বাংলাদেশের অনেক মানুষ আশ্রয় পেয়েছিলো এইসব অতি দরিদ্র্র রাখাইন বাসীদের কাছে। সেই নাফ নদী পার হয়েই, উল্টোদিকে। ওদের কাছে নুনভাত ছাড়া দেবার আর কিছুই ছিল না। আর ছিলো পাতায় ছাওয়া, মাটিতে গর্ত করা শৌচাগার। বস্তিতে, গলিতে, কুঁড়ের স্যাঁতসেতে মাটির বারান্দায় শুয়েছে উদ্বাস্তু বাংলাদেশের তাড়া খাওয়া মানুষ, মাসের পর মাস। মানুষের জন্য মানুষ যদি না পাশে দাড়ায় তবে কি অর্থ এই মানব জীবনের? শরণার্থী, উদ্বাস্তু, আশ্রয়প্রার্থী এদের সবার প্রথম পরিচয় সে মানুষ এবং অতঃপর বিপদগ্রস্থ, যা তারা নিজ থেকে তৈরী করেনি। বাংলাদেশের শরনার্থী নীতিমালা কী আমরা জানি না। জাতিসংঘের সাথে বাংলাদেশের কী চুক্তি আছে তাও জানি না। মায়ানমারের সাথে বাংলাদেশ সরকারের সম্পর্ক কী সেটাও পরিষ্কার নয়। কিন্তু এইসব অসহায় মানুষগুলোকে আশ্রয় না দিলে তারা যাবে কোথায়? এদেরকে নিয়ে খেলা করা আসলে অপরাধই বটে।


মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সহিংসতা শুরুর পর প্রাণ বাঁচাতে হাজারো রোহিঙ্গা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটে আসছে। কক্সবাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকতে না পেরে কান্নায় ভেঙে পড়েন এক রোহিঙ্গা নারী। ছবিটি গতকাল রোববার তোলা। ছবি: রয়টার্স




৩) রোহিঙ্গারা দেশে দারিদ্র্য বাড়াবে, সাধারণ মানুষের কাজের সুযোগ কমে যাবেঃ-
২০১৬ সালে বাংলাদেশের ভাগ্যবানদের কাছ থেকে সুইস ব্যাংকে গেছে ৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ২০১৫ সালে গেছে ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। ২০১৪-তে গেছে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। তার আগের বছরগুলোতে যে কত টাকা গেছে, তা বিধাতা ও ব্যাংক কর্মকর্তা ছাড়া আর কারও পক্ষে জানা সম্ভব নয়। আগেরগুলো বাদ দিয়ে শুধু গত বছরে যাঁদের টাকা সুইস ব্যাংকে গেছে, তাঁদের নামটাও জানা যায় না। সে যেন ভূতের টাকা। নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশেরই এই অবস্থা, যেদিন উচ্চ আয়ের দেশে প্রমোশন পাবে বাংলাদেশ, সেদিন সুইস ব্যাংকের কর্মকর্তারা হাতজোড় করে বলবেন, তোমাদের টাকা রাখার মতো ভল্ট আমাদের নেই। নিজের দেশেই খাদ্যশস্যের সাইলোর মতো গুদাম বানিয়ে তাতে তোমাদের টাকা জমা রাখো গিয়ে। এই যে দেশটিতে এত ধনদৌলত, তার বর্ডারে রোহিঙ্গারা সমুদ্র পাড়ি দিতে গিয়ে মরছে। পানিতে ঝাঁপ দিয়ে মরছে, নৌকার খোলের মধ্যে না খেয়ে মরছে।


বাক্স-পেটরা নিয়ে গতকাল রোববার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে কক্সবাজারে এক রোহিঙ্গা নাগরিক। ছবি: রয়টার্স

অন্য একটা গল্প শুনাই, বাংলাদেশে কয়েক লক্ষ ভারতীয় বসবাস করছেন, যাঁদের বেশির ভাগ অবৈধ অভিবাসী । ২০০৯ সাল থেকে পাঁচ লক্ষ ভারতীয় নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করছেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যেমন: এনজিও, গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, আইটি সংস্থায় তাঁরা কর্মরত রয়েছেন। উপার্জিত অর্থ তাঁরা হুন্ডি হস্তান্তর পদ্ধতিতে ভারতে পাঠায়। ২০১২ সালে, বাংলাদেশ ভারতের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনক্ষেত্র হিসেবে পঞ্চম দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়। সে বছর এই ভারতীয় অভিবাসীরা বাংলাদেশ থেকে ৩.৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার উপার্জন করে ভারতে পাঠিয়েছে। এই অভিবাসীদের বেশিরভাগই পর্যটন ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে আসেন, তবে একবার ঢোকার পর এঁদের বের হওয়ার কোন প্রবণতা দেখা যায় না। এভাবে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এই অভিবাসীরা মাঝে মাঝেই দুই দেশের মধ্যে বিবাদের কারণ হয়ে ওঠেন। প্রাপ্তিসাধ্য প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই লাখ লাখ ভারতীয় অভিবাসীরা প্রকৃতপক্ষে পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয়, আসাম, ত্রিপুরা এবং মিজোরামের বাসিন্দা। তো এদের নিয়ে কাউকে হৈচৈ করতে শুনলাম না। কেউ বলল না - এসব অবৈধ ভারতীয়দের তাড়িয়ে দাও। চুলকানিটা কেবল রোহিঙ্গা দের নিয়ে? কেন ভাই?


তল্পিতল্পা নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে রোহিঙ্গারা। কক্সবাজার সীমান্ত থেকে রয়টার্সের তোলা ছবি

পৃথিবীর সকল দেশ, এমনকি জার্মানির মত ধনী দেশের জাতীয়তাবাদীরাও রিফিউজিদের নিয়ে ঠিক একই কথা বলে। অথচ একটু পড়ালেখা করলেই জানা যায়, রিফিউজিদের আশ্রয় দিলে জাতিসংঘ তার দায়িত্ব নেয়। তাদের থাকা খাওয়া থেকে শুরু করে বেশিরভাগ খরচ বহন করে জাতিসংঘ। বিহারীদের দেখিয়ে প্রতিবছর বাঙলাদেশ সরকার কত টাকা আনে কোন ধারণা আছে? সেই টাকা এনে লুটপাট করা হয়। বিহারীদের দেয়া হয় না।
আর জাতিসংঘ যদি একটা টাকাও না দেয়, তারপরেও আশ্রয় না দেয়ার কোন যুক্তি নেই। যে দেশে চার হাজার কোটি টাকা কোন টাকাই না, সে দেশে দুমুঠো ভাত খাওয়ালে অভাবে মরে যাবেন?? মাত্র ৮ লক্ষ রোহিঙ্গা মানুষ বাংলাদেশের ১৬ কোটির তুলনায় খুব একটা বড় নয়। আর এই ৮ লক্ষের মধ্যে হয়ত কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চায় প্রতি বছর। এদের মধ্যে যেহেতু শিক্ষার হার খুব কম তাই তারা শুধু নিম্নবিত্ত মানুষদের সাথেই প্রতিযোগিতা করতে সক্ষম। যদি রোহিঙ্গাদেরকে শরণার্থী ক্যাম্পে রাখা হয়, ক্যাম্পগুলো ভিন্ন জেলায় স্থাপন করা হয়, এদেরকে বিভিন্ন জেলায় স্থায়ী আবাসনের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে সমস্যা তুলনামূলকভাবে কম হবে। আমাদের দেশটা আহামরি কোনো স্বর্গ নয় যে রোহিঙ্গারা এখানে এসে একদম বিশাল একটা কিছু পেয়ে যাবে। বেশির ভাগই এসে কোনো একটি ঝুপড়ি ঘরে বাস করে মানবেতর জীবন-যাপন করে। এর মধ্যে রয়েছে মানুষের ঘৃণা। আমরা অনলাইনে কিছু মানুষশেষের তৎপরতায় মনে করতে পারি এদেরকে হয়ত দেশে খুব আদরে রাখা হয় কিন্তু বাস্তবতা খুবই ভিন্ন। আমাদের দেশের মানুষের মত রেসিস্ট আর দুনিয়ায় নেই। রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ মানুষ একটুও সহ্য করতে চায় না। নারী-শিশু বোঝাই নৌকা নিয়ে যারা এসে সীমান্তরক্ষীদের প্যাঁদানি খায় তারা আসলেই অসহায়। এরা দালালকে টাকা দিয়ে নির্বিঘ্নে দেশে প্রবেশ করার ব্যবস্থা করতে অসমর্থ। এদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার অর্থই হচ্ছে হয়ত নৌকা ডুবে তারা মারা যাবে অথবা ভাসতে ভাসতে পশু-পাখির মত কোথাও গিয়ে থাকবে। রাষ্ট্রসংঘ এখানে বাংলাদেশ এবং মায়ানামার এই দুই দেশকে বলতে পারে আলোচনার টেবিলে বসার জন্য। এই মানুষগুলির দায়িত্ব এই দুই দেশ অস্বীকার করতে পারে না ।


নিজ দেশ থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে এসেছেন পাশের দেশে। পাশের দেশের সীমান্তেও অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কড়া প্রহরা। তাই এখন ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে নো ম্যানস ল্যান্ডে এই রোহিঙ্গা নারী। ছবি: রয়টার্স

৪) রোহিঙ্গারা পাকিস্তানপন্থীঃ
ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যার পরও যেখানে আমাদের দেশের প্রচুর মানুষ পাকপন্থী সেখানে নিরক্ষর এবং পাকিস্তানিদের হাতে নির্যাতিত না হওয়া মুসলমানদের পাকিস্তানের প্রতি আগ্রহকে খুব একটা গুরুত্ব না দেয়াই ভাল। বরং এদেরকে শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধির সুযোগ দেয়া হোক। অবস্থা স্থিতিশীল হলে রোহিঙ্গাদেরকে কিভাবে নিরাপদে মায়ানমার প্রত্যাবর্তন করানো যায় তা নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ উচিত। রোহিঙ্গাদের অনেকেই ফিরতে চায় না, কিন্তু পর্যাপ্ত নিরাপত্তা থাকলে নিজ দেশে ফিরে না যাওয়ার কোন কারণ থাকতে পারেনা। তাই এজন্য মায়ানমারের প্রতি চাপ দেয়ার কোনো বিকল্প নাই। কিন্তু বাংলাদেশ বরাবরের মত এক্ষেত্র চরম কূটনৈতিক ব্যর্থতা দেখাচ্ছে।


দুই নবজাতককে নিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে এসেছে একটি পরিবার। ছবিটি কক্সবাজারের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ড থেকে তোলা। ছবি: রয়টার্স


৫) বাংলাদেশ একায় কেন রোহিঙ্গা সমস্যা সামলাবে? আরও তো দেশ আছে, তাই না?
উত্তরঃ- পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা :
মায়ানমার ৮০০,০০০(আট লক্ষ)
বাংলাদেশ ৩০০,০০০( তিন লক্ষ)
পাকিস্তান ২০০,০০০( দুই লক্ষ)
সৌদি আরব ৪০০,০০০ ( চার লক্ষ)
থাইল্যান্ড ১০০,০০০(এক লক্ষ)
মালয়েশিয়া ২৪,০০০( চব্বিশ হাজার)
সূত্র : উইকিপিডিয়া


কক্সবাজারের উখিয়ায় কুতুপালং শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ক্ষুধার্ত মুখ। ত্রাণের আশায় হাত বাড়িয়ে তারা। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, ২৪ থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত ৬ দিনে প্রায় ১৬ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশ আশ্রয় নিয়েছে। ছবি: এএফপি

এক শ্রেণীর সুশীলদের কথাবার্তা দেখে মনে হল রোহিঙ্গাদের ভার কেবল বাংলাদেশই নিচ্ছে। বাস্তবতা হল মায়ানমার বাদ দিলে রোহিঙ্গাদের অবস্হা বাংলাদেশেই সবচেয়ে খারাপ..বাস্তবতা হচ্ছে- মিয়ানমারে যখন কচু কাটা হচ্ছে- তখন বাঁচার জন্যে রোহিঙ্গারা এইদেশে বর্ডার পার হয়ে আসার চেস্টা করবেই। যতই ফিরিয়ে দেয়া হোক না কেন- তারা অন্য যেকোন উপায়েই হোক- বারেবারে চেস্টা করবে। এটা এমন না যে- বাংলাদেশ কোন স্বর্গ রাষ্ট্র, এইখানে আসলেই তারা থাকা- খাওয়া- কাজ এসবের দারুন সব সুব্যবস্থা পাবে, এসবের নিশ্চয়তা দিয়ে দেবে বাংলাদেশ! বরং তারা জানে- বাংলাদেশের সরকার এদেরকে কি চোখে দেখে, বাংলাদেশের মানুষ এদের কি চোখে দেখে ! তারপরেও তারা বাংলাদেশে আসতে চায়- তার একমাত্র কারণ- মিয়ানমারে তারা নিরাপদ নয়। ফলে- যেভাবে রোহিঙ্গারা দেশে ঢুকছে- তারই ভয়ানক ফল বাংলাদেশ ভোগ করছে- সামনেও আরো করবে! সরকারীভাবে যখন শরণার্থীদের প্রবেশ করতে দেয়া না হয়- তখন সেই শরণার্থীরা রাষ্ট্রের তথা সরকারের দৃষ্টির বাইরে থাকে, নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। এদেরকে দিয়েই বাস্তবে নানা অপরাধমূলক কাজে কর্ম করানো সম্ভব হয়। ফলে- এই অনিবন্ধিত প্রবেশকারী রোহিঙ্গারাই টার্গেটে থাকে, নানা মাফিয়া- চোরাকারবারি গোষ্ঠীর নজরে থাকে। উল্টোদিকে এরকম রোহিঙ্গাদের এই দেশে এসে কোনরকমে টিকে থাকার জন্যে যেনতেন কাজের দরকার, যেনতেন শেল্টার দরকার, ফলে মরিয়া হয়ে তারা যেকোন কিছুতেই জড়িয়ে পড়ে। এইসব বন্ধ করার একটাই উপায়- বাংলাদেশ সরকারকে ঘোষণা দিয়ে রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করা উচিৎ। টেকনাফ- কক্সবাজার- চট্টগ্রামে যদি চাপ বেশি হয়ে যায়- দেশের অন্যান্য জায়গায় এদেরকে রাখার ব্যবস্থা করতে পারে। এইসব রিফিউজিকে রাখার জন্যে বিশাল জায়গার প্রয়োজন হয় না, প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে বড় সড় ক্যাম্প করে করে এদের রাখা যায়। যেখানে নিয়মিত হাজিরা দেওয়াটা বাধ্যতামূলক- শরণার্থী হিসেবে নিয়ম-কানুন ভাঙলে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যাপারটাও জারি রাখলে- কিছুটা কন্ট্রোলে রাখা সম্ভব। সরকারীভাবে যখন এই রিফুজিদের গ্রহণ করা হয়- তখন বাংলাদেশ অটোমেটিকভাবে আন্তর্জাতিক ফোরামে ভয়েস রেইজ করার ব্যাপারে লেজিটেমেসি অর্জন করে। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে- অনেক সংস্থাও এই রিফিউজিদের ক্যাম্প করা, তাদের খাবার দাবার থেকে শুরু করে নানা দরকারের প্রয়োজনীয় ফান্ড দিতে পারে- যেইটা এখনকার অবস্থায় সম্ভব না। বাংলাদেশ এর আগে- যতবার এই রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে সক্ষম হয়েছে- সবই সরকারিভাবে শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের গ্রহণ করার কারণেই … শরণার্থী ক্যাম্পের শরণার্থী জীবন কোন চিরস্থায়ী ব্যবস্থা না- ফলে এক দেশ থেকে একটা জনগোষ্ঠী আরেকটা দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে মানেই- সেই দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন ওঠা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিটা ফোরামে তাকে একরকম জবাবদিহি করতে হয়- সেই শরণার্থীদের ব্যাপারে।
এটা বুঝা উচিৎ- অবৈধ অভিবাসী যত বড় সমস্যাই হোক- এটা নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে কথা বলার বা চাপ তৈরির স্কোপ খুব কম- কেননা এটাকে আভ্যন্তরীন সমস্যা ধরা হয়- অবৈধভাবে প্রবেশ বন্ধ করা- তাদেরকে চিহ্নিত করা, তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া- সবই অভ্যন্তরীন ব্যাপার ধরা হয়। কিন্তু, শরণার্থী সমস্যাকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে আলাদাভাবে গুরুত্বের সাথেই দেখা হয় ।


খাল পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ না করার নির্দেশ দিচ্ছেন এক বিজিবি সদস্য। ছবিটি কক্সবাজারের বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ড থেকে তোলা। ছবি: রয়টার্স


আমরা দেখবো মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে। রোহিঙ্গা সমস্যাকে উটকো সমস্যা বলে মনে করার কোন কারণ নেই। আশেপাশের কোন দেশে বিপর্যয় ঘটলে তা যে আমাদেরকে স্পর্শ করবে সেটা স্বাভাবিক এবং এই একই ধরণের সমস্যায় রয়েছে অনেক দেশই। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ ভারতে চলে যায় প্রতি বছর, শুধু হিন্দু নয় মুসলমানরাও। পাকিস্তানে এখনো বিশাল সংখ্যক বাঙালি বসবাস করে, স্বাধীনতার পরেও কিন্তু অনেকেই চলে গেছে রোজি-রোজগারের সন্ধানে। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর মানুষ রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছে উন্নত দেশগুলোতে। আগে মানুষ, তারপর দেশ। মানুষকে বাচতে দিতে হবে। যখন কিছু মানুষ হাড় জিরজিরে মহিলা-শিশুদের নিয়ে জীবন বাচানোর জন্য একটা ভাঙ্গা নৌকায় পানিতে ভাসতে ভাসতে আমাদের দেশে পাড়ি জমায় তখন এদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার কোনো মানবিক যুক্তি আমার জানা নেই। রোহিঙ্গাদের জীবনাচরণ, সংস্কৃতি সব কিছু বড্ড বেশি মিলে যায় এদেশের মানুষের সাথে। একজন রোহিঙ্গার ছবি দেখলাম মাঠে কাজ করছে, না বলে দিলে বোঝা কঠিন যে সে বাঙলাদেশি নয়। রোহিঙ্গাদের ভাষা মোটামুটি বুঝি, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাথে পুরাই মিলে যায়। যখন একটা বোধগম্য ভাষায় কেউ এসে বাচার আকুতি জানায় তখন এদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার দৃশ্যটা কেমন হতে পারে ভেবে দেখুন!


এই রোহিঙ্গা শিশুটাকে দেখে মনটা ভার হয়ে আছে। মায়ের কোল মনে করে মাটিকে জড়িয়ে ধরেছে শিশুটি, এই মাটির উপর মানুষ হিসাবে সবার সম-অধিকার আছে।
পৃথিবীর সর্বত্রই মানুষগুলো বেচে থাকুক। মানুষ বেচে থাকলে তারা ভবিষ্যতে একটা মানবিক পৃথিবী তৈরি করবেই।

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে আগস্ট, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৫
১৪টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×