শীতের সকাল - নানাবাড়ী
শীতকাল টা ছোট্টবেলা থেকেই আমার কাছে ভাল লাগা একটি কাল। যদিও সারারাত কাঁথা মুড়ি দিয়ে একটু শীত শীত আমেজে ঘুমানোর পর সমস্ত চেতনা নিয়ে জেগে ওঠা তারপর কনকনে ঠান্ডার মুখোমুখি হওয়াটা সত্যিই কঠিন একটা বিষয় ছিল। তারপরও আলস্যকে পরাভূত করে যদি একবার উঠে পড়া যায় সুযোগ হয় নতুন একটা ভোর দেখার। শীতের ভোর। সাররাত কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকার পর প্রকৃতির আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে ওঠার দৃশ্য সত্যিই অতুলনীয়।
আমি বেড়ে উঠেছি ছোট ছিমছাম একটি পাহাড়ী শহরে। মাঝে মাঝেই খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে ছাদে চলে যেতাম। আমাদের বাসার ঠিক পিছনেই ছিল কর্ণফুলী হ্রদ আর তার পাশ ধরে চলে যাওয়া উচু পাহাড় শ্রেনী। পাতা ঝরে যাওয়া নেঢ়া সেগুন গাছ গুলো সেখানে কেমন হতভম্বের মতো দাড়িয়ে থাকতো। আর তাদের মাথার উপর বিশাল মেঘের মতো ঝুলে থাকতো শুভ্র কুয়াশার দল। চারদিকটা কেমন অস্বাভাকিক নিরব। একটু গা ছমছমে। পাহাড়ী শহরের ভোর এমনই হয়।
শীতকালে বার্ষীক পরীক্ষা শেষ হয়ে যেত। তখন মাঝে মাঝে গ্রামে যেতাম। গ্রাম বলতে নানা বাড়ী। নোয়াখালীর প্রত্যন্ত একটি গ্রাম (এখন নয়)। সেখানে শীতটা আবার অন্যরকম। বিছানায় শুয়ে শুয়ে গাছ থেকে টিনের চালে কুয়াশা ঝরে পড়ার শব্দটা অদ্ভুত একটা ভালো লাগার আবেশ তৈরি করতো। ভোর বেলায় পাশের মক্তোব থেকে সুর করে আরবী পড়ার শব্দ ভেসে আসতো। তারপর উঠে পড়তাম। গ্রামের ছেলে বুড়োর দল শীত তাড়ানোর আয়োজনে ব্যস্ত। খের (শুকিয়ে যাওয়া ধানের শীষ আর কান্ড) জড়ো করে আগুন ধরানো হতো, তারপর সবাই চারপাশে গোল হয়ে বসে জম্পেস আড্ডা। নানাবাড়ীর সামনে আর পিছনে যতদুর চোখ য়ায় ধানি জমি। নবান্নের আমেজ ততদিনে শেষ। তাই সারা মাঠ ধু ধু করতো । অবশ্য কৃষকরা আবার নতুন করে চারা লাগানোর পরিকল্পনায় হালের গরু আর লাঙ্গল নিয়ে ব্যস্ত। শীতকে তারা খুব একটা পাত্তা দিতনা। গ্রামের শীতের আরেকটি মজার ব্যপার হলো নতুন চালের গুড়োর পিঠা আর খেজুরের রসের পায়েস। খাওয়ার চেয়ে অবশ্য এর আয়োজনটাই ভাল লাগতো আমার কাছে।
এখনও মাঝে মাঝে নানার বাড়ীতে যাওয়া হয়। সেই ধু ধু প্রান্তর আর নেই। চোখের দৃষ্টি ভীষনভাবে ধাক্কা খায় চারদিকে। বেঙের ছাতার মত নতুন বাড়ীঘর তৈরি হচ্ছে। খুব কষ্ট হয়।
এখন কর্মসুত্রে সিলেটে থাকি। কয়দিন আগে অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলাম। ভীষন শৈত প্রবাহ বইছিল দেশজুড়ে। রাস্তার পাশের একটা খোলা জাযগায় দেখলাম একজন বৃদ্ধ শুয়ে আছেন। বাংলাদেশে এটা খুব স্বাধারন একটা দৃশ্য। তারপরও কেন যেন বুকটা ধ্বক করে উঠলো। ভালোভাবে তাকালাম। বৃদ্ধটির অপলক দৃষ্টি শীতল আকাশের দিকে নিবদ্ধ। বুঝলাম উনি সম্ভবত কিছুক্ষন আগেই মারা গেছেন। এতো খারাপ লাগলো...
এই শীতে আরেকটি নতুন উপলোদ্ধি হলো। আমার শরীর টাও মানে হয় শীত উপোযুগী নয় । কয়েকদিন থেকেই খেয়াল করছিলাম রাতের বেলা বুক থেকে শোঁ শোঁ শব্দ হচ্ছে ডাক্তার দেখালাম। বললেন এ্যজমা হয়ে গেছে! দু দুটি ইনহেলার, এন্টিবায়োটিক আরো কি সব ওষুধ সহ পাক্কা একমাসের কোর্স। এখন তাই এইসব নিয়েই ব্যস্ত আছি।
শীতের এই বাজে ব্যপারগুলো আমার জানা ছিল না আমার। তাই এখন আর শীত ভালো লাগেনা
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:৫৭