১ম পর্ব
২ য় পর্ব
৭ অক্টোবর ,১৮৫৮। ৮৩ বছরের বৃদ্ধ সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফর, সম্রাজ্ঞী জিনাত মহল, দুই শাহজাদা জওয়ান বখত ও শাহ আববাস, শাহজাদা জওয়ান বখত এর স্ত্রী শাহ জামানী বেগম নিয়ে ইংরেজ গোলন্দাজ ও অশ্বারোহী বাহিনী কলকাতার উদ্দেশ্যে দিল্লি ত্যাগ করে। পরে কলকাতা হতে মাগারা নামক যুদ্ধ জাহাজে রেঙ্গুনে পাঠানো হয়।
সম্রাটের জীবনের বাকি দিনগুলো চরম দু:খ ও অভাব অনটনের মধ্যে কেটেছে। ব্রিটিশ বাহিনীর ক্যাপ্টেন নেলসন ডেভিসের তত্তাবধানে ৪ রুমের ছোট ঘরে (প্রতিটি রুম ১৬ বর্গ ফুট) সম্রাট ও তার পরিবার-পরিজনের বন্দিজীবন শুরু হয়। সম্রাটকে শুতে দেয়া হয় একটা পাটের দড়ির খাটিয়ায়। ইংরেজ সরকার নির্বাসিত সম্রাট ও তার পরিবারের সদস্যের জন্য খোরাকি বাবদ দৈনিক এগার টাকা এবং প্রতি রোববারে বার টাকা করে দিতেন। আর মাসের পহেলা দিনে সাবান, তোয়ালে কেনার জন্য মাথাপিছু দু'টাকা করে দিতেন। কোনো লোককে তাদের সাথে দেখা করতে দেয়া হতো না।তাদের জন্য চার জন ভারতীয় ভৃত্য (চাপরাসি, ভিস্তিওয়ালা, ধোপা, সুইপার) প্রদান করা হয়। চাকর-বাকররা পাস নিয়ে তাদের কাছে যেতে পারতো।
১৮৬২ সালের অক্টোবর থেকেই বাহাদুর শাহ অসুস্থ হয়ে পড়েন। ক্রমেই অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে এবং পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হন।অবশেষে ১৮৬২ খ্রিষ্টাব্দের ৭ নভেম্ভর শুক্রবার ভোর ৫টায় ৮৭ বছর বয়সে ভারতের শেষ সম্রাট মৃত্যুবরন করেন।
লাশ দাফন করতে কবর পর্যন্ত গেলেন দু'রাজকুমার জওয়ান বখত ও শাহ আববাস আর তাদের বিশ্বস্ত খাদেম আহম্মদ বেগ। একজন মৌলভী লাশ দাফনে সাহায্য করেন। কবরটি বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়েছিল।উদ্দেশ্য এটি একসময় নষ্ট হয়ে যাবে, ঘাসগুলো গোটা জায়গা আচ্ছাদিত করে ফেলবে।কোথায় সর্বশেষ মুঘল সম্রাট শায়িত আছেন, তার চিহ্নিও কেউ খুঁজে পাবে না। ইংরেজরা খুব ভালোভাবে জানত ভারতবর্ষের জনসাধারণের মনে এই সম্রাটের প্রভাব কতখানি। সম্রাটের মাজার যাতে দেশপ্রেমিকদের তীর্থ স্খানে পরিনিত হতে না পারে তারই জন্য এই সতর্কতা। অত্যন্ত দুঃখ ও পরিতাপের বিষয় যে, শেষ মোগল সম্রাটের মৃত্যুর পরও ইংরেজ বেনিয়ারা তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধাটুকুও জানানোর প্রয়োজন অনুভব করেনি। এমনকি দাফনের সময় মরহুম সম্রাটের কোনো উপাধি বা পদবী বৃটিশ সরকার ঘোষণা করতে দেয়নি।
সম্রাটের ইচ্ছা ছিল স্বদেশের মাটিতে সমাহিত হওয়া। জন্মভূমির প্রতি ছিল প্রচণ্ড অনুরাগ। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন জীবনের শেষ সময় ঘনিয়ে আসছে। স্বদেশের মাটিতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ কিংবা সমাহিত হওয়ার সাধ কোনোটাই পূরণ হবে না। নিদারুণ দু:খে তিনি লিখেছেন একের পর এক কালোত্তীর্ণ কবিতা। তারই একটি¬ নিম্নরূপঃ
মরনেকে বাদ ইশ্ক্ব মেরা বা আসর হুয়া উড়নে লাগি হ্যায় খাক মেরি ক্যোয়ি ইয়ার মে; কিৎনা বদনসিব জাফর দাফনকে লিয়ে দোগজ জামিন ভি মিলানা চুকি ক্যোয়ি ইয়ার মে।
ভারতবর্ষের এক দল মানুষ ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাটের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে রেঙ্গুন যান। কিন্তু প্রথম প্রচেষ্টা সফল হয়নি। দীর্ঘদিন অবহেলিত ও উপেক্ষিত থাকায় সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীর কবর সনাক্ত করা যায়নি।পরে তার আসল কবর আবিষ্কৃত হয় এবং রেঙ্গুন মুসলিম সমাজের দাবির মুখে ১৯০৭ সালে ইংরেজ সরকার সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীর কবরে সমাধিসৌধ নির্মান করে।
[১৮৭২ সালে শাহ জামানী বেগম আন্ধত্ব বরন করেন। সম্রাটের প্রিয়তমা স্ত্রী জিনাত মহল মারা যান ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে। সম্রাটের পাশেই রয়েছে তার সমাধি। জওয়ান বখত ৪২ বছর বয়সে স্টোক করে মারা যান। মির্জা শাহ আব্বাস রেঙ্গুনে এক মুসলিম নারি বিয়ে করেন। তার উত্তরসূরিরা বার্মার সাধারণ নাগরিকের মতোই জীবনযাপন করছেন। মুঘল সাম্রাজ্যের উত্তরসূরিদের আরেক অংশ বর্তমানে কলকাতায় বসবাস করে।]
সূত্রঃ
Click This Link
Click This Link
Click This Link
Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪১