কি লিখব, কিছুই খুঁজে পাচ্ছি না। কোথা থেকে শুরু করব সেও জানি না। কারণ, শুরু ও শেষের সীমারেখার অনেক ঊর্ধ্বে সব কিছু ঘটে গিয়েছে আমার জীবনে। কোন দিন যা আশা ও করি নি সে অনভিপ্রেত ঘটনা হয়ে গিয়েছে আমার সাথে। শুরুটা ঠিক এভাবে হবে আমি কোন দিনই ভাবতেই পারি নি।
কেননা, আমি নিজেকে একজন যোদ্ধা মনে করতাম। আর যোদ্ধা কখনও কারোর মায়াজালে জড়াতে পারে না। তার জীবনের মূল লক্ষ্য যুদ্ধ এবং যুদ্ধ জয়। এর ব্যতীত তার জন্য অন্য কিছু চিন্তা করাও ক্ষতিকর। আর সেটাই হয়েছে আমার সাথে। যা থেকে সারা জীবন দূরে দূরে থেকেছি সেই অস্ত্রে আমিই ঘায়েল হয়েছি।
মনের মাঝে এখন আর কোন অনুভূতি, উল্লাস, বিষাদ এসব কাজ করে না। কেন করে না তাও জানি না। জীবনে এই পরিবর্তনের আগে উদাসীন, বাউন্ডেলে ছিলাম। নিজের মন মত যা ইচ্ছা করতাম। জীবনে পরিবর্তন আসার পর নিজেকে ও পরিবর্তন করতে চেয়েছি। কিন্তু যতটা নমনীয় হওয়ার দরকার ঠিক ততটা পেরে উঠতে পারি নি। কেননা, আমার দ্বারা আর সম্ভব হচ্ছিল না। আমি যা তাই ঠিক আছি মনে করি। এর বাহিরে আমার কোন চিন্তা চেতনা কাজ করে না। পরিবর্তিত জীবনে অনেক কিছুই রঙ্গিন মনে হয়। কিন্তু সব রঙ্গিন জীবন যে ঠিক না সেটাও বুঝতে হয়। যদি ও সে পরিমাণ বিবেক বোধ তখন কাজ করেনি বিধায় আজ আমার এহেন পরিণতি।
পরিবর্তিত জীবনের আলোকে নিজেকে পরিবর্তন অনেকটা প্রতিযোগীতামূলক হলেও আমি ব্যর্থ হয়েছি। ব্যর্থ হয়েছি সবার কাছে তার থেকে বড় ব্যর্থতা আমি নিজের কাছে ব্যর্থ হয়েছি। এর গ্লানি সহ্য করার মত নয়। নিজের কাছে পরাজয়ের থেকে মৃত্যু শ্রেয়। যুদ্ধের ময়দানে যেমন, হেরে যাওয়ার থেকে মৃত্যু বরণ করে নেয়াই শ্রেয়। তেমনি নিজের কাছে পরাজিত হলে মৃত্যুই শ্রেয়।
জীবনের সংঘর্ষে কখনও জড়াতে চাই নি। কারণ জানতাম আমার জীবনের কোন নিশ্চয়তা ছিলো না। কিভাবেই বা থাকবে, এক বাউন্ডেলের জীবনের নিশ্চয়তা। এরই মাঝে পরিবর্তনের আগমন যা আমাকে ভাবিয়ে তুলেছিলো। এতটা ভাবিয়ে তুলবে সে আমি আশা করি নি। আশা করার ও কোন কারণ ছিলো না। তবুও কারণ বা অকারণেই হোক ভাবিয়ে তুলেছিলো। আর যতটা ভাবিয়ে তুলেছে সে থেকে বেঁচে থাকার একটা আশা খুঁজে পেয়েছিলাম। নতুন করে বাঁচার একটা আলো দেখেছিলাম। কোন নতুন স্বপ্ন স্বার্থক হতে দেখছিলাম। কিন্তু আমি ভুলে গিয়েছিলাম আমি রয়েছি মরু প্রান্তরে। আর যা দেখেছিলাম সবই যে মরীচিকা।
তাই এখন আর কোন কিছুতে আগ্রহ কাজ করে না। মনে হয় মৃত্যুই যেন শেষ আশ্রয় হয় আমার। এতদিন তো একটা আশ্রয় ছিলো, যাকে কেন্দ্র করে আর্বতিত হতাম। কিন্তু এখন সে সব কিছুই নেই। যাকে কেন্দ্র করে আর্বতিত হবো। কোন কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। বেঁচে থাকার জন্য যে আলো টুকু ছিলো সেটিও নিভে গিয়েছে। এখন আর কোন পিছুটান নেই। আমি নিরবে অবহেলিত হয়েছি। জানতাম, এই অবহেলাই আমার প্রাপ্য ছিলো। তবুও সব সহ্য করে যাচ্ছি, সহ্য করে যেতে হবে আমায়। অনেক দূর পর্যন্ত যেতে হবে আমাকে। এভাবে নিশ্চল হয়ে থাকলে আমার কোন অগ্রগতিই হবে না।
অভিশপ্ত জীবনকে মৃত্যুর কাছে নিয়ে যেতে হলে আমাকে আরোও পথ চলতে হবে একাকী, নিঃসঙ্গ।
বেঁচে থাকার আর নেই কোন ইচ্ছা,
নেই আর কোন প্রত্যাশা,
এখন মৃত্যুই আমার কাম্য,
এই মৃত্যুই যে ছিলো আমার প্রাপ্য।