লেখাটি শুরু করার বিশেষ কোন ইচ্ছেই ছিলো না আমার। কারণ টি শুধুই অজানা ছিলো। কিন্তু জীবনের মোড় এমনিই পরিস্থিতির সম্মুখীন করে দিলো যে আর না লিখে পারলাম না। আমার এই লেখা গল্পটি পড়ে হয়ত অনেকটা ফিল্মী কাহিনীর মত লাগবে। কিন্তু কাকতালীয় হলে সত্য যে, এর অনেকাংশ জীবন থেকে নেয়া। তবে এর সাথে লেখকের জীবনের কোন মিল নেই।
মূল গল্পঃ
গ্রীষ্মের উত্তপ্ত দুপুরে সূর্য তেজ বিকিরণ করে যখন পশ্চিম দিকে অস্তগত হচ্ছিল তখন সেই পড়ন্ত বিকেল বেলায় দেখা হলো দুজনার। পথ চলতে চলতে একসাথে পদযুগল মিলিয়ে হাঁটা শুরু করল দুজনে। একাদশ বর্ষী শুভ [ছদ্মনাম] মাথা নিচের দিক দিয়ে একই সাথে হেঁটে চলছিল। কিছুটা লাজুক প্রকৃতির ছিল বলে মেয়েদের প্রতি ওর খানিক ভীতি কাজ করত। তাই স্নেহা [ছন্দনাম] কে দেখার বিশেষ প্রয়োজন মনে করে নি। অপরদিকে স্নেহা ছিলো সুমিষ্ট কন্ঠের অধিকারিণী, মিশুক এবং বন্ধুসুলভ। হেঁটে চলছিলো দুজনেই। প্রথম বাক্য বিনিময় শুরু হল স্নেহার পক্ষ থেকে।
স্নেহাঃ তোমার নাম কি?
শুভঃ আমার নাম শুভ। তোমার?
স্নেহাঃ স্নেহা।
শুভ তখনই ওকে ভালো করে দেখার সুযোগটুকু পেল। আর যা দেখল তার কাছে সে ছিলো এক অবিস্মরণীয় মুর্হুতের মত। যা সে কখনও তার কল্পনাতে ছিলো না। গৌর বর্ণের অধিকারিণী একাদশবর্ষী কন্যা, স্নেহার দীঘল কালো চুল। সু-নয়না, মৃদুভাষী এবং শান্ত স্বভাব জাত। পড়ন্ত বিকেলে যেন তার সৌন্দর্য্যের আভা আরো চিত্তাকর্ষ করে তুলেছিল চারিদিক। যার কারণে শুভ এক দেখাতে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিল তার প্রতি। তার কল্পনার রাজ্যে স্নেহার স্বপ্ন বুনতে লাগল আর শুভ তাকে মন থেকে ভালবাসা শুরু করে দিলো।
বেশ কটা দিন তারই স্মৃতি নিয়ে কাটতে লাগলো শুভর দিন। সারাদিন ফুরফুরে মেজাজ আর তাকে নিয়ে চিন্তা। তাকে এক পলক দেখার জন্য অপেক্ষা, তার কথা শোনার জন্য এক অদম্য চাহিদা যেন শুভকে সর্বদা গ্রাস করে রাখত। সময়ের আগে সে উপস্থিত থাকত সেই জায়গায়। কখন সে আসবে, কখন কথা বলবে?? সে অপেক্ষায় শুভ পথ চেয়ে বসে থাকতো। আর যখন সে আসত তখন তার আনন্দের সীমা থাকত না। কারণ, সে যে তার দেবীর দর্শন লাভ করেছে। স্নেহার বন্ধুসুলভ আচরণ শুভকে মুগ্ধ করে তুলত। শুভ মনে মনে এটাই ভেবে বসেছিলো যে, স্নেহা তাকে পছন্দ করে এজন্যই তার সাথে কথা বলে। কিন্তু শুধু বন্ধুর মত সর্ম্পক ছিলো দুজনার। তবে শুভ ভেবেছিলো বন্ধুর থেকে অনেক বেশি কিছু।
অবশেষে, কিছুদিন পর দুজন দুজনকে দেখার পরিসমাপ্তি ঘটল। আর তেমন দেখা হয় না দুজনার। যদিও স্নেহার তেমন ব্যাকুলতা ছিলো না এসবের প্রতি, কেননা সে সব সময় বন্ধুই মনে করত। সে তার নিজের জীবন যাত্রা নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকত। আর শুভ ছিলো তার স্বপ্নের দুনিয়াতে। সৃষ্টি হতে লাগলো দুরত্ব দুজনার। মূলত দূরত্ব বাড়লেও শুভর ভালবাসা ততই বেড়েছিলো স্নেহার প্রতি। এমন একটি ক্ষণ নেই যে সে স্নেহাকে মনে করেনি। এভাবে দেখতে দেখতে পার হয়ে গেলো প্রায় চারটি বছর। এই চারটি বছর শুভর ভালবাসা স্নেহার প্রতি কোন অংশে কমেনি। বরং ওদের মধ্যকার দূরত্ব আরো শুভর ভালবাসাকে আর প্রগাঢ় করেছিলো। শুভ এই দূরত্বকে নিজের ভালবাসার পরীক্ষা বলে মনে করে নিয়েছিলো। যদি এই পরীক্ষার পর স্নেহাকে প্রাপ্ত হয় তাহলে ক্ষতি কি!! এই ছিলো শুভর চিন্তা।
অতঃপর, চার বছর আবার শুভ এবং স্নেহার দেখা হল। অনেকটা অনাকাঙ্খিত ভাবেই। যখন সে শুভর সামনে আসলো তখন শুভ বিশ্বাস করতে পারছিলো না আসলেই স্নেহা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো শুভ। কিভাবে সে তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করবে, সে বুঝতে পারছিলো না। আবার স্নেহার পক্ষ থেকে বাক্য বিনিময়,
স্নেহাঃ কেমন আছো?
শুভঃ ভালো আছি। তুমি?
স্নেহাঃ হ্যাঁ ভালো।
এই টুকু বলার পর স্নেহা চলে গেলো। আর দেখার সুযোগ হয় নি শুভর। এটিই ছিলো তার শেষ কথা। শুভ অনেক আশা নিয়ে ছিলো। কিন্তু এরপরেও সে খুশি ছিলো যে, সে স্নেহার দেখা পেয়েছে। আসলে শুভ স্নেহাকে নিজের মনে এমন ভাবে কেন্দ্র করে রেখেছে যে তার সর্ম্পূণ স্মৃতি জুড়ে শুধু স্নেহার চিন্তাতে মগ্ন থাকে। তার প্রতিটি কাজে সে স্নেহাকে কোন না কোন ভাবে মনে করেই। এমন ভাবে নিজের কল্পনার মাঝে সে আর্বত থাকতো যেন স্নেহা তার পাশেই রয়েছে। এভাবেই স্নেহাকে নিয়ে শুভর সময় কাটতে লাগলো। তার স্মৃতি গুলো কে আঁকড়ে শুভর ভালবাসা প্রগাঢ় থেকে প্রগাঢ় হতে লাগলো। শুধু মাত্র স্নেহাকে কয়েক মূর্হুতের জন্য তার সাথে কথা বলাই যেন শুভর জীবনে একটা অংশ হয়ে রইলো। আর সেই অংশ কে সে বেঁচে থাকার পাথেয় হিসেবে ধরে নিলো।
স্বপ্নে বিভোর শুভ তার স্বপ্নের সারাদিন কাটাত। এমনি করে চলে গেলো আরও কয়েকটি বছর। পুণরায়, তিন বছর পর আবার দেখা হল দুজনার। শুভ যে আবার স্নেহার দেখা পাবে সে কোন দিন আর ভাবে নি। তবে সেদিনের কথোপকথন শুভর কাছে অনেকটা ইতিহাসের পাতায় লিখে রাখার মত ছিলো। কারণ সেই কথোপকথনই ছিলো শুভ আর স্নেহার শেষ দেখা আর শেষ কথোপকথন। কারণ শুভও জানতো না এরপরে তার সাথে আর কোন দিন স্নেহার দেখা হবে না। কেননা, এই ছিলো শুভর সাথে স্নেহার শেষ দেখা।
সেদিনের দীর্ঘ কথোপকথনের পর শুভ যদিও অনেকটা প্রাণ ফিরে পেয়েছিল, যেন তার ভালবাসার মানুষটি হয়ত বা তার ডাকে সাড়া দিবে। সে ভুল ভাবনা নিয়ে সে স্নেহাকে তার মনের কথা গুলো প্রকাশ করে দিলো। কিন্তু শুভ জানতো না যে, স্নেহা কোনদিন তাকে বন্ধুর থেকে বেশি কিছু ভাবেনি। আর সেদিন সে কথা গুলো প্রকাশ করার পর, শুভ সেই বন্ধুত্বের জায়গাও হারিয়ে ফেলেছিলো। হতবাক হয়ে গিয়েছিলো শুভ। কেন তার ভালবাসার নিবেদন প্রত্যাখাত হল। কিন্তু শুভর জানা ছিলো না, স্নেহার মনে তার জন্য কোন দিন কোন জায়গা ছিলো না।
অনেক চেষ্টা করেছিলো তাকে বোঝানোর, কিন্তু নিয়তির কাছে হার মানতে হয়েছে শুভর। কারণ স্নেহার শেষ পর্যন্ত যখন তার সাথে বন্ধুত্বের সর্ম্পক ও ছিন্ন করল। এর থেকে হৃদয় বিদারক শুভর কাছে আর কিছুই ছিলো না। কিন্তু এরপরেও শুভ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। সে কষ্ট থেকে বেরিয়ে আসার কঠোর প্রয়াস সে করেছে। কিন্তু শুভও আজও পারেনি সেই মোহ থেকে বেরিয়ে আসতে।
ধীরে ধীরে অবসাদ, গ্লানি শুভকে জড়িয়ে ফেলতে থাকে। শুভ কোন ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলো না সে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। শুভ তার মনকে ভালবেসেছিলো। তার শান্ত-কোমল স্বভাব, তার অপরূপ সৌর্ন্দয্য, তার সুমিষ্ট কথামালা কে। কিন্তু শুভর ভালবাসার এহেন পরিণতি শুভর কাম্য ছিলো না। শুভ কোন দিনই স্নেহার সান্নিধ্য কামনা করে নি। তাকে দূর থেকে ভালবেসেই শুভ এতটা বছর কাটিয়ে দিয়েছিলো। শুভ কল্পনার দুনিয়াতে স্নেহা কে সে নিজের রাণী রূপে অধিষ্ঠিত করেছিলো। স্নেহার স্মৃতি গুলো তার ভালবাসার চালিকা শক্তি ছিলো। সেজন্য শত ইচ্ছা করে ও তাকে ভুলতে পারছিলো না। এভাবেই অবষাদ আর বেদনার গ্লানি নিয়েই পথ চলতে লাগলো শুভ।
নিজেকে কর্মব্যস্ততার বেড়াজালে আবদ্ধ করে ফেললো শুভ। একাকী থাকলে যদিও স্নেহার কথা মনে পরে তবুও ব্যস্ততার মাঝে শুভ তাকে ভুলে থাকার সহস্র প্রয়াস করেছে। স্নেহার সাথে কাটানো সেই ক্ষণ কাল গুলোই ছিলো শুভর সুখকর স্মৃতি। একাকী থাকলে সেগুলোই সে কল্পনা করত। আর ভাবতো, যদি সে আবার ফিরে যেতে পারত সে সময় টায় তাহলে আরো একটি বার চেষ্টা করে দেখতো স্নেহাকে বোঝাবার। কিন্তু অতীতে তো ফিরে যাওয়ার কোন উপায় নেই, তাই অতীত থেকেই শিক্ষা নিয়ে তার সামনের দিকে পথ চলা। এভাবে চলতে লাগলো শুভর কর্মব্যস্ত দিন। একদিন শুভ জানতে পারলো স্নেহা চলে গিয়েছে কোন এক দূর দেশে। যদিও আগে থেকে কিছুই জানা ছিলো না শুভর। যাওয়ার আগে শেষ দেখা টুকু করার সৌভাগ্য ও শুভর হয় নি তার সাথে। হলে হয়ত বা আবার শুভ ব্যর্থ প্রয়াস করে দেখতো। কিন্তু সেই সুযোগ টুকু আর হয়ে উঠে নি শুভর।
শুভ এখন আর আগের মত নেই। মনের দিক থেকে অনেকটা শক্ত হয়েছে সে। বুঝতে শিখেছে জীবনে যা চাওয়া হয় তার সবকিছু পেতে হবে এমন কোন কথা নেই। কিছু বস্তুকে অর্জন করে পেতে হয় আর কিছুকে নিজের কর্মের মাধ্যমে। আজও অব্দি শুভ জানে না কবে আবার দেখা পাবে সে স্নেহার। কারণ, সে অজানা প্রান্ত থেকে কবে ফিরবে সে কথা জানে না শুভ। কিন্তু তাই বলে শুভর ভালবাসা কমেনি বিন্দু পরিমাণ ও। শুভ আজও স্নেহার জন্য আগের মত পথ চেয়ে অপেক্ষা করে।
শুভ এখন আর স্বপ্ন দেখে না। সে আর আগের মত উৎফুল্ল থাকে না। হাসি মাখা মুখটা এখন মলিনতায় ভরা তার। কারণ শুভর সব সুখ স্নেহার মাঝে নিহিত ছিলো। সেই স্নেহাই যখন নেই তাই শুভর মুখে হাসি নেই। স্নেহাহীন প্রতিটি দিন যেন শুভর জন্য নরক যন্ত্রণা তুল্য। তবুও এই নরক যন্ত্রণা শুভ মেনে নিতে রাজি, যদি স্নেহা ফিরে তার কাছে এক মূর্হুতের জন্য।
শুভর ভালবাসা আজও অসমাপ্ত রয়ে গেলো। পরিপূর্ণতা লাভ হলো না সে অসমাপ্ত ভালবাসার।
হয়ত বা ফিরবে কোনদিন তুমি,
সে প্রতিক্ষায় বসে আছি আমি।
আছে অনেক জমানো ব্যাথা,
তুমি ফিরলে বলব আমি সে কথা।
একবার শুধু ফিরে আসো তুমি,
বলব তোমায় ভালবাসি, শুধু তোমায় ভালবাসি আমি।
কিছু কথাঃ প্রথম গল্প লিখলাম। সন্মানিত সদস্যগণ, বিচারকের দায়িত্ব আপনাদেরই। লেখাটি অগোছালো হয়েছে এবং সুসজ্জিত নয়। সুতরাং ভুল ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
ধন্যবাদ