ভালোবাসা - মোটামুটি একটি ছোট শব্দ বটে কিন্তু ব্যাপক অর্থপূর্ণ। কেন অর্থপূর্ণ সেটা একে বিশ্লেষণ করলেই আমরা বুঝতে পারি। কেননা এটি এমনি একটি বিষয় যাকে অনুভব ও প্রকাশ উভয়ই মন থেকে করতে হয়। হোক না সে কারো না কারোর প্রতি সেই আবেগ জড়িত নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
যদিও এ ব্যাপারে বিশদ জ্ঞান নেই, তবে আশে পাশের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে যতদূর উপলব্ধি করি তাই আপনাদের সাথে তুলে ধরছি।
ভালোবাসা আসলে কি? ভালোলাগার বহিঃপ্রকাশ না কি দুটি মনের মধ্যের আন্তঃযোগাযোগ। আসলে উভয়ই হতে পারে আবার কারো মতে ভিন্নও হতে পারে। আগেই বলেছি, এ ব্যাপারে আমার বিশদ জ্ঞান নেই। আমার দৃষ্টি ভঙ্গিতে ভালোবাসা হচ্ছে উভয় কেই বোঝায়। তবে আরেকটু বিস্তারিত বললে, আমাদের যার প্রতি কোন আবেগ কাজ করে, যার সান্নিধ্য আমাদের মাঝে শান্তির এক পরশ এনে দেয়, যার পরম মমতায় নিজেকে উজাড় করে দিতে ইচ্ছে করে, যার সুকন্ঠী গলা থেকে সেই সুমধুর ধ্বনি গুলো শোনার জন্য অপেক্ষা থাকে সেটাই বোঝানো হচ্ছে। যদিও এখানে সব ব্যাপারে বলা হয় নি। কেননা, মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন, প্রেমিক-প্রেমিকা ইত্যাদি সকলের মাঝেই ভালোবাসার সেই যোগাযোগ বিদ্যমান থাকে। স্থান, কাল, পাত্র ভেদে সব ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ একেক রকম হতে পারে। সেটা সেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির উপর নির্ভরশীল।
বর্তমান যুগের ভালোবাসা কেমনে যেন বর্ণহীন হয়ে গিয়েছে। ভালোবাসার যে কয়টি মানদন্ড ছিলো সেগুলোর যেন আর অস্তিত্ব নেই আজ। বিশ্বাস, সন্মান, শ্রদ্ধা, স্বাধীনতা, পারস্পরিক সমোঝোতা, গুরুত্ব দেয়া ইত্যাদি বিষয়াদি যেন আজ অনুপস্থিত। কিছু কিছু সময় মনে হয় এগুলোর কি আসলে অস্তিত্ব আছে নাকি নামেই শুধু বলা হয়ে থাকে ভালোবাসা। কেননা, এখন কার যান্ত্রিক জীবনে আবেগের কোন অবকাশ নেই সবাই ছুটে চলছে টাকা নামক পাগল ঘোড়ার পিছনে। যার কাছে সে ঘোড়া ধরা দিচ্ছে সেই লাগাম টেনে দিচ্ছে। ভাগ্য, ভালোবাসা, সন্মান ইত্যাদি তার কাছেই চলে যায়। আর বাকিদের সেই আগের মতই ছুটতে হয়।
যদি বলা হয় কিভাবে একজনকে ভালোবাসা হয়? তার বাহ্যিক সৌন্দর্য্য নাকি তার মনের সৌন্দর্য্য। অনেকই মনের দিকটাই আগে বলবে। কিন্তু প্রেক্ষাপট অনুযায়ী সবাই বাইরের টাকে প্রাধান্য দেয়। কথায় আছে না, আগে দর্শনদারী এরপর গুণবিচারী। সেটাই অবলোকন করে কিনা কে জানে। ভালোবাসার আসলে সেই প্রথাগত বা তথা কথিত কোন নিয়ম নেই যে এই উপায়েই ভালোবাসতে হবে। এটা মনের থেকে আসা সেই আনন্দময় অনুভূতি যার জন্য অনেক প্রতিকূলতাও অনুকূল হয়ে যায়।
ভালোবাসার এই ভান্ডারে একটি ব্যাপার প্রচলিত আছে "প্রথম দর্শনেই প্রেম"। এটা অনেকেরই হয়ে থাকে কেননা প্রথম দর্শনে প্রেম হয় নি এমন লোক পাওয়া দুষ্কর। এরপরেও প্রথম দেখাতে একজনের প্রতি যে ভালোলাগার অনুভূতি জাগ্রত হয় সেটা অনেকাংশে এক তরফা ভালোবাসার মতই বটে। কেননা যাকে প্রথম দর্শনে ভালোলাগলো সে তো আপনাকে নাও পছন্দ করতে পারে। আর যদি হয়েই যায় তাহলে সেটা স্বার্থকতা হিসেবে সারা জীবনের পথ চলার সঙ্গী হিসেবে থাকবে।
ভালোবাসার ক্ষেত্রে যেটা হয় উভয় পক্ষের পারস্পরিক বোঝা পরার ব্যাপার। অনেক সময় অনেক কেই দেখি নিছক কিছু বিষয়াদি নিয়ে ঝগড়া করে বসে। বিষয়টা খুব সহজেই সমাধান যোগ্য কিন্তু এক বা উভয় পক্ষের একগুঁয়েমি বা ডমেনেটিং মনমানিসকতার জন্য ভুল বোঝাবুঝিতে রূপান্তর হওয়া পরিশেষে সর্ম্পকে তিক্ততা চলে আসা।
অনেকেই আছেন যারা ভালোবাসার সহজে প্রকাশ করে না। তাদের মনের মাঝে জমিয়ে রাখে সেই ভালোবাসার সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না ইত্যাদি। কিন্তু কোনদিনও সে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ তারা করে না। কাছের মানুষ কে একটি বার দেখা, তাকে ঈশারা দেয়া, চোখে চোখ রেখে দেখা এতেই তাদের পরম প্রাপ্তি বলে পরিগণিত হয়।
ভালোবাসার ক্ষেত্রেই এটা বুঝি উভয় পক্ষের বিশ্বাস এবং পারস্পরিক সমঝোতা টাই মূল আর্দশ হিসেবে কাজ করে। একজন আরেকজনের প্রতি নিজের মনের অনুভূতি গুলো প্রকাশ করে যাতে সেই রূপ একটি আশার বাণী পায় সেটাই কামনা করে। আর সেই ভালোবাসাই যেন স্বর্গীয় প্রশান্তি লাভ করে।
আসলে ভালোবাসার বিশদ ব্যাখ্যা দিতে গেলে হয়ত বা অনেক ভাবেই দেয়া যায় বা অনেকে এই নিয়ে মহাকাব্য ও লিখে ফেলতে পারে। যতটুকু নিজের জ্ঞানে ধরেছে তুলে ধরলাম। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমাপ্রার্থী।