নিশুতি রাতের নি:স্তব্ধতাকে পাশ কাটিয়ে
চাইমবেলের টুংটাং শব্দের মতো জেগে থাকে কোন এক স্টেশন।
মধ্যরাতের নির্জনতায় ধীরে ধীরে কমতে থাকে
চায়ের দোকানের দিনমান কোলাহল।
ক্রেতাশূন্যতায় ঝিমিয়ে পরে ফেরীওয়ালাদের দৌরাত্ম্য,
দূরন্ত কুকুরেরাও ক্লান্ত হয়ে গা এলিয়ে দেয়
গৃৃহহীন ঘুমন্ত মানুষের সারিতে।
যেখানে একটা সময়ে পেটের ক্ষুধা ধামাচাপা দিয়ে
হতাশ মুখে ঘরমুখী হতে বাধ্য হয় দুঃখিনী নিশিকন্যাটিও।
চাঁদহীন ঘন অমাবস্যা রাতে ছাতিম পাতার ফাঁকফোকরে
জোনাকের মত দিব্যি লুকোচুরি খেলে সোডিয়ামের নিয়ন আলো।
নিষ্পাপ ঘুমে নিমগ্ন শিশু মুখ গুঁজে রাখে বিশ্রামাগারে মায়ের বুকে,
পাশে বাবা সজাগ থাকে মশা তাড়ানোর অতন্দ্র প্রহরী হয়ে।
সৌম্য সুদর্শন প্রৌঢ়ের সামান্য খুশখুশে কাশিতে সচেতন হয়ে
পরম মমতায় তার বুকে হাত রাখে আশীতিপর বৃদ্ধা সঙ্গী।
অন্যপাশে নবদম্পতির লাজুক বউটি!
স্বামীর কাঁধে মাথা রেখে বাহুতে আঙ্গুল খুঁটে খুঁটে,
নিবিড় মনে গেঁথে চলে স্বপ্নসুখের কাব্য।
অপেক্ষা দুর্নিবার!
ট্রেন আসে, ট্রেন যায়।
কেউ কেউ দূরে চলে যায়,
আবার কেউবা ফিরে আসে অস্তিত্বের ঠিকানায়।
সবুজ বাতি, লাল বাতির সাথে তাল মিলিয়ে
বাঁশির তীব্র হুইসেল নিবিড় থেকে আরো নিবিড়তর হয়।
কেবল এককোণে বসে উদাসপানে চেয়ে থাকে
ঘর বিবাগী অভিমানী মধ্যবয়সী এক নারী।
হাতের মুঠোয় ছোট্ট লাল ট্রলি ব্যাগটা আঁকড়ে ধরে
মধ্যরাতের প্ল্যাটফর্মের সে যেন আজ গন্তব্যহীন যাত্রী।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০১৮ রাত ৩:৩৫