সমাধান কি আত্মহত্যা
ইদানীং পত্র-পত্রিকায় চোখে পড়ে আত্মহত্যার খবর। আর এই আত্মহত্যার পথ যারা বেছে নিচ্ছে তাদের বেশিরভাগই নারী। আর এই আত্মহত্যার পরিবেশ তৈরি করে বখাটেরা, যারা ইভটিজিং-এর সঙ্গে জড়িত। ইভটিজিংকারীরা বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে। ইভটিজিং-এর কারণে অনেক মেয়ে স্কুলে যেতে পারছে না। বখাটে ও মধ্যবয়সীদের উৎপাতের কারণে তাদের পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বর্তমানে ইভটিজিং বন্ধের প্রতিবাদে সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় বইলেও ইভটজিার/বখাটদেরে মাঝে এর প্রভাব পড়েনি।
এসব আত্মহত্যা আমাদের অপরাধী করে, শোকাহত করে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে আমরা কোনো চেষ্টাতেই এর লাগাম টেনে ধরতে পারছি না। শুধু শহরেই নয়, গ্রামে এর চেয়ে বেশি ঘটনা ঘটে কিন্তু সেটি সবার নজরে পড়ে না। এখনও মফস্বল এলাকায় মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয়। নিজের সম্ভ্রম নষ্ট হলে মানুষকে মুখ দেখাতে না পারায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কিন্তু আত্মহত্যাই কি সমস্যার সমাধান?
স্কুলগামী ছাত্রীদের ওপর বখাটেদের নির্যাতন নতুন কিছু না। তবে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে এর মাত্রা খুবই বেশি। যারা আত্মহত্যা করছে তাদের খবর আমরা পেলেও এমন কত মেয়ে স্কুল-কলেজে যাওয়ার পথে বখাটে কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই। সবচেয়ে ভাবনার বিষয় হচ্ছে, বখাটেদের নির্যাতনের শিকার স্কুলছাত্রীরা পরিবারের কাছ থেকে উপযুক্ত ব্যবহার পাচ্ছে না। উপরন্তু বখাটেদের উত্ত্যক্ত বা নির্যাতনের শিকার হয়ে মেয়েটি বাড়িতে ফিরে অভিভাবকদের কাছে নির্যাতনের কথা জানালে উল্টো পরিবারের লোকজন নির্যাতিত মেয়েটিকে গালমন্দ করে থাকে। স্কুলে যাওয়ার পথে একদিকে বখাটেদের নির্যাতন, অন্যদিকে পরিবারের নিন্দা মেয়েটিকে অসহায় করে তোলে। এতে পরিবারের কাছ থেকে নিরাপত্তা না পেয়ে মেয়েটি নিজেকে অনিরাপদ মনে করেই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। মেয়েদের পেছনে অভিভাবকদের নজর থাকলেও তাঁরা সময়মতো মেয়েদের খোঁজ-খবর রাখেন না। আর তাই এ ধরনের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
ইভটিজিং প্রতিরোধ বিষয়ে আইন পাস করলেই কেবল এটা বন্ধ করা সম্ভব নয়। বরং ওয়ার্ড, ইউনিয়ন এবং উপজেলা পর্যায়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। পোস্টার, ব্যানার নিয়ে র্যালি করলেই কি ইভটিজিং বন্ধ করা সম্ভব? আত্মহত্যাই সকল সমস্যার সমাধান নয়- এটা নারীদের বোঝানোর পাশাপাশি তাদের এসব প্রতিরোধে সক্ষম করে তোলাও জরুরি।