somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টোকাইদের রফিকুন নবীর ক্যানভাসেই মানায়, শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টিতে কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতায় নয়

১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৫:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাহিত্য, নাটক, সিনেমা, সংগীতকে আমি দেখি সিরিয়াস ধরনের কাজ হিসেবে। কারণ, এসব শিল্প মানুষের মানসপটে খুব প্রভাব ফেলে, একটা সমাজের চরিত্র গঠনে প্রভাব ফেলে। ফলে এসব শিল্পের সঙ্গে তাদেরই যুক্ত হওয়া উচিত যাদের নূন্যতম মূল্যবোধ আছে, সততা আছে, শিকড় ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা আছে, ইতিহাস সচেতনতা আছে, সু-রুচি আছে। কিন্তু আমাদের দূর্ভাগ্য যে নব্বইয়ের দশক থেকে এসবের বিপরীত চরিত্রের লোকেরা আমাদের এই শিল্পমাধ্যমগুলোয় প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। এদের মধ্যে অনেকে দেশ-বিদেশের রাশভারি ডিগ্রিধারীও আছে! আমাদের দেশে আবার রাশভারি ডিগ্রিধারীদের মনে করা হয় সর্বকাজের কাজী! কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলে বা রাশভারী ডিগ্রিধারী হলে আমাদের দেশের সাংবাদিক এবং আমজনতা ভাবে- তিনি পণ্ডিত মানুষ, তিনি যা করেন তাই-ই উৎকৃষ্ট। ফলে তার নিন্মমানের শিল্প-সাহিত্য নিয়ে হাইপ তোলা শুরু হয়। কিন্তু রাশভারী ডিগ্রি যে উন্নত শিল্প-সাহিত্যের মাপকাঠি নয়, এই বোধটা বিরাট সংখ্যাক লোকের মধ্যেই নেই! এই নির্বোধদের কারণে অনেক আগেই জন্ম হয়েছে সাহিত্যের হিরো আলমদের!

বাস্তবতা হলো- আমাদের শিল্প-সাহিত্যে যারা মহীরুহ, তাদের বেশিরভাগেরই রাশভারী ডিগ্রি নেই!

নব্বইয়ের দশকের আগে উপরে উল্লেখিত গুণের বিপরীত চরিত্রের লোকেরা শিল্প-মাধ্যমগুলোর সঙ্গে যুক্ত ছিল না তা নয়, ছিল, কিন্তু তারা কখনওই সামনের সারিতে এসে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি, মিডিয়ার সামনে গলা উঁচু করে কথা বলতে পারেনি। এই প্রবণতা আংশিকভাবে শুরু হয় নব্বইয়ের দশকে, আর মহামারী আকার ধারণ করে এই শতকের প্রথম দশকে। আর এতে বিরাট ভূমিকা রাখে গণমাধ্যম, সামনে থেকে যার নেতৃত্ব দেয় প্রথম আলো। ভাঁড়ামী, চটুলতা, অসভ্যতা-অভব্যতাকে শিল্প হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালায়। নাখাল পাড়ার টোকাইটাকে নিয়ে হাইপ তোলে প্রথম আলো, চ্যানেল আই। পরে তাতে যুক্ত হয় অন্যান্য গণমাধ্যম।

আমি সিনেমা নিয়ে আলাপকালে আমার পরিচিত মহলে সবসময়ই বলেছি, ‘নাখালপাড়ার টোকাইটা সিনেমার গল্প নির্বাচন-ই শেখে নাই! নাটক-সিনেমার নামে সে ফাতরামি করতে আসছে।’

অল্প বয়সে অতিরিক্ত ডান্ডি ও গাঁজা সেবন করে নাখালপাড়া-কারওয়ান বাজারের বস্তি এলাকায় সে যে ধরনের ফাতরামি করে বেড়াত, সে-সব ফাতরামি খুব লঘু উপস্থাপনার মাধ্যমে নাটক-সিনেমায় তুলে ধরে। আর গণমাধ্যমগুলো হাইপ তোলে এইসব ফাতরামিকে নতুন দিনের নতুন মাত্রার শিল্প হিসেবে। হাইপ তোলা গণমাধ্যমের একটা রোগ! কখনও টাকার নেশায়, কখনও উপঢৌকনের নেশায় এবং আরও নানারকম নেশায় এই রোগ হয়। নিজে গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে কাজ করে চোখের সামনে দেখেছি কিভাবে ফালতু বিষয় নিয়ে হাইপ তোলা হয়। দেখেছি জার্নালিজম থেকে পাস করা তথাকথিত বড় সাংবাদিকরা ভিউয়ের নেশায় হিরো আলম, সংগীত হন্তারক মাহফুজুর রহমান কিংবা নাখালপাড়ার টোকাইকে অতিথি করার উদগ্র বাসনায় কেমন ছটফট করে! আমি তো গণমাধ্যমের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের কেউ ছিলাম না, তাই কেবল দেখে যেতে হয়েছে, মনে মনে থু থু দিয়েছি তথাকথিত বড় সাংবাদিকদের রুচি আর জার্নালিজমের শিক্ষায়, কখনও কখনও সহকর্মীদের কাছে অসন্তুষ্টির কথা বলেছিও।

আজকের যে সামাজিক বিপর্যয়, তার দায় গণমাধ্যম এড়াতে পারে না। এই যে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জ্ঞানশূন্য একটা মস্তিষ্কবিকৃত প্রজন্ম গড়ে উঠল, এই প্রজন্ম গড়ে তোলার পিছনে গণমাধ্যমের বিরাট ভূমিকা আছে।

আমাদের শিল্প-সাহিত্য ও রাজনীতির ময়দানে টোকাইরা ঢুকে পড়েছিল অনেক আগেই, টোকাইদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছিল, কেউ আমলে নেয়নি, সবাই ভেবেছিল এরা নতুন দিনের আলোর দিশারী। আলোর দিশারী মনে করা টোকাইরা দিনে-দুপুরে ঘনঘোর অন্ধকার নামিয়ে এনেছে দেশে, শিল্প-সাহিত্য ও রাজনীতির ময়দান দখল করে এখন তাদের উন্মাদনার চূড়ান্ত রূপ দেখাচ্ছে।

কেবল একটা সংখ্যা হয়ে বাঁচা লোকেরা কিছুতেই বুঝতে চায় না যে- টোকাইদের রফিকুন নবীর ক্যানভাসেই মানায়, শিল্প-সাহিত্য সৃষ্টিতে কিংবা রাষ্ট্র ক্ষমতায় নয়।


১২ এপ্রিল, ২০২৫
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৫:১১
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও আমার অপারগতা

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:৪১

সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত খবর অনুযায়ী আজ নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের সুপারিশ জমা দেয়ার কথা। তাদের প্রস্তাবিত কিছু বিষয় পড়ার পর আমার মনে বিষয়গুলো নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ : দেশের উন্নয়নের জন্য আসন বাড়ানোর বিকল্প নেই

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০৮


নারী অধিকার নিয়ে কথা উঠলেই কিছু ভদ্রলোকের ঘুম ভেঙে যায়। রাষ্ট্র নড়েচড়ে বসে—একটু যেন ‘স্মার্ট’ ভাব ধরে। সেই ভাবেই নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন সুপারিশ করলো, সংসদের আসন সংখ্যা ৬০০ করা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প : মহম্মদ ইউনুস কি ভারতের বা মোদির হাতের পুতুল ?

লিখেছেন গেছো দাদা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:২৩

মোদীর ওপর গোসা করে মাটিতে খায় ভাত। হ্যাঁ বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এইটাই হয়েছে। ভারত বাংলাদেশের পোশাক পণ্যের জন্য মালবাহী বিমানযোগে ট্র্যানশিপমেন্ট ফ্যাসিলিটি বন্ধ করে দেওয়াতে এমনিতেই পোশাক শিল্পের ওপর বড়সড়... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারীবাদীতার নামে ইসলামোফোবিয়া

লিখেছেন মারুফ তারেক, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৩:৩১



ইসলামে নারী ও পুরুষের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় ভূমিকায় বিশেষ পার্থক্য রয়েছে। যারা নিজেদের মুসলিম হিসেবে দাবি করবে, তাদের উপর ইসলামের মৌলিক নিয়মগুলো আবশ্যিকভাবে বর্তাবে। ইসলামের কোন মৌলিক আইন বাতিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

নারী কম পায় না, বরং সবটাই পায়—নিজের জন্য

লিখেছেন বক, ২০ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১১:৩৫



ভাই নাঈম আর বোন নাবিলা
নাঈম ও নাবিলা দুই ভাই-বোন।
তাদের বাবা মারা গেলেন এবং রেখে গেলেন উত্তরাধিকার হিসাবে ১৮ লাখ টাকা।

ইসলামি বণ্টন অনুযায়ী:

ভাই নাঈম পাবেন: ১২ লাখ টাকা

বোন নাবিলা পাবেন:... ...বাকিটুকু পড়ুন

×