"আরে বউ কই গেলি? দেখ, হাটেত্তে কি কিনে নিয়াইছি!"
বতরের ধান উঠারপর তাঁরে একটা নাকফুল কিনে দেওয়ার কথাছিলো। আজকে সেটা তারে না জানিয়েই নিয়ে এসেছি।
বউ দৌড়ে আসে ঘর থেকে। বাজারের ব্যাগ ধরে ভেতরে দেখার চেষ্টা করে। এক পলক দেখেই, টান মেরে ফেলে দেয় ওঠানে। তাঁরপর গজরাতে থাকে, চোখমুখ কেমন করে তাকায় আমার দিকে। বউকে ধরে শুইয়ে দিই খোলা বারান্দার চকিতে।
আজ নতুন না, এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটে। লোকে বলে, “ওরে বিমল তোর বৌডারে ভূতে ধরেছে”। ভূতে ধরা বিষয়ে ট্রিটমেন্ট দিয়েছি ফকির-ফাকরা দিয়ে, ঝাটা পড়া, জল পড়া সব দাওয়াই দেয়া হয়েছে। ডাক্তার দেখিয়েও কোন লাভ হয়নি। আস্তে আস্তে মনে হতে লাগলো আমার জীবনটা মনে হয় শেষ হয়ে গেলো, আমাদের সংসার ধবংস হয়ে গেলো। খারাপ লাগত খুব। মা প্রায়ই বলে, “বৌডারে বাবার বাড়ি থুয়ে আয়”।
সিদ্ধান্ত নিলাম বউরে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেবো। শিউলি যদিও কিছুই জানে না এ কঠিন সিদ্ধান্তের ব্যপারে (আমার বউয়ের নাম শিউলি রাজবংশী)। কয়েকদিন ট্রাই করেও তাঁকে ব্যপারটি খুলে বলতে পারলাম না। যদিও সব সময় যে ভূত থাকে তাতো না, মাঝে মাঝে দুই-একদিন কিছু সময়ের জন্য আসে আবার চলেও যায়। ভূত ঘাড়ে থাকলেই রণচণ্ডী রুপ, যত সমস্যা আর চলে গেলে আমার প্রিয় বউডা আগের মতই স্বাভাবিক, আমার স্বপ্নের প্রেমিকা।
কি করি, কি করি… রাতে বউরে বললাম, “কালকে চল তোর বাপের বাড়িত্তে বেড়ায়ে আসি।”
চাঁদমুখখানি কালো মেঘে ঢেকেগেলো। মুখে কিছু বলল না, চোখদিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “আমায় সত্যিই ভালোবাসতো?” আমি চোখ নামিয়ে নিলাম, ও চোখে আর তাকাতে পারলাম না বেশি সময়।
ভাবলাম, তোকেইতো ভালোবাসি, তোর জগৎ জুড়েতো শুধু আমি, আমার জগৎ জুড়ে তুই। তোর সঙ্গে এত সামান্যে এমন জঘন্য অবিচার কেমনে করি! তোকেতো ভূতে ধরে দুই-একঘন্টার জন্য, একটু পর আবার ছেড়ে যায়, আর আমার পেতনীটা সবসময় আমার ঘাড়ে বসে থাকে, আমার ঘাড় মটকে মটকে খায়। আমার পাগলামী প্রকাশপেলে তখন কী হবে!
“কই, ঘুমাইছিস?”
পাশফিরে শুয়ে বুঝালোযে তিনি ঘুমাননি।
"আরে সামনেইতো দুর্গাপুজো! তহন শ্বশুরবাড়ি যাবানে, এহন না। চল, কালকে একবার শহরে হাসপাতালেত্তে ঘুরে আসি। আবার শুনলাম সিনেমা হলে নতুন এট্টা বই আয়েছে।"
এবার পাগলি বউটা আমার বুকে মাথা রেখে কেঁদে উঠলো, সাথে আমিও।
আমার ভূতের বউ || অনুগল্প
১১/০৭/২০১৭
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ২:২৩