
শ্রদ্ধেয় স্যার,
মৃত্যুর ওপারে ঠিক কেমন আছেন জানিনা। তবে পৃথিবী থেকে যে ভালবাসা আর দোয়া নিয়ে বিদায় নিয়েছেন তাতে বিধাতার আপনাকে ভালোই রাখার কথা। ১৯জুলাই তারিখটার কথা আমার ভালোই মনে আছে। তখন বাংলাদেশে ছিলাম। ১৮তারিখ রাতে হঠাৎ করেই টিভিতে জানানো হলো যে, আপনার শারীরিক অবস্থা খুব খারাপ। বলা হলো আপনার সুস্থতার জন্য দোয়া করতে! এশার নামাজ আগেই পড়ে ফেলেছিলাম, তবু আবারো ওযু করে নফল নামাজ পড়েছিলাম শুধু আপনার রোগমুক্তির প্রার্থনায়। বিধাতা তখন আমার সেই প্রার্থনা শুনেননি। যখন সবচেয়ে ভয়াবহ খবরটা প্রথম পেলাম মনে হয়েছিলো বুকে কেউ বাড়ি দিলো, চোখে অশ্রু কোথা থেকে এসেছিলো ঠিক বুঝিনি। বিশ্বাস করুন স্যার, এইমুহূর্তে যখন সেই কথা মনে করার চেষ্টা করছি, আবারো সেই কষ্টটা খুব লাগছে। আপনি যখন “শ্রাবণ মেঘের দিনে” নিথর বেশে শহীদ মিনারে এসেছিলেন, সেদিন সম্ভবত ওখানে উপস্থিত হওয়া প্রথম পাঁচজনের মধ্যে আমি ছিলাম। আমার এক আত্মীয়কে বলেছিলাম, “সম্ভবত, তোমার মৃত্যুতেও এতটা কষ্ট পাবো না, যতটা হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে পেয়েছি!” কেন জানেন স্যার? কারণ, আপনি আমাদের বেড়ে উঠায় এমনভাবে জড়িয়ে আছেন, যা আর কেউ কখনো পারেনি! আমার বেড়ে ওঠার প্রত্যেকটা আদর্শে যে আমি আপনার প্রভাব পাই স্যার।
আপনার কথা মনে করলে প্রথম চোখে ভাসে “বাকের ভাই” এর ছবি! মনে আছে, বাসায় সবাই মিলে বাকের ভাইয়ের নাটক দেখছি, আর কাঁদছি। কী আশ্চর্য, আজ আমরা সবাই আছি, অথচ আপনাকে যেখানে চিঠি লিখছি সেখানে আমরা “কোথাও কেউ নেই”।
"আমার ছেলেবেলায়" বাসায় পড়া মানেই ছিল স্কুলের বইয়ের পড়া! শুধু আমার কেন, আমাদের মধ্যবিত্ত বাঙালি কয়জনের বাইরের বই পড়ার অভ্যাস ছিল, বলেন স্যার! অথচ আমাদের বই পড়াটা আপনি প্রায় একাই শিখিয়ে দিলেন! প্রথম সম্ভবত ক্লাস সিক্সে আপনার বই পড়ি। “বোতল ভূত” পড়বার পরে অনেকদিন চিন্তা করতাম, যদি আমার একটা পোষা ভূত থাকতো, আমি হয়তো ইচ্ছেমতো সব করিয়ে নিতে পারতাম। আমার কল্পনার রাজ্যটাকে তো আপনিই খুলে দিয়েছিলেন স্যার। যে শৈশব-কৈশোর একেবারেই বর্ণহীন হবার কথা, তাকে এমন কল্পনামুখর করে আর কে সাজাতে পারতো, বলুন? একবার আমার খুব জন্ডিস হয়েছিলো। তখনই প্রথম আপনার বইয়ের রাজ্যে ঢুকে গিয়েছিলাম খুব ভালো করে। হিমু, শুভ্র, মিসির আলী, ফিহাদের সাথে পরিচয়। আমার সমস্যা কি ছিল জানেন স্যার? আমি একসাথে সব হতে চাইতাম। আমার নিজেকে আমি গড়েছি আপনার বই পড়ে! যখন যেই বই পড়েছি নিজেকে উপন্যাসের নায়ক ভাবতে চেয়েছি! আপনিই তো বলতেন, জ্ঞানের শুরু কৌতুহলে। চারপাশে কত রহস্য। রহস্য ভেদ করে জ্ঞানটাকে বের করে নিতে হবে। “কে কথা কয়”, “ম্যাজিক মানব” “দ্বিতীয় মানব”—বইগুলোতে আপনি কিভাবে আমাদেরকে রহস্যে, মানুষের জীবনে আগ্রহী করেছেন জানেন স্যার? হিমুর মতো ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে ঘুরতে চেয়েছি, সবার সাথে মিশতে চেয়েছি সমানভাবে। সবার মন পড়তে চেয়েছি। আবার একই সময়ে মিসির আলীর মতো যুক্তির চিন্তা করতে চেয়েছি, বাসার কাজের ছেলেটাকে পড়াব বলে ঠিক করেছি। ফিহার মতো বিজ্ঞান নিয়ে ভাবতে চেয়েছি। মনে করেছি শুভ্রের মতো বিশুদ্ধ মানব হবো। পারিনি কখনোই, বরং নিজের “পাপ”-পঙ্কিল অংশগুলো দেখে আঁতকে উঠেছি বারেবার। তবুও তো একটু ভালো থাকতে চেয়েছি এই চরিত্রগুলোকে আদর্শ মানবার কারণেই, সেটাই বা কম কি স্যার!
যখন “বহুব্রীহি” পড়েছি তখন থেকেই তো স্বপ্ন বুনেছি একটা সুন্দর পরিবারের, “আমাদের একটা সাদা বাড়ি” হবে। সেই বাড়িতে পরিবারের “আনন্দ-বেদনার কাব্য”গুলো লেখা হবে অবিরত। জীবন যে শুধুই দায়িত্ব পালন নয়, গতানুগতিকভাবে আগের প্রজন্মকে অনুসরণ করে যাওয়া নয়! রোমান্টিকতা আর নানা আয়োজনে যে জীবনের প্রত্যেকটা মুহূর্তকে রঙিন করে তোলা যায়, সুন্দরভাবে উপভোগ করা যায় সেটাতো আপনিই আমাদের শিখিয়েছেন! কোন এক “ছুটির নিমন্ত্রণে” পরিবারের সবাই মিলে ঘুরতে যাবো নির্ভার আনন্দে, মাঝে মাঝে বাসার ছাদে গান গাইব সবাই মিলে, কিংবা ড্রইং রুমে নিয়মিত বসবে হাসি-ঠাট্টা আর আলোচনার আসর। শুধু যে উচ্চাকাঙ্খার পিছনে ছুটে চলার নাম জীবন নয়, “ছোট্ট কিছু আনন্দময় মুহূর্তের সমষ্টির নাম জীবন”- এই দর্শনটা আপনি না থাকলে কিভাবে জানতাম স্যার!
আরেকটু বড় হচ্ছি স্যার, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আপনার মতো লিখতে খুব ইচ্ছে হলো। তখন বুঝলাম, আমি হয়তো আতাহারের মতো ব্যর্থ “কবি” যে জীবনের সৌন্দর্যের জন্যেই হাহাকার করে। প্রথম যখন আমেরিকা আসার কথা হলো, আমি আসতে চাইনি। এয়ারপোর্টে রওনা দেবার আগে দাদুকে জড়িয়ে ধরে খুব বলতে ইচ্ছে করছিলো, “আজ আমি কোথাও যাবো না!” কিন্তু ওই যে বললাম, “উড়ালপঙ্খী”-র মতো “সকল কাঁটা ধন্য” করে উড়তে আমি ব্যর্থ, তাই এই “নির্বাসন” ঠেকাতে পারিনি। তবু এই “অচিনপুরে” নিজেকে বন্দী করে রাখিনি। বরং “শঙ্খনীল কারাগারের” সেই বড় ভাইটি হতে চেয়েছি, নিম্ন-মধ্যবিত্ত জীবনে যার আশা কোনভাবে বাবার সাথে সংসারের হাল ধরা, মা’র আজীবনের কোমর ব্যাথার চিকিৎসা, ছোট ভাইয়ের সাইকেল, আর বোনের চুলের ফিতেটা কিনে দেয়া। ছোট্ট আশায় তাদের দিকে তাকিয়ে "নন্দিত নরকের" মন্টুর মতো খুব বলতে ইচ্ছে করে, “তোমাদের বড় ভালবাসি”।
স্যার জানেন, পড়াশোনায় আমি কখনো খুব ভালো ছিলাম না। কিন্তু “হোটেল গ্রেভারইন”-এ আপনার শূণ্য থেকে একশ পাবার ঘটনা পড়ে আমি নিজেকে অনুপ্রাণিত করেছিলাম। অনেকবার ব্যর্থ হয়েছি, কিন্তু বারে বারে মনে হয়েছে, এই যে, আবারো শুরু করা যাবে। একবার খারাপ করা মানেই তো সব শেষ হয়ে যাওয়া নয়। আপনার প্রায় বইয়েই কত চরিত্রই তো জীবনের চরমতম দুরাবস্থা থেকে সাফল্যের স্বর্ণশিখরে গিয়েছেন। আপনার কাছ থেকে জীবনের অনুপ্রেরণা খুঁজছি স্যার, সবসময়!
প্রায়ই স্কুল-কলেজের বন্ধুদের অনেক মনে পড়ে স্যার। মনে হয়, কোন “গৃহত্যাগী জোছনায়” “চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবকের” মতো বন্ধুরা যদি মিলে হেঁটে যেতে পারতাম। ওই “অনন্ত নক্ষত্রবীথির” দিকে তাকিয়ে জীবনের উচ্ছ্বলতা, মানে খোঁজার চেষ্টা করতাম। তখন হয়তো জীবনের “কৃষ্ণপক্ষ” আমাকে কখনোই আমাকে স্পর্শ করতে পারতো না। কিন্তু পারি না স্যার। মাঝে মাঝে ফেসবুকে বন্ধুদের ঘুরতে যাওয়ার ছবি দেখি। সেই যে “দারুচিনি দ্বীপের” মতো, যেখানে শুধুই বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুরা মিলে আনন্দে কয়েকটা দিন কাটাবার জন্যে “রূপালী দ্বীপে” চলে যায়, সমুদ্র দেখবে বলে! তারুণ্যের বাঁধভাঙা পরিমিত উচ্ছ্বাসটা আপনার মতো করে আর কে শেখাতে পেরেছে স্যার।
আমাদের মধ্যবিত্ত পরিবারে প্রেম ছিল না স্যার, রবীন্দ্রনাথও ছিলেন না। সেই যে পড়া “বৃষ্টি বিলাস”- সেখানে মলাটে লেখা “এসো নীপবনে”। সেখান থেকেই রবীন্দ্রনাথকে চিনেছিলাম। তখন থেকেই চিন্তা করতাম, কোন এক বর্ষায় আপনার “বর্ষার প্রথম দিনে” গানের সাথে নীপবনে কোন “একজন মায়াবতী”র হাত ধরে বৃষ্টিস্নান করব। সেই কবে থেকে ভেবে এসেছি, কোন এক মারিয়া/“নবনী”/জরী হয়তো আমার জন্যে তার সবগুলো “নীলপদ্ম” নিয়ে বসে আছে “দরজার ওপাশে”। তার সাথে কোন এক “রূপালী রাত্রি”-তে “তেঁতুল বনে জলজোছনায়” সিক্ত হবো। আমার কল্পনার “দেবী” আমায় ধরে বলবে, “তুমি আমার জন্যে দু-ফোঁটা চোখের জল ফেলেছো, আমি তোমার জন্যে জনম জনম কাঁদব!” কী স্বপ্ন স্যার! সেই যে হিমুকে লেখা “রূপা”-র চিঠি, “আমার চেরাগের দৈত্যের কাছে কিছু চাই না, যা চাওয়ার সব হিমুর কাছে চাইবো।” তখন থেকেই ভাবতাম, “দিনের শেষে” যখন ঘরে ফিরবো তখন আমার জন্যে কেউ এমন “অপেক্ষা” করে থাকবে যার সব চাওয়া শুধু আমার কাছেই হবে! নীলুর মতো পরিবারের সব দিক খেয়াল করা একজন "পরী"র সাথেই আমার “এইসব দিনরাত্রি” কাটবে। এখনও স্বপ্ন দেখি। আমার এই মধ্যবিত্ত মানসিকতায় আপনি ভালবাসার হাহাকারটা সেই কৈশোর থেকেই এমনভাবে ঢুকিয়ে দিয়ে কাজটা ভালো করেননি স্যার! মাঝে মাঝে একে নিতান্তই "তন্দ্রাবিলাস" মনে হয়!
নিজের কথা তো অনেক বললাম, এবার একটু দেশের কথা বলি। “১৯৭১”-এর মুক্তিযুদ্ধের সেই প্রচণ্ড “মাতাল হাওয়ার” সময়টা আমি হয়তো কখনোই সেভাবে অনুভব করতে পারতাম না যদি না আপনার “জোছনা ও জননীর গল্প” পড়তাম। আপনি আমার মধ্যে দেশপ্রেম ব্যাপারটা ঢুকিয়ে দিয়েছেন স্যার! আজ তো সবাই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য বলে, কিন্তু আপনি সেই কবেই “জলিল সাহেবের পিটিশন” লিখে গিয়েছেন। সেই পিটিশন যেখানে জলিল সাহেব পঞ্চাশ লাখ স্বাক্ষর যোগাড় করছেন শুধু অপরাধীদের বিচার শুরু করবার জন্যে! আর এখন তো খুব অবলীলায় কাউকে বলতে পারি স্যার, “তুই রাজাকার”। এটাতো আপনিই শিখিয়ে গেছেন, তাই না? আপনার পড়াশোনা শেষে শুধু দেশের টানে প্রচণ্ড অর্থনৈতিক দুরাবস্থায় ফিরে আসাটা আমাকে সবসময়েই অনুপ্রেরণা দেয়! “মধ্যাহ্নের” প্রখর রোদেই হোক আর বিকেলের “শ্যামল ছায়ায়”, সহজ-সরল পারিবারিক জীবনেই দেশের মধ্যে কত শান্তি সেটা কি আপনার মতো করে আর কেউ বুঝাতে পেরেছে স্যার? এই বিদেশ-বিভুঁইয়ে মাঝে মাঝে দেশকে স্পর্শ করতে ইচ্ছে হয় খুব। তখন আমি “আগুনের পরশমণি”র মতো করে হাত বাড়িয়ে সূর্যের আলোটাকে ছোঁয়ার চেষ্টা করি। মনে হয়, এই আলোটাই তো দেশেও যাচ্ছে! তখন খুব কষ্ট হয়, দেশের জন্যে খুব হাহাকার লাগে স্যার। "মেঘ হয়ে বলতে ইচ্ছে করে যাবো যাবো।" তবু দেশ নিয়ে অনেক ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখি স্যার। আপনিই তো লিখেছিলেন, "মোরা এই দিনেরে নিয়ে যাবো সেই দিনেরো কাছে!" আমাদের যে সেই "সূর্যের দিনে" যেতেই হবে, হবেই!
একটা মজার ব্যাপার জানেন স্যার, ওইদিন আমার আপু বলছিলো যে, ওর যখন মন খারাপ হয় খুব তখন নাকি ও “আজ রবিবার” দেখে। ওটা দেখলে নাকি মন ভালো হয়ে যায়। কী আশ্চর্য, আমিও তো তা-ই করি। বাংলা নাটকে "একদিন হঠাৎ" আপনি এলেন, আর কিভাবে "হাসন রাজার" মতো বাংলা নাটকের "ছোট মির্জা" হলেন স্যার। "তারা তিনজনের" মতো একের পর এক হাসির নাটক দেখিয়ে আপনি কিভাবে পারতেন মানুষকে বন্দী করে রাখতে? আমাদের ছোট্ট ছোট্ট আবেগের প্রত্যেকটা জায়গাগুলোকে স্পর্শ করতে আপনাকে কে শিখিয়েছিল স্যার? প্রতিদিন একটা করে অন্তত ভালো কাজ করতে ইচ্ছে হয় আপনার “সবুজ ছায়া”র কারণে।
পড়তে পড়তে বোধহয় আপনি বিরক্ত হয়ে পড়ছেন স্যার, তাই না? শেষ করে দিচ্ছি চিঠিটা। আপনি বলেছিলেন, সারাজীবন আপনি “জোছনার ফুল” ধরতে চেয়েছেন, কিন্তু পারেননি। আমারও ঠিক তেমনই অবস্থা। মাঝে মাঝে কল্পনায় “ময়ুরাক্ষী” নদী “পারাপার” হতে ইচ্ছে হয় স্যার। তখন কল্পনার “লীলাবতি”-র সব দুর্ভাগ্যকে বরণ করে সাথে চলতে চাই সৌভাগ্যের আশায়। তবুও আমি হিমুর সেই লাইনটা মনে করে জীবনে এগিয়ে যেতে চাই, সেই যে বিখ্যাত লাইন, “আমাকে তো আর দশটা সাধারণ ছেলের মতো হলে চলবে না। আমাকে হতে হবে অসাধারণ।”— এখন “নিউ ইয়র্কের নীলাকাশে একটা ঝকঝকে রোদ”। এই রোদের আলোয় আপনার বুনে দেয়া স্বপ্নগুলোকে নিয়ে আমি সেই অসাধারণত্ব ছুঁতে চাই স্যার। সেই স্বপ্নে সফল না হলে সেটা হবে একান্তই “আমার আপন আঁধার!” তবে “আশাবরী” হয়ে স্বপ্ন দেখতে তো দোষ নেই। আপনাকে ধন্যবাদ স্যার, আমাদের শৈশব-কৈশোরটাকে এতো সুন্দর আর রঙিন করার জন্যে, আমাদের জীবনটার মানে বোঝাবার জন্যে! বাঙালি মধ্যবিত্তের দৈনন্দিন জীবনের হাসি-কান্না-সুখ-দুঃখ আর স্বপ্ন নির্মাণের মহান সারথী, হে “বাদশাহ নামদার” “আপনার জন্য ভালবাসা”, আপনাকে ধন্যবাদ! "মেঘের উপরের বাড়িতে" পরম করুণাময় আপনাকে শান্তিতে রাখুন
--শেখ মিনহাজ হোসেন
নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৬