আমি বরাবরই ভোজন রসিক সেটা এ ব্লগের অনেকেই জানেন। সেসব নিয়েও আছে অনেক অনেক গল্প। যাক সে কথা। আজকে ঘরে বানানো টকদই এর রেসিপি দিবো। যা এই রোজার দিনে ইফতারের পরে ভালো পুষ্টির যোগান দিবে। খুব অল্প খরচে, অল্প সময়ে বাসায় এই ট্কদই বানাতে পারেন।
উপকরণ :
দুধ ২ লিটার (আমরা দুই লিটারকে ষ্ট্যান্ডার্ড ধরে নিলাম), পানি ২ কাপ,
দইয়ের বীজ (আগের দই) ১.৫ টেবিল চামচ, মাটির বড় হাঁড়ি ১টি।
প্রণালী:
১। ২ লিটার দুধে ২ কাপ পানি মিশিয়ে প্রায় সাত/আট মিনিট চুলায় গরম করতে হবে।
২। যখন একটু বলক উঠবে তখন চুলার জ্বাল কমিয়ে দিতে হবে।
৩। এরপর এই অল্প জ্বালে প্রায় ২০ মিনিট রাখতে হবে। (পাতিলের নিচে দুধ যাতে না ধরে যায় এজন্য মাঝে মাঝে চামচ দিয়ে নাড়তে হবে)
৪। মিশ্রণটি যখন একটু ঘন হয়ে আসবে তখন মাটির ঐ হাঁড়িতে ঢালতে হবে।
৫। এরপর দইএর বীজ আধাকাপ পানিতে গুলিয়ে মাটির হাঁড়িতে রাখা দুধের মধ্যে ঢেলে দিতে হবে।
৬। এরপর হাঁড়িটি ঢেকে রাখতে হবে। ঠান্ডা হলে ফ্রিজিং করা যেতে পারে।
দই এর বীজ কিভাবে বানাবেন?
১ম পদ্ধতি: আগের যেকোন দই থেকে অল্প কিছু দই পরের দই এর বীজ হিসেবে ব্যাবহার করা যায়।
২য় পদ্ধতি: এককাপ দুধের মাঝে ৩/৪ চামচ ভিনেগার দিলে সেটা জমে দই এর বীজ হবে।
৩য় পদ্ধতি: এককাপ দুধের মাঝে দশ বারো ফোঁটা লেবুর রস দিলেও সেটা দই এর বীজ হিসেবে।
দই এর পরিচয় এবং সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
দই হল এক ধরনের দুগ্ধজাত খাদ্য যা দুধের ব্যাক্টেরিয় গাঁজন হতে প্রস্তুত করা হয়। ল্যাক্টোজের গাঁজনের মাধ্যমে ল্যাক্টিক এসিড তৈরি করা হয়, যা দুধের প্রোটিনের ওপর কাজ করে দইয়ের স্বাদ ও এর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গন্ধ প্রদান করে। মানুষ ৪৫০০ বছর ধরে দই প্রস্তুত করছে এবং তা খেয়ে আসছে। সারা পৃথিবীতেই এটি পরিচিত। পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে এর সুনাম আছে। দই প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, রাইবোফ্ল্যাভিন, ভিটামিন বি৬ এবং ভিটামিন বি১২ এ অত্যন্ত সমৃদ্ধ।
টক দই এর ১০টি উপকারীতা:
১। টক দই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ঠান্ডা লাগা , সর্দি ও জ্বর না হওয়ার জন্য এটি ভালো কাজ করে।
২। টক দইয়ের উপকারী ব্যাকটেরিয়া ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে এবং শরীরের উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে বাড়িয়ে হজম শক্তি বাড়ায় বা ঠিক রাখে।
৩। টক দইয়ের ব্যাকটেরিয়া হজমে সহায়ক তাই এটি পাকস্থলীর জ্বালাপোড়া কমাতে বা হজমের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে।
টক দই হাড় ও দাঁতের গঠনে ও মজবুত করতে সাহায্য করে ।
৪। কম ফ্যাট যুক্ত টক দই রক্তের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এলডিএল কমায়।
৫। টক দইয়ের আমিষ দুধের চেয়ে সহজে হজম হয়, এটি দুধের চেয়ে অনেক কম সময়ে হজম হয়। তাই যাদের দুধের হজমে সমস্যা তারা দুধের পরিবর্তে এটি খেতে পারেন।
৬। টক দই রক্ত শোধন করে। উচ্চ রক্ত চাপের রোগীরা নিয়মিত টক দই খেলে রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
৭। ডায়বেটিস, হার্টের অসুখ এর রোগীরা নিয়মিত টক দই খেলে এসব অসুখ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। নিয়মিত টক দই খেলে তা অন্য খাবার থেকে পুষ্টি নিয়ে শরীরকে সরবরাহ করে ।
৮। টক দইয়ে আমিষ থাকে, যেহেতু আমিষ হজম হতে সময় লাগে, তাই পেট ভরা বোধ হয় ও শক্তি পাওয়া যায় | অতিরিক্ত খাবারও খেতে ইচ্ছা করে না।
৯। দই এর পুষ্টি উপাদানগুলো হজমের সময় তাড়াতাড়ি শরীরে শোষিত হয়ে দ্রুত শরীরকে শক্তি দেয়।
১০। টক দই শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে | তাই গ্রীষ্মকালে টক দই খেলে ভালো।
তো আজকেই হয়ে যাক, ইফতারের পরে নিজের হাতে বানানো টক দই। আর খেয়ে বলেন কেমন লাগলো?