এসো হে বৈশাখ, প্রণাম করি বছরের প্রথম রবিকে আজ এই রৌদ্রজ্জ্বল প্রত্যুষে,
আবার এসেছো ফিরে তুমি বাঙ্গালির ঘরে নানা রূপে নানা আয়োজনে অবশেষে।
সেজেছে সকলে লালপেড়ে সাদা শাড়ি ও পাঞ্জাবি পাজামার সে চিরাচরিত বেশে,
চলোনা পরী একটু ঘুরি, ভাগ্যদেবী কী প্রসন্ন হবে আজ মোর পানে একটু হেসে?
ওই যে দেখো চারদিকে মানুষের ঢল সকলে নাচছে দুলে দুলে হাসছে প্রাণ খুলে
করবো শুরু দিনটা আজ রবী ঠাকুরের সেই বৈশাখী গানটি শুনে, রমনা বটমূলে।
এই যে মোদের সহস্র বছরের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি, একে কী আমরা যেতে পারি ভুলে ?
সংস্কৃতি ও সভ্যতার চরম শত্রু হেফাজতে ইসলাম, এদেরকে চড়াতে হবে শূলে !
শুধু ছায়ানটের সঙ্গীতই নয়, আছে চারুকলার সেই বকুল তলার প্রভাতী অনুষ্ঠান,
চারুশিল্পীদের বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ না নিলে ভরবে না মোদের প্রাণ।
আনন্দে উদ্বেলিত জনতার বিশাল জনসমুদ্র – এতে আছে জীবনেরই জয় গান,
জরাজীর্ণতা আর ক্লিষ্টতা কাটিয়ে নতুন বছর শুরু করতে নববর্ষ করছে আহবান।
এই যে পরী, খাবে তুমি পান্তা ভাত ? পান্তা দেবো তবে ইলিশ কিন্তু দেবো না,
এ মৌসুমেই বাড়ে ইলিশ, তাই ভবিষ্যতের জন্য বাঁচাতে হবে ইলিশের পোনা।
সব্জিখিচুড়ি, মরিচ, ডিম আর বেগুনভাঁজা দিয়ে খেতে লাগবে মোটেও মন্দ না,
খুব ভাল নাকি রাঁধতে পারো তুমি, শুনেছি পত্রপত্রিকায় তোমার রান্নার বন্দনা।
চলো না দুজনে আজ এখান থেকে চলে যাই ঈশা খা খ্যাঁত সেই সোনারগাঁয়
সেখানে নাকি বউমেলা হয়, প্রচুর মানুষ আজ এই দিনে ওখানে ঘুরতে যায়।
বউ মেলায় কী বউ পাওয়া যায় ? তাহলে একটা বউ গিয়ে চাইতাম সেথায়,
যেই রূপসীকে নিয়ে আজ সারাদিন ঘুরতে চাই, তাকেই এ মন বউরূপে চায়।
যাবে আমার সাথে ঘোড়া মেলায় ? নৌকোয় চড়ে খিচুড়ি খাবো কলাপাতায়,
দেখাবো তোমায় পুতুল নাচ আর সার্কাস, দুজনে মিলে চড়বো নাগরদোলায়।
গতবছরের চরম ব্যস্ততাময় জীবনের শোধ আজ তুলবো যে তোলায় তোলায়
ঘোড়া মেলার বিখ্যাত কীর্তন যে দেহমনের ক্লান্তি ক্লিষ্টতা নিমিষেই ভোলায়।
এই যে মিষ্টি মেয়ে, শুটিং করতে প্রায়ই তো তুমি চলে যাও পার্বত্য চট্টগ্রামে
জানো কী তুমি মারমা চাকমা আর ত্রিপুরাবাসী বৈসাবি উৎসব করে সেখানে ?
সারাদিন ঘুরেফিরে আর হইহুল্লোড় করে বৈশাখের দিনটি কাটাবো নাচগানে,
একে অপরকে পানি ছিটিয়ে ওদের মতোই নিজেদের বাধবো আত্মার বন্ধনে।
চলো আজকে না হয় একটু খাই মজার চিড়া খই মোয়া কদমা মিছরি বাতাশা
এইটুকু খেলে মোটা হবে না তুমি, তোমার ফ্যানদের মনে আসবে না হতাশা।
চলোনা এই নতুন বছরে দুজনে খুলে ফেলি ব্যবসার নয় বরং মনের হালখাতা
এই রোদে একসাথে ঘুরতে কী তোমার কষ্ট হচ্ছে ? বলো ধরবো নাকি ছাতা ?
যেভাবে দেশে জঙ্গি উপদ্রব বাড়ছে, তাতে মুখোশ পড়া এবার রাখলাম বাদ
রক্ত ফিল্মের ফাইট দেখে, তোমার সাথে লাঠি খেলতে মনে জাগে বড় সাধ।
চলোনা কুস্তি লড়ি দুজনে মিলে, দেখি কে জেতে, বলো কেমন পেতেছি ফাঁদ
নৌকোবাইচ দেখবে নাকি আমার সঙ্গে নৌকো বাইবে, রাজকুমারী পরীজাদ ?
তোমার আমার এ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ মাতুক নববর্ষের আনন্দে উৎসবে।
কবে কূপমণ্ডূকতার বাধ ভেঙে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ এক হবে ?
দমকা বাতাসে চেতনার আকাশে বিক্ষুব্ধ এক কালবোশেখী ঝড় উঠবে যে কবে ?
সেই দিনের অপেক্ষায় রইলাম, সাম্প্রদায়িকতা ও সঙ্কীর্ণতার কলঙ্ক ঘুচবে যবে !
সারপ্রাইজ গিফটঃ আপনারা কী জানেন পরীমনি একজন দক্ষ আর্টিস্ট ? দেখুন - পরীমনির নিজের হাতে আঁকা নববর্ষের ছবি
(একই অঙ্গে তোমার কত যে রূপ কত যে গুণ অবাক চেয়ে রই)
পহেলা বৈশাখ বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। এ দিন বাঙালি জাতিসত্তার মানুষ অতীত ভুলে নতুনের আবাহনে মেতে ওঠে। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পালনের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয় নতুন বছর। ফলে সৃষ্টি হয় এক উৎসবমুখর পরিবেশের। সেই উৎসবে একাত্ম হন রূপালি ভুবনের তারকারাও। এ সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমনির কাছে তার বৈশাখ ভাবনা সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি রাইজিংবিডি বলেন-
‘মানুষের জীবনে কিছু পার্ট থাকে। ছোট সময়ের এক অনুভূতি, আবার যখন একটু বড় হয়েছি তখন অন্যরকম অনুভূতি, আবার এখনকার একটা অনুভূতি। সময় পরির্বতনের সঙ্গে অনুভূতির পরির্বতন হচ্ছে। ছোটবেলার বৈশাখ মানেই হচ্ছে মেলায় যাওয়া। নতুন জামা পরতাম। আমাদের গ্রামে যদিও প্রতিবছর মেলা হতো না। মেলায় চুরি করে যাওয়া হতো। বাসা থেকে পালিয়ে যেতাম। আমাদের বাসা থেকে পাঁচ মিনিটের পথ পেরুলেই স্কুল মাঠ। মাঠে মেলা বসতো। ক্লাসের সব বন্ধুরা মিলে দল বেঁধে মেলায় যেতাম। দল বেঁধে যাওয়া মানেই কোনো না কোনো একটা ঝামেলা তৈরি হতো। নাগর দোলা বন্ধ করে দিতাম, আবার কারো কানের কাছে গিয়ে বাঁশি বাজিয়ে হইচই করতাম, বাতাসা খেতাম। এখন আর সেই বাতাসা নেই। ছোটবেলা একটা ফ্রক পরে দৌড়াদৌড়ি করতাম। সে সময় শাড়ি পরা নিয়ে কোনো ভাবনা ছিল না।’
তিনি আরো বলেন,
‘এখন শাড়ি কিনতে হয়, ম্যাচিং করে গহনা কিনতে হয়। আবার এক বছর পরেছি এটা আর পরা যাবে না, এক রকম ডিজাইন করা যাবে না- এসবও মাথায় রাখতে হয়। আমার ব্যক্তিগত ডিজাইনার আছে। তাকে দিয়ে ডিজাইন করিয়ে নেই। সাজগোজের ভাবনা, কীভাবে চুল বাঁধবো- এই নিয়ে এখন ব্যস্ত। আসলে সেই বাতাসা খাওয়ার ফিলিংস বা আনন্দটা এখন আর পাই না। এখন মেলাতেও যাওয়া হয় না। সুতরাং ছোটবেলার মেলাটা মিস করছি। পহেলা বৈশাখ সকালবেলা পান্তা-ইলিশ করা হয়। এখন প্রতিযোগিতাটা থাকে, কার ইলিশ কত বড়! কাছের মানুষদের সবার বাসায় যাওয়া হয়। এ-বাসা, ও-বাসা করতে করতে দিন কেটে যায়।’
তিনি বলেন,
‘পহেলা বৈশাখ সকল সমালোচনার উর্ধ্বে। এই দিনটির পর আমরা বাংলা তারিখ কতজন মনে রাখি? নিজেরাই তো মনে রাখি না, আবার নিজেরাই সমালোচনা করি ‘একদিনের বাঙালি’। আসলে তা নয়। প্রতিবছর বৈশাখ উদযাপন করি সেটা অবশ্যই ভালো দিক। আমাদের দেশে অনেকে ভালোভাবে বাংলা বলতে পারে না। অনেকের ‘মা’ ডাকার মধ্যেও যেন একটা স্টাইল থাকে। মা ডাকের কোনো স্টাইল হতে পারে না। মা ডাকে মায়া থাকতে হবে।’
সকলকে বাংলা নববর্ষ ১৪২৪ এর প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাচ্ছি। আপনাদের জীবন আলোকিত, সুখী, সমৃদ্ধিশালী এবং মঙ্গলময় হোক। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:৫৩