আমাবস্যা না । চাঁদ তারা সবই হয়তো আকাশে আছে। কিন্তু বিকেল থেকেই আকাশ ঘোর অন্ধকার। কাজেই রাত মাত্র নটার মতো হলেও নিকষ অন্ধকারে চারিদিক ডুবে আছে।
গায়ের একটা পশমও দেখা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে আকাশের গা চিরে বিদ্যুতের ঝলকে আশপাশের সব কিছু নীলচে রুপোলী ছায়া ছায়া মতো দেখাচ্ছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি একটু আগে বড় ফোটায় রূপান্তরিত হয়েছে। সাধু ভাই আর আমি একটা ছোট গাছের নিচে অল্প অল্প ভিজছি। কুড়ি গজ মত দূরে একটা ঝাকড়া গাছের নিচে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম, সাধু ভাই নিষেধ করায় বাধ্য হয়ে এই খানে আশ্রয় নেয়া।
ছোট গাছের পাতায় বৃষ্টি মানছে না। তবে এ জায়গা ছেড়ে যাবার উপায় নেই। আমরা দু ভাই দাঁড়িয়ে আছি কয়েক ঘন্টা আগে মাটি হওয়া সাইফুদ্দিন ভাইয়ের কবরের পাশে। আজ ওনার কবর পাহারা দেয়ার প্রথম রাতের ডিউটি আমাদের দুই ভাইয়ের।
ঘটনা আজ থেকে প্রায় ৩৫ বছর আগের। বড় আব্বা (আমার বাবার তৃতীয় জেষ্ঠ্য ভাই) অসুস্থ। অবস্থা বেশ খারাপ। খবর পেয়ে বাবা গ্রামে এসেছেন। স্কুলে সেকেন্ড সেমিস্টার পরীক্ষা শেষ। আমিও বাবার সাথে আছি। আগস্ট মাস। বেড়ানোর জন্য সময়টা অনুকূলে না। অন্যান্য বছরের মতো না হলেও মোটামুটি বৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাঘাটে ভালো কাদা, গ্রামে আসার জন্য তেমন উপযোগী সময় না।
এরশাদ সাহেব ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের রাস্তা গুলো পাকা করার কাজ করলেও, অন্য গল্পে বলেছি, আমাদের গ্রামের সামনে দিয়ে যাওয়া এই রাস্তা পাকা হতে আরো অনেক বছর লেগেছে। বাসে পাশের থানায়, সেখান থেকে মোষের গাড়ি, মাঝে দু একবার কাদায় নেমে চাকা ঠেলা লেগেছে। বড় আব্বা অসুস্থ না হলে এ সময়ে আসার প্রশ্নই ওঠে না।
তো বড় আব্বা ভেজাল না খাওয়া মানুষ। এ যাত্রা বেঁচে উঠলেন। ( উনি আরো প্রায় ১০-১২ বছর বেঁচে ছিলেন, ৯০ বছর বয়সেও সাইকেল চালাতে দেখেছি)। কিন্তু হঠাৎ করে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত আগের রাতে (আমরা আসার পর দিন, কবরস্থানের রাতের আগের রাতে) ফজরের পর পর সাইফুদ্দিন ভাই মারা গেলেন।
সাইফুদ্দিন ভাই ছিলেন বড় আম্মার মামাতো ভাইয়ের ছেলে। ফুপার অসুস্থতার খবর শুনে দেখতে এসে নিজেই নেই হয়ে গেলেন। ফজরের নামাজের পর বাঁশ ঝাড়ে দাতন খুঁজতে যেয়ে সাপের কামড়। অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলেন। কেউ একজন দেখতে পেয়ে চেচেমেচি করলে লোক জড় করে বাসায় নিয়ে আসে। পানি ঢালাঢালির পর একবার জ্ঞান ফিরে সাপের কথা বলতে পেরেছিলেন, তবে তার আগেই পায়ে দাগ দেখে অভিজ্ঞরা দড়ি দিয়ে পায়ে বাঁধন দিয়ে দিয়েছিলেন।
ওঝা ডাকা হলো। আমার আব্বার হইচইতে হাসপাতালেও নেয়া হলো। কিন্তু কোনো লাভ হলো না। এন্টিভেনম সদরে, থানায় থাকেনা। সকাল দশটার আগেই মৃত্যু। গ্রাম দেশে তখনো সকাল শুরু হতো ফজরের আজানের আগে। আগস্টে সূর্য উঠে যায় সাড়ে পাঁচটায়, ফজর সোয়া চারটার দিকে। সেই হিসেবে ওনাকে নয়টার আগে হাসপাতালে নিতে পারাটা অস্বাভাবিক ছিলো না।
সাপের কামড়ে নাকি এত দ্রুত মানুষ মারা যাবার কথা না। হাসপাতালে চাকরিরত আমার হেলথ অ্যাসিস্ট্যান্ট চাচাতো ভাই এরকমই বললেন। সাপে কাটা মৃত্যুর ক্ষেত্রে অনেক লোক নাকি আতঙ্কেই মারা যায়। যে কারনেই মারা যাক, কেউই চায় না স্বজনের লাশ কাটাছেড়া করে কারন জানতে। ইউডি হলেও পোস্ট মর্টেম এসব ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়ই মনে হয়।
ওঝা সকালেই জবাব দিয়ে দেয়ার পর সবাই মানসিক ভাবে প্রস্তুতই ছিলেন। আমাদের গ্রাম থেকে তিন মাইল মতো দূরে ওনার গ্রামে (হাসপাতাল থেকে দুই মাইলের কম) মোষের গাড়িতে করে মৃত্যুর পর পরই লাশ নিয়ে আসা হয়েছে (আমার বড় আম্মার বাপের বাড়ি বেশ দূরে, তবে ওনার নানার বাড়ি আমাদের গ্রামের থেকে তেমন দূরে না)। জোহরের পর জানাযা, এর পর মাটি। গ্রামের কালচার অনুসারে যারা মাটি দিতে যারা এসেছিলেন তাদের সবাইকে ডাল ভাত খাওয়ানো হলো।
বড় আব্বার শরীর আগের চেয়ে ভালো বলে বাবা আর থাকেন নি, জানাজার পর পরই শহরে চলে গেছেন। আমার পীড়াপীড়িতে আমাকে রেখে গেছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে কদিন পর সাধু ভাই আমাকে রেখে আসবেন। সাধুভাই হলো মুহিবের বড় ভাই, মুহিবের কথা অন্যত্র বলেছি।
দাফনের সময় একটু সমস্যাই হল। কবর খোড়ার পর তলায় পানি এসে জমে যায়। বর্ষাকালে এরকমটা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। পরে অনেক খানি বালি এনে পানির উপর ফেলে কবর দেওয়া। সেই সময় এরকম পাতলা পলিথিন শিট সহজলভ্য ছিল না। বাঁশের উপর মোটা টেবিল ক্লথ বিছিয়ে তার উপর মাটি দেওয়া।
জানাযার আগে অল্প ফিসফিসানি ছিলো। মাটি দেয়ার সময়ে একটু বেশি। খাবার সময়ে আর ফিসফিসানি থাকলো না, বিশ-ত্রিশ হাত দূর থেকে শোনা যাচ্ছিলো। সাইফুদ্দিন ভাই মারা গেছেন শনিবার। তাও বার্ধক্যজনিত মৃত্যু না , হঠাৎ মৃত্যু। গ্রামাঞ্চলে একটা কুসংস্কার ছিল (এখনো হয়তো আছে); শনিবার আর মঙ্গলবারের মরা লাশ তান্ত্রিকরা চুরি করে নিয়ে যায়। এজন্য পরিবারের লোকেরা কবর স্থানে কবরের পাশে পাহারা বসায়। কমপক্ষে তিনদিন পাহারা দেয়া হয়।
অন্যত্র বলেছি আমার ব্যক্তিগত ধারণা কাফন চোরের উপদ্রব থেকে এ ধরনের গুজবের উৎপত্তি। এখন মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতা বেড়েছে, কাফন চুরির ঘটনা খুব একটা শোনা যায় না। তান্ত্রিকরা লাশ চুরি করেছে এমন ঘটনাও তেমন শোনা যায় না।
গোটা থানার মধ্যে সাধু ভাই এবং আমার আরেক জেঠাতো ভাই ( ওনার নাম রফি) সবচেয়ে সাহসী বলে পরিচিত ছিলেন। রফি ভাই আরেক বড় আব্বার ছেলে। এলাকায় ওনাদের দুঃসাহস (বেশির ভাগই লৌকিক) নিয়ে অনেক গল্প আছে । একটা ঘটনার আমি নিজে সাক্ষী। কয়েক গ্রাম পরে, গ্রামের স্কুলের মাঠে ফুটবল খেলা । হঠাৎ মারামারি শুরু হয়ে গেল। দুই ভাই দর্শক ছিলেন। উঠে দাঁড়িয়ে একটা হুংকার মারলেন। উত্তেজনায় সাধু ভাইয়ের লুঙ্গি খুলে গিয়েছিল। কিন্তু কেউ এটা নিয়ে ওনার সঙ্গে বিদ্রূপ করতে সাহস পায়নি। গন্ডগোল কয়েক মুহূর্তের মধ্যে থেমে গিয়েছিল।
দোষের মধ্যে সাধু ভাই একটু 'সাধুসঙ্গ' করেন । একতারা বাজান। এদের একটা গ্রুপ আছে, লাল জামা পরে। এই গ্রুপের সঙ্গে ঘুরে বেড়ান। মাঝে মাঝে গাঁজা খান। প্রায় সময়েই প্রচন্ডভাবে অর্থনৈতিক অভাবে থাকেন। কখনো কখনো না খেয়েও হয়তো থাকতে হয়েছে; কিন্তু কখনো কারো কাছে চার আনা পয়সা চেয়ে নিয়েছেন এমন দেখিনি।
তো প্রথম দিনের পাহারার ভার সাধু ভাইয়ের। ঘ্যান ঘ্যান করতে পারেন একটা গুণ আমার ছিলো ( এখন যে চলে গেছে এমন না, )। সাধু ভাইকে রাজী করিয়ে নিতে পারলাম পাহারায় আমাকে সঙ্গি হিসেবে নেয়ার জন্য। অন্য কিছুর চেয়ে সাপের ভয় আমার কাছে বড় ভয়। আমার জন্য এক জোড়া গামবুটও জোগাড় হয়ে গেলো। সাথে একটা পাঁচ ব্যাটারির টর্চ, বৃষ্টির থেকে বাঁচার জন্য ছাতা আর মাথাল। আর সাধু ভাইয়ের হাতে একটা বলল বল্লম।
সাধু ভাইয়ের ভেজার অভ্যেস আছে, কিন্তু আমি বৃষ্টিতে ভিজে আবার ঝামেলা না বাধাই এজন্য ছাতা আর মাথাল। দেখা গেল আমার চেয়ে মাথালই আকারে বড় । আর এর ওজন নিয়ে হাটাও আমার জন্য আসলেই খুব সহজ মনে হচ্ছিলো না। গামবুট জোড়াও ছিলো ঢলঢলে। কিন্তু কোনো অভিযোগ করলে সুযোগ চলে যেতে পারে এই ভয়ে আমি আর উচ্চবাচ্য করলাম না।
সাতটার আগেই মাগরিবের নামাজের শেষ হয়ে গেল। আমরা মসজিদ থেকে চারশ গজ মত দূরে পারিবারিক গোরস্থানে চলে আসলাম। দুভাই দুপুরে যা খেয়েছি কাল সকাল পর্যন্ত চলে যাবে ( ), রাতে খাবার ঝামেলা নেই। মাঝে সাড়ে আটটার সময়ে যেয়ে এশার নামাজ পড়ে আসলাম।
তখনো দেশে কিছু জাপানি জিনিস আসতো । স্থানীয় ব্যাটারির প্রায় আড়াই গুণ দাম দিয়ে কয়েকটা SANYO ব্যাটারি কিনেছিলাম, মুহিবকে দেখাবো বলে। ওটা কাজে লেগে গেল। ব্যাটারির দাম শুনে সাধু ভাইয়ের ভ্রুটা একটু উপরে উঠে গেছিলো, কিন্তু আলোর পরিমাণ এবং আমার কাছে এর লংজিভিটির কথা শুনে উনি খুশি হলেন মনে হলো। উল্লেখ্য সেই সময়ে বাজারে চান্দা ব্যাটারি, হক ব্যাটারি, এদুটাই বেশি পাওয়া যেতো। চাইনিজ 555 আর এভারেডি ব্যাটারিও ছিলো। অলিম্পিক ব্যাটারি সম্ভবত কেবল বাজারে এসেছে। চান্দা আর এভারেডি এখন মনে হয় পাওয়া যায় না।
যে কথা বলছিলাম, একটা ছোট গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। সাধু ভাই বললেন বড় গাছের উপরে বাজ পড়ার সম্ভাবনা বেশি, ছোট গাছের উপরে পড়ার সম্ভাবনা কম। অত্যন্ত যৌক্তিক কথা । গ্রামের লোকদের বিজ্ঞান তেমন পড়া নেই, দেখে দেখে শিখেছেন।
দুভাই বিভিন্ন কথা বলতে বলতে অশরীরী প্রসঙ্গটাও চলে আসলো। এ প্রসঙ্গে আমার বিশ্বাস যতটা কম, আগ্রহ ততটাই বেশি। সাধু ভাই গল্পে গল্পে বললেন দু-তিন বছর আগে এরকম এক ঘোর বর্ষার রাতে চারিদিকে পানি থই থই । এর মধ্যে বুড়ো সইজুদ্দিন ছাড়া আর সবাই ঘরে শুয়ে। তো বুড়ো সইজউদ্দির রাত দুটার সময় মনে হলো- ফজরের আজান হয়ে গিয়েছে, মসজিদ যাওয়া দরকার। বৃষ্টি বেয়ে মসজিদে এসে দেখে ভিতরে লম্বাকৃতির কিছু লোক নামাজ পড়ছে । এই দেখে বৃষ্টির মধ্যে চিৎকার করতে করতে দৌড়ানোর সময়ে রাস্তায় পিছলা খেয়ে পড়ে পা ভাঙলো।
আমার জিজ্ঞাসা- রাত দুটার সময় জিনেরা মসজিদে কেন নামাজ পড়বে? নামাজ মানুষদের জন্য ফরজ। জ্বীনদের জন্য কি ফরজ? মানুষ নামাজের আগে অজু করে। জ্বীনরা ও কি ওযু করে ? জ্বীনরা কি মানুষের মসজিদে নামাজ পড়ে? এরা নিজেদের মসজিদ বানিয়ে সেখানে নামাজ পড়তে পারে না? আর ঐদিন রাত দুটার সময় আসলো, অন্যদিন কেন আসেনা? নাকি প্রতিদিনই আসে? আজ গেলে কি দেখা হবে?
সাধু ভাই এর সরল স্বীকারোক্তি -ভাই আমি এগুলোর কি জানি ? আমি অত্যন্ত কম শিক্ষিত লোক । আমরা যা দেখেছি তাই বলি । তোমরা লেখাপড়া জানা মানুষ, কেনো এরকম হয় এসব নিয়ে তোমরা ভাবনা চিন্তা করবা। আমি আর কোনো কথা খুঁজে পাইনা।
পাশের খালের মধ্যে থেকে একটা খলবল আওয়াজ আসছে। একটু চমকে উঠে সেদিকে টর্চের আলো ফেলে আৎকে উঠলাম। একটা সাপ একটা ব্যাংকে ধরেছে । ভাইয়ের হাত আকড়ে ধরতেই গেলাম ভাই বললেন ব্যপার না। ঢোড়া সাপ। আমি সাপ চিনিনা, সব সাপই আমার কাছে বিপদ জনক, আর সাবধানে থাকা ভালো । এই অঞ্চলে কিছু গোখরা সাপ আছে । স্থানীয় ভাষায় গোমা সাপ বলে। আর কিছু দাঁড়াশ সাপ আছে। দাড়াশ সাপের গরুর দুধ খাওয়ার অনেক গল্প শোনা যায়। গুনি লোকেরা বলেন সব মিথ্যা। তবে পুরোটা মনে হয় মিথ্যা না।
খানিকক্ষন পর ভাই বললেন- একটু দাঁড়া আমি আসতেছি । বলে আমার থেকে প্রায় ২০-৩০ গজ দূরে চলে গেলেন । আগুনের চিহ্ন দেখে বুঝলাম বিড়ি ধরাচ্ছেন।আমার বড় ভাইদের অধিকাংশ সময়ে দেখেছি ছোটদের সামনে ধূমপান করতেন না। হয়তো সংকোচ বোধ করতেন, অথবা ভাবতেন আমাদের উপর খারাপ ইন্ফ্লুয়েন্স পড়বে।
রাত সাড়ে এগারোটার দিকে (ওই সময় আমার হাতে একটা ক্যাসিও ঘড়ি ছিল) দেখলাম দূরে ক্যানেল এর উপরের কালভার্ট এর আশেপাশে কিছু আলো ওঠানামা করছে । ভাইকে জিজ্ঞাসা করলে ভাই বললেন- মাছ মারছে। তখনো গ্রামাঞ্চলে একটু বেশি বৃষ্টি হলে মাঠে-ঘাটে প্রচুর মাছ ভেসে উঠত। মাঠঘাট পানিতে ভেসে যাবার মতো বৃষ্টি সে বছর তখনো হয়নি , তবে গত ক ঘন্টায় যা বৃষ্টি হয়ে গেলো তাতে কালভার্টের নিচ দিয়ে ভালো স্রোত বয়ে যাবার কথা। এরকম হলে, পোলো, ট্যাটা ( স্থানীয় ভাষায় বলে কোঁচ) বলে এসব নিয়ে ভালোই মাছ ধরার মতো উৎসব চলে। পাহারায় থাকার কারণে এটা থেকে বঞ্চিত হলাম। তবে পাহারার কাজটাই ঐ বয়সে বেশি রোমাঞ্চকর ছিল।
রাত দুটার দিকে হঠাৎ একটা প্রচন্ড দুর্গন্ধ ভেসে আসতে থাকে । তীব্র দুর্গন্ধে চারিদিক ভরে গেল। সাধু ভাই খপ করে আমার হাতটা আঁকড়ে ধরলেন। পরিষ্কার গলায় জিজ্ঞাসা করলেন - অমুক দোয়াটা জানো ? আমার সাথে জোরে জোরে পড়। বলে জোরে পড়া শুরু করলেন। আমি অবাক হয়ে ওনাকে ফলো করা শুরু করলাম। কয়েক মুহুর্ত পর দুর্গন্ধ দূর হয়ে গেল।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম- ভাই ওটা কিসের দুর্গন্ধ ছিলো? উনি বললেন- ও কিছুনা । গ্রামগঞ্জে ঝোপেঝাড়ে পায়খানা করে রাখে। বৃষ্টির দিনে ভিজে ওখান থেকে গন্ধ আসতে পারে। এবার পাল্টা প্রশ্ন করলাম- হঠাৎ করে আসলো, হঠাৎ করে চলে গেলো? ভাইয়ের পাল্টা জবাব- বাতাস বয়ে আনছে, বাতাসে অন্য দিকে চলে গেছে। এগুলা নিয়ে কথা বলিস না। চুপ থাক। পরের দিনে বলেছিলেন- হঠাৎ করে এরকম দুর্গন্ধ আসা ভালো কিছু না, অনেক খারাপ জিনিস আছে যারা আসার সময় এরকম খারাপ গন্ধ পাওয়া যায়।
সোয়া চারটার দিকে ফজরের ওয়াক্ত। সাধু ভাই নিয়মিত নামাজি ছিলেন না ; কিন্তু এখানে কুটুমবাড়ি । নামাজে না গেলে কেলেঙ্কারি হতে পারে। আবার পাহারা ছেড়ে যাওয়া সম্ভব না। সিদ্ধান্ত হলো উনি আমাকে মসজিদ পর্যন্ত আগিয়ে দেবেন। আমি নামাজ পড়ে চলে আসব । তো নামাজ ঠিক মতোই শেষ হলো, কিন্তু বর্ষায় মুসল্লিগণ যারা আছেন কেউই আমাকে কবরস্থান পর্যন্ত পৌছে দিতে আগ্রহী না। অবশেষে দু তিন জন মিলে এগিয়ে দিয়ে গেলেন।
তখনো পুরো আলো ফোটেনি। একটা ক্যাচকোচ আওয়াজ। গরুর গাড়ির চাকায় কম তেল পড়লে যেমন হয় খানিকটা সে রকম। অথবা বলা যায় ব্ল্যাকবোর্ডে চক ঘষা খেলে যেরকম শব্দ হয় সে রকম। তবে অনেক তীব্র। ভাই বললেন শকুনের ডাক। আমি বললাম শকুন তো শুনেছি মানুষের বাচ্চার মতো করে কাঁদে। ভাইয়ের জবাব- সাহিত্যিকদের কাছে এটাই বাচ্চার কান্নার শব্দ হয়ে যায়।
সাড়ে পাঁচটা নাগাদ সব চারদিক পরিষ্কার হওয়ার পর আমরা বাসায় ফিরলাম। হাত মুখ ধুয়ে প্যান্ট বদলে লুঙ্গি পরার সময় দেখি হাঁটুর কাছে একটা জোঁক। টান দিয়ে নির্বিকারভাবে ফেলে দিয়ে কাঁথার নিচে শুয়ে পড়লাম। প্রথম পাহারা এখানেই শেষ।
-----------------
আপডেট ০৭ ফেব্রুয়ারি
আমার ধারণা ছিলো লাশ চুরি এখন আর হয় না। খোঁজ নিয়ে জানলাম এখনও ভালো ভাবেই এই ব্যবসা চলছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ২:০৪