১৪ সেপ্টেম্বরে ভারতের তৃতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি যোগি আদিত্যনাথের রাষ্ট্র উল্টো প্রদেশের হাথরাসে ১৯ বছরের একজন নিম্নবর্ণের হিন্দু তরুনী গরুর খাবার আনার সময় উচ্চ বর্নের ঠাকুর গোত্রের চার জন পুরষ- সন্দীপ, রামু, লব কুশ, এবং রবি আক্রমন এবং ধর্ষনের স্বীকার হয়। এটা নতুন ঘটনা না। হাথরাসে এর আগে অনেক এবং পরেও একাধিক ধর্ষণের ঘটনা হয়েছে। তবে এই ঘটনাটি ঘটনাক্রমে ভাইরাল হয়ে যায়।
ধর্ষণে বাধা দিলে ঐ চার যুবক ক্রমাগত মেয়েটির গলা টিপে শ্বাস রোধের চেষ্টার সময় মেয়েটির ঘাড় ভেঙে যায়। পিটুনিতে স্পাইনাল কর্ডে আঘাত লাগে । পরে ঐ যুবকরা মেয়েটির জিভ কেটে ফেলে। মেয়েটিকে প্রথমে আলীগড়ের জহরলাল নেহেরু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পরবর্তীতে অবস্থা বেশি খারাপ হলে তাকে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সুচিকিৎসা পেলেও আজীবন মেয়েটিকে পঙ্গু হয়ে বাঁচতে হত। মেয়েটির কপাল ভালো, সে ২৯ সেপ্টেম্বর মারা যায়।
ঘটনা ঘটার পর ঐ দিনই স্থানীয় থানায় অভিযোগ নিয়ে গেলে পুলিশ দুর্ব্যবহার করে ভিকটিমের পরিবারকে বের করে দেয়। পরে ঘটনা ভাইরাল হওয়ার পর ২০ সেপ্টেম্বর পুলিশ কমপ্লেন রেজিস্ট্রেশন করে। অভিযুক্ত সন্দীপ রামু লব কুশ এবং রবি দীর্ঘদিন ধরে মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল, পুলিশ কখনোই কোনো ব্যবস্থা নেয় নি।
মেয়েটি মারা যাবার আগে একটি স্টেটমেন্টে ঐ চার যুবকের অত্যাচারের কথা বলে যায়।
মেয়েটি মারা যাওয়ার পর ঐ দিন রাত দুটোর সময় পুলিশ পাহারায় ডিজেল দিয়ে মেয়েটির দেহ দাহ করা হয়। মেয়েটির পরিবার প্রচলিত ধর্মানুসারে দিনের আলোয় দাহ করার জন্য পুলিশের কাছে কাকুতি-মিনতি করেছিলো। পুলিশ মেয়েটির বাসা ঘিরে রেখে রাতেই দেহ দাহ করে।
সরকারী ডাক্তারেরা পোস্টমর্টেম রিপোর্ট লিখেছে কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। কোন জিভ কাটার ঘটনা ঘটেনি। স্থানীয় ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট (বাংলাদেশের ডিসির অনুরূপ) ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৫ লক্ষ টাকা মেয়েটির পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে এবং এর পর ধমক দিয়ে মেয়েটির পরিবার কে বলে গেছে করোনায় মেয়ে মরলে তো কোনো টাকা পেতে না, এত লাফানোর দরকার কি?
ঘটনা ভাইরাল হবার পর বিরোধীদল অভিযুক্ত ভিকটিমের ফ্যামিলির সঙ্গে কথা বলতে চাইলে এলাকায় ঢোকার আগেই পুলিশ বিরোধীদলের গাড়ি বাহিনী আটকে দেয়। এরপর ওনারা হেঁটে আসার চেষ্টা করলে পুলিশ ঐ গ্রাম বেরিকেড দিয়ে ঘিরে রাখে।
ঘটনার পর ওই এলাকার একজন এমপি বলেছেন মেয়েদেরকে ভালো শিক্ষা দেওয়া হলে ধর্ষন হবে না। আরেকজন বলেছেন এই ধরণের চরিত্রের মেয়েদের দেহ ক্ষেতেই পাওয়া যায়। উনি আরো দাবি করেছেন নির্দোষ ছেলেদের এভাবে হাজতে রাখলে তাদের মানসিক ক্ষতি হয়।
উত্তর প্রদেশের পুলিশ বলেছে যোগী আদিত্যনাথ এর সরকারের প্রতি এটি একটি ষড়যন্ত্র। (ষড়যন্ত্র থিওরি অবশ্য নতুন না, এটার পেটেন্ট আমাদেরই আছে)।
যোগী আদিত্যনাথ এর সরকার ড্যামেজ কন্ট্রোল এর জন্য পিয়ার ক্যাম্পেইনে ঘোষণা দিয়েছে।
এই ঘটনা থেকে অনেকগুলো শিক্ষা নেয়া যায়ঃ
১) মেয়েদের ভালো শিক্ষা দিলে মেয়েরা ধর্ষিত হবে না।
২) ভিক্টিম মারা গেলে সাক্ষী একজন কমে যায়, ক্ষেত্র বিশেষে আর কেউ থাকেনা।
৩) মৃতদেহ যদি তাড়াতাড়ি দাহ করে ফেলা হয় তাহলে নতুন করে পোস্টমর্টেমের সুযোগ থাকে না। দাহ করার কাজটা যত সম্ভব গোপনে করতে পারাটাই ভালো।
৪) পোস্টমর্টেম রিপোর্ট যদি বলা হয় ধর্ষণ হয়নি ব্যাপারটা এখানেই মিটে গেল।
৫) যারা ইংরেজি বা ডাক্তারি পরিভাষা পড়তে পারে না মোস্ট মর্টেম রিপোর্ট তাদের দেখানোর কোনো মানে হয় না
৬) থানায় অভিযোগ করতে পারাটা একটা প্রিভিলেজ, কোন রাইট না।
৬) ধর্ষনের ঘটনা ঘটে গেলে ভিক্টিমের পরিবার যাতে আর কারো সাথে কথা বলতে না পারে তা নিশ্চিত করা জরুরি।
৭) অভিযুক্ত যদি পালিয়ে না যায়, নিজ বাসা বা হোস্টেল বা হল বা মেসেই থাকে তবে ধরে নিতে হবে সে নির্দোষ।
৮) ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত 'নির্দোষ' ব্যক্তি হাজতবাস করলে তার মানসিক ক্ষতি হলে দায় অভিযোগ কারির।
৯) অভিযুক্তদের যৌবনের ক্ষতি হয়, এমন কোন পদক্ষেপ নেয়া যাবে না। (*কৃতজ্ঞতা- ভুয়া মফিজ ভাই)
১০) এর পরেও কোনভাবে ঘটনা ভাইরাল হয়ে বাইরে আসলে ধরে নিতে হবে এটি ষড়যন্ত্র।
১১) সরকারের ইমেজ নষ্ট হয়ে থাকলে তবে তা পিয়ার ক্যাম্পেইন এর মাধ্যমে তা ঠিক করার সুযোগ তো আছেই।
আরো কোনো পয়েন্ট খুঁজে পেলে সাজেস্ট করবেন প্লিজ, অ্যাড করে দেবো।
জগতের সকল স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনের সাথে আইডিয়া শেয়ার করুক, ঝামেলা বিহীন জীবন গড়ুক।
(সকল খবরের কাগজের কাটিং দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার।)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১:৫৪