নূর মোহাম্মদ নূরু ভাই সাম্প্রতিক সময়ে মানুষের সত্য বিমুখতা নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন- মিথ্যার কাছে পরাভূত সত্য (একটি শিক্ষণীয় গল্প) । ঐ পোস্টের কমেন্টে কতিপয় দেশি-বিদেশি জ্ঞানীগুণী ব্লগার তাদের জ্ঞানগর্ব বক্তৃতা দ্বারা প্রমাণ করার চেষ্টা করিয়াছেন-- ইউরোপ-আমেরিকার মানুষ আমাদের চাইতে অনেক সত্যবাদী । আমরা অসভ্য জাতি । সভ্য জাতির লোকেরা মিথ্যা কথা বলে না।
আসলেই কি ইউরোপ-আম্রিকার লোকেরা সকলে সত্যবাদি যুধিষ্ঠির? দেখা যাক।
ইউনিভার্সিটি অফ মাসাচুসেটস (আমহার্ষ্ট্র) এর একটি রিসার্চ থেকে দেখা যায়, শতকরা ৬০ জন লোক সোশ্যাল কনভারসেশন এর সময় মিথ্যা কথা বলে থাকেন । গড় মিথ্যার পরিমাণ প্রতি ১০ মিনিটে ২.৯ টি।
রেফারেন্সঃ Self-presentation and verbal deception: Do self-presenters lie more?- R.S. Feldman et al - Basic and Applied Social Psychology, 24 (2002) , 163-170
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান এবং টরন্টো ইউনিভার্সিটির একটি যৌথ গবেষণা থেকে দেখা যায় ধনী এবং শিক্ষিত লোকেরা মিথ্যা কথা বেশি বলে। শিক্ষিত এবং ধনী লোকের সংখ্যা কোথায় বেশি ইউরোপ-আমেরিকায় না বাংলাদেশ?
রেফারেন্সঃ Higher social class predicts increased unethical behavior- Paul K. Piff, et al PNAS -March 13, 2012 -109 (11) 4086-4091
মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির আরেকটি রিসার্চ পেপারে দেখা যায়, শতকরা ৪০ জন পার্টিসিপেন্ট স্বীকার করেন তারা গত ২৪ ঘন্টায় মিথ্যে কথা বলেছেন। এদের মধ্যে শতকরা ৩২ জন ১ থেকে ৫ টি মিথ্যা বলেছেন, এবং বাকি শতকরা ৮ জন পাঁচের উপরে মিথ্যা কথা বলেছেন । যারা মিথ্যা কথা বলেননি বলে দাবি করেছেন, তাদের দবি আসলে কত সত্য সে বিষয়েও গবেষণা আছে, সে কথা পরে লিখছি। এই রিসার্চের পার্টিসিপেন্টদের মধ্যে প্রায় ৮০% সাদা আমেরিকান, ১২% কালো, বাকি ৮% হিস্পানিক, এশিয়ান ইত্যাদি। রেফারেন্সঃ The Prevalence of Lying in America: ThreeStudies of Self-Reported Lies- Kim B. Serota et al Human Communication Research, Volume 36, Issue 1, 1 January 2010, Pages 2–25
ResumeLab এর একটি স্টাডি থেকে দেখা যায় শতকরা ৩৬ জন লোক বিনা বাক্য ব্যয়ে স্বীকার করে নেন যে তারা তাদের সিভিতে মিথ্যা তথ্য দেন। অভিজ্ঞতা, পূর্ব চাকরীর স্যালারি, স্কিল এসব বিষয়েই মূলত মিথ্যে তথ্যে দেয়া হয়। যে ৬৪%পার্রটিসিপেন্ট প্রাথমিকভাবে দাবি করেছিলেন যে তারা তাদের সিভিতে মিথ্যা তথ্য দেন নি, তাদের মধ্যে আরও শতকরা প্রায় ৩৩% ভাগ (অর্থাৎ মোট স্যাম্পল সাইজের ২০% এর বেশি) পরবর্তীতে স্বীকার করে নেন যে তারা মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন । অর্থাৎ মোট ৫৬% জনের বেশি লোক তাদের সিভিতে মিথ্যা তথ্য দেন।
তবে এটি কোন peer-reviewed রিসার্চ না, বিশ্বাস করা না করা আপনার ব্যাপার। এদের স্টাডির লিঙ্ক: https://resumelab.com/resume/lying
যারা মিথ্যা বলছেন তারা কি সকলে নির্দোষ মিথ্যা বলেন? দেখা যাক গবেষনা কি বলে-
ইউএসএ এবং ইউকে মিলিয়ে করা আরেকটি বড় আকারের রিসার্চ (স্যাম্পল সাইজ ২৯৮০) থেকে দেখা যায়, দুই দেশেই শতকরা প্রায়৭৫ জন লোক স্বীকার করেন তারা নিয়মিত নির্দোষ মিথ্যে কথা বলেন। পক্ষান্তরে শতকরা প্রায় ২০ জন লোক স্বীকার করেন তারা প্রলিফিক লায়ার। রিসার্চারদের একজন আরো জানিয়েছেন, যে লোকেরা প্রথম দফায় সত্যবাদিতার কথা দাবি করেছিলেন, পরবর্তী জিজ্ঞাসায় তাদের মধ্যে শতকরা ৯২ জন স্বীকার করেছে তারা মাঝে মাঝে মিথ্যে বলেন।
রেফারেন্সঃ Few Prolific Liars: Variation in the Prevalence of Lying- Kim B. Serota and Timothy R. Levine--Journal of Language and Social Psychology2015, Vol. 34(2) 138–157
আরেকটি রিসার্চে কিছু পার্টিসিপেন্টকে বলা হয়েছিলো তাদের ইসপি ক্ষমতা আছে কি না পরীক্ষা করা হবে, পরীক্ষায় ইসপির প্রমান পাওয়া গেলে ক্ষমতাধারীদেরকে ৫০ ডলার পুরস্কার দেয় হবে। ফলাফল? ৯০% এর বেশি লোক মিথ্যা বলেছিলো। শুধু তাই না, যখন গবেষকরা পার্টিসিপেন্টদেরকে খোলাশা করে বলেন যে ইসপির রিসার্চটি ভুয়া, মূলত এটা অর্থের কারনে মানুষ মিথ্যে বলে কি না এই বিষয়ে রিসার্চ, তখনো ঐ মিথ্যবাদিদের ৮০% দাবি করে তারা সত্য বলেছে, মিথ্যা না।
রেফারেন্সঃ Deceptive Communication -G. R. Miller, & J. B. Stiff, (1993). Newbury Park, Sage Publications.
(এমআইটির এর কাছাকাছি একটা রিসার্চ আছে, রেফারেন্স খুঁজে পাচ্ছি না বলে দিলাম না।)
নূরু ভাইয়ের পোস্টে কমেন্টকারিদের কেহ কেহ সম্ভবত দেশে থাকেন। কেহ দেশি-বিদেশি পাসপোর্টে বাহিরে আছেন ।এতে আমার কোন সমস্যা নাই। কেহ কেহ নিজেদের সত্যবাদি বলিয়া দাবি করতে পারেন। এতেও আমার সমস্যা নাই। এনারা নিজেদেরকে সভ্য জাতির অংশ বলে মনে করতে পারেন, আমাদেরকে অসভ্য ছাগল মনে করতে পারেন, এতেও আমার কোন সমস্যা নাই। তবে চাপাবাজি যখন অতিরিক্ত হইয়া যায় তখন মাঝে মাঝে আশঙ্কা হয়, এনাদের চোয়াল আবার খুলিয়া না যায়।
(পোস্টের বিপরীতে পাল্টা পোস্ট ব্লগের অ্যাডমিন নিরুৎসাহিত করে। পোস্টের বিষয়ে বক্তব্য থাকলে তা পোস্টের কমেন্টে আসলেই ভালো হয়। তবে যদি কমেন্ট মূল পোস্টের চেয়ে বড় হয় তবে তা দৃষ্টিকটু হয়ে যায়। এছাড়া নূরু ভাইয়ের পোস্টটি খানিকটা ভিতরে চলে গিয়েছে। এই কারনেই পৃথক পোস্টের অবতারণা।)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৪৬