হঠাৎ নাকে এসে সিগারেটের গন্ধ এসে ঠেকলো । সুমি ভৎ করে বমি করে দিলো । ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরে মাথা বের করে একটা সুন্দরী মেয়ে বমি করছে, এটা দেখতে নিঃসন্দেহে ভালো লাগার কথা না । লাগছেও না । তমাল অবশ্য এসবের জন্য একেবারেই রেডি ছিল না । সুমির ঠিক মুখোমুখি জানালার সিটে বসে সেও বাইরে তাকিয়ে ছিল অনেকক্ষণ । সুমি বমি শুরু করতেই তমাল এগিয়ে এসে সুমির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো । প্রায় মিনিট খানেক বমি করার পর সুমির বমিপর্ব শেষ হলো । তমাল আবার নিজের সিটে গিয়ে বসলো ।
সুমির অনেক দুর্বল লাগছে । সে তমালের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে পানির বোতলটা দিতে বললো । পানির বোতলটা তমালের পায়ের কাছেই ছিল । তমাল সুমিকে দিলো । সুমি পানি খেয়ে সিটে হেলান দিয়েই চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো । তমাল তাকিয়ে আছে সুমির দিকে । একদৃষ্টিতে তাকানো যাকে বলে । সুমির বমিকাণ্ডের জন্য পাশের সিটে বসে থাকা দুইজন লোক উঠে দরজার কাছে দাড়িয়ে আছে । তাই তমালের এরকম লজ্জাহীন দৃষ্টি কারও দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না । তমাল আর সুমির নতুন বিয়ে হয়েছে । মাত্র দুই মাসের মত হয়েছে । না, লাভ ম্যারেজ না, এরেঞ্জড মেরেজ । তমাল যখন সুমির বাসায় সুমিকে দেখতে যায়, সেটা ছিল তার চতুর্থ কোন মেয়েকে দেখতে যাওয়া । বাবা ব্যস্ত ছিল বলে তমালের সাথে সুমিদের বাসাতে যায়নি । তমাল, তমালের মা আর তমালের ছোট মামা, এই তিনজনই । বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে সুমি, তমালের চেয়ে বছর সাতেক ছোট । তমাল যেখানে একটা বেসরকারী কোম্পানির সহকারী ম্যানেজার সেখানে সুমি কেবল অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে । তমালের চতুর্থবার হলেও সুমির জন্য প্রথম ছেলে দেখা ।
সুমি যখন মাথায় ঘোমটা দিয়ে চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকলো, তমাল তখন ঘরের সাজগোজ দেখায় ব্যস্ত । সুমি ঘরে ঢুকলেও তমাল টেরই পেলো না । একটু পর মায়ের গুঁতা খেয়ে সুমির দিকে চোখ পড়লো তমালের । ও মা, এ কি !! এ মানুষ, নাকি পরী ? এই মেয়ে কি তার মত উজ্জ্বল শ্যামলা, ক্যাবলাকান্ত কাউকে বিয়ে করতে রাজী হবে ? মোটেও না । নিজের সাথেই ১০০০০ টাকার বাজী ধরলো তমাল, যে এই মেয়ে তাকে কিছুতেই বিয়ে করবে না । বাজীতে জিতলে ইচ্ছামত এক মাস খাওয়া-দাওয়া করবে, চরম অনিয়ম করে আর বাজীতে হারলে, ১০০০০ টাকা এতিমখানায় দান করবে ।
ঐদিন তমাল শুধু সুমির দিকে তাকিয়েই বাকী সময়টা পার করলো । কে নাস্তা করলো, কে চা খেলো, কে কাকে কি বললো, এগুলোর কিছুই তমালের কানে ঢুকেনি । মেয়ে দেখে তৎক্ষণাৎ কিছুই বললো না তমালের মা । এই মেয়ে যে তার নিজের ছেলের মন জুড়ে বসে পড়েছে, এটা কি আর মায়ের চোখ এড়ায় !! দুই-একদিন পর সিদ্ধান্ত জানাবে বলে যখন সবাই উঠে যেতে চাইলো, ঠিক তখনই তড়াক করে তমাল উঠে দাড়িয়ে নির্লজ্জহীনভাবে দাড়িয়ে সবার সামনেই বললো, মেয়ে আর মেয়ে পক্ষের কোন আপত্তি না থাকলে আমারও কোন আপত্তি নেই । তমালের এহেন কথায় আশেপাশে উপস্থিত সবার মুখ একরকম হাঁ হয়ে গেলো । তমালের মা তো লজ্জায় ছেলের হাত চেপে ধরলো । এই প্রথমবার সুমি তমালের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে উল্টো ঘুরে ভিতরে চলে গেলো । তমালের তখন প্রচণ্ড ইচ্ছে হচ্ছিল, সেও পিছন পিছন দৌড় মারে কিন্তু আশেপাশের সকলের চোখ তখন তার দিকে । হঠাৎ আবেগের বশবর্তী হয়ে এমন কথা যে বলা উচিৎ হয়নি, তখনই কেবল বুঝতে পারলো তমাল ।
একটু পর মায়ের দিকে তাকিয়ে করুণ দৃষ্টি দিয়ে বুঝালো, যেন তাকে রক্ষা করা হয় । যত বড় অপরাধই হোক না কেন, মা তো । তাই সে যাত্রায় তমালের মা-ই বললো, হ্যাঁ, আমারও মেয়ে পছন্দ হয়েছে । সমস্যা নেই, আমরা পরশুদিন এসে আংটি পড়িয়ে যাবো, যদি আপনাদের আপত্তি না থাকে । সুমির বাবা তৎক্ষণাৎ বললো, না, কিসের আপত্তি !! আমরাও রাজী । সুমির বাবার কাছে সম্মতিসূচক উত্তর পেয়ে অবশেষে তমাল যেন প্রাণ ফিরে পেলো ।
(বাকী পর্বগুলো ধীরে ধীরে আসবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৭ রাত ১২:৩৬