
শামুক হতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছেটা খুব তীব্র। খোলসের মাঝে নিজেকে সপে দিয়ে কাটিয়ে দিতে ইচ্ছে করে রাতের পর রাত। ইচ্ছে করে খোলা আকাশ কিংবা দমবন্ধ পরিবেশের অনুভুতি নিতে। ইচ্ছে করে স্বপ্নহীন জগৎ গড়তে। ইচ্ছে করে তাদের মতই কম আয়ু নিয়ে জীবনকে উপভোগ করতে। ইচ্ছেরা পুরন হলে হয়তো যাবতীয় অনিচ্ছায় সৃষ্ট সৃষ্টিকর্ম এসে ধাক্কা খাবে শক্ত খোলসটিতে। আমি নির্লিপ্তভাবে শরীরের নরম অংশ নিয়ে লুকিয়ে থাকবো আবৃত দেয়ালের মাঝে, ভাবতেই চোখ চকচক করে উঠে। ভাবতে হবে না কোনো কিছু নিয়ে থাকবো শুধুই নিজের মতো করে ঠিক স্বার্থপরের মতো। হয়তো নরম রোদকে অনুভব করতে পারবো না, পারবোনা অনুভব করতে বৃষ্টির শীতল পরশ কিংবা উত্তাল হাওয়ায় এলোমেলো মন। তবুও হতে ইচ্ছে করে শম্বুক গতির প্রানী, যে পিছিয়ে থাকবে সবার চেয়ে।
কিংবা পরিযায়ী হাঁস হবো। পানিতে কাটবে সকাল দুপুর রাত কিন্ত পানিকেই চিনবো না নিজের প্রয়োজনে। যা ডানা ঝাপটালে উদ্বায়ি পদার্থের মতো শরীর থেকে উবে যাবে। কারো সুখ দুঃখের ভাগিদার হওয়ার জন্য এগিয়ে যেতে হবে না, নিজের প্রয়োজনে উড়াল দিবো মাইলের পর মাইল নিঃসঙ্কোচে। যাযাবরের মতো সম্পর্কিহীন ভালোবাসাহীন জীবন গড়বো কোনো এক নিঃসঙ্গ নদীর তীরে। হয়তো তাকে শুনাবো সুখ-দুঃখের কাহিনী কিন্তু জানতে চাইবো না তার কাছে তার চলার ইতিবৃত্ত। তার সাময়ীক ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠার পিছনের গল্পও শুনতে চাইবো না যদিও সে অপেক্ষমান থাকবে আমার শেষের। হয়তো বুঝেও বুঝবে না আমার শেষ মানেই সম্পর্কের যবানিকা ওখানেই তারপর নতুন কোনো পথ খুঁজা কিংবা পুরোনো অচেনা হয়ে যাওয়া পথেই ফিরে আসা।
কিংবা হবো রাতের ডাহুক । সকরুণ সুরে ডেকে যাবো কোনো কোনো বিষন্ন রাতে। কিংবা রাত আমার জন্য বিষন্নতার ডালি নিয়ে হাজির হবে। অন্ধকারকে মাড়িয়ে শোনা যাবে অস্ফুট আর্তনাদ। আমি আমাতে আমারি মতো করে কোনো এক নির্জন জংলার জলাধারকে সাজিয়ে নেবো। কারো জন্য কেঁদে ফিরবো না, কারো জন্য সাজিয়ে রাখবো না কোনো ফুলের মালা। সেখানে থাকবে শুধু একরাশ জমাটবদ্ধ আঁধারের খেলা।
নতুবা ঝিমানো পৃথিবীর হলুদ পাতার ভিড়ে বসে, শিশিরে পালক ঘষে ঘষে, পাখার ছায়ায় শাখা ঢেকে* থাকা পাখিটার মতো নির্ঘুম হবো। তীব্র চাহনীতে ভস্ম করে দেবো ভুল করে জেগে উঠে আপ্রান লুকানোর চেষ্টারত কোনো প্রানীর পদচিহ্নকে। গল্প শুনাবো কার্তিকের শূণ্য মাঠটিকে কিংবা শতবর্ষী নিঃসঙ্গ বট হবে আমার প্রাণের বন্ধু। তার অভিজ্ঞতার ঝুলিতে থাকবে শুধু আমার নিঃসঙ্গতার গল্প কিংবা স্বার্থপরতার গল্প। যেখানে আমি ছাড়া কেউ নেই, কেউ থাকবেনা, কেউ থাকতে পারবেনা। আমার প্রশংসা কিংবা উদ্বেলতায় মুখ্য বলে বিবেচিত হবে প্রতিটা শব্দ এবং বর্ণে। সেইসব সময় কেটে যাবে, কেটে যাবে কয়েক শতাব্দী। আমি বেঁচে থাকবো, বেঁচে থাকবো প্রাচীন বটে আশ্রয় নেওয়া নিঃসঙ্গ কোনো অতিথীর কাছে কিংবা ভুল করে চলে আসা কোনো পথিকের কাছে।
*জীবনানন্দ দাসের পেঁচা কবিতা থেকে নেওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১২ রাত ১১:৩৬