ইংরেজিতে একটা বহুল প্রচলিত কথা আছে.........শ্যুগার কোটেড সায়ানাইড পিল। শিরোনামের সাথে মিলিয়ে দেখলে আমার লেখার বিষয়বস্তু বুঝতে পারছেন নিশ্চয়ই। প্রশ্নটা যদিও আপনাদেরকে করলাম; তবে উত্তরটা আমিই খোলাসা করার চেষ্টা করবো এই লেখায়।
ছাত্রাবস্থায় বিএনপি'র সমর্থক ছিলাম শুধুমাত্র জিয়াউর রহমানের ক্যারিশম্যাটিক চরিত্রের কারনে। আমার মতো লাখো যুবকের একই দৃষ্টিভঙ্গি ছিল সেই সময়ে। আওয়ামী লীগ কোন সময়েই আমাদের চিন্তায় কিংবা মননে ছিল না তাদের ফ্যাসিবাদি চরিত্রের কারনে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে বিএনপি'র সেই জিয়া আমলের চরিত্র বদলে গিয়েছিল। নব্বুইয়ে স্বৈরাচার এরশাদ পতনের পর জনগন বিএনপিকে ভূমিধ্বস বিজয় দিয়ে ক্ষমতায় এনেছিল, যার অন্যতম প্রধান কারন ছিল জিয়ার ক্যারিশমা। কিন্তু বিএনপি তার বিনিময়ে জাতিকে কি উপহার দিল? তাদের ভুলের কারনেই '৯৬তে তসবী হাতে হিজাব পড়া শেয়ালের মতো ধূর্ত হাসিনার জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পথ সুগম হয়। পরের টার্মে বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসলেও তাদের চরিত্রের কি কোন পরিবর্তন হয়েছিল? না, একেবারেই হয়নি। আগের ভুল থেকে তারা কোন শিক্ষাই নেয় নাই। দূর্নীতিতে পর পর দু'বছর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, নির্বাচনে কারচুপি ইত্যাদি ইত্যাদি তারই ধারাবাহিক প্রমাণ। যাকগে, এর পরের ইতিহাস আর নতুন করে কপচাতে চাই না। বেশীদিন আগের কথা না, আমাদের এই স্মৃতিভ্রষ্ট জাতির সেসব মনে থাকারই কথা।
তার চাইতে বরঞ্চ টাইম মেশিনে অতীতে ঘোরাঘুরি বাদ দিয়ে বর্তমানে ফিরি।
মোটাদাগে বিএনপির বর্তমানের ফোকাল ইস্যুগুলো অতি সংক্ষেপে বলি। অদূঢ় ভবিষ্যতে এগুলো নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করার ইচ্ছা আছে।
- সংবিধান বাতিল বা সংস্কার এবং আওয়ামী রাষ্ট্রপতি অপসারণে অনিচ্ছা
-আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করে দেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করার বাসনা
-যেমন-তেমন সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনের দাবী
-''সংস্কার রাজনৈতিক দলের কাজ, এই সরকারের সেসব করার ম্যান্ডেট নাই'' বয়ানকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা
-ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা
-আওয়ামী লীগের মতোই ভারতকে পীর মেনে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা
প্রসঙ্গতঃ জানিয়ে রাখি, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ক্রমাগত ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য বিভিন্ন রকমের বানী দিয়ে যাচ্ছেন। ভাবখানা এমন যে, ছাত্র-জনতা তাদেরকে ক্ষমতায় আনার জন্যই রক্ত দিয়েছে। এরই মধ্যে দলের আরেক শীর্ষ নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সালাহউদ্দিন আহমেদ বানীও বেশ কৌতুহলোদ্দীপক। উনি বলেছেন,
বলেছেন, ''আগামী দিনের রাষ্ট্রনায়ক হবেন তারেক রহমান, বংশীয়সূত্রানুযায়ী দেশ পরিচালনা করবেন তিনি''। লক্ষ্য করেন ''বংশীয়সূত্রানুযায়ী'' শব্দটা। এরাই নিজেদেরকে সবচাইতে বড় গনতান্ত্রিক শক্তি দাবী করে। মজার না বিষয়টা?
ফ্র্যাঙ্কলি স্পিকিং, বিএনপির বর্তমান পদক্ষেপগুলোতে আমার ঘৃণা ধরে যাচ্ছে। এরা জনগনের পালস বুঝে না। সংবিধান সংবিধান করছে, দেশে গত ১৫ বছর ধরে ভোট নাই কোন সংবিধান বলে, সেটা কিন্তু বলছে না। যে সংবিধানের সাথে দেশপ্রেমের কোন সম্পর্ক নাই, যেই সংবিধান একটা ফ্যাসিস্ট শক্তির উত্থান ঘটায়, সেই সংবিধানের প্রতি এতো প্রেমের কারন কি? বিএনপির নেতৃবৃন্দকে বলি, আপনারা ঝেড়ে কাশুন। ''নৌকা আর ধানের শীষ, দুই সাপের একই বিষ''। নেট দুনিয়াতে এই শ্লোগানটা খুবই ভেসে বেড়াচ্ছে। বিএনপির নেতৃবৃন্দের কি চোখে পড়ে নাই? এটা কিন্তু আওয়ামী সমর্থকদের শ্লোগান না, আজকের তরুনদের শ্লোগান। সাধারন মানুষের শ্লোগান।
লন্ডন থেকে মাঝে মাঝেই শোনা যায় "ব্যক্তির থেকে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়''। এসব ফাকা বুলির উপরে সাধারন মানুষের আজকাল আর কোন ভরসা নাই। বরং তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, "লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু''। বিএনপির গত ১৬ বছরের কোন আন্দোলন কেন সফল হয় নাই সেটা এখন দিবালোকের মতোই পরিস্কার।
সংবিধান কোন আসমানী কিতাব না। এটা যে কোনও সময়েই পরিবর্তন করা যায়। একটা দেশে সংবিধানের চাইতে জনগন বড়। এতোদিন ধরে বিএনপি রাজনীতি করছে, এসব তো তাদের জানার কথা!! তাই বর্তমান সংবিধানের উপরে এনারা যে এতো জোর দিচ্ছেন, তাতে নিশ্চয়ই কোন অসৎ উদ্দেশ্য আছে। বিপ্লব কি সাংবিধানিক? তাহলে তো আজকের এই সরকারও অবৈধ। একটা দেশে মার্শাল ল কি সাংবিধানিক? তাহলে তো আপনাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের অনেক কাজই অবৈধ। পাবলিকলি কথাবার্তা বলার সময়ে বুঝে-শুনে কথা বলেন না কেন? আপনারা নিজেরাই যে নিজেদের লেজে আগুন দিচ্ছেন সেটা জনগন ঠিকই বুঝতে পারছে। জনগনকে এতোটা বলদ ভাবাটা কি ঠিক? আপনাদের ছাগলামীর জন্যই '৯৬তে আপনাদের সরিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছিল, আবার আপনারা আপনাদের ঘাড় পেতে দিচ্ছেন, যাতে করে তার উপর ভর করে আওয়ামী লীগ আবার দেশের রাজনীতিতে খুটি গাড়তে পারে। আওয়ামী লীগ জনগনকে বলদ মনে করতো। আসলে জনগন না, বলদ আপনারাই; সেইসঙ্গে নির্লজ্জ!!! আপনারা এমন কেন? দেশটাকে ভালো না বেসে ক্ষমতাকে কেন এতো ভালবাসেন? এবার সময় এসেছে, বদলান। এটাই আপনাদের শেষ সুযোগ। মনে রাখবেন, নাউ অর নেভার!!! দেশের মানুষ হাসিনার মতো একজন স্বৈরাচারকে টেনে নামিয়েছে। সেই তুলনায় আপনারা তো শিশু!!!!
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে বলবো, গনতন্ত্রের নামে এই অপশক্তিদের আবার ক্ষমতায় আসার সুযোগ করে দিবেন না, যে যাই বলুক, যতো চাপই আসুক, আপনারা সময় নিন। পরিপূর্ণ সংস্কার করুন। তারপরেই.........শুধুমাত্র তারপরেই নির্বাচন। নাহলে এতো এতো শহীদ আর আহতদের ত্যাগের সাথে বেইমানী করা হবে। আর এই তথাকথিত বুড়ো অথর্ব রাজনীতিবিদদের একচ্ছত্রভাবে ক্ষমতায় আসার আর দেশের মানুষকে শোষণ করার সুযোগ করে দিবেন না। আপনারা সমমনা অভিজ্ঞদের নিয়ে একটা রাজনৈতিক দল গঠন করেন নির্বাচনের আগে। শুধুমাত্র তাহলেই দেশের রাজনীতিতে একটা চেক এন্ড ব্যালেন্সের অবস্থা তৈরী হবে। নয়তো যেই লাউ, সেই কদু।
লেখার শুরুতে যেই প্রশ্ন করেছিলাম, তাতে আবার ফেরত যাই। আপনারা এতোক্ষণে নিশ্চিতভাবেই বুঝে গিয়েছেন। তারপরেও বলি, বর্তমানের বিএনপি হলো সেই শ্যুগার কোটেড সায়ানাইড পিল। অর্থাৎ গণতন্ত্রের আবরনে দূর্নীতিবাজ দল। আর কে না জানে, প্রাণ খুলে দূর্নীতি করতে চাইলে স্বৈরাচার হয়ে উঠার কোন বিকল্প নাই। এই সায়ানাইড পিলের রাজনীতি করার অধিকার এই দেশে কতোটুকু আছে, সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে আজকের ছাত্র-জনতাকে ভেবে দেখতে হবে আগামীর বাংলাদেশে আমরা আরেকটা স্বৈরাচারের উত্থান দেখতে চাই কিনা। এটা সত্যি যে, বিএনপি তাদের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে কিছু কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছে, তবে তা যথেষ্ট না। এইসকল ব্যবস্থা গ্রহণ যে লোক দেখানো না, বরং আন্তরিক, সেটা প্রমাণের দায়িত্বও তাদের উপরেই বর্তায়।
আসল কথা হলো, আজ যদি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হয়ে যায় পরবর্তীতে বিএনপিও একই কারনে নিষিদ্ধ হতে পারে। সেই ঝুকি তারা নিতে চায় না। মানে দাড়াচ্ছে, তারা তাদের চরিত্র বদলানোর কোন নমুনা দেখাচ্ছে না। রাস্তা পরিস্কার রাখছে। প্রশ্ন হলো, এক স্বৈরাচারকে বিদায় করে আমরা কি আরেক দলকে স্বৈরাচার হয়ে ওঠার পথ সুগম করবো? বাংলাদেশ কি কখনও এই ভিশাস সার্কেল থেকে বের হয়ে একটা সত্যিকারের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের গড়ে ওঠা দেখতে পারবে না? আজকের তরুণদের সামনে এটাই সবচাইতে বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন!!!!
বিএনপি এখনও ক্ষমতায় আসে নাই, কিন্তু দেশের আনাচে-কানাচে তাদের নেতা-পাতি নেতাদের যে সকল ক্রিয়াকান্ডের খবর পত্রিকার পাতায় আসছে, সেটা কোন বিচারেই সুখকর না। ছোট-বড় বিভিন্ন খবরে তাদের দীর্ঘদিনের অভুক্ত শরীরের সীমাহীন লোভ প্রকাশ পাচ্ছে। ক্ষমতায় আসার আগেই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে ক্ষমতায় যাওয়ার পরের অবস্থা কি দাড়াবে, সেটা সহজেই অনুমেয়। আজ যেভাবে স্বৈরাচারের ফেলে যাওয়া জায়গাগুলোতে বিএনপির নেতা-কর্মীদেরকে সক্রিয় হতে দেখছি, সেটা কোন ভালো বার্তা দিচ্ছে না একেবারেই।
আমি কোন বিশাল রাজনৈতিক বিশ্লেষক নই। একেবারেই সাধারন একজন মানুষ, ফলে আমার চিন্তা-ভাবনা সাধারন মানুষের সহজ-সরল চিন্তা-ভাবনা, আশা-আকাঙ্খারই প্রতিফলন। অনলাইনে, অফলাইনে প্রচুর বাঘা বাঘা বিশ্লেষক রয়েছেন। তারা প্রতিনিয়ত দেশের বর্তমান অবস্থা আর ভবিষ্যত নিয়ে কাটা-ছেড়া করে যাচ্ছেন। সাধারন মানুষ এতো প্যাচ-ঘোচ বোঝে না; বুঝতে চায়ও না। তারা চায় কিছু সহজ-সরল আশা-আকাঙ্খার বাস্তবায়ন, আর সেই বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কিছু দৃশ্যমান পদক্ষেপ। কোন সন্দেহ ছাড়াই বলা যায়, সেসবের জন্য দেশের আপামর জনসাধারন এই সরকারের দিকেই এখন পর্যন্ত তাকিয়ে রয়েছে।
শেষ করছি বর্তমানের একটা জনপ্রিয় শ্লোগান দিয়ে............যদি তুমি ভয় পাও, তবে তুমি শেষ; যদি তুমি রুখে দাঁড়াও, তবে তুমি বাংলাদেশ।
courtesy - Durbeen