১৯৭০-এর সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে জয়লাভ করা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগের কাছে পাকিস্তানি জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করার ফলে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থা নিরসনের প্রক্রিয়া চলাকালে পাকিস্তানি সেনারা কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নাম দিয়ে ২৫শে মার্চ নিরীহ বাঙালি বেসামরিক লোকজনের ওপড় ঝাপিয়ে পড়ে । তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ সকল সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে হত্যা করা। এদিন দুপুরের পর থেকেই ঢাকাসহ সারাদেশে থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে থাকে।
ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল পঞ্জাবের অমৃতসরের জালিয়ানওয়ালাবাগে ভারতীয়রা এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছিলেন। নৃশংসভাবে সেই সমাবেশ ভেস্তে দেওয়া হয়েছিল। যা হয়ে উঠেছিল ঔপনিবেশিক বর্বরতার করুণতম স্মৃতি।রেজিনাল্ড এডওয়ার্ড হ্যারি ডায়ার নামে একজন ব্রিটিশ কর্নেল সৈন্যদের সমাবেশে অংশ নেওয়া পুরুষ, মহিলা এবং শিশুদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। ব্রিটিশদের মতে, গুলিবর্ষণে প্রায় ৪০০ জন নিহত হয়েছিলেন। যাদের মধ্যে সবচেয়ে কমবয়সি ছিল নয় বছরের এক শিশু।
উপড়ের ঘটনাগুলোর সাথে মিল খুজে পাচ্ছেন কি আমাদের বর্তমান সময়ের ? বর্বরোচিত হামলার সাথে মিল থাকলেও অমিল শুধু একটা জায়গায়। পাক সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী বাঙ্গালী ছিল না। জেনারেল ডায়ারও ভারতীয় ছিল না। কিন্ত কত বড় দুর্ভাগা জাতি আমরা যে , আমাদের বাচ্চাদের ওপড় হামলা চালিয়েছে ,আমাদেরই সামরিক ও পুলিশ বাহিনী। দেশের জনগনকে রক্ষার শপথ নিয়ে এই বাহিনীগুলো ঝাপিয়ে পড়েছে নিজ দেশের নিরস্ত্র ছাত্র জনতার উপর!!!
ইতিহাস সাক্ষী যে , শেষ পর্যন্ত জালিমেরই পতন হয়। রাও ফরমানদের পরাজয়ের ইতিহাস আমরা জানি। আসুন দেখি জেনারেল ডায়ারের এই গনহত্যার পর ভারতে কি হয়েছিল। হতাহতের ঘটনা ভারতে ছড়িয়ে পড়লে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার নাইটহুড উপাধি বর্জন করেন। জালিয়ানওয়ালাবাগের ঐ গণহত্যা ভারতের জাতীয়তাবাদকে আরো কঠোর করে তুললো। গান্ধিজি লিখেছিলেন আমরা ডায়ারের শাস্তি চাইনা, যে ব্যবস্থা ডায়ারের মত মানুষ তৈরি করে, আমরা তার পরিবর্তন চাই। নাইজেল কলেট লিখেছেন প্রকৃতপক্ষে ঐ ঘটনার পরই গান্ধির স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হলো। ঐ ঘটনার আগে গান্ধি কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্রিটিশদের কাছ থেকে ছাড় দাবি করছিলেন । কিন্তু এরপর তিনি একবারেই ব্রিটিশ বিরোধী হয়ে পড়লেন। ভারতের মুক্তি আন্দোলনের যে প্রক্রিয়া তখনই চলছিলো, তাতে গতি বেড়ে গেল। ১৯২০ সালের মার্চে ডায়ারকে পদত্যাগ করতে বলা হলো। পরে একসময় তিনি নিজেও তার কাজের জন্য অনুশোচনা করতেন। ১৯২৭ সালে ইংল্যান্ডের সমারসেট কাউন্টিতে তার মৃত্যু হয়।
ইতিহাস থেকে এবার আমাদের শিক্ষা নেবার পালা। জাতিগতভাবে শীড়দাড়ার পরীক্ষা দেবার পালা।১৯৭১ এর ২৫ শে মার্চের পর যদি এই জাতি ভয় পেয়ে পাকিদের হুজুর হুজুর করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরত , তবে আমাদের এই স্বাধীন দেশ পাবার সৌভাগ্য হত না। জেনারেল ডায়ারের নিশৃংষ গনহত্যার পর যদি ভারতবাসী ভয়ে কুকরে যেত , তবে ব্রিটিশদের দাস হয়েই আজো আমাদের জীবন কাটাতে হত। দেশের ১৮ কোটি জনগনের প্রত্যেকটি মানুষের কাধে আজ শহীদের রক্তের দায় চেপেছে। এতগুলো তরতাজা তরুনের রক্ত বৃথা যেতে পারে না। পক্ষ এখন দুটো। কোন পক্ষে আমরা দাড়াবো, সেটা নির্ধারনের সময় এখন। মনে রাখবেন আপনি নির্বিকার, চুপ মেরে আছেন মানে আপনি জালিমের পক্ষ নিলেন—----
তথ্যসুত্র ঃ উইকিপিডিয়া ও বিবিসি বাংলা
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১১:০৯