নানান ঘটনাই তো ঘটে আশে পাশে, কিছু আগোছালো কথাতেই না হয় বলি। ঘটনাগুলোর সময় অনুযায়ী হয়ত সাজানো না। যখন যেটা মনে পড়বে লিখে ফেলব
১. লোটা কম্বল:
লোটা কম্বল (সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়) বইটা আমার ভীষণ প্রিয়। তাই আসার সময় এটা সাথে করে নিয়ে যাব ঠিক করলাম। ওজন বেড়ে যাবে বলে আর লাগেজে দিতে পারলাম না। ঢাকা থেকে পুরো পথে হাতে করে টেনে এনেছিলাম এটা সহ খান কয়েক বই। আমার ইমিগ্রেশন ছিল শিকাগোতে। সেখান থেকে সাউথ ক্যারোলিনার গ্রীনভিল-স্পার্টানবার্গ। (পুরোনো একটা লেখা আছে সেসব নিয়ে ) ডিলে-ফিলে করে যখন শেষ এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম তখন বেশ রাত হয়ে গিয়েছে। আমাদের যাঁরা নিতে এসেছিলেন, তাদের অনেক কষ্টই বোধহয় দিয়েছিলাম। আমাদের মোট চারটা বক্স ছিল, দুটো পেলাম; বাকি দুটার আর খবর নাই। একসময় লাগেজ কনভেয়ার বেল্ট ঘোরাও বন্ধ হয়ে গেল। আমাদের তো মাথায় হাত, বাকি ৫০% কই?
'লোটা-কম্বল' বইটা হাতে আছে কিন্তু আসল লোটা কম্বল মানে বাক্স-পেটরার খবর নেই। যারা সাথে ছিলেন, তারা আমাদের নিয়ে গেলেন এয়ার লাইন কাউন্টারে। তারা জানালো যে এই প্লেনে করে একটা সিনেমার শুটিং ক্রুরা এসেছে, তাদের সাথে অনেক মালপত্র ছিল, তাই তোমাদের লাগেজ শিকাগোতেই পরে আছে।



আমার 'আদার হাফ' এর চেহারা দেখে সত্যিই খারাপ লাগছিল, বেচারি আসার আগে আগে একগাদা জিনিসপত্র আর জামাকাপড় কিনেছিল। আমার মনে হয় পোষাকের অত আগ্রহ নেই। আমার ধারণা মেয়েরা প্রতিটা কাপড় কেনার সময় কল্পনা করে এই কাপড়টায় তাকে কেমন দেখাবে, তাই তাদের টানও অনেক বেশি থাকে পোষাকের উপর।
মজার ব্যাপার হল, পরেরদিন ঠিকই ঐ এয়ারলাইন বিনা খরচে যে বাসায় ছিলাম সে বাসায় বাকি দুটো বক্স পৌঁছে দিয়েছিল। এয়ারপোর্ট থেকে ওখানকার দূরত্ব ছিল ৫৫ কিলোমিটারের মত।
চাইলে নাকি ঐ এয়ারলাইন থেকে কিছু ক্ষতিপূরণও পাওয়া যায়, যেহেতু আমদের একরাত কিছু জিনিস ছাড়া থাকত হয়েছিল। আমি অবশ্য চেষ্টা করিনি।
পুনশ্চ: এই ঘটনা ঢাকায় ঘটলে কি হত ভাবতেও ভয় লাগে। [আপনারা আবার ভেবে বসবেন না, আমি প্রবাস মহান আর স্বদেশ তুচ্ছ -এসব বলছি। আমি ভাবি ঢাকাও একদিন এমন হবে।]
২. জিউয়েই সুনের চশমা:
আমি যে গ্রুপে এসে ঢুকলাম সেটা মোটামুটি এইরকম ছিল ৪ টা চাইনিজ ছেলে আর একটা চাইনিজ মেয়ে। ২০১০ এ আমরা মানে ১ টা চাইনিজ ছেলে আর একটা চাইনিজ মেয়ে আর আমি জয়েন করলাম। প্রফেসর সাহেবের দেশের বাড়ি কোথায় সেটা মনে হয় না বললেও বুঝে গিয়েছেন আপনারা।সাতজনের মাঝে আমি নিতান্তই বেমানান। নতুন আসা ছেলেটার নাম জিউয়েই সুন। তো প্রথম সপ্তাহে একদিন আমি আর জিউয়েই সুন গেলাম ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট অরিয়েন্টেশনে। অডিটোরিয়ামে বসে জিউয়েই বলল যে তার অনুষ্ঠান ভালো লাগছে না। কারণ,... এই কারণ আর সে বলতে পারছে না, সে বিবিধ ইংরেজি শব্দ বলল কিন্তু সে নিজেই ঠিক যুৎসই শব্দটা মনে করতে পারছে না। সে আমাকে ইশারায় অপেক্ষা করতে বলল। তারপার ব্যাগ থেকে একটা যন্ত্র নিয়ে সেটা টিপাটিপি করল, তারপর সেটা আমার মুখের সামনে ধরল। জিনিসটার স্ক্রিনে লেখা "Spectacles, Glasses", আর জিনিসটা হল চাইনিজ-ইংলিশ ডিজিটাল ডিকশনারি। আসল ঘটনা বুঝলাম সে চশমা আনেনি, তাই ষে দূরে ভালো দেখতে পাচ্ছে না।
[এখন জিউয়েই খানিকটা ভালো ইংরেজি বলে, তবে ওর সাথে কথা বলতে আমার ইংরেজিও চাইনিজদের মত হয়ে গিয়েছে। ছেলেটা আসলে খুব ভালো। সে এই মুহূর্তে আমার কোনাকুনি টেবিলে বসে এককানে ইয়ারফোন লাগিয়ে, কম্পিউটার স্ক্রিনে জার্নাল পেপার পড়তে পড়তে লাঞ্চ করছে]
(চলবে...)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০১১ রাত ১২:০৬