একটা ঘটনা মনে পড়ল। একদুপুর বেলায় আমি একটা মুদি দোকানে ঢুকেছি। লাইনে দাঁড়িয়ে বিরক্ত হচ্ছিলাম, সামনে সবার ট্রলিতে বিশাল বিশাল স্তুপ, প্রচুর সময় লাগছে, আমার তাড়াতাড়ি ফেরা দরকার। অথচ, আমি একটা মাত্র জিনিস কিনে এদের সবার পেছনে পড়ে আছি। আমার ঠিক সামনে একজোড়া ছেলেমেয়ে দাঁড়িয়ে আছে, বয়স ২৭/২৮ হবে। দুজনই দুজনকে হানি, আই লাভ ইউ এসব বলছে। আবেগপ্রবণ হয়ে দুজনেই চুম্বন বিনিময় করল। এসব জিনিস চোখে সয়ে গিয়েছে, বিশেষ কিছুই না এসব। ওদের বিল আসল, ৪২ ডলার সামথিং। অবাক ঘটনা ঘটল তার পরেই। ছেলেটা ক্যাশিয়ারকে বলল, সমান সমান দুইভাগ করে দেন। ছেলেটা ক্রেডিট কার্ডে ২১ ডলার কিছু সেন্ট দিল, আর মেয়েটা পার্স খুলে ক্যাশ ২১ ডলার আর কয়েন দিয়ে দিল। ওরা সংসারের বাজার করে একই ট্রলিতে তুলেছে, থাকেও নিশ্চয়ই একই ছাদের নিচে, ভাব-ভালবাসারও কমতি দেখা যাচ্ছে না- কিন্তু, খরচের ক্ষেত্রে? উঁহু, ঠিক অর্ধেক তোমার, ঠিক অর্ধেক আমার। একটু অবাক হলেও, আমি জানি এটাই এদের বাস্তব। আমি আমার বাংলাদেশি চিন্তাধারায় এসব মেলাতে পারব না।
আরও অবাক লাগে বাবা-মায়েরা যখন ১৮ বছরের বড় ছেলেমেয়েকে বাসায় রাখতে চান না। অনেকসময় আয়-ইনকাম ভাল না হওয়ায়, অনেক ছেলেমেয়েই বাবা মায়ের সাথে আরও বেশ কিছু দিন থাকতে চায়। তখন বাবা মা বেশ বিরক্ত হন। এমনকি, অনেকসময় বাবা মায়ের বাসার বেজমেন্টেও নাকি থাকতে হয় অনেককে। কি জানি, এদের কালচারই এরকম। ফেসবুকে একটা ভিডিও দেখেছিলাম, যেখানে ডেভিড লেটারম্যান (উনি নাকি এইখানের বিশাল একজন উপস্থাপক) আমাদের উপমহাদেশের একজন বিশিষ্ট নায়িকাকে নাস্তানবুদ করতে চেয়েছিলেন এই বলে যে, তুমি তো তোমার শ্বশুরবাড়ি থাকো। তার জবাবে, ঐ অভিনেত্রী বলেছিলেন, হুম, সেজন্যেই বাবা-মায়ের সাথে ডিনার করার জন্য আমাদের তোমাদের মত অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয় না।
আমাকে ফোন করে জরিনা বেগম জানাল, সে গাড়ি নিয়ে ফিরেছে। । আমি ভাবলাম, সবাই আজ বারকিকিউ খাচ্ছে, আর আমি ভাত খাইনা কয়েক দিন হয়ে গেল।

মিশন ব্রিফিং: ভাত বা খিচুড়ির সাথে খাবার জন্য তরকারি ও রান্নার মেশিন যোগাড় করতে হবে।
কয়েকটা দোকানে ঘোরার পর সবচেয়ে সস্তায় যেটা পেলাম ২০ ডলারে চারকোণা ফ্রাইপ্যান টাইপের জিনিস কিনলাম, যেটার নিচে হিটিং কয়েল আছে। হালকা ভাজাভুজি করা যাবে। আলুভাজির প্যাকেট (হ্যাশব্রাউন বলে) কিনলাম আরো ২ ডলারে। একটু আমিষ থাকলে মন্দ হয় না, এই ভেবে আরেকটা রেডি মিল কিনলাম ১ টাকায়। মনে হল, একবেলার খাবার হিসেবে একটু বেশিই কিনছি নাকি? পরে ভাবলাম, থাক, ভাত খেলে একটু শান্তি মতই খাই। হোটেলে ফিরে রাইসকুকার (সাথে করে নিয়ে এসেছিলাম!), চাল+ডাল+হলুদ একত্রে বসিয়ে দিলাম। আসার সময় আমার 'আদার হাফ' এর সাহায্যে মোটামুটি একটু ছোটখাট কিচেন সাথে করে নিয়ে এসেছিলা। হলুদ, মরিচ,জিঞ্জার পাউডার ইত্যাদি ইত্যাদি এনেছি ১ কার্টনে। আর, প্লেট, বাটি-গ্লাস, চামচ এসবও এনেছিলাম। আর লবণ আনা হয় নি

সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, রুমে স্মোক ডিটেক্টর ২টা। রাইস কুকারের বাষ্পে ঐটা গান (!) গেয়ে উঠলে বিরাট সমস্যা। বাথরুমের দরজায় রাইস কুকার সেট করে বাথরুমের একজস্ট অন করে রাখলাম। কাছের স্মোক ডিটেক্টরটাকে পলিথিন দিয়ে ঢাকা দিলাম। ক্ষুধায় অস্থির লাগছিল, আলু একটা ভাজা হতেই এক হাতে সেটা তুলে খাওয়া শুরু করলাম। অন্য হাতে ভাজাভুজি করছিলাম। নিজেকে ছোটখাট বাবুর্চি বলে মনে হতে লাগল।
আলু ভাজা শেষ করে, অন্য রেডি মিলটা ফ্রাই প্যানে তুলে দিলাম। ঔটাতে একটু ঝোলমত ছিল, ভাবলাম আলুতে একটু মাখিয়ে খেলে মন্দ হয় না এবং তা করতে গিয়েই জিভ পুড়ে ফেললাম।







যাই হোক, মেনু দাঁড়াল এই রকম:
১. খিচুড়ি (লবণ ছাড়া)
২. আলুর ঝুরি ভাজি (এটা ভাজা ছিল, আমি তেলে দোভাজা করেছি)
৩. চিকেনে প্যাটি টাইপের একটা জিনিস (বেশিরভাগই, ৯০% ভেজাল। )
৪. আলু ভর্তা (ম্যাশড পটেটো রান্না)
৫. ভুট্টার দানা (খিচুরির সাথে ভুট্টার দানা!!!

এর মাঝে ৩, ৪ ও ৫ নং আইটেমের মোট দাম ৯৭ পয়সা, এবং ফ্রোজেন রেডি মিল থেকে প্রাপ্ত।
ছবি:
আপাতত সেরকম কিছু ঘটে নাই, যেটা নিয়ে আর লেখা লেখি করা যায়। খাবার দাবার নিয়ে আর লেখার মানে হয় না। ভাল কিছু লেখার মত পেলে আবার লিখব। সবাই ভাল থাকুন, আমার জন্য দোয়া রাখবেন।



পর্ব-৫ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুন, ২০১১ সকাল ১১:৫৩