হোটেলের রুমে ঢুকে আমার 'রুমমেট' (যাকে আমি সাধারণত মর্টনের ছেলে বলি। টীকা: ১ ), বলল বাহ মাইক্রোওভেন তো আছে দেখছি। আমি ভুল ভাঙিয়ে বললাম, আসলে ঐটা ওভেন না, ঐটা সিন্দুক। ইলেকট্রনিক সিন্দুক তাই সামনে এত বাটন

বিকেলে ভাল লাগছিল না। আমি ভাবলাম কিছু শুকনা খাবার কিনে আনি। অন্যরা কেউ রাজি না হওয়ায়, (তারা শুকনার ভক্ত না) আমি একাই বের হলাম। ভাবলাম অনেকদূর গেলাম, কোন ওয়ালমার্ট (আমেরিকার আগোরা) পেলাম না। তারপর, একটা গলিতে ঢুকে উল্টো দিকে ফেরত আসা শুরু করলাম, এবং পথ হারিয়ে ফেললাম




আন্দাজের উপর ভিত্তি করে প্রায় আধাঘন্টা ঘুরলাম। উপায় না দেখে আমার 'আদার হাফ' কে ফোন দিলাম। আমি বললাম আমি অমুক জায়গায় আছি, তুমি ইন্টারনেটে ম্যাপ দেখে আমাকে রাস্তা বাতলাও। বেচারি অনেক চেষ্টা করল সাহায্য করার কিন্তু জন্মসূত্রে আমি দিক ঠাহর পাইনা। আমি তাকে বলছি যে আমি অমুক এবং তমুক জায়গার মাঝে দাঁড়িয়ে আছি, কিন্তু ডান না বাম বুঝতে পারছি না। গাড়ির তেলও শেষ হবার পথে


বাংলাদেশে থাকতে টেলিকমে কাজ করার সুবাদে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। এমনকি, বিদ্যুত নেই এমন জায়গাতেও গিয়েছি। তখন যে সুবিধাটা ছিল, লোকাল অফিসের লোকেরা রাস্তা বলে দিত, আর সাথের ড্রাইভার লোকাল অফিসের ড্রাইভারের থেকে রাস্তা বুঝে নিত। তারপরও, হারিয়ে গিয়েছি অনেকবার। বাংলাদেশে সুবিধা হল, পথে পথে চায়ের টং দোকান পাওয়া যায়, বা রাস্তায় পথচারী পাওয়া যায় যাদের পথ জিজ্ঞেস করলে কিছুটা হদিস পাওয়া সম্ভব। এখানে পথচারী মনে হয় দিনে ১ জনও হাঁটে কিনা সন্দেহ।
রাতে খাবারের জন্য এবার বের হবার পালা। অন্য সহযাত্রী (যাকে আমি জরিনা বেগম বলি), জানাল তার খাওয়ার ইচ্ছা নাই। তো আমি আর মর্টনের ছেলে বের হলা খাদ্যের সন্ধানে। আমার আসলে সন্ধানের দরকার ছিল না। আমি জানি কোথায় কোথায় ডলার মেনু আছে। কিছু দোকানে এক ডলারে একটা করে খাবার পাওয়া যায়। তবে কোয়ালিটিও সেইরকম। কারণ, ঐ দোকানেই ৪ বা ৫ ডলার দামের বার্গার বিক্রি হয়, ১ ডলারে খুব ভালো জিনিস দিলে তাদের ঐ দামী জিনিস কেউ কিনবে না। আর, ১ ডলারে খুব বেশি কিছু দেয়া সম্ভবও না তাদের পক্ষে। তারা বার্গার বলে যেটা বেচে, অনেক সময় সেটা খেলে মনে হয় দুটো বনরুটির মাঝে আরেকটা ভাজা বনরুটি। ম্যাকডোনাল্ডস আর ওয়েন্ডিতে ডলার মেনু পাওয়া যায়। মর্টনের ছেলে বলল, এখানে গাড়ি থামও, ডানে পিৎজার দোকানে ঢুকব। আমি ততক্ষণে এগিয়ে গেছি অনেকটা। তারপর সে আরেকটা দোকান পছন্দ করল যার নাম chipotle, সে আরও জানাল এর পাশে একটা Jamba JUice ও(একটা চেইন যারা জুস বেচে) আছে। তারপর, ঢুকলাম chipotle এ। মেক্সিকান দোকান মনে হয় এবং মেনু দেখে বেশ দামি মনে হল। মর্টনের ছেলেকে বললাম, তুমি এখানে খাও আমি বাইরে খেয়ে নিচ্ছি। বাইরে তেমন কিছু পেলাম না, হাঁটাহাঁটি করে সময় খরচ করলাম। মর্টনের ছেলে আসলে বেশ ক্ষুধার্ত ছিল বলে মনে হয়। বাইরে থেকে দেখলাম গোগ্রাসে খাচ্ছে সে। বেচারার বয়সও হয়নি খুব একটা বেশি, সে ইউনিভার্সিটির ফার্স্ট ইয়ার শেষ করল মাত্র। সে বের হয়ে বলল, তার জাম্বা জুস খাওয়ার ইচ্ছা আছে। (মনে মনে বললাম, আমাদের দেশের জাম্বু ভাইরে তো দেখনাই, তারে দেখলে বুঝতা)। আমি বললাম, তথাস্তু, চল কিন্তু আমি অন্য দোকানে থামব। ফেরার পথে ওয়েন্ডিতে থেমে ১ ডলারের বার্গার আর ১ ডলারের তথাকথিত চিকেন (!) র্যাপ (শর্মা টাইপের) কিনে ফিরলাম। কাল অনেক কাজ আছে।
( টীকা ১: অন্য বাঙালিদের সাথে কথা বলার সময়, আমার সুপারভাইজারকে আমি মর্টন বলি। আশেপাশে অন্যরা থাকলেও যেন বুঝতে না পারে, সেজন্যে এই বুদ্ধি। স্বাভাবিকভাবেই তার ছেলেকে মর্টনের ছেলে বলা যায়, তাই না?)
পর্ব ২
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১১ রাত ১২:০৭