গণিত , পদার্থবিদ্যা , ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিজ্ঞানের সকল শাখাতে ব্যবহৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ ধ্রুব সংখ্যা হল e।এর মান 2.71818459045...... একটি অমূলদ সংখ্যা ।এটাকে সিরিজ এর যোগফলরূপে এভাবে প্রকাশ করা যায়...
e=1/0!+1/1!+1/2!+1/3!+1/4!.............
ইন্টারনেটে e লিখে সার্চ দিলে একে সর্বপ্রথম যে রূপে দেখা যায় তা হল -
e = (1+1/n)^n যেখানে n খুব বড় একটা সংখ্যা যার মান অসীম এর কাছাকাছি ।আর এটা দেখার পর সর্বপ্রথম আমাদের যেটা মনে হয় তা হল এরকম বিদঘুটে একটা সংখ্যাকে এতো গুরুত্বপূর্ণ মনে করার কি দরকার ।
আসলেই e কে দেখতে একটু বিদঘুটে হলেও এর ধারণাটা কিন্তু অনেক চমৎকার ।
কোনো সিস্টেমের নির্দিষ্ট ধর্মের পরিবর্তনের হার যদি ঐ নির্দিষ্ট ধর্মের সমানুপাতিক হয় তখনি আসলে e এর ধারণাটা চলে আসে ।
ধরি আমাদের সিস্টেম হল একটা পানিভর্তি পাত্র । এখন আমরা যদি পাত্রের নিচে একটা ছিদ্র করে দেই তাহলে দেখবো যে শুরুতে পানি নির্গমনের যে বেগ ছিল সময়ের সাথে সাথে সেটা কমে যাচ্ছে । এমনিভাবে যখন পাত্রে খুব অল্প পানি থাকবে তখন হয়তো নির্গমনের বেগ কমে শূন্যের কাছাকাছি চলে আসবে । এখানে পানি নির্গমনের বেগটা আসলে পাত্রে উপস্থিত পানির ভরের উপর নির্ভর করছে। সুতারাং এই সিস্টেমটা এনালাইসিস অর্থাৎ যে কোন সময়ে পাত্রস্থিত পানির পরিমাণ ইত্যাদি নির্ণয় করার সমীকরণে একটা e চলে আসবে ।
এখন আর একটা উদাহরণ দেখা যাক । মনে করি কোন গ্রামের লোকসংখ্যা ১০০০ । এই গ্রামের জনসংখ্যা এমনভাবে বৃদ্ধি পায় যেন ১২ বছর পর জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয় অর্থাৎ যেকোনো নির্দিষ্ট সময়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার একযুগে (এক যুগ = ১২ বছর) ১০০ %!!!(জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এমন যেন মনে হয় এভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকলে ১২ বছর পর জনসংখ্যা বর্তমান জনসংখ্যার দ্বিগুণ হবে ) । তাহলে খুব সহজে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা এটা বলতে পারি যে বার বছর পর গ্রামের মোট জনসংখ্যা হবে (১+১)=২ হাজার।আমরা যদি দুইধাপে হিসাব করি অর্থাৎ ৬ বছর পর হিসাবটা নেই তাহলে ৬ বছর পর গ্রামের জনসংখ্যা দাঁড়াবে (১+১/২ ) হাজার ।সুতারাং একযুগ পর টোটাল জনসংখ্যা হবে ------
= (১+১/২ ) * (১+ ১/২ )
=(১+১/২)^2
= ২.২৫ হাজার
আমরা যদি ৩ বছর পর পর হিসাব করি (অর্থাৎ যদি মোট ৪ ধাপে হিসাব করি ) তাহলে আমাদের যে ফলাফলগুলো আসবে তা হল -
৩ বছর পর মোট জনসংখ্যা -
১+১/৪ হাজার ।
৬ বছর পর মোট জনসংখ্যা-
(১+১/৪)+(১+১/৪)এর ১/৪
=(১+১/৪)*(১+১/৪)
=(১+১/৪)^২
অনুরূপভাবে ৯ বছর পর জনসংখ্যা হবে -
(১+১/৪)^৩
এবং সবশেষে ১২ বছর পর আমাদের এই হিসাব অনুসারে যে জনসংখ্যা আসবে তা হল ---
(১+১/৪)^৪
=২.৪৪ হাজার !!!!!!!!!!!!
আমরা যদি হিসাবটা প্রতি দিন আপডেট করি অর্থাৎ আমরা যদি মোট ১২*৩৬৫=৪৩৮০ ধাপে হিসাবটা করি তাহলে যে ১২ বছর পর আমরা হিসাব করে যে জনসংখ্যা পাবো তা হল ---
(১+১/৪৩৮০) ^৪৩৮০
= ২.৭১৭৯৭১৫৮৭ যা e এর খুব কাছাকাছি একটা সংখ্যা । আমরা যদি অসীম সংখ্যক ধাপে কাজটা করতাম তাহলে যে সংখ্যাটা পেতাম তার মানই আসলে e ।
এখন e এর পরিচয়টা আমাদের কাছে আর এতো জটিল লাগছেনা । আমরা এখন লিখতেই পারি
e=(1+1/n)^n যখন n এর মান খুব বড় কোন একটা সংখ্যা । এটাকে বিস্তৃত করলে হয়তো আমরা পেয়ে যাবো ---
e=1/0!+1/1!+1/2!+1/3!+1/4!+1/5!+1/6!+....................
=2.71828182845904523536028747135266249775724709369995...
আজকের মতো এ পর্যন্তই । পরে এ বিষয়ে বিশদ লেখার চেষ্টা করবো । আর এটা আমার এই ব্লগের তো বটেই, প্রচলিত পড়ালেখার বাইরে জীবনের সবপ্রথম কোন লেখা। তাই ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার দরখাস্ত থাকলো ।
ধন্যবাদ ।