দীনতা, হীনতা প্রকাশ করে দু’য়া করা দু’য়ার গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি: দীনতা, হীনতা প্রকাশ করে দু’য়া করা দু’য়ার গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি। কেননা হীনতা ও দীনতা প্রকাশ এবাদতের প্রাণ। বাদশা আকবর একবার শিকারে বের হয়ে রাস্তা ভুলে কোন এক গ্রামে প্রবেশ করেন। সেখানে জমিদার সাহেব বাদশাকে চিনতে না পারলেও স্বভাবসুলভ ভদ্রতার খাতিরে তিনি বাদশাহকে খুব আদর, আপ্যায়ন করেন। বাদশা আকবর জমিদারের আতিথিয়তায় খুবই প্রীত হলেন। এদিকে বাদশাহের লস্কর ও অন্যান্যরা বাদশাকে খুজতে খুজতে জমিদারের বাড়ী এসে পড়ায় আগন্তুক অতিথির পরিচয় জমিদারের আর বুঝতে বাকি রইল না। বাদশা আকবর বিদায় নেবার প্রাক্কালে জমিদারকে কিছু উপহার দিলেন এবং বললেন, “ এই উপহার শেষ হয়ে গেলে তুমি দিল্লিতে আমার নিকট যেও”। এদিকে বাদশা আকবর তার প্রহরীদের জমিদারের আগমনকে বাধা প্রদান করতে নিষেধ করে দিলেন।
একদিন জমিদার সাহেব বাদশাহের প্রাসাদের সম্মুখে এলে দায়িত্বশীলগণ তাকে বাদশা আকবরের কামরায় পৌছে দিলেন। সেই মুহুর্তে বাদশা নামাযরত ছিলেন। জমিদার বিম্ময়াভিভূত হলেন যখন দেখলেন দিল্লির বাদশাহ রুকু করছে, কপাল মাটিতে ঠেকিয়ে নামায আদায় করছে, দু’হাত দুলে দু’য়া করে তার চাহিদা পেশ করছে মহান আল্লাহর দরবারে। বাদশা নামাযান্তে জমিদারের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে জমিদার বাদশাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হুযুর! আপনি কাহার সম্মুখে নত হইয়াছিলেন এবং করজোরে ভিক্ষা মাংগিতেছিলেন?” বাদশা জবাবে বললেন- “ আমি খোদার এবাদত করিতেছিলাম এবং তারই নিকট আমার অভাব-অভিযোগ জানাইতেছিলাম।” জমিদার বাদশাহের কথা শ্রবণ করামাত্রই ভাবাবেগে উদ্বেলিত হয়ে বলল, “খোদা আপনার অভাব পূর্ণ করিতে পারিলে কি আমার অভাব পূর্ণ করিতে পারিবে না? কাজেই আমি আপনার নিকট কিছুই চাহিব না। যাহা চাহিবার খোদার নিকটই চাহিব।”
এই হল হীনতা ও দীনতার স্বরুপ বা দৃষ্টান্ত।
আজকালকার ভ্রান্ত নীতিকথা যা থেকে মুক্ত হওয়া ঈমানের দাবি : শয়তান বিবেক পূজারীদের মনে এই নীতিকথা শিখিয়ে রেখেছে যে, ছেলে-মেয়েদের বিবাহ-শাদি সম্পন্ন করে এবং যথেষ্ট টাকা-পয়সা উপার্জন করে তবে এবাদতে আত্ননিয়োগ করিও। যেহেতু এখন তোমার অন্তর পাপের আবর্জনায় কলুষিত, আগে দুনীয়া ও তদস্থিত সবকিছু থেকে পবিত্র হয়ে পরে খোদার পথের পথিক হওয়া যাবেক্ষণ। এই উদাহরণ সেই ব্যক্তির ন্যায়, নাপাকি অবস্থায় যে ব্যক্তি নদীর ধারে হেঁটে বেড়ায় আর নদী তাকে ডেকে বলে, ওহে পথিক! আমার কাছে আসো। পথিক উত্তর দিয়ে বলে, এখন আমি নাপাক আছি, আগে পাক হয়ে আসি, তারপর তোমার মাঝে আসবো। নদী হেসে বলে, নিজের মধ্যে থেকে নাপাকী দূর করার জন্য আগে তোমাকে আমার মাঝে এসে পাকসাফ হতে হবে, তারপর আমৃত্যু তুমি আমার মাঝে বার বার আসতে পারবে। যে ব্যক্তি আগে পাক হয়ে পড়ে পানির নিকট আসার আকাঙ্খা করে তিনি ভ্রান্তির মধ্যে আছেন যিনি আগে পাকমুক্ত হয়ে পরে আল্লার রাস্তার উপনীত হবার ইচ্ছা রাখেন।
কষ্টে পতিত হয়ে মৃত্যু কামনা করা (মৃত্যুর জন্য দোয়া) যাবে না : কষ্টে পতিত হয়ে মৃত্যু কামনা করা যাবে না অর্থাৎ মৃত্যু চেয়ে দু’আ করা যাবে না মর্মে হাদিসে এসেছে। হাম্মাম বিন মুনাব্বাহ বলেন, হযরত আবু হুরায়রা রা. হযরত রাসুল করিম সা. থেকে যেসব হাদিস আমাদেরকে শুনিয়েছেন তন্মধ্যে এ কয়টি হাদিসও প্রনিধানযোগ্য- অতপর তিনি কতিপয় হাদিস উল্লেখ করেন। তন্মধ্যে একটি এই, রাসুল স. বলেছেন সাবধান! তোমাদের কেউ যেন কখনো মৃত্যু কামনা না করে এবং মৃত্যু আসার আগে মৃত্যুর জন্য দু’য়া না করে। দ্বিতীয় এই যে তোমাদের কেউ যখন মরে যায় তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। তৃতীয় এই যে, প্রকৃত মোমেনের আয়ু তার মঙ্গলই বাড়িয়ে দেয় (অর্থাৎ মুমিন বেঁচে থাকাটা তার জন্য কল্যানকর। অতএব, কখনো মৃত্যু কামনা করা উচিত নয়)।
দু’য়ার প্রতিফল লাভের জন্য তাড়াহুড়া করা যাবে না : আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত আছে, রাসুল স. বলেছেন- “তোমাদের যে কোন ব্যক্তির দু’য়াই কবুল হয়ে থাকে যতক্ষণ না সে তাড়াহুড়া করে বলতে থাকে, দু’য়াতো করলাম অথচ আমার দু’য়া কবুল হয়নি।” (চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:২৭