দু’আ কবুল হওয়ার জন্য দোয়াকারীর ব্যক্তিগত কিছু গুণাবলি অর্জন করা দরকার। সেগুলো হল :
• পরনিন্দা পরিহার করা;
• রাসুল স. এর ওয়ারিশ তথা আলেম-ওলামার সমালোচনা পরিহার করা এবং কোনভাবেই তাদের নির্যাতন না করা; (মৌখিক বাক্যদ্বারা, শারিরীক নির্যাতন, হেয় বা অপদস্ত করা)
• হারাম খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা;
• সৃষ্টিকূলের প্রাণীদের অবৈধভাবে হত্যা না করা বা জীবে দয়া দেখানো;
• আল্লাহর পথের যাত্রীদের অর্থাৎ আলেমদের সাহচর্যে থাকা ও তাদের সাথে মহব্বতের সম্পর্ক রাখা;
পরনিন্দুকের দু’আ কবুল হয় না : হযরত মুসা আ. এর যমানায় একবার ভীষণ দুর্ভিক্ষকে কেন্দ্র করে বনু ইসরাইল সহ তিনি পরপর তিন দিন আল্লাহর দরবারে পানির জন্য দু’আ চাইলেন। বৃষ্টিপাততো হলোই না বরং মহান আল্লাহ তার প্রিয় নবীর কাছে ওহী পাঠালেন যে, হে মুসা আমি তোমার এবং তোমার সঙ্গীদের দু’আ কবুল করব না। কেননা, তোমাদের মধ্যে একজন পরনিন্দাকারী রয়েছে। হযরত মুসা আ. আল্লাহর নিকট আরজ করে বললেন, হে আল্লাহ কে সেই ব্যক্তি? আপনি তার নাম বলে দিন। আমি তাকে আমাদের দল থেকে বের করে দেব। আল্লাহ পাক ওহী পাঠালেন, হে মুসা! আমি তোমাদেরকে পরনিন্দা থেকে নিষেধ করেছি। এখন আমি নিজেই কি পরনিন্দুক হবো? মুসা আ. তখন সকলকে বললেন, তোমরা সকলে পরনিন্দা হতে তওবাহ কর এবং মহান আল্লাহর দিকে মুখ ফিরাও। মুসা আ. এর কথায় সকলে পরনিন্দা হতে তাওবাহ করলে আল্লাহ তাদের উপর বৃষ্টি পাঠালেন।
রাসুলের ওয়ারিশ তথা আলেম-ওলামা বিদ্বেষীদের দু’আ কবুল হয় না : হযরত সাঈদ বিন জোবায়ের বলেছেন, বনু ইসরাইল বংশীয় কোন এক শাসকের আমলে দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ায় তারা সকলে পানির জন্য প্রার্থনা করল। শাসক বললো, হয় আল্লাহ আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন নয়তো আমরা তার থেকে বদলা নেব। জিজ্ঞেস করা হলো, কিভাবে সম্ভব, তিনি তো আসমানে বিরাজ করছেন? শাসক বলল, আমরা তার বন্ধুবর্গ এবং অনুচরগণকে হত্যা করব। তাতেই তার থেকে বদলা নেওয়া হবে। কেননা এটা তার কাছে খুবই কষ্টের ব্যাপার হবে। এরপর আল্লাহ তাদের উপর বৃষ্টি পাঠালেন। হযরত ছুফিয়ান ছাওরী বলেছেন, আমি জানতে পেরেছি যে, বনু ইসরাইলগণ একাধারে সাতটি বছর ধরে দুর্ভিক্ষের শিকার ছিল। এমন কি তারা শেষ পর্যন্ত মৃত প্রাণী ভক্ষণ করতে লাগল এবং নিজেদের সন্তানদেরও মাংস খেতে শুরু করল। তারপর তারা পাহাড়ে গিয়ে ক্রন্দনরত অবস্থান আল্লাহর নিকট তাদের এ দুর্বিষহ অবস্থা হতে মুক্তির জন্য মিনতি জানাতে লাগল। আল্লাহ তাদের নবীর উপর ওহী নাযিল করলেন, যদি তোমরা আমার নিকট পায়ে হেঁটেও চলে আস এমনকি কোমড় ও তোমাদের হাড় মেঘের উপরও পৌছে যায় এবং তোমরা দু’আ করতে করতে তোমাদের রসনাকে সঞ্জীবিত কর তবু আমি তোমাদের দু’আ কবুল করব না এবং তোমাদের ক্রন্দনে আমার মনে দয়ার উদ্রেক হবে না, যে পর্যন্ত না তোমরা যাদের উপর অত্যাচার করেছ তাদের ক্ষতিপূরণ আদায় কর। আল্লাহ পাকের এই এরশাদ শুনে তারা অতি তাড়াতাড়ি তাই করল। আর সাথে সাথে সেদিনই তাদের বৃষ্টিপাত হল।
হারাম খাদ্য আহারকারীর দু’আ কবুল হয় না : মালেক বিন দীনার রহ. বলেন,- বনু ইসরাইলের উপর দুর্ভিক্ষের কারণে তারা আল্লাহর দরবারে দু’আ করল। আল্লাহ নবীর উপর ওহী নাযিল করলেন, হে নবি! তুমি বনু ইসরাইলদেরকে বল, তারা তাদের শরীরকে অপবিত্র করে রেখেছিল এবং হারাম খাদ্য দ্বারা উদর পুর্তি করতে অভ্যস্ত হয়েছিল; এবং আমার নিকট তারা এমন হস্ত উত্তোলন করছে যদ্বারা তারা বহু হারাম রক্তপাত ঘটিয়েছে যার ফলে তারা আমার ক্রোধের মাত্রা বৃদ্ধি করে দিয়েছে এবং তারা আমার নিকট থেকে অনেক দূরে ছিটকে পড়েছে।
সৃষ্টিকূলের প্রাণীদের অবৈধভাবে হত্যা না করা, কেননা অবোধ জীবের দু’আ আল্লাহ কবুল করেন : আবু বকর সিদ্দীক রা. বলেন, একবার হযরত সোলাইমান আ. পানির জন্য দু’আ করতে বের হয়ে এসে একটি পীপিলিকার নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় পীপিলিকা তার পা আকাশের দিকে তুলে বলতে লাগল, হে মাবুদ! আমরা তোমার সৃষ্টির মধ্যে একটা ক্ষুদ্র প্রাণী। তবু তোমার রিযিকের জন্য আমাদেরও প্রয়োজন রয়েছে। তুমি অন্যের জন্য আমাদেরকে ধ্বংস করো না। সোলায়মান আ. তখন বললেন, যাও এবার তোমরা তোমাদের দু’য়ায় নয় বরং অন্যের দু’আ দ্বারা পানি পেয়ে যাবে।
আলেমদের সাহচর্য গ্রহণকারীদের দু’আ কবুল হয় : হযরত দাউদ আ. এর যামানায় লোকদের উপর একবার অনাবৃষ্টি দেখা দিল। লোকজন তিনজন আলেমকে নিয়ে বের হয়ে আসল এবং আল্লাহর নিকট দু’আ চাইল। একজন আলেম বলল, হে মাবুদ! তুমি তাওরাতে এরশাদ করেছ, যারা গুণাহগার তাদেরকে ক্ষমা করবে। আমরা আমাদের আত্নার উপর অত্যাচার করেছি। তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর। দ্বিতীয় আলিম বলল, হে মাবুদ! তুমি আমাদের গোলামদেরকে মুক্ত করে দেয়ার জন্য তাওরাতে নির্দেশ দিয়েছ। আমরা তোমার গেলাম বৈ কি! তুমি আমাদেরকে মুক্ত করে দাও। তৃতীয় আলিম বলল, হে মাবুদ! তুমি তোমার তাওরাতে এরশাদ করেছ, তোমাদের দরজায় কোন মিসকীন উপস্থিত হলে তাকে তাড়িয়ে দিও না। আমরা তোমার দরজায় মিসকীন হিসাবে উপস্থিত হয়েছি। আমাদের প্রার্থনা নামঞ্জুর করো না। তিনজন আলেমের এই ধরনের প্রার্থনার সাথে সাথে আল্লাহ তাদের উপর বৃষ্টি দান করলেন।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৩৭