রাসুল স. ছিলেন মহান আল্লাহর অসীম দয়ার প্রতিবিম্ব
মহান আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্তির সহজ তরিকা হলো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ অনুসরণ করা। এর কোন বিকল্প হতে পারে না। মহান আল্লাহ পাক যেমন দয়ালু তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামও তেমনি দয়ালু। আল্লাহ পাকের দয়ার প্রতিবিম্ব ছিলেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম। তার কাছে যখন কোন ব্যক্তি মোসাফাহা (হ্যান্ডশেক) করার জন্য হাত বাড়িয়ে দিতেন তিনি হাত ছেড়ে দিতেন না ঐ পর্যন্ত যতক্ষণ না আগন্তুক তার হাত ছাড়িয়ে নিতো।
যেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম দুনীয়ার জিন্দেগিতে এমন মহান ছিলেন কাল কেয়ামতের মাঠে উম্মতের প্রতি তিনি ঠিক এমন ব্যবহারই করবেন-বিপরীত নয়। কিন্তু আমাদের শুধু মাত্র তার সুন্নতের আমল যথাযথভাবে করে যেতে হতে।
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন অগণিত গুণে গুনান্বিত। তিনি নিজে থেকে কারো প্রতি কিছু চাপিয়ে দেন না। বান্দা যতক্ষণ মহান আল্লাহর প্রতি তার হস্ত প্রসারিত করে রাখে ততক্ষণ মহান আল্লাহ তার কুদরতি হাত সম্প্রসারিত করে রাখেন। বান্দা তার প্রতি এক হাত এগিয়ে আসলে মহান আল্লাহ দশ হাত এগিয়ে আসেন। বান্দা গুণাহের নাপাকিতে ডুবে থাকলেও তার প্রতি ফিরে আসার সাথে সাথেই তিনি বান্দাকে গুণাহ হতে পানাহ দান করে স্বচ্ছ করে তুলেন। দুনীয়ার জীবনে মহান আল্লাহ যেমন তার সৃষ্টি জীবের প্রতি পরম অনুগ্রহশীল তেমনি আখেরাতের জিন্দেগীতেও তিনি সেই রকম অনুগ্রহশীল ও ক্ষমাশীল আচরণই করবেন। আমাদের শুধু নবী স. এর আদর্শ মেনে চলতে হবে-ব্যাস, কাজ এটুকুই।
আল্লাহপাক বড় মেহেরবান ও দয়ালু। বান্দার প্রতি আপন হাত প্রসারিত করে তা আবার সঙ্কুচিত করেন না। জৈনক কবি বলেছেন “ যার ইচ্ছা আসুক, যার ইচ্ছা যাক, এই দরবারে বাধা প্রদানকারী কেহ নাই।” বান্দা যদি মহান আল্লাহর দিক হতে হাত টেনে নেয় তবে তিনিও হাট টেনে নিবেন। কারন মহান আল্লাহ জোর করে কারো প্রতি নেয়ামতের বোঝা চাপিয়ে দেন না। আল্লাহর কোন ঠেকা নাই যে, আমরা না চাইলেও তিনি আমাদেরকে নেয়ামত দিতেই থাকবেন। মহান আল্লাহ পবিত্র কুরানের দশম পারায় সূরা তওবার বাহাত্তর নং আয়াতের শেষাংশে বলেন, “.... আল্লাহর সন্তুষ্টিহ হলো সবচেয়ে বড় নেয়ামত....।” মহান আল্লাহর নেয়ামতকে অবিরত ধারায় পেতে (সন্তুষ্টি অর্জন করতে) বান্দাকেই এগিয়ে আসতে হবে মহান রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এর পদাঙ্ক অনুসরনের মাধ্যমে।
মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের পরে তার গোলামি হতে বিরত হয়ে পড়া দুর্ভাগ্যের কারণ বটে। আমাদের সেই প্রিয়জন যে প্রতিদিন সময় করে সাক্ষাত লাভ করতো, হঠাৎ করে যদি সাক্ষাত বন্ধ করে দেয় আমরা তার প্রতি রুষ্ঠ হয়ে পড়ি। মহান আল্লাহর ব্যাপারেও তাই। এবাদতগুজার যদি মহান আল্লাহর এবাদত হঠাৎ করে বন্ধ করে দেন তাহলে আল্লাহও তার প্রতি রুষ্ঠ হন। বান্দা ও প্রভুর মধ্যে সম্পর্কোচ্ছেদ ঘটে। তাই যে কোন বিপদ-আপদে, প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হয়ে মহান প্রভুর সান্নিধ্য হতে বিমুখ হওয়া উচিত নয়। কেননা মহান আল্লাহ তার প্রিয় গোলামকে বিপদ দিয়েই পরীক্ষা করে দেখতে চান।
একদা হযরত মুসা আ. চলার পথে একটি পাথরকে ক্রন্দনরত দেখতে পেয়ে কান্নার কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। পাথর উত্তর দিল, পাথর দোযখে যাবার বিষয়টি যখন হতে আমি জেনেছি “ ওয়াক্বুদুহান্নাস ওয়াল হিজারাত।” তখন হতে আমি ক্রন্দনরত আছি। মহান আল্লাহর দরবারে মুসা আ. দোয়া করলেন, হে আল্লাহ! এই পাথরকে আপনি দোযখে দিবেন না। আল্লাহ মুসা আ. এর দোয়া কবুল করলেন। ফেরার পথে সেই পাথরকে নবি মুসা আ. পুনরায় কান্নারত দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, মহান আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন তাহলে কেন কান্না করছো ? পাথর উত্তর দিল সাময়িকভাবে কান্না থামালেও যেই মহান বন্ধুর বদৌলতে আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করেছেন তাহলে সেই বন্ধুকে (কান্নাকে) ভুলে থাকি কেন?
আল্লাহর পথের যাত্রীগণ! মহান আল্লাহর গোলামীর দ্বারা যদি আত্নার সন্তুষ্টি ও শান্তি এবং অদৃশ্য সুখ লাভ হয়ে থাকে তবে সেই মুজাহাদা ও চেষ্টা তদবির ত্যাগ করা কেন? বরং হাজারো দুঃখ-কষ্টে কোন মুহুর্তেই তার প্রেম থেকে বিরত ও গাফেল না হওয়াই সফলতার লক্ষণ।
মহান আল্লাহ আমাদেরকে রাসুল স. এর আদর্শ অনুসরনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার তাওফিক দিন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:৩৪