মহামারি কোভিড-19 থেকে হেফাজত থাকার যে কয়টি ব্যক্তিগত চেষ্টারকথা বলা হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম হলো-
নিরাপদ শারিরীক দূরুত্ব বজায় রাখা;
কমপক্ষে 3 ফুট দূরে অবস্থান;
সর্বাবস্থায় মুখে মাস্ক পরিধান করা;
হ্যান্ড সেনিটাইজার ব্যবহার করা’
সাবান পানি দিয়ে ঘনঘন হাত ধৌত করা’
অসুস্থ ব্যক্তির সংস্পর্শে না আসা বা না থাকা ইত্যাদি।
প্রাথমিক অবস্থায় দেশের বিভিন্ন স্থান লকডাউন করাসহ সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি, আপামর জনসাধারণকে সচেতন করা, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ত্রান সহযোগিতা অব্যাহত ছিল। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সমূহ বন্ধ ঘোষণা ও প্রণোদনা দানের মাধ্যমে ক্ষতিপুরণের জন্য দায়িত্বশীল মহল সাধ্যমত চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিলেন এবং রাখছেন।
প্রথম কয়েকমাস ঘর বন্ধি থেকে এক রকম দুর্ভোগ সহ্য করছিলাম। নিষেধাজ্ঞার কারণে পাঁচ ওয়াক্ত নামায (রমযান সহ) ঘরের ভিতরেই পালন করেছিলাম। সাপ্তাহে একদিন বাজারে গিয়ে পুরো সাপ্তাহের বাজার করে আসা হতো। এটাও ছিল একরকম দুর্বিসহ অনুভূতি। কিন্তু গত 31 মে হতে সরকারি নির্দেশনায় কর্মস্থলে উপস্থিতি অব্যাহত রাখতে গিয়ে নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম। হাটে-বাজারে-দোকানে, পথে-প্রান্তরে কোথাও মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরুত্ব-মসজিদ ছাড়া। কেন? শুধু মসজিদে কেন সামাজিক দূরুত্ব মানা হচ্ছে আর অন্যন্য জায়গায় নয় কেন?
মসজিদে কোন একজন ব্যক্তি একটু খক খক করে কেশে উঠলে অন্যান্য মুসল্লিরা তার দিকে সন্দেহের নজরে তাকায়, পাশাপাশি দূরুত্ব তিন ফুটেরও বেশি, এক কাতার থেকে অপর কাতারের ফাকা বিস্তর (মাঝখানে এক কাতার ফাঁকা), সকলের মুখ মাস্ক পড়া, ঈমাম সাহেব জামাত শুরুর পারম্ভে বলে দিচ্ছেন- “ কাতার সোজা করুন, গিড়ার নিচে লুঙ্গি-পায়জামা থাকলে উঠিয়ে পড়ুন, মোবাইল ফোন বন্ধ রাখুন, মুখে মাস্ক পরিধান করুন, দূরুত্ব বজায় রেখে কাতার বন্দি হোন।” মসজিদের প্রবেশ মুখে স্যানিটাইজার স্প্রে করার ব্যবস্থা ও অজুখানায় হাত ধৌত করার জন্য সাবানের ব্যবস্থা করা আছে প্রত্যেক মসজিদে। সেখানে মুসল্লিরা সাধ্যমতো সর্বোচ্চ সতর্কতা ও শারিরীক দূরুত্ব বজায় রেখে ইবাদত করছে।
পক্ষান্তরে হাটে-বাজারে-দোকানে, অফিসে-কর্মস্থলে কোথাও মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরুত্ব। শারিরীক দূরুত্ব বজায় রেখে, সর্বোচ্চ সতর্কতা ও কঠোর নিয়মের মধ্যে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আদালত চালানোর কথা বলা হলেও আদালত পাড়ায় বিজ্ঞ আইনজীবী ও বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না তার প্রতিফলন। কিছু কিছু বিজ্ঞ আইনজীবী ভার্চুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে একচ্যুয়াল পদ্ধতির পুনরায় চালু দাবি করেছেন। আইন পেশায় ধ্বস ও বিচার প্রার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবের যৌক্তিকতা দেখিয়ে তাদের এই দাবী। দোকানদারদের মাঝে নেই নিয়ম মানার কোন তাড়া। এসুযোগে পরিচ্ছন্নতা সামগ্রীর দাম দ্বিগুণ বা তারো বেশি নিয়ে ব্যবসায় রমরমা পজিশন করে নিচ্ছেন চিকিৎসার সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ । চিকিৎসক যাদের চিনতাম তাদের কেউ এখন চেম্বার পর্যন্ত করছেন না। সাধারণ সমস্যা নিয়ে ডিসপেন্সারিতে কেউ রক্তচাপ মাপতে আসলে তার রক্তচাপ পর্যন্ত মেপে দেওয়া হচ্ছে না। মনে হয় করোনা সাথে সাথে খেয়ে ফেলবে। মরণের ভয়ে চিকিৎকরা মোবাইল ফোনও বন্ধ রাখছেন। আর যারা চিকিৎসা করছেন তাদের কেউ কেউ রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে মিথ্যা রিপোর্টের রমরমা ব্যবসা জুড়ে দিয়েছেন। বাধ্য হয়ে ডিসপেন্সারি হতে ঔষধ কিনে নিয়ে সেবন করতে হচ্ছে। এঅবস্থা শুধু আমার নয়-আপনাদেরও। অনিশ্চিত যাত্রাপথে আমাদের ভূখন্ড। সর্বত্র হাহাকার, ত্রাহিনাহি অবস্থা অর্থনীতির। যেসময় কায়মোন বাক্যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা আর পরিস্থিতি হতে উত্তোরনের রাস্তা প্রার্থনা করা উচিত সেসময় কেউ কেউ মানুষের জীবন নিয়ে লুডু খেলছে। অভিসাপ দেওয়া রাসুলের স: সুন্নত নয়। নাহলে তাই দিতাম।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ২:২৭