আমাদের ব্লগ ও আমরা
ব্লগ নাকি ওয়ায-নসিহতের জায়গা নয়- “ একজন বিশিষ্ট ব্লগার” এর বয়ান (চূড়ান্ত পর্ব)
পরকালের উপাদানসমূহ ক্ষুদ্র জ্ঞানে বুঝে না আসা স্বাভাবিক : দেখি না, তাই বিশ্বাসও করি না। যারা বলেন তাদের নিয়ে কোন বিতর্ক নয়। আলটিমেটলি যার যার হিসাব তাকেই দিতে হবে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বিতর্ক এড়ানো ভাল। আসলে এরা সবই বুঝে এবং সবই দেখে। কিন্তু তা চর্ম চোখে-অন্তরের চোখে নয়। চাক্ষুষ বস্তু মগজের ক্ষুধা মেটায় কিন্তু অন্তর দিয়ে যা দেখা হয় তা পরকালের ক্ষুধা মেটায়। আখেরাতের প্রতি দৃষ্টিহীনদের বর্ণনা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন– “আল্লাহ তাদের অন্তর এবং কানসমূহ বন্ধ করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখসমূহ পর্দায় ঢেকে দিয়েছেন, আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি।” (বাকারা-07)
জান্নাতের নাজ-নেয়ামত, হুর-গেলমান, বাগান ও সেগুলোর দৈর্ঘ্য-প্রস্থ, একই ফলের বিভিন্ন রকম স্বাদ হওয়ার বিষয় অনেকের কাছে গালগল্প, মুখরোচক গল্প মনে হলেও প্রকৃত পক্ষে তা নয়। এই শ্রেণীর মানুষ দুনীয়ার মোহে আকর্ষিত হয়ে জান্নাতের নেয়ামত সম্পর্কে নেতিবাচক বাক্যব্যয় করে থাকে। তারা কি দেখেনা যে, ইলিশ মাছের মাথার স্বাদ এক রকম, পিঠের স্বাদ অন্য রকম, মাছের লেজের স্বাদ এক রকম আবার মাছের পেটের ভিতরে থাকা ডিমের স্বাদ ভিন্ন রকম। তারা কি দেখেনা যে, কাঁচা ফলে এক স্বাদ, পাকলে তা অন্য রকম স্বাদ। তারা কি দেখেনা একই ঔষধ সেবনে একজন সুস্থ হয় কিন্তু অপর একজনের দেহে ঐ ঔষধ কার্যকরী হয় না। তারা কি দেখেনা একই সূর্যের আলোয় দুনীয়াবাসী আলোকিত হয়। মহান আল্রাহ যদি একই মাছের বিভিন্ন অংশে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ দিতে পারেন, একই ফলে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ দিতে পারেন তাহলে তিনি কি জান্নাতের নায-নেয়ামতের স্বাদ ভিন্ন ভিন্ন দিতে পারবেন না।
বিদ্রুপাত্বক প্রশ্ন, উত্তর জানতে নয় বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে করা হয় : জান্নাতের হুর বিষয়ে লেখাকে কেন্দ্র করে কেউ একজন বলেছেন জান্নাতে তার হুর লাগবে না, বিবি-বাচ্চা আর সামু থাকলে হবে (আল্লাহ তাকে ক্ষমা করুন)। অপরজন বলেছেন জান্নাতী পুরুষগণ যদি 70 টি হুর পেয়ে থাকে তবে জান্নাতি নারীরা কয়জন পুরুষ লাভ করবেন? অপর একজন প্রশ্ন করেছেন আফ্রিকার যে নিগ্রো সবচেয়ে কালো তার বিষয়ে। অপর একজন দামি ব্লগার বলেছেন ব্লগ নাকি ওয়াজ-নছিহত করার জায়গা না (শুধু মেজর জিয়া আর বঙ্গবন্ধু কন্যার গিবত প্রচারের জায়গা) ।
আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত একজন লোক যখন সুস্থ মস্তিষ্কে পকেটের টাকা খরচ করে মদপান করত: মাতলামি করে তখন তাকে আমরা বিকৃত মস্তিষ্কের লোক বলে থাকি। পরিবার-সমাজ, দেশ ও দশের স্বার্থে এদের সংশ্রব থেকে দূরে থাকাকে সবাই সমর্থন করেন। অনুরূপভাবে উপরে উল্লেখিত প্রশ্ন কর্তাগণকে আমরা বিকৃত মস্তিষ্কের অধিকারী বললে যথার্থ মূল্যায়নই হবে বলে জ্ঞান করি। কোন ঈমানদার ব্যক্তি জান্নাতের লোভে মহান আল্লাহর ইবাদত করে না বরং মহান আল্লাহর হুকুম পালন করার জন্যই ইবাদত করে। পরকালে আল্লাহ কি দিয়ে পুরুস্কৃত করবেন সেটা এবাদতগুজার ব্যক্তি তার মাথায় আনেন না যদিও আল্লাহ তায়ালা এর ইঙ্গিত দিয়েছেন কোরআনের অসংখ্য আয়াতে। ঈমানদারের ইবাদতের উদ্দেশ্য জান্নাতের জন্য যতটুকু তার চেয়ে বেশী হলো জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য এবং সবচেয়ে বড় পুরুস্কার মহান আল্লাহর দিদার লাভের জন্য। জান্নাত না জুটলে কোন সমস্যা নাই তবে আল্লাহ না করুন যদি জাহান্নামের ফায়সলা হয়ে বসে তবে কি উপায় হবে- এটা কি ভাবনার দাবি রাখে না? জাহান্নামের একটা মুহুর্তের আযাবও কি সহ্য করা সম্ভব হবে? আল্লাহ ক্ষমা করুন। জৈনক বুজুর্গ বলেছিলেন- “আমি জান্নাতের উপযুক্ত নই তাই জান্নাতের জন্য নয় বরং জাহান্নাম থেকে বাঁচতে আল্লাহর গোলামী করি।” সুতরাং বিবি-বাচ্চা আর সামু থাকবে কিনা সেই চিন্তা বাদ দিয়ে কোন পথে রওয়ানা দিচ্ছেন সেটা ভাবুন-কাজে লাগবে।
জান্নাতী পুরুষকে 70 জন হুর দেয়া হলে জান্নাতী নারীকে কয়টি দেয়া হবে মর্মে উদ্ভট প্রশ্নকারীর হেদায়েত প্রার্থনা করি। দুনীয়ার জীবনে একজন পুরুষের বৈধমতে একাধিক বিয়ে করা সিদ্ধ। পৃথিবীতে এমন কোন দেশ নাই যেখানে আইন আছে একজন পুরুষ একের অধিক বিয়ে করা যাবে না। যেভাবেই হোক (শর্তের অধিনে হলেও) একের অধিক বিয়ে করা পুরুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে বৈধ। কিন্তু একজন নারী একাধিক বিয়ে করা অর্থাৎ একই সময় একাধিক স্বামীর সংসার করা কোন দেশ-কাল-সমাজে চালু নাই (যদি থেকে থাকেও সেটা বর্বর বলেই গণ্য হবে)। দুনীয়ার জীবনে একজন পুরুষ একাধিক বিয়ে করা সিদ্ধ একজন নারী কর্তৃক একাধিক বিয়ে নয়। একজন পুরুষের একাধিক স্ত্রী থাকলেও সন্তানের পিতৃপরিচয় দিতে কোন সমস্যা হয়না কিন্তু এর বিপরীত হলে সমস্যা কেমন হবে তা সহজেই অনুমেয়। তেমনি জান্নাতি জীবনেও একাধিক হুর একজন জান্নাতি পুরুষের জন্য সিদ্ধ, একজন জান্নাতী নারীর জন্য একাধিক পুরুষ নয়। সাধারণ এই বোধটুকু যাদের মাথায় ধরে না তারা নাকি শিক্ষিত!
আফ্রিকার সবচেয়ে কালো জান্নাতি পুরুষের বিষয়ে কি সিদ্ধান্ত হবে এ বিষয়ে প্রশ্ন করে একজন তার ইসলাম বিদ্বেষী চাতুরতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বোধহয় দেখেননি মাসজিদে নামাযে প্রথম কাতারে ইমামের পিছনে রিকসাওয়ালা, ফকির, মিসকিন দাঁড়ালেও ধনীর দুলাল তাকে পিছন থেকে টেনে ধরতে পারে না। এটা মসজিদ, আল্লাহর ঘর- ধনী-গরীব সবাই তার মেহমান। দুনীয়ায় আল্লাহর মেহমান খানায় মেহমানের জন্য যদি এমন ব্যবহার হয়ে থাকে তাহলে জান্নাতে কি হবে সেটা বুঝাই যাচ্ছে। মহান আল্লাহর কাছে কালো-সাদা, ধনী-গরিবের কোন ভেদাভেদ নেই, আছে তাক্বওয়ার প্রশ্ন।
ব্লগ নাকি ওয়াজ-নছিহতের জায়গা নয়। ইনি সব সময় জেনারেল জিয়া আর বঙ্গবন্ধু কন্যার গিবত নিয়ে পড়ে থাকেন। ওনার কাছে মনে হয় ব্লগ রাজনৈতিক উন্মাদনা প্রকাশের জায়গা। ঠান্ডা মেজাজি এই ভদ্র লোক ম্যাও প্যাও নামক এক শব্দের আবিস্কারক। খোচায় খোচায় কথা কওয়া যার অভ্যাস। ব্লগে যদি সব চর্চা হতে পারে তবে ধর্ম কেন হতে পারে না কে জানে? ভদ্র লোক হয়তো এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে ব্লগ লিখে ফেলতে পারেন। ওয়াজ-নসিহত যদি কেউ না শুনতে চায় শুনবেন না, সমস্যা কোথায়? কিন্তু যারা জানে তাদের দায়িত্ব যারা জানেন না তাদের জানিয়ে দেয়া। চাই সেটা দুনীয়ার কল্যানকর কাজ হোক বা আখেরাতের। ব্লগে যদি রাজনৈতিক আলোচনা হতে পারে, অর্থনীতি-সমাজনীতি নিয়ে কথা চলতে পারে তাহলে ওয়াজ-নসিহতে সমস্যা কোথায়? বরং ভাল, এক্ষেত্রে ব্লগেও ওয়াজ-নসিহত হতে পারে-কোন সমস্যা নাই।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই জুলাই, ২০২০ সকাল ১০:২৫