আমাদের ব্লগ ও আমরা
ব্লগ নাকি ওয়ায-নসিহতের জায়গা নয়- “ একজন বিশিষ্ট ব্লগার” এর বয়ান (তিন)
পরকালে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীর কাজে ফলাফল কেন ভিন্ন হবে : এখানে বিবেক শুদ্ধ একটি মুখরোচক প্রশ্ন উদিত হতে পারে যে, যারা আস্তিক তথা পরকালে বিশ্বাসী আর যারা নয় তাদের প্রত্যেকের কাজের ফলও যদি দেয়া হয়ে থাকবে তাহলে, পরকালে বিশ্বাসীকে কেন জান্নাত দেয়া হবে আর পরকালে অবিশ্বাসীকে কেন জান্নাত দেয়া হবে না। অথচ দুনীয়ার জীবনে উভয় দলইতো আল্লাহর আদেশ মেনে কাজ করেছে তথা মানবতার জন্য কাজ করেছে।
আসুন উত্তর খুজে দেখি :[/sb] মুসলমানের আক্বিদা হলো, কাজের ফলাফল কাজ হতে উদ্ভাবিত আর কাজ উদ্ভাবিত ঈমান তথা বিশ্বাস হতে। ঈমান সেই অদৃশ্য শক্তির নাম যা দৃশ্যমান না হওয়া স্বত্বেও তাতে বিশ্বাস স্থাপন করা হয়ে থাকে। এই দিকে ইঙ্গিত দিয়েই মহান রাব্বুল আলামিন সূরা বাক্বারার প্রথম দিকে না দেখা বিষয়গুলোর প্রতি ঈমান আনার কথা বলেছেন। একই সাথে যেখানে আল্লাহ তায়ালা ভাল কাজ করার কথা বলেছেন সেখানে আগে ঈমান আনার কথা বলেছেন। জান্নাত-জাহান্নাম ও তাতে রক্ষিত মজা-সাজা না দেখেও ঈমানদার ভাল কাজ করে ও মন্দ কাজ হতে বিরত থাকে এবং মানবিক আচরণ করে। পক্ষান্তরে যারা সৃষ্টিকর্তায় কিংবা পরকালে বিশ্বাসী নয় তারা বরং দুনীয়ার ফলাফল প্রত্যক্ষ করেই মানবিক আচরণ করে, দুনীয়ার আইনকে শ্রদ্ধা করে হিতকর কাজ করে এবং অহিতকর কাজ হতে দূরে থাকে। শুধুমাত্র পরকালে বিশ্বাস ও এতদসংক্রান্ত বিষয়াবলিতে বিশ্বাস স্থাপন করায় এবং তদানুযায়ী কাজ করায় একশ্রেণী জান্নাতের অধিকারী হবে এবং অপর শ্রেণী ঈমানহীন হওয়ায় ভাল কাজ করা স্বত্বেও জান্নাত লাভ করতে অক্ষম হবে।
কিছুটা অসামঞ্জস্যতা, গভীর ভাবনার উদয় হয় : বাস্তব জীবনে আমরা দেখে থাকি যারা ভাল কাজ করে তারা সতত দু:খ-কষ্টে দিনাতিপাত করে। কষ্ট-দু:খ যেন তাদের পিছুই ছাড়তে চায় না। পক্ষান্তরে এক শ্রেণীর মানুষ যারা হামেশা পরের হক্ব নষ্ট করার সুযোগে ব্যস্ত, যাদের হিংসা-ক্রোধের অনলে পুড়ে যায় পরিবার-সমাজ, কখনো কখনো পুরো জাতি এই খারাব লোকগুলোর জন্য ভোগান্তির শিকার হয়- এরা দিব্যি সুখে-আরামে দিনাতিপাত করছে। ভাল লোক, সৎ লোক এদের কাছে সর্বদা হাসি-ঠাট্টার পাত্রে পরিগনিত হচ্ছে। এটা ভাবনার বিষয়। এই ভাবনা হতে একজন আলোর পথের যাত্রী খুজে পায় সঠিক মনজিলে মকসুদ। আর ঈমানহীন হারায় সঠিক পথের দিশা।
পুড়ে পুড়ে খাটি হয় সোনাগুলো রোজ
ভেবি কি দেখেছ মন, নিয়েছ কি খোজ।
হ্যা, সোনাগুলো প্রতিনিয়ত পুড়েই খাটি হয়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে শ্রমিক হীরার সন্ধানে খনিতে ডুব দেয় সেইতো সেরাটা পাওয়ার উপযুক্ত, মৌমাছির হুল ফুটানোর যন্ত্রনা ভুলে যে মৌয়াল মৌচাকে হাত দেয় সেইতো পায় খাঁটি মধু। দু:খ-কষ্টে সেই তাড়িত হয়, যে যন্ত্রনাকাতর হয়েও মহান প্রভুর প্রেমে ডুবে থাকে। পঙ্কিলতার এই দুনীয়ায় জানা না জানা ছোট-বড়, ইচ্ছা-অনিচ্ছার কসুর মহান আল্লাহ তায়ালা কষ্টের বিনিময়ে ক্ষমা করে দেন এবং বদ আমলের ডাইরী খালি করে দেন। কষ্ট-যন্ত্রনা তার দুনীয়ার জীবনে পাপের কাফফারা হয়ে যায়। অথচ যে পরকালে বিশ্বাসী নয় তাকে দুনীয়ার শান-শওকতে মগ্ন রেখে তার ভাল কাজের পুরুস্কার আল্লাহ তায়ালা দুনীয়ার জীবনেই দিয়ে দেন যেন আখেরাতে তাকে কিছুই দিতে না হয়। তার ভাল কাজের ফলাফল সে দুনীয়াতেই আরামের জিন্দেগী ভোগ করার মাধ্যমে পেয়ে থাকে-আখেরাতে তার জন্য কিছুই নাই-জাহান্নাম ছাড়া। আল্লাহর হাবিব (স.) বলেন- “ দুনীয়া মোমেনের জন্য কয়েদখানা আর কাফেরের জন্য জান্নাত।” সুতরাং হে পরকালের পথের যাত্রী, বিভ্রান্ত হওয়ার কোন দরকার নাই। এ দুনীয়া ক্ষণস্থায়ী, কাফেরের বিলাসবহুল জীবন দেখে আফসোসের কোন কারণ নাই। মহান আল্লাহ এর চেয়ে উত্তম প্রতিদান তোমার জন্য রেখেছেন। আজ তুমি এদের দেখে নিশ্বাস ফেলছো কাল তারা তোমাকে দেখে হায় হায় করবে, দীর্ঘশ্বাস ফেলবে। আফসোসে তারা নিজেদের হাত কামড়ে মাংস তুলে নেবে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১২:১০