সহকর্মী বন্ধু শান্তির প্রয়াত বাবা মার সমাধির উপর তৈরি নূতন মঠের উদ্বোধন উপলক্ষে কয়েক দিন আগে (২১-১০-২০১১) মানিকগঞ্জের বাবুরহাটি যাচ্ছিলাম। সঙ্গে ছিল আর এক বন্ধু সহকর্মী লতিফ এবং শান্তির অন্যান্য আত্মীয় স্বজন। দুইটা মাইক্রোবাস এবং একটা কারে আমরা সকাল আটটায় রওনা হলাম। বাবুরহাটি মানিকগঞ্জে হলেও গাড়ী নিয়ে গেলে যেতে হয় ঢাকার নবাবগঞ্জের কলাকোপা বান্দুরা হয়ে। বাবুরহাটিতে এর আগেও কয়েকবার গিয়েছি। বাবুরহাটি শন্তির ঠিক গ্রামের বাড়ী না, আসলে মামার বাড়ী। শান্তিদের গ্রামের বাড়ী তিনবার পদ্মায় ভেঙ্গে নিয়ে গেলে ওরা বাবুর হাটি চলে আসে। এখানেই ওর বাবা মা মারা গিয়েছেন। আমার বারবার বাবুরহাটি যাবার পিছনে মূল কারণ বাবুরহাটি গ্রামটা এখনো গ্রামই আছে। এখন আর গ্রামে গেলে গ্রামের স্বাদ পাইনা। এটাচ্ড বাথ রুম, টাইলসের রুম বাথ রুম, রান্না ঘরে সিলিন্ডার গ্যাস, ফ্রিজ টিভি ডিভিডি প্লেয়ার সবই আছে। খাবার দাবারও পাল্টিয়েছে পিঠা পুলির বদলে কোক চিপস এসে গেছে। সে হিসাবে বাবুরহাটি গ্রামটা এখনো অনেকটাই গ্রাম রয়ে গেছে। পদ্মা নদীর পাড়ের এই গ্রামে নগরায়নএর ছোঁয়া এখনো অতটা লাগেনি। পদ্মা ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এই গ্রামের প্রান্তে এসে থেমে গেছে।
রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ, গত বর্ষায় নষ্ট হবার পর এখনো ঠিক হয় নি। গাড়ী বেশী জোরে চলতে পারছিল না। কেরানীগঞ্জ পার হবার পরে রাস্তা বেশ কিছুটা ভাল পাওয়ায় ড্রাইভার বেশ জোরেই গাড়ী চালাচ্ছিল। রাস্তার দুপাশে গাছের সারি, ছায়া ঢাকা পথ, আমারা গাড়ীর সবাই খুব হৈচৈ করছিলাম, আমি সামনের সিটে বসেছিলাম। হটাৎ দেখি সামনে প্রায় একশ গজ দুরে একটা মা বেজী রাস্তা পার হবার জন্য এপাশ থেকে ওপাশ যাচ্ছিল পিছনে পিছনে একটা ছোট বাচ্চা। মা বেজীটা রাস্তা পার হয়ে গিয়েছে বাচ্চাটা রাস্তার মাঝখানে। হটাৎ বাচ্চাটা গাড়ীর শব্দে বা গাড়ী দেখে ভ্যাবাচেকা খেয়ে রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে পড়লো। আমাদের গাড়ী দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, বাচ্চা বেজীটার মৃত্যু চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি, সহসা দেখি মা বেজীটা নিজের জীবনের পরোয়া না করে আবার রাস্তার উপর উঠে এসে বাচ্চাটার ঘাড়ে মুখ দিয়ে ধরে রাস্তা পার হতে শুরু করলো, আমদের ড্রাইভার গাড়ী ব্রেক করায় গাড়ীর গতি একটু কমলো। কেবল মাত্র ভাগ্যের কারনে বেজীটা বাচ্চাসহ জীবন নিয়ে রাস্তা পার হতে পারলো। সন্তানের জন্য কোন মায়েরাই (মানুষ অথবা জীবজন্তু) যে নিজের জীবন বিপন্ন করতে সামান্য দ্বিধা করেনা নিজের চোখে দেখলাম।