নিরবও নিভৃতে শ্রান্ত দিন শেষে ক্লান্ত হাবু এখনও মধ্যরাতে অস্থির হয়ে নিজের উপাধানকে চোখের জ্বলে ভাসিয়ে দেয় । ভাসাবেইনা বা কেন – মিতালী নামটি যে ওর হৃদয়ও মন্দিরের স্থান সংকটে থাকা ছোট্ট ডায়রীর একমাএ পাতায় গেথে আছে । হাজারও স্মৃতির গভীরে ডুবে থাকা হাহাকার করা ভেতরে হাবুর যখন মিতালীকে মনে পড়ে নিজের অজান্তেই এখনও প্রথম দেখার সেই দৃশ্যগুলো বর্ণনা করতে থাকে ।
কোন এক ঈদের আগে ফুটন্ত প্রেমের বহিঃপ্রকাশ করার জন্য মিতালীর মোবাইল থেকে আসা কলের বাজনা বেজে ওঠে হাবুর মোবাইল –এ ।
মিতালীঃ নিজের অজান্তেই তোমার আস্যের ছবি আমি আমার হৃদয়ে এঁকেছি , সেটাকে বাস্তবে মিলিয়ে দেখতে চাই ।
হাবুঃ তো চলে এসো-না……তাহলেই তো মিলিয়ে নিতে পারবে ।
মিতালীঃ তাহলে আসছি ………।
হাবুঃ আচ্ছা ঈদের আগে আসছো…তো……
মিতালীঃ তো কি??
হাবুঃ ঈদ মোবারক করবা তো তুমি আমার সাথে …????
মিতালীঃ দেখা যাক, আসি তো আগে …
হাবুঃ অপেক্ষায় রইলাম তোমার………
দৃশ্যের বাইরের এমনই অদৃশ্য শক্তি সম্পন্ন ওই ভালবাসা, কে জানে ওটার গভীরতা কতটুকু । হাজারও প্রতিবন্ধকতা, দূরত্ব পাড়ি দিয়ে মিতালী একদিন হাজির হয়ে যায় হাবুর শহরে । হাবু তখনও নিজেকে নিয়ে
ব্যস্ত ।
মিতালীঃ কোথায় তুমি...??
হাবুঃ রুম – এ
মিতালীঃ আমি চলে এসেছি ...
হাবুঃ কোথায়??
মিতালীঃ তোমার কাছে ।
একদিকে আনন্দের সাগরে ডুবে থাকা হাবুর কাছে অন্যদিকে যেন মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে । খুবই দ্রুত তৈরী হয়ে চলে গেল মিতালীর কাছে ।
হাবু অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে মিতালীর দিকে । পৃথিবীর সব সৌন্দার্য যেন ভর করেছে মিতালীর উপর ।
হাবুঃ তুমি ছবি থকেও অনেক সুন্দর ।
মিতালীঃ তোমার যে ছবি আমি আমার হৃদয়ে একেছি তার থকেও তুমি অন্যরকম । তোমার দুইটা জিনিস আমার কল্পনার একেবারে বাইরে চলে গেছে...
হাবুঃ কোন দুইটা জিনিস...??
মিতালীঃ তোমার লুকিংটাতে এতটা আবেগ জড়িয়ে আছে যে বলে শেষ করা যাবে না । আর তোমার ঠোঁট দুইটা এততাই আবেগী যে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না ।
গড়াই নদী তিরের বালুচরে হাবুর একে দেওয়া ভালবাসার ছোট্ট ঘর বন্ধ থেকে খোলা চোখে অবাক বিস্ময়ে দেখছিল মিতালী ।
সারাদিনের ঘণ্টার পর ঘন্টা যেন মিনিটের মত কেটে গেল ওদের । চারিদিকে নেমে এল আলোহীন ছায়া ।
মিতালী যাবে না সেদিন, থেকে যাবে হাবুর শহরে । যেই শহরের বাতাসে ছড়িয়ে আছে হাবুর শরীরের গন্ধ, মিতালী যেন ওই বাতাসে সানন্দে এতদিন পরে স্বস্থির নিঃশ্বাস নিচ্ছিল । ভালবাসার বিন্দুমাত্র আনন্দ উপভোগ না করা হাবুর কাছে আশেপাশের সবকিছু যেন নতুন সজ্জায় সাজানো মনে হচ্ছিল । আকাশের চাঁদ তাঁরা যেন তাদের অপরূপ নতুনভাবে ছড়ানো শুরু করেছিল । তারপরও আধারের আগমনীতে নতুন চিন্তা চেপে বসল হাবুর মাথায় । ডেকে পাঠাল কাছের বন্ধু সাম্যকে । সাম্য আসার আগ মুহূর্তে হাবু মিতালীকে বলল অচেনা এই শহরে কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে তারা ভাই-বোন বলে একে-অপরকে পরিচয় দিবে ।
সাম্যঃ কি হয়েছে হাবু ...??
হাবু সবকিছু খুলে বলল সাম্যকে ......
সাম্যঃ তাহলে হোটেল দেখি চল......
হাবুঃ চল.........
শহরের এক কোনে কোন এক নির্জন জায়গায় সিট ফাঁকা হোটেলের সন্ধান মিলিল । হাবুর ইচ্ছা ছিল হোটেলে মিতালী একা থাকবে । হঠাৎই.........
মিতালীঃ এত বড় একটা রাত, আমি তোমার শহরে, তোমায় ছাড়া থাকতে পারব না ।
এরকমই হাজারো ভালবাসায় ভরা অভিমানী কথা হচ্ছিল ওদের মাঝে । হঠাৎ-ই হটেল মালিক ওদের সম্পর্কের কথা জানতে চায়...
সাম্যঃ অ্যাংকেল ওরা স্বামী-স্ত্রী
পরিশ্রান্ত দিন শেষে খুঁজে পাওয়া রাত্রি যাপনের জায়গাটুকুও চলে যায় । অন্য কোনভাবে একই শহরে কিন্তু দুই প্রান্তে কেটে যায় ওদের রাত ।
প্রথম দেখায় হাজারো স্মৃতির জন্ম দিয়েছিল হাবু । সপ্ন দেখেছিল জীবন বাঁধারও ।
প্রথম দেখার সেই স্মৃতিকে বুকে নিয়ে এখনও পথপানে চেয়ে থাকে হাবু, এখনও আশায় বুক বেধে আছে হয়ত কোন একদিন নতুন, অচেনা কোন নাম্বার থেকে আশা কলে হাবুর মোবাইলটা বেঁজে উঠবে, আর ওপাশ থেকে ভেসে আসবে মিতালীর সেই চিরচেনা, আবেগী, ভালবাসাময়, মধুর কণ্ঠস্বর কারন সেদিনের সেই সবকিছু আজ শুধুই স্মৃতি ।
(হাবু, মিতালী, সাম্য সবগুলোই কল্পিত নাম)
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১৮ রাত ১:৩৫