বেশিদিন হয়নি যখন অনলাইন এক্টিভিস্ট, ফ্রীল্যান্স ইউজার, ভিজিটর ছিল শিক্ষিত, অভিজাত এবং মধ্যম শ্রেনীর পেশাজীবী ও শিক্ষার্থী।
শিক্ষা, বিনোদন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মূল্যবোধ, ইতিহাস, খেলাধুলা,কবিতা, গল্প, অাত্নকথন হতো। সভ্য সামাজিকতার মেলবন্ধন হত। শুদ্ধ চর্চার পাঠশালা ছিল। বিতর্ক এবং তথ্যযুদ্ধের অস্ত্র ছিল যুক্তি ও দলিল
২০০৯ এর দিকে হু হু করে বাড়তে থাকে অনলাইন এক্টিভিস্ট সংখ্যা। সংখ্যার চেয়ে দ্বিগুন বাড়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য, বিকৃত ইতিহাস, কট্টর মওদুদীবাদ সমৃদ্ধ পোস্ট ও স্ট্যাটাস।
যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু হলে ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বিকৃতি চুড়ান্ত মাথাচাড়া দেয়।
অনলাইন সোস্যাল ও ব্লগিং সাইট গুলোতে পরিকল্পিত দেশ ও ধর্মীয় অপপ্রচার এবং বিকৃতির জবাব লেখনিতে পেশাদার ব্লগারদদের পাশাপাশি রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক কিন্তু সচেতন মধ্যবিত্ত তরুন প্রজন্মের তথ্যভিত্তিক এবং যুক্তির অভিধান দিয়ে দিয়েছিল।
অনলাইনে ব্যর্থ হয়ে হায়নার দল ব্লগার ও রাষ্ট্রের টুঁটি চেপে ধরা শুরু করে। অস্ত্র সেই ধর্ম। বিশৃঙ্খলা এড়াতে হয়তো!! রাষ্ট্র জল্লাদ কাদেরকে 'ভি' দেখানোর সুযোগ করে দেয়!!
স্বাধীনতার প্রজন্ম ল্যাপটপ, ট্যাব ফেলে কালো রাজপথে সোচ্চার হয়। সবাই বলে, গনজাগরন!!
ধর্ম ব্যবসায়ীরা সংঘবদ্ধ হয় হেফাজতের নামে। সাঈদীকে চাঁদে দেখানো, বঙ্গবন্ধুর ও তার পরিবার, ব্লোগারের সংজ্ঞা বদলে নাস্তিক নাম জুড়ে দেয়া সবই এখন ইতিহাস।
ইসলাম হেফাজতের নামে যে কাফেলা মতিঝিলে জড়ো হয়েছিল, যারা নেতৃত্ব দিয়েছিল, যারা ব্লগার ও সরকারের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছিলেন, তাদের সবাই কি জামাত- শিবিরের ছিল? আমি বিশ্বাস করি ঐ সমাবেশের কমপক্ষে ৬০% মানুষ অনলাইন, অফলাইন, সমসাময়িক রাজনীতি, অর্থনীতি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না অথবা জানার সুযোগ বঞ্চিত ছিল।
রাষ্ট্র বিগত দুই বছর রাষ্ট্রবিরোধী অপরাজনৈতিক তৎপরতাসমূহ রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করেছে। পাশাপাশি রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও কাঠামোগত উন্নয়নে নিবিষ্ট ছিল। স্বাধীনতাবিরোধী উর্বর নিউক্লিয়াস ধারাবাহিকভাবে কলুসিত করে সামাজিক বিশ্বাস ও মূল্যবোধের উপর। যদিও রাষ্ট্রের কাছে সামাজিক প্রতিরোধ উপেক্ষিত থেকে যায়।
স্বাধীনতা বিরোধী চক্রের দেশব্যাপী ধ্বংশ যজ্ঞ, হেফাজত, বিকৃতি বা ঘটিত কোন ঘটনার সুষ্ঠু ইতি, সমাধান বা বিচার করতে পারেনি অথবা করেনি। হেফাজতের সমাবেশকে নিয়ে গনহত্যার যে অপপ্রচার চালানো হয়েছিল, তার চরম মাশুল সরকার সিটি নির্বাচন গুলোতে দেয়।
একের পর এক ব্লগার হত্যা, দলে দলে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ এবং পরাক্রম, দিবসভিত্তিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড, বিচারহীনতার সংস্কৃতি, উপেক্ষিত তৃনমূল এর দূর্বলতার কারনে স্বাধীনতাবিরোধী এবং ধর্মান্ধবাদ চুড়ান্তরুপ ধারনের সুযেগ পেয়েছে।
অন্যদিকে নিরাপত্তাহীনতা, স্বার্থ, হতাশা, উদ্বেগ এবং রাষ্ট্রের উদাসীনতায় পরীক্ষিত এবং অসাম্প্রদায়িক শক্তি বিভাজিত, বিক্ষিপ্ত এবং প্রায় নিস্ক্রিয়।
ফলাফল পুলিশ, ব্লগার, প্রকাশক, পাঠক, সাংবাদিক হত্যা, হুমকি এবং অপরাধীর নিরুদ্দেশ হওয়া। সুরঞ্জিত সেনের নামে ধর্মীয় উস্কানিমূলক একটি পোস্ট চারদিন ভাইরাল ছিল! ভাবা যায়?
সুনির্দিষ্ট কতগুলো নিউজপোর্টাল এগুলো ভাইরাল করছে। এক বাশের কেল্লা বা বখতিয়ারের ঘোড়া মার্কা ভূল থেকে তারা শিক্ষা নিয়েছে।
রাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আগাছা নির্মূল করবে নাকি মূল গাছে সার দিবে নাকি নতুন চারা রোপন করবে? কালক্ষেপন হবে অাত্নঘাতি এবং ভয়ঙ্কর বিপদজনক। আরও একবার রাষ্ট্রকে দৃঢ়তা এবং সক্ষমতার পরীক্ষায় উত্তীর্ন হতেই হবে।
স্বাধীকার ও অাত্ননিয়ন্ত্রনের প্রচেষ্টা হতে হবে যুগপৎ।
"When you play with gentleman, act as gentleman. But if you play with bustards, act like bigger bustard." -- Father of the Nation Bangabondhu Sheikh Mujibur Rahman.