প্রয়াত লেখক আহমদ ছফা এ জাতীয় আরেকটি ঘটনার কথা বর্ণনা করেন এভাবে,এই সোনা তো বাংলাদেশের জনগণের সম্পত্তি। যে তিনজন আমরা সোনা নিয়ে এসেছিলাম তার মধ্যে একজন এমপির আপন ছোট ভাই। আরেকজন স্থানীয় আওয়ামী লীগ প্রেসিডেন্টের শালা। তারা এখন কোথায় আছে, কী করছে, কিছু জানি না। অথচ এদিকে শুনতে পাচ্ছি, সেই সোনা ইতিমধ্যে ভাগভাটোয়ারা হয়ে গেছে। ... সত্যিই তো, এ রকম একজন মানুষ দেড় মণ সোনা বয়ে নিয়ে এসেছে শুনলে এখন কে বিশ্বাস করবে !
বিভিন্ন শরণার্থী শিবির পরিচালনার দায়িত্বে ইনডিয়া সরকারের লোকের পাশাপাশি আওয়ামী নেতারাও ছিলেন। এসব নেতার বেশির ভাগই পরিবার-পরিজন সমেত বেশ আয়েশি জীবন যাপন করতেন। এমনকি অভিজাত দোকান, শুড়িখানা ও নাইটক্লাবগুলো জয় বাংলার লোকে ছিল জমজমাট। তখন পশ্চিম বাংলায় জয় বাংলার লোক মানেই বাড়তি খাতির। এ নিয়ে ৮ নাম্বার সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল লিখেছেন, আমি যখন তাদেরকে দেখেছি কলকাতার অভিজাত এলাকার হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতে জমজমাট আড্ডায় ব্যস্ত। একাত্তরের সেই গভীর বর্ষায়ত দিন-রাতে কলকাতার অভিজাত রেস্টুরেন্টগুলোতে বসে গরম কফির কাপে চুমুক দিতে গিয়ে হাঁটুতক কাদাজলে ডুবন্ত মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং শিবিরগুলোতে অবস্থানরত হাজার হাজার তরুণের বেদনাহত চেহারাগুলো তারা একবারও দেখেছে কিনা তা আজও আমার জানতে ইচ্ছা করে। আমার জানতে ইচ্ছা করে কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের অভিজাত নাইট ক্লাবগুলোতে বিয়ার হুইসকি পানরত আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের মনোমুকুরে একবারও ভেসে উঠেছে কিনা সেই গুলিবিদ্ধ কিশোর কাজলের কথা, যে মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত চিৎকার করে ঘোষণা করেছে জয় বাংলা। আমার জানতে ইচ্ছা করে আরো অনেক কিছু। কিন্তু জানতে ইচ্ছা করলেই তো আর জানা যায় না। কলকাতা ও আগরতলার নাইটক্লাব ও বেশ্যালয়ে প্রবাসী নেতাদের অনেকেরই নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল। প্রবাসী সরকারের একজন মন্ত্রী সোনাগাছির বেশ্যালয়ে মারামারি করে কলকাতা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে অবশেষে মুজিবনগর সরকারের কাছে হস্তান্তরিত হন। আহমদ ছফা ঘটনাটিকে এভাবে বর্ণনা করেছেন, যে সকল মানুষকে দেশে থাকতে শ্রদ্ধা করতাম, কলকাতায় অনেকের আচরণ দেখে সরল বাংলায় যাকে বলে কিংকর্তব্যবিমূঢ় !