- মশিউর রহমান মিঠু
পুঁজিবাদী এই বিশ্বায়নের যুগে প্রকাশিত হয়েছে একটি দানব সাম্রাজ্যের নগ্ন রূপ। এই সাম্রাজ্য যে আগে ছিলনা তা নয়; কিন্তু এতটা প্রবলভাবে তাকে কখনো †দখা যায়নি। এতদিন নানা মূখোশে ঢাকা ছিলো তার মূখ। এখন তার বিকৃত মূখটা মূখোশ ছাপিয়ে ক্রমশঃ প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে। একবিংশ শতকে বিভিন্ন আগ্রাসনের নানা কুটকৌশলে এ সাম্রাজ্র্য তার সাড়াশির মতো বাঁকানো শতপদ দখিয়ে দিয়েছে; তার পা গুলো আক্টোপাসের মতো বহুদিকে বিস্তৃত। চারদিক থেকে সে দরিদ্র ও অনুন্নত †দশগুলোকে আক্রমনে পারদর্শি। এই সাম্রাজ্যের একটি আগ্রাসী বাহিনীর নাম বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। এই সংস্থাটি উদারীকরণ ও উম্মুক্তকরণের নামে মানব জাতীর ৮৫ শতাংশ মানুষকে চরম দারিদ্র্যের মাঝে ঠেলে দিয়ে বাজার দখল করে নিচ্ছে। বহুপদী সাম্রাজ্যের এই এজেন্টগুলো আগ্রাসী বাণিজ্যের মূলমন্ত্র নিয়ে চষে বেড়ায় তামামfile
পৃথিবী জুড়ে ; জলে স্থলে অন্তরীক্ষে। তাদের বাজারে পরিণত করতে চায় পৃথিবীর প্রতিটি দেশকে। মানুষকে জীবনকে পরিবর্তিত করতে চায় রুচিহীন, ব্যক্তিত্বহীন ভোক্তায়। বিশ্ব বাণিজ্যের এই মহাপ্রভুদের পালিত গিনিপিগে পরিনত হচ্ছে আমাদের মতো গরীব দেশের কৃষকেরা। মানুষের জীবন কিংবা প্রাণের প্রশ্ন এদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। মানুষ সমাজ- রাজনীতি-সাংস্কৃতি সব কিছুকে এরা পণ্য করে তুলতে চায়।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা আমাদের দেশের গরীব কৃষকের জন্য মরণফাঁদ হয়ে দেখা দিয়েছে। আমাদের কৃষকেরা ফসল ফলায় রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে; আধপেটা খেয়ে। সেই কৃষকের প্রতি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা চরম বৈষম্যমূলক নীতি বাস্তবায়ন করে চলেছ ; আমাদের মত গরিব দেশের কৃষকদের ভূর্তকি দেয়ার ক্ষেত্রে তারা সরাসরি নিষেধ করছে। অথচ ধনি দেশের কৃষি ক্ষেত্রে সরকারি সুবিধা বহাল থাকছে। অনায্য নীতি দ্বারা এ সংস্থাটি শুধু কৃষকের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে না , সাথে সাথে কৃষির নিয়ন্ত্রন ও কেড়ে নিচ্ছে। তারা বন্ধ্যা বীজ আমদানি করতে উৎসাহিত করে এবং একাজে বিশ্ব ব্যাংক, আই এম এফ ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা পরম্পর হাত ধরাধরি করে চলে।
নোয়াখালীর উপকূলীয় একটি গ্রাম- নবগ্রামের দিকে তাকালে মিলবে এর বাস্তবচিত্র। কৃষকেরা হাতিয়া ও সন্দ্বীপ খেকে নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে এখানে এসে চাষাবাদ শুরু করে। তারা কৃষক ঘরের সন্তান। প্রাকৃতিক বিপর্যয় তাদের দমাতে পারেনি; তারা ঘরের বীজ ও হালগরু দিয়ে এখানে এসে চায়াবাদ শুরু করে । তারা চাষাবাদ করতো না না ধরণের ফসল। পুকুরে ছিলো উপকূলীয় আয়োডিন সমৃদ্ধ নানান মাছ, তারা ঘরের ধান দিয়ে †খারাকী †খতো। পুকুরের মাছ বারমাস †খয়েও শুঁটকী করতো। শাক সবজি ও তরিতরকারী নিজেরা উৎপাদন করে †খতো, বাজার থেকে কিনে আনার প্রশ্ন উঠতো না। বাইরে থেকে কিনে আনতে হতো শুধু লবণ আর কেরোসিন। সামাজিক অনুষ্ঠানে সমাজের মানুষ রান্না ও আপ্যায়নের দায়িত্ব নিত। পরিবেশন করা হতো মহিষের দধিও †খজুরের গুড়। ভোজ অনুষ্ঠানে সকলে জোতবদ্ধ হয়ে সমআসনে বসতো মাদুর পেতে ।
আজ দেখি এই কৃষকদের বাজার থেকে বীজ কিনে আনতে; হালগরু হারিয়েছে অধিকাংশ চাষী, বাজার থেকে কিনে থেতে হয় কৃত্তিম উপায়ে উৎপাদিত মাছ ও দরকারী, কিনে আনে মোটা ভেজ ডাল, বেশিদামে কিনে আনে সুদৃশ্য প্যাকেটজাত লবন,মসলা। মহিষের দধির বদলে বাজার থেকে কিনে আনে বোতলজাত পানীয়। বিয়ে সাদিতে যৌতুকের প্রশ্ন ছিলো না। চাহিদা ছিলো পরিমিত। কিন্তু এখন বহুজাতিক কোম্পানী মানুষের মাঝে সীমাহীন ভোগের চাহিদা জাগিয়ে তুলেছে। এখন যৌতুক ছাড়া বিয়ের কথা ভাবা যায়না। পাত্রের আকাঙ্খা থাকে ভোগ্যপন্যের- টেপরের্কডার , মোবাইল ফোন, ভিসিডি, টেলিভিশন; একটু অবস্থাপন্ন হলে মোটর সাইকেল, ফ্রিজ, আসবাবপত্র প্রভৃতির। সামাজিক অনুষ্ঠানের ডেকোরেশনের প্রশ্ন আসে; খাওয়ার রান্না ও পরিবেশন করা বাজারের বাবুর্চি দিয়ে। এতে খরচ বাড়ে ; ঘণিভূত হয় গরীব দেশের মানুষের সংকট। বহুজাতিক বাণিজ্য কোম্পানীগুলো তৈরী করেছে একটি দালাল শ্রেণী। গ্রামের কৃষকের উৎপাদিত পণ্য তারা সস্তায় কিনে নিয়ে যায়। বড় পুঁর্জিপতিদের দ্বারা সে পণ্য প্রক্রিয়াজাত হয়ে আবার গ্রামীণ মানুষের মাঝে ফিরে আসে, তারা এসব কিনে খায় চওড়া দামে।
কৃষি উপকরণগুলো কৃষকের হাত ছাড়া হয়ে গেছে। বীজ, হালগরু সহ সকল উপকরণের নিয়ন্ত্রিন চলে গেছে বাণিজ্যিক কোম্পানীর হাতে। বিনিময়ে এই কোম্পানীগুলো থেকে কৃষকেরা উপহার পেয়েছে রাসায়নিক সার, বিষ ও হাইব্রীড বীজ। বহুজাতিক কোম্পানীগুলোর প্রাণের উপর কোন মায়া নেই। যান্ত্রিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মাটির উপর †জার খাটিয়ে তারা কৃষি উৎপাদন করতে চায়। তাই স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পারিবেশের ঘটছে ভয়াবহ বিপর্যয়। দিন দিন কমে যাচ্ছে জমির উৎপাদিকা শক্তি ; রাসায়নিক বিষ ব্যবহারের ফলে ক্ষয় হচ্ছে আয়ু ; ধ্বংশ হচ্ছে জীবণ। বাণিজ্যিক আগ্রাসনের কারনে সমাজ জীবনে নেমে এসেছে বিচ্ছিন্নতা। নবগ্রামের কৃষকেরা আজ পরিণত হয়েছে ভাসমান মজুরে। এই গৃহস্থ ঘরের সন্তানেরা এখন কাজ করে ইট ভাটার বন্ধকী শ্রমিক হিসেবে। বহুপদী এই সাম্রাজের আগ্রাসী বাহিনী বশ্বি বাণিজ্য সংস্থা নবগ্রামের কৃষকের জীবন জীবিকার উপকরণগুলো কেড়ে নিয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় আমাদের সারাদেশের গ্রামগুলোও বদলে গেছে। #
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৪৩