রাজ বাব্বর আর স্মিতা পাতিলের একমাত্র সন্তান ‘প্রতিক বাব্বর’। যাকে জন্ম দিতে প্রসব সংক্রান্ত জটিলতায় এবং মস্তিস্কের রক্ত ক্ষরনে স্মিতা পাতিল মারা যান মুম্বাই এর যশলোক হাসপাতালে। তারিখটা ছিল ১৩ই ডিসেম্বর ১৯৮৬ সাল। সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত আমির খান প্রযোজিত ছবি ‘জানে তু... ইয়া জানে না’ ছবিতে প্রতিক তার প্রথম অভিনয় শুরু করে...
দ্বিতীয় পর্ব
প্রথম পর্বের লিঙ্ক Click This Link
‘ভূমিকা’ ছিল স্মিতাকে নিয়ে শ্যামের তৃতীয় ছবি, যে ছবি স্মিতাকে সর্বভারতীয় পরিচিতি এনে দেয়। প্রথম বারের মতো স্মিতা সেরা অভিনেত্রীর রাষ্ট্রীয় পুরস্কারে ভুষিত হন।
এর পর থেকেই বলিউডের মুলধারার ছবি তথা কমার্শিয়াল ছবিতে অভিনয়ের অফার আসতে শুরু হয়, কিন্ত স্মিতার দৃঢ় সিদ্ধান্ত- যে সব ছবিতে নারীকে বিকৃত করে উপস্থাপন করে এবং যা নারীর জীবন সংগ্রামকে মর্যাদা দেয় না এমন ছবিতে তিনি অভিনয় করতে পারেন না।
নিজের নারীবাদি চিন্তা ও এক্টিভিজমের সাথে তিনি কিভাবে আপোষ করবেন?
প্রায় বছর পাঁচেক স্মিতা তার বিশ্বাসে অটল ছিলেন... কমার্শিয়াল ছবি তার জন্য নয়। কিন্ত স্মিতা তার এই ধারনা থেকে সরে আসতে বাধ্য হন, এক সাক্ষাৎকারে তাকে বলতে শোনা যায় “...বিগত পাঁচ বছর যাবৎ আমি স্মল সিনেমা(আর্ট ফ্লিম)নিয়ে কমিটেড ছিলাম। আমি সব ধরনের কমার্শিয়াল ছবির অফার ফিরিয়ে দিয়েছি। ১৯৭৭-৭৮ সালের দিকে স্মল সিনেমা আন্দোলন দানা বেঁধে উঠতে থাকে, আর এর জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়ে বিখ্যাত নামের। আমি অবুঝের মতো এক গাদা অফার দূরে ঠেলে দিয়েছি। নিঃসন্দেহে এটা আমার জন্য নাজুক বিষয়, কিন্ত এটা আমাকে অনেক ক্ষতি করেছে। আমি নিজকে সব সময় বলি—এই আমি কখনই অর্থ উপার্জনের জন্য মরিয়া নই। আমি স্মল সিনেমার প্রতি আমার দায়বদ্ধতা থেকে বিশাল বিশাল কমার্শিয়াল ছবির অফার এক কথায় ফিরিয়ে দিয়েছি—কিন্ত এর বিনিময়ে আমি কি পেয়েছি? স্মল সিনেমার জন্য বিখ্যাত নামের যদি প্রয়োজন হয়, তবে সে নাম তো আমি নিজের জন্য কামাতেই পারি। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে অফারই আসুক—আমি গ্রহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।...”
শুরুতে স্মিতার বেশ বেগ পেতে হয়েছে বলিউডের কমার্শিয়াল ছবির চটুল সংলাপ আর উত্তেজক পোষাকের সাথে খাপ খাওয়াতে। সুড়সুড়ি দেওয়া নাচের পোজ তো ছিলই। তবে তার তুমুল পেশাদারীত্ব খুব দ্রুত তাকে সাহায্য করেছে এ সবের সাথে মানিয়ে নিতে, শুরু হয় বাণিজ্যিক ছবিতে স্মিতার অভিনয়... শ্যুটিং শুরু হয় অমিতাভ বচ্চনের সাথে ছবি ‘নমক হালাল’ এর, পরিচালক প্রকাশ মেহরা, সালটা ১৯৮২, মারা যাওয়ার মাত্র ৪ বছর আগে।
‘নমক হালাল’ এর শ্যুটিং শুরু হয় বাপ্পি লাহিড়ীর সুরে বিখ্যাত সেই বৃষ্টি ভেজা গান ...আজ রাপট যায়ে তো হামে না উঠাই ও... এর চিত্রায়ন এর মধ্য দিয়ে। এই ছবিটা আমি বহুবার দেখেছি, গানটা দেখেছি তার চেয়েও কয়েক গুন বেশি বার... আজও আমি ইউটিউবে গানটা দেখতে গিয়ে—সব সময় আমার যেমন মনে হয়—মনে হচ্ছিল যেন স্মিতা এই দৃশ্যগুলোতে একটুও মন লাগিয়ে অভিনয় করে নি। কোথায় যেন একটা আড়ষ্ট ভাব, চোখে মুখে এক ধরনের দ্বিধা..., যা করছি ঠিক করছি কি?...
এখানে গানের লিঙ্কটা আমি দিলাম, আপনারাও দেখুন গানটা... স্মিতাকে কি সাবলীল দেখাচ্ছে? অমিতাভের সাথে স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন? আমি ঠিক নিশ্চিত না... লক্ষ্য করে দেখুন-গানের প্রথম দিকে স্মিতা নিজের অজান্তেই আঙুল দিয়ে বুকের ভেজা আঁচল ঠিক করছেন!!! তার উত্তেজক পোষাককে সামলে নিতে পারছেন না।
অথচ চটুলতা কাকে বলে—নষ্টামীর অভিনয় কিভাবে করতে হয়, স্মিতা তা জানতেন না? শরীর দেখানো নিয়ে তার কোন শুচিবাঈ ছিল? কোন পিউরিটার্ণ ঝোঁক??
অবশ্য অবশ্যই না। ‘চক্র’ ছবিতে দেখুন তার রাস্তার পাশের কলে বসে আদুল গায়ে গোছল করার দৃশ্য... কোন জড়তা দেখা যাচ্ছে? শরীর ঢাকার কোন চেষ্টা...? কিংবা কোন অস্বস্তি? চক্র ছবিতেই ট্রাক ড্রাইভার কুলভুষন খারবান্দার সাথে স্মিতার শয্যা দৃশ্য গূলোর কথা ভাবুন।
যা ছবিতে আসবে কাহিনীর দাবীতে—তা নিয়ে স্মিতার কোন জড়তা কখনই ছিল না... কিন্ত যার উপযোগীতা শুধুই মনোরঞ্জনে, নিছক পুরুষের রিপুর তৃপ্তিতে, যা নারীর জন্য অবমাননা—নারীকে যা চিত্রিত করে অধঃপতিত হিসাবে—তা মেনে নিতে স্মিতার একটু কষ্ট তো হবেই।
নমকহালালের এই গান আসলে তাই স্মিতার কষ্ট পাওয়া অভিব্যাক্তির গান, তার নতুন ভুমিকার ন্যয্যতা নিয়ে তার দ্বিধা আর দ্বন্ধের গান... ভাল করে লক্ষ্য করে দেখুন, আপনারও নজরে পড়বে।
এখানে আরও দুইটা গানের লিঙ্ক দিলাম—শ্যাম বেনেগালের ভুমিকা ছবির শুরুর অংশ এটা। আর দ্বিতীয় লিঙ্কটি ছবির মাঝের কিছু অংশ, লিঙ্কের শেষের দিকে পাবেন গানের বাকী অংশ। দুই লিঙ্কেই স্মিতার একটা গানের চিত্রায়ন আছে।
এখানের স্মিতার অভিব্যক্তি গুলো খেয়াল করুন... তার লজ্জাবনত ব্রীড়া, তার বিলোল কটাক্ষ, তার মদির অঙ্গভঙ্গি উচ্ছলতা।
এই হল আসল স্মিতা পাতিল। স্বাভাবিক, সাবলীল স্মিতা পাতিল।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০০৯ ভোর ৫:০৩