সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি জনতা একটা লোককে ফুলের মালা গলায় পরিয়ে জেল থেকে বের করে আনছে। জনতার বেশিরভাগের গালভর্তি দাড়ি, গায়ে পাঞ্জাবি আর মাথায় টুপি। দেখে মনে করলাম কোন মুসলিম বীর সৈনিক জালিম কট্টর মুনাফেক/কাফির সরকারের দমন পীড়নের শিকার হয়েছিল - ওকে মুক্ত করা হয়েছে।
পরে দেখি কিসের বীর সেনানী! এইটাতো আস্ত একটা ***** (যে গালি দিলে চল্লিশদিন নাপাক থাকে বলে একটা কথা সমাজে প্রচলন আছে, সেটাই)।
অভিযোগ হচ্ছে ও ইভটিজিং করেছে।
ওর নিজের বয়ানেও সেটা প্রমাণিত। জেল থেকে একটা ভিডিও ক্লিপে সেটাই বলেছে।
তা এমন একটা জানোয়ারকে ইসলামী লেবাস পরা কিছু মানুষ সংবর্ধনা দিয়েছে, এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীর মতন ভুলভাল বকবক করা "আলেম" পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছে - বিষয়টা ট্রমাটিক।
আমার সামনে যদি কোন পতিতাও দাঁড়িয়ে থাকে, সে যদি ন্যাংটাও থাকে, মুসলিম পুরুষ হিসেবে আমার অধিকার নেই ওর পোশাক ধরে টানাটানি করার, ওর গায়ে হাত তোলার। ঠিক তেমনই, যেমনটা আমরা চোখের সামনে ব্যাংক দেখি, কিন্তু আমরা "এখানে সুদের কারবার হয়, এবং কুরআনে সুদ গ্রহণ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সাথে তুলনা করা হয়েছে" - বলে ব্যাংক লুটে ফেলি না।
অথচ আমরা দেখছি এমন হারামজাদাকে ফুলেল শুভেচ্ছা দেয়া হচ্ছে!
যেহেতু এরা ইসলামকে জড়িয়ে ফেলেছে, তাই দুয়েকটা ঘটনা কেবল বলবো। বাকিটা নিজের বিবেক, বুদ্ধি খাটিয়ে বুঝে নেন।
"হজ্বের সময়ে নবীর (সঃ) সামনে দাঁড়িয়ে এক মহিলা তাঁকে কিছু প্রশ্ন করছিলেন। নবীর (সঃ) কাজিন আল ফাদল (রাঃ) মহিলার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিলেন। মহিলাও আল ফাদলের (রাঃ) দিকে তাকান। মুহাম্মদ (সঃ) ভাতিজার মুখ ওপাশে ঘুরিয়ে দিলেন।"
কারন হচ্ছে, নারীর পর্দার বিধানের আগের আয়াতেই আল্লাহ বলেছেন পুরুষকে দৃষ্টিনত করতে। নবীজি (সঃ) সেটাই করেছেন।
ঘটনাটা আমাদের দেশের মোল্লাদের সাথে মিলাতে পারবেন না। আমাদের মোল্লারা মাইকে ঘোষণা করে মহিলাদের লাত্থি দিয়ে বিদায় করতে, কারন এতে মাহফিলের পবিত্রতা নষ্ট হয়!
আমাদের মোল্লারা পটেনশিয়াল ধর্ষকের সাথে ছবি তুলে, বাহবাহ দেয়!
আমি যে হাদীসটির উল্লেখ করলাম সেটা বুখারী শরীফের "হজ্ব" চ্যাপ্টারে আছে। অধ্যায়ের দ্বিতীয় হাদিসটাই। পড়ে নিতে পারেন।
আরেকটা ঘটনা বলি। আমরা সবাই জানি, কিন্তু এইবার ঘটনার ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখুন।
মদিনায় বনু কায়নুকাহ নামে ইহুদি একটা গোত্র ছিল। এক মুসলিম মহিলা ওদের বাজারে কোন এক কাজে গিয়েছিলেন। ততদিনে নবী (সঃ) মদিনায় ইসলামী শাসন কায়েম করে ফেলেছেন। ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থায় ইসলামী বাজারও চালু হয়ে গেছে। নবী (সঃ) মুসলিমদের বলে দিয়েছিলেন আজ থেকে এই বাজারেই কেনাবেচা করতে।
তারপরেও ভদ্রমহিলা হয়তো কোন জরুরি কাজে ইহুদি বাজারে গিয়েছিলেন।
তা ইহুদি দোকানদার সেই মহিলার সাথে ফ্লার্টিং শুরু করে। একটা পর্যায়ে মহিলার অজ্ঞাতে একটি ছুরি দিয়ে তাঁর পোশাকের একটি অংশ টেবিলের সাথে গেঁথে দেয়। মহিলা রাগে দ্রুত স্থান ত্যাগ করতে গেলে তাঁর পোশাকে টান পরে এবং গোটা বাজারের শত শত মানুষের সামনে তাঁর আব্রু নষ্ট হয়।
লজ্জায়, অপমানে মহিলা থরথর করে কেঁপে উঠেন। তাঁর এই দুরবস্থা দেখে সেই দোকানদার এবং ওর সঙ্গী এবং বাজারের লোকজন হোহো করে হাসতে থাকে।
বাজারে একটা মুসলিম পুরুষও উপস্থিত ছিলেন। তিনি তাঁর মুসলিম বোনের অপমানে তলোয়ার নিয়ে সেই দোকানদারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং ওর ইহলীলা সাঙ্গ করেন।
বাজারের লোকজন তখন সেই সাহাবীকেও পিটিয়ে হত্যা করে।
এই পুরো ঘটনার বিবরণ নবীর (সঃ) কাছে এলে তিনিও চরম রেগে উঠেন।
এই কারনে নয় যে মুসলিম রমণী কেন ইহুদি বাজারে গেলেন। গেলেনই যখন তখন কেন পর্দা আব্রু ঠিক মতন করলেন না।
নবীজি (সঃ) রাগলেন কারন মুসলিম রমণীর ইজ্জতে হাত দেয়া হয়েছে। মুসলিম সাহাবীর রক্ত ঝরানো হয়েছে। মদিনার সব মুসলিমকে নিয়ে তিনি তৎক্ষণাৎ বনু কায়নুকাহ দূর্গ ঘেরাও করেন এবং ওদেরকে দেশছাড়া করেন।
বনু নাদির গোত্রের কাব বিন আশরাফকে হত্যার মূল কারন ছিল সে মুসলিম রমনীদের দিয়ে অশ্লীল থেকে অশ্লীলতম কবিতা রচনা করতো। সেই যুগের অশ্লীল কবিতা মানে বর্তমান যুগে পর্নোগ্রাফির সাথে তুলনা করতে পারেন।
সাহাবীদের ক্ষেত্রেও যদি ধরি, মা আয়েশা (রাঃ) যখন মরুভূমিতে হারিয়ে গিয়েছিলেন, এবং এক সাহাবী তাঁকে ঘুমন্ত অবস্থায় খুঁজে পান, তিনি তাঁকে জাগানোর জন্য জোরে বলে উঠেন, "ইন্নালিল্লাহ!"
হজরত আয়েশার (রাঃ) ঘুম ভাঙ্গে, তিনি সেই সাহাবীর সাথে মদিনায় ফেরত আসেন, পুরোটা পথ সেই সাহাবী আয়েশার (রাঃ) দিকে চোখ তুলে তাকাননি।
কিন্তু "মুনাফেকরা" তাঁর নামে ঠিকই কুৎসা রটায়।
আল্লাহ কুরআনে নাজেল করেন কোন সতীসাদ্ধী নারীকে নিয়ে মিথ্যা রটনা রটালে এর শাস্তি হবে ৮০ ঘা বেত্রাঘাত। লক্ষ্য করুন, আল্লাহ বলতে পারেন কোন "মুমিনা রমণীকে" নিয়ে কেউ রটনা রটালে....। আল্লাহ সেটা না বলে যেকোন ধর্মের যেকোন জাতের মহিলার ব্যাপারে বলেছেন।
আরও বহু ঘটনা উল্লেখ করতে পারি। সাহাবীরা যেই যুগে বাস করতেন, তাঁদের আশেপাশে মুশরিক, ইহুদি, খ্রিষ্টান সব ধর্মেরই নারীরা চলাফেরা করতো। অথচ একটা ঘটনা খুঁজে পাওয়া যাবেনা যেখানে মুসলিম পুরুষরা গিয়ে কোন নারীর জামা টানাটানি করে বলেছে "ও বেপর্দা, বেশরিয়তী চলাফেরা করে, তাই ওকে একটু টিপে দিয়েছি।"
কারন ঐ যে প্রথমেই উল্লেখ করলাম, আল্লাহর নির্দেশ, পুরুষকে নিজের চোখের পর্দা করতে হবে। কার বৌ পর্দা করলো না, কার মেয়ে টাইট পোশাকে চললো, এইটা দেখার কাজ তোমার না। কিন্তু তুমি যদি ওদের পোশাক টানাটানি করো, তাহলে তোমার খবর আছে।
ঠিক এই কারণেই হজরত আয়েশা (রাঃ) বলেছিলেন, "আল্লাহ চাইলেই শুরুতেই মদ এবং জেনাহ হারাম করতে পারতেন। তাহলে এই সাহাবীরাই নবীর (সঃ) বিরোধিতা করে ইসলাম গ্রহণ থেকে বিরত থাকতো। কিন্তু আল্লাহ প্রথমে তাকওয়া অর্জন করতে সময় দিয়েছেন।
ঈমান, আমল ইত্যাদির মাধ্যমে যখন তাকওয়া অর্জন সম্পন্ন হয়েছে, তখন মদ ও জিনাহ নিষেধ করেন। এবং এই সাহাবীগণ হাসিমুখেই তা
মেনে নেন।" (এটিও বুখারী শরীফের হাদিস।)
খুবই গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। ইসলাম কি, আল্লাহ কে, মুসলিম কিভাবে হতে হয় ইত্যাদি বাদ দিয়ে আমাদের দেশে লোকজন দাড়ি টুপি ধারণকেই ঈমানী অঙ্গ মনে করে। এদের মাথাতে ঢুকেই না যে শার্ট প্যান্টও ইসলামী লেবাস। এদের বিশ্বাস আপনি আরবি জোব্বা না পরলে সহীহ মুসলমান হতে পারবেন না।
এর ফলে আমরা দেখি ইসলামী লেবাসধারী দাড়িওয়ালা সরকারি আমলা আসর নামাজ পড়ে এসে ঘুষ নিয়ে মাগরেবের নামাজের প্রস্তুতি নেয়। আমার কাজিনের কাছ থেকে ঘুষটা চেয়েছে, ও অবাক হয়ে বললো, এই ঢংয়ের মানে কি?
আমরা দেখি ইসলামী লেবাসধারী ব্যবসায়ীকে জাল টাকার ছাপাখানা খুলে বসতে। অকপটে খাদ্যে ভেজাল মেশাতে। টেপের পানিকে জমজমের পানি হিসেবে বিক্রি করতে। সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া মুসলমান।
এবং একটা পটেনশিয়াল ধর্ষককে ফুলের মালা গলায় সংবর্ধনা দিতে।
এদের সাথে কাদের মিল আছে জানেন? "খারেজী"দের। ওদের পোশাক আশাক, ইবাদত ইত্যাদি দেখলে মনে হতো এরা শুধু মরতে দেরি, বেহেস্তে যেতে দেরি হবেনা।
অথচ এই খারেজীরাই হজরত উসমান (রাঃ) ও হজরত আলীকে (রাঃ) শহীদ করেছিল। ওদের ভাষায় উনারা সহীহ মুসলিম ছিলেন না।
আবারও বলি, এই মূর্খের দল ইসলামের ইমেজটাকে যেভাবে নষ্ট করতে পারে, খোদ ইজরায়েলেরও ক্ষমতা নেই সত্তুর বছর ধরে বোমাবাজি করে তেমন ক্ষতি করার।